অনুষঙ্গে অনুরক্তি: দুই

 ভালোবাসাটা ঠিক ভালোবাসা হয়ে উঠতে একধরনের রহস্যময় নীরবতা লাগে,
সবাই অমন ব্যগ্রভাবে কী চায়?
ভালোবাসাই তো, তাই না, বলো?
তৃষিত হৃদয়ের যত ভাবনা, সেই ভালোবাসাকে ঘিরেই!
ভালোবাসায় কোনো ‘আমি’ কিংবা ‘তুমি’ থাকে না, কেবলই আমরা থাকে।
যাকে ভালোবাসি, তার কাছে তো হারিয়ে যায় সবকটা ‘আমি’!
মনের ভেতরে যে মন্দির, তার দরোজা খুলে ভালোবাসার নিত্য পুজো হৃদয় দিয়ে,
তাকিয়ে দেখো, এ হৃদয়ের ভালবাসাটুকু শুভ্র কেমন!
এই দুনিয়া, ওই দুনিয়া, দুই দুনিয়ার খুলতে তালা ভালোবাসার চাবিটাই লাগে!
 
আমার বাঁচা, আমার চলা শক্ত হলো সেদিন থেকে,
যেদিন তুমি ভালোবাসাটা উপহার দিলে।
ভালোবাসা এমন অশ্রু ঝরায়, জানতাম নাতো!
হৃদয়ে জানি আগুন আছে, সে আগুনে, সৃষ্টি থেকেই, বৃষ্টি পোড়ে!
এ হৃদয় হারিয়েছে পথ তোমারই মোহে,
আত্মাও দেখি হৃদয়ের পথে, আমি কেবলই ফতুর হলাম।
 
সে পথে পথিক যারা, ভালোবাসাতেই জীবন চেনে,
ওদের চলা শেষ হয়ে যায় ভালোবাসা মিললে তবেই!
এসব কী যে, হচ্ছে কেন, কেউ যেন জানতে না চায়,
এ রহস্যের হয় না কোনো প্রশ্ন কি উত্তর।
যে হৃদয় প্রেমে ভাসে, সে জানি আহত পাখির মতো!
 
ভালোবাসা-পথের নেই কোনো শেষ,
হাঁটতে ভয় করলে তুমি দূরেই থেকো।
যদি জীবন শেখো এই উছিলায়,
তবে ফেরত পাবে বহুবহু গুণ, যতটা দেবে।
যে দূরে সরে রয় ভালোবাসা থেকে, জীবনের মোহে,
তার নিয়তির দহন মারবে পুড়িয়ে সারাটাজীবন।
 
ভালোবাসার যখন প্রবেশ করে প্রেমিকের মনে,
সে ক্ষণ তো মাহেন্দ্রক্ষণই!
যদি হৃদয় পুড়ে ছারখার হয় প্রিয়র আশায়,
শান্তি সরে আসে বিক্ষেপ, অস্থিরতা।
ভালোবাসার অবারিত প্রান্তরে তোমার প্রথম পদক্ষেপ,
হয় খুন হয়ে যাও, নতুবা বাধা পেরোও একএক করে।
 
পুড়ে যাও, আর দেখো, বুঝে নাও
ভালোবাসার আলো কেমন করে হৃদয়ে জ্বলে!
যখন পুড়বে আগুনে, ছাই হয়ে যাবে, কিংবা ধুলো,
তখন সূর্যআলোর দারুণ প্রভায় নেচে নিয়ো ইচ্ছেমত।
 
ভালোবাসায়---
বৃদ্ধ কি তরুণ, একই মানুষ,
লাভ কি ক্ষতি, একই হিসেব,
দুই পৃথিবীই, একই পৃথিবী,
হেমন্ত কি বসন্ত, একই ঋতু,
ওঠা কি নামা, একই দিকে.........
উঠলে নামে, নামলে ওঠে,
দুনিয়া বেহেস্ত, একই গন্তব্য!
 
ভালোবাসার বৃত্ত যেটা, তার পরিধি মাপতে এসে
দেখি, সবখানেতেই একই দুঃখ একই, সুখও একই!
প্রিয় যদি কাছে টেনে নেয়, কিংবা দূরেও সরায়,
প্রিয়কে তবুও একই লাগে!
ভালোবাসায় মরাও দেখি অনন্তকাল বাঁচার মতোই!
 
এ পৃথিবী কফিনের মতো, বন্ধ ডালাটা,
আমরা সেখানে আটকে আছি, জানিও না তা,
মূর্খতার আঁধার আর কফিনের আঁধার জানি একই আঁধার,
মূঢ়তাকে ঠিক রাস্তা ভেবে, গড়া দুনিয়ায় নিজেই বাঁচি নিজের মতো।
যখন মৃত্যু আসে, কফিনের ঢাকনা সরায়,
ডানা আছে যার, সে-ই তো উড়ে, উড়ে চলে যায়
অনন্তের দিকে। যারা উড়তে শেখেনি, তারা পড়ে থাকে কফিনঘরে।
 
তবে উড়তে শেখো, যাতে মৃত্যু এলে পাখির মতো সরতে পারো,
ডানা কি পালক, বানাতে শেখো সে মন্দিরে, যে মন্দির হৃদয়ে আছে।
ঘন আঁধার আড়াল করে সেই সুন্দর, যা আড়ালেই থাকে,
যে সুন্দরে যে আলো আছে, রহস্য বাঁচে,
দেখে নাতো কেউ; তা যে ঘুমিয়ে পড়ে রাত নামলেই!
রাতের ক্রীতদাস যে, সে আলো থেকে দূরে,
দিনের যে প্রভু, সে আঁধার থেকে দূরে,
আলো কি আঁধার, কোথায় মুক্তি, তা জানে কে?
 
পথ দীর্ঘ। যে হাঁটে, সে বোঝে। যে হাঁটতে জানে,
তার কাছে আলোর যে দাম, আঁধারেরও তা-ই।
কখনো এমন হয়, ভালোবাসাটা ঠিক যায় না দেখা।
যা যায় না দেখা, তা কি তবে নেই তখনই?
কি স্বর্গীয়, কি পার্থিব, ভালোবাসি যা, তা তো মানি হৃদয়ে বাঁচে,
তার জায়গা যদি কোথাও না হয়, হৃদয়েই থাকে।
 
আমরা এক উঁচু দেয়ালের পাশে বসে আছি,
যে দেয়াল থেকে ঠিকরেআসা আলোয় আমরা প্রার্থনা করে যাচ্ছি নক্ষত্রের পথ ধরে।
আমরা দেয়ালের প্রতিটি ইট, পাথর, বালুর প্রতি কৃতজ্ঞ,
অথচ দেয়ালকে আলো দিয়েছে যে সূর্য, তার খোঁজই রাখি না ভুলেও কখনো!
 
যা খুঁজে আসছি জীবনের সেই শুরু থেকে,
তা আজ পেয়েছি খুঁজে! সেই মোহ, সেই সুন্দর, সেই স্বপ্ন
আজ আমার ঘরে।
আগে তোমায় পাইনি খুঁজে,
কেননা আমার চোখের আলো জ্বলত যে খুব, তোমার আলোর চাইতে বেশি।
আজ আমি যে-ই অন্ধ হলাম, তোমায় দেখি পেলাম খুঁজে!
 
আমার ভালোবাসাকে দেখালাম যত, তুমি ততই সরলে দূরে,
সে ভালোবাসাকে হৃদয় বেচে বোঝামাত্রই তুমি দেখি আমার ঘরে!
বাগানের ফুল, মানুষ ভোলাতে, ফোটাতে চাইলাম, ফুটল না ফুল!
বাগানের ফুলে মজলাম আমিই, দেখি ফুলের তারায় বাগান ভরা!
 
সে ঘর নয় ঘর কখনোই, যে ঘরে তুমি নেইগো প্রিয়!
হয় এঘরে এসো, নতুবা ওঘরে ডাকো।
যদি কিছুই না করে নীরব থাকো, দু’ঘরই আমায় ছাড়তে হবে!
বছরের পর বছর ঘুরলো, অন্য আয়নায় মুখ দেখে যাই; বুঝলাম পরে,
এ হৃদয় দিয়েছি ঘুমের ঘোরে, জাগতেই দেখি, আয়না খুঁজেছি পৃথিবী ঘুরে,
নিজের যে আয়না ছিল, পড়েছিলো তা ধুলোর রাশিতে, অনাদরেই আর অবহেলাতেই।
 
ভালোবাসা, আমায় সুখী করে দাও, আর বেশি তো কাঁদতে পারি না,
এ হৃদয় দেখো, আদরে বাঁধো, ভাগ্য নিয়ে আর খেলতে পারি না!
মুখটা তোমার দেখাও, প্রিয়, আমায় বিস্মিত করো, আরো মাতাল করো,
এ দুনিয়ায় কত কী যে আছে, তবু এক মুখের চোরাবালিতেই ডুবছে জীবন!
 
তোমায় দেখি না, তাই সব বিশ্বাসই অবিশ্বাস হয়ে বাঁচে,
তুমি কাছে এলে, অবিশ্বাস্য যা, তা-ই কেমন বিশ্বাস করে ফেলি,
অশ্রু মোছাতে না হোক, অন্তত বিশ্বাস নাড়াতে হলেও একবার এসো, ওগো প্রিয়!
এ জীবন কত দ্রুত মুছে যায়! আসে এক পলকে, যায় আর পলকেই!
যেন এক দমকা হাওয়া, যা বওয়ার আগেই দূরে মিশে যায়!
যেমনি পাখি খাঁচা ছেড়ে যায় সময় হলেই,
তেমনি ক্ষণিকের অতিথি যে প্রাণ, দেহ ছেড়ে ধায় খুব নিমিষেই!
 
জীবন যেন এক জমির মতো, যা ফসল ফলায়, কিছু ফসল মেরেও ফেলে!
আমি ভালোবাসায় বিশ্বাস করি, তাই আমার জন্য বাড়তি কোনো ধর্মের প্রয়োজন নেই।
আমার প্রতিটি শিরা কাঁপে প্রেমে, করুণায়; জপমালায় আমার কী-ই বা হবে?
যে ভালোবাসায় মরেছে, তার রোগের কোনো হয় না দাওয়াই,
সে বেঁচে ওঠে প্রিয়র পরশে, না পেলে তা মরে সহজেই।