অন্যসুরের গ্রন্থনে

 চলছি দেখে তফাৎ রেখে,
হরেক রঙের, হাজার ঢঙের মেলা সঙের।
ফানুস-হৃদয়, ওড়ায় ওড়ে হাওয়ার তোড়ে।
অবাক চোখে সবাক ছবি--
ভালোবাসাও ভিন্ন হয়,
মানুষ বুঝে কথা কয়!
বুঝতে কঠিন মানুষ যতো,
ভিড়টা ওদের আবছা ততো।
অমন স্রোতে ভাসতে আমার
ইচ্ছেটুকুই হয় না।
 
দেখতে ভালো, ভাবনা ভালো,
এমন অতো হয় না,
হতোও যদি সবই ভালো,
কী-ই বা হতো?
জীবনটা কি হতো এমন?
সুখেরা সব এলে সাথে,
দুঃখগুলো দুঃখে ভীষণ যেই পালাতো,
খেলতো জীবন কেমন করে?
ভালোর সাথে ভালো মিলে,
খারাপটাকে মিলিয়ে দিলে,
জীবন চলে বেসুর তালে।
আমিই ভালো, বলবে সবাই বাহবাতে,
অমন ভালো হয় না। লাভ কী তাতে?
 
ছায়ার সাথে ভাবটা জমে,
ছোট্ট ছায়া, একটু কায়া--আমিই সেতো!
আলোয়-ছায়ায় ভাবনা আসে,
তালগাছটা মা হলে মোর,
হতেম তখন লম্বা ভীষণ,
দেখত সবাই, বলত মুখে,
লম্বা অতো! কী কাজ ওতে?
আমি আছি যা থাকা চাই,
ভুলি সেটাই সবার আগে,
সুখের নেশায় দুঃখ নাচাই,
আমার যা নেই, সেটুক লাগে!
অদৃশ্যতে কষ্ট যতো, সুখটা যে ধায় আগে ততো!
 
আকাশটাতে থাকলে আমি
হতেম নাকি বড়?
সাগরটাতে বাড়লে তবে,
বাড়তো হৃদয় আঁকড়ে সবে?
মহিমাটা উঠতো বেড়ে?
হতোই হতো জড়ো?
ওই বিশালে? জলের ডাঙার ওই মিলনে?
পাহাড়গায়ে থাকলে পড়ে,
রোদের সাথে খেলতে উঠে,
সবার আগে ছুঁতেম নীলে,
ধুতেম শরীর মেঘের কাছে,
অমন হলে বদলে যেতেম?
ছড়িয়ে ডানা হাওয়ায় উড়ে
নিতেম এ ঠাঁই পাহাড়জুড়ে?
এই আমিটা অন্য হলে, ভিন্ন বলে
সেই আমিটায় মিলতো আয়েস?
দুঃখ সরে হৃদয় ভরে জমতো দলে?
 
ফুলের যদি হতেম মেয়ে,
বিলিয়ে সুবাস নিতেম গেয়ে?
পরীর দেশে উঠলে বেড়ে দারুণ মায়ায়
মেঘের শাদায়, সুরের ভেলায়,
গাইতো আকাশ নথটা নেড়ে, আমার দোলায়?
অন্য আমি
বড়ই দামি
ভেবে থামি।
এই কি জীবন?
 
সুখের কোলে সুখকে ভুলে
কষ্ট গিলে অশ্রু ধুলে
হৃদয় মেলে দুঃখে মিলাই।
কষ্টরা তাই এসেই বলে,
"এই যে এলেম,
তোমায় নিলেম,
বদলে তোমায় আমায় দিলেম।"
অন্য সুখের কষ্ট এমন,
মিথ্যে বোধের মিথ্যে কায়া মিথ্যে ছায়া মিথ্যে মায়া
ভাবায় দোলায় ভোলায় যেমন!
আমার ঘরে হর-প্রহরে এমন বিলাস
আসে রোজই! হৃদয় ভাবে, আপন সবই!
শরীর হাওয়াই--দৃষ্টি কাড়ে, যত্নে বাড়ে।
সুখের অসুখ ভোগায় বড়,
দুঃখ টানে। ভুলে সবই, কষ্ট আনে,
যখন জানে, পিছন ফিরে নিয়তি মানে।
রঙটা দুঃখের, ঢঙটা সুখের,
ছড়ায় আবীর, মেশায় নিবিড়, গড়ায় গভীর।
 
আমার আমি, তোমার আমি--
ভিন্ন দুজন। বোঝেই বা কে?
আমার ঘরে আসতে চেয়ে
এই আমিকে টানতে গিয়ে
রাখো তুমি তোমার আমি।
আমার আমি হারলে পরে
তোমার আমি যাবেই সরে।
কোন সে ছলে বুঝবে আমায়
বুঝলে এ মন তোমার ভাষায়?
এই উঠোনে ঠোঁটটা নাচে, চোখটা নাচে,
মনটা নাচে ওই উঠোনে, অন্য ঘরের ভিন্ন কোণে,
বোঝো কি তা?
 
মায়া কতটা ছাড়লে পরে
কষ্ট যে রয় ওই ওপারে
ভালোবাসাটা ছাঁটলে কত,
বাঁচবে জীবন, ভরবে এ মন
থাকবে সাথে সুখটা যত?
স্বার্থে বেঁচে, স্বার্থে বেড়ে,
স্বার্থে মেপে, স্বার্থে ঝেঁপে,
কোন সে যাদু এমনি করে
মানুষ গড়ে স্বার্থ ধরে?
এইতো নিয়ম, হৃদয় যতোই উঠুক কেঁপে!
 
আকাশ চেনায় এমন মানুষ
জানেই না যে, আকাশটা কী!
ভালোবাসাটা বাঁচলে এমন
মিথ্যে সুখের বেসাতিতে,
মরার আগেই হৃদয় মরে,
স্বপ্ন কাঁদে মিথ্যে ফাঁদে,
আর কিছু নয়, মিলে ফাঁকি!
বাঁচার ভানে,
ভুলের টানে,
বেসুর-গানে,
খুঁজতে মানে,
কাটে জীবন ঘোরে এ-মন,
সঙ্গে নিয়ে খেয়াল যতো,
দেখতে তো সব সুখের মতো!
 
এই দেখি চাঁদ,
সূর্য হঠাৎ,
এমনি করেই,
আকাশ সাজে।
এরই মাঝে--
মেঘের ভেলা,
তারার মেলা,
রৌদ্র-খেলা,
পাতে মাদল।
এক আকাশে,
সবাই ভাসে।
বদল মতের,
হয়ও ওদের,
দ্বন্দ্ব তবু,
দেখি নাতো!
দেখছি কতো--
দ্বেষণ ততো,
মানুষ যতো!
 
কাজটা ওঠে শিকের আগায়,
অকাজ আগায় নাকের ডগায়,
দৌড় শুরু হয় 'বিশেষ' হবার,
সব 'সাধারণ' মরবে এবার। এটুক আশ!
স্বপ্ন এমন, হবেই তেমন,
দূরটা বাড়ে সাধ্য সাধের,
ছাড়ায় সীমা সহ্য কাঁধের,
রয় যে সবই আগের মতোই,
এগোক পিছোক সময় যতোই,
তা-ই হবে যা হবার যেমন।
আজ এ আছে,
হোক সে মিছে,
কাল যে কাছে--
কয় কে পিছে?
নগদ ভুলি বাকির বুলি
নিই যে সবই!
নিয়তি হাসে বিধির ফাঁসে,
পেরোই দৌড়ে হাজারটা পথ,
ক্ষণেই কাটাই কয়েক শতক।
স্বস্তি লুটোয় হাতের মুঠোয়...
রাশি রাশি।
সব-পেয়েছি'র দেশে বাঁচি,
আলোর ঘায়ে চোখটা বাঁধি,
সুখে হাসি।
এইতো বেশি!
 
ঘুম চোখেতেই
দিন কেটে যায়, রাতটা ফুরায়...
মুহূর্ততেই!
কী এক ফাঁকে,
চোখ খুলতেই
হঠাৎ দেখি,
শূন্যটাই যে পেরোতে বাকি!