অবেলার বেলাভূমিতে বসেও…

 
প্রিয় সৈকত, আমি তোমাকে দেখা করতে বলছি না।
শুধু বলছি, তুমি সাবধানে থেকো, ভালো থেকো, বেঁচে থেকো।


আমার খুব অস্থির লাগছে,
আমি মৃত্যুকে সহজভাবে নিতে শিখিনি এখনও।
পৃথিবীর মানুষ মরছে, আমরা কাঁদছি।
মৃত্যুকে আটকানো না গেলে কাঁদতে হয়।
আজ কান্নাই সত্য।
আজ মৃত্যুই রীতি।


তোমার জন্য আমার মন পুড়ছে।
আমি তোমায় খুব মিস করছি।
যদি চলেই যাই এই সংকটে,
আমাদের আর দেখা হবে না, তাই না?
মৃতরা দেখতে পায় না,
মৃতরা ভালোবাসতে পারে না…


আসবে একবার? তোমাকে দূর থেকে একবার দেখব।
আমার বাসার সামনের মোড়টায়
মাত্র দুইমিনিটের জন্য এসে দাঁড়াবে?
একটা সিগারেটের অর্ধেকটা খাবে এখানে এসে?
আমি ব্যালকনি থেকে একটু দেখি?


নাহয় আমি আসি? বলো, কোথায় আসব...
সত্যিই যদি আর দেখা না হয়?
যেদিন আমি থাকব না,
সেদিন আর কাকে অবহেলায় রাখবে, বলো?
চলে যাবার আগে তোমায় একবারও দেখব না, সৈকত?


আমি জানি না, আমি কী লিখতে চাইছি।
আমি বুঝতে পারছি না, এখন কী বলতে হয়।
আজ মনে হচ্ছে,
তোমায় অনেক কিছু বলার ছিল।
সত্যিই কি আর কিছুই বলা হবে না?


আমার মন ভালো নেই।
বিষণ্ণতায় কেমন জানি কুঁকড়ে যাচ্ছি।
এমন তো কখনও হয়নি!
একঘাড় বিষাদ নিয়েই তো এতদূর এলাম...


যখন এ পৃথিবী সুস্থ হয়ে যাবে,
যদি বেঁচে থাকি সেদিনও,
নিজেকে কষ্ট দেবার যে রাস্তাগুলি
আমি বহুকষ্টে খুঁজে বের করেছি,
সেগুলি একটা একটা করে বন্ধ করে দেবো।


আরও একটা জীবন পেলে
তোমায় আরও একটু বেশি ভালোবাসব।
এই জীবনের ভুলগুলিকে
এক এক করে শুধরে নেব।
বিশ্বাস করো, এই দুঃসহ মুহূর্তেও
স্বপ্ন ফুরোচ্ছে না...


আর যদি মরে যাই, তবে
মৃত্যুর আগমুহূর্তেও তোমাকে
ভাবতে ভাবতে মরে যাব,
থেকে যাবে শুধু একটুকরো হাহাকার...
এ জীবনে তোমাকে আর পাওয়া হলো না!


এই বুকে অনেক ব্যথা জমে আছে, সৈকত!
যদি টিকে না থাকি শেষপর্যন্ত,
যদি সত্যিই আমায় নিয়ে যায় এই মহামারি,
তবু একটা আফসোস থেকে যাবে...
তুমি আমায় কখনও বুঝলে না।


পুরো পৃথিবী যেখানে আছে মৃত্যু নিয়ে,
সেখানে আমি আজও থেকে যাচ্ছি তোমাকে নিয়ে...
এমন জীবনের সত্যিই কি কোনও মানে হয়, সৈকত?


এ পৃথিবী ব্যাধিতে আক্রান্ত হবার বহুআগে থেকেই
ভালোবাসায় আক্রান্ত।
পৃথিবীতে শ্মশান নেমে এলেও কিছুই থেমে থাকে না।
আমার শোবার ঘরের ঘুলঘুলিতে চড়ুইপাখিটা মা হয়েছে।
ওদের বাসায় যে অতিথি এল, তার একটা নাম দেবে?