আমার সমস্ত নিঃশ্বাসের মূল্যের বিপরীতে তোমার অবস্থান, তুমি আমার ব্যক্তিগত ঈশ্বর। ভালোবাসায় জড়ানো একটি স্বচ্ছ-আয়না, সেখানে তুমি প্রতিবিম্বিত প্রতিমুহূর্তে। গতকাল রাতে, আমার চোখের উপর ঝাঁপিয়ে-পড়া একটা স্বপ্নময় আকাশের ঠিকানা জেনেছি। সেখানে ছায়াময় হয়ে একটাপৃথিবী পার করেছি তোমার সাথে… এমন রাত আগে কখনও আসেনি আমার ঘরে। কিছু বিস্তৃতির কুয়াশা, কিছু কণ্ঠরোধী বিষণ্ণতা, কিছু ক্ষোভ, কিছু রাগ, কিছু হাহাকার, কিছু ক্লান্ত-পালক, আবার কিছু শান্ত-শব্দ রেখে দিয়েছ আমার আঙিনায়। বহুবছরের অনিদ্রা থেকে জেগে একটি প্রার্থনালয়ের ঘণ্টাধ্বনির মতো শুনেছি তোমাকে। অসীমের একপ্রান্তে ছুড়ে ফেলে-দেওয়া তোমার নির্জন-কান্না, আবারও শতভাগ অনুলিপি হয়ে প্রতিধ্বনিত হলো কেন? এতদিন পর? আমি বুঝে উঠতে পারিনি ঠিক! কেন তুমি বারবার ফিরে যাও সে অতীতমুহূর্তে, যা তোমাকে একসময় ধূলিঝড়ে ধূলিসাৎ করেছিল! তুমি তো প্রতিশোধপ্রবণ নও, ঘৃণা লালন করে রাখো, এমন মানুষও তুমি নও। তা হলে ভুলে যাও না কেন সেইসব কথা, যা এক আগ্রাসী-করাত হয়ে তোমার বুকে এসে কেবলই তোমাকে রক্তাক্ত করে চলে বার বার! তোমার গুমোট-কান্নার শব্দ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো… এখনও আমার বুকে আছড়ে পড়ছে! তোমাকে আজ গল্পের মতো করে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমার নিজের খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমার বুকের মধ্যে একটি চৌচির-মানচিত্র ফুটে উঠেছে শ্মশানের আগুনের মতো। সে আগুন নিভে যাওয়ার জন্য বৃষ্টির প্রত্যাশা আমি করছি না। আমি জানি, তোমার মনের ক্ষত কোনও একদিন সেরে উঠলে, সেদিন আমার শ্মশানের আগুন নিভে যাবে আপনাআপনিই। আজানের শব্দ ভেসে আসছে, ভোর হতে অল্প বাকি। তোমাকে ঘুমানোর কথা বলেছি সুস্থতার জন্য, অথচ ভালোবাসার অজুহাতে আটকে রেখে আগের চেয়েও বেশি অসুস্থ করে দিয়েছি! এমন ভুল ক্ষমার অযোগ্য! আমার একটি শাস্তি প্রাপ্য, এটা দিয়ে আমাকে তোমার প্রায়ই দণ্ডিত করতে হবে, তুমি জেনো। তোমার কণ্ঠস্বর, তোমার গান আমার পড়ার টেবিলে গোলাপের পাপড়ি হয়ে ফুটে আছে। মনে হচ্ছে, সে গোলাপ ছুঁয়ে, তোমার হাতের আঙুলগুলো আমার আঙুলে জড়িয়ে ধরে একজন আর-একজনের দুঃখের ছাপ নিচ্ছি! দূরে কোথাও সমুদ্রের একটানা অশান্ত গর্জন… রাতের অন্ধকারের ভেতর দিয়ে তোমার আহত হাতটি এসে স্পর্শ করে ছিল আমার একটি হাত! কিছু বিবর্ণ-বিরহ, কিছু জোছনাক্ষণ স্বপ্ন পারাপারের কেচ্ছা বলে বলে মিলিত হয় উদাম-সহবাসে। আর আমরা তখন ঘুমিয়ে পড়ি নুনের জমিনে!
Post Views: 18