অভিমান কিছু সতত সুখের

 আমাকে দুমড়ে রাখ, মুচড়ে রাখ, রাখ তোমার যেভাবে খুশি…
ওতেই আমার সবটুকু সুখ!
তবু যাবার কথাটি ভুলেও কখনও এনো না মুখে।
‘বিচ্ছেদ’ শব্দটা বড্ড ভারি! ওখানে তো নতুন কিছুই নেই…
কেবলই ক্লান্তি আর বিষাদ ছাড়া আর কিছুই ওখানে দেখি না আমি।
আমি ভালোবাসতে বাসতে সত্যি কখনও ক্লান্ত হব না…বলে রাখছি। ইচ্ছে হলে মিলিয়ে নিয়ো।
ভাবছ তুমি, হুমকি দিচ্ছি? নিজের ভালোবাসায় আস্থা কিংবা দাপটের বড়াই…এমনি করেই ভাবছ বুঝি?
…ভুল ভাবছ। যা ভাবছ, তা কখনওই নয়।
যে শ্বাসের প্রয়োজনে আমি এখানে এসেছি, তা যে কতটা ঝড়ও বয়ে আনতে পারে,
সে আমি জানি…সে আমি আঁচ করেই এখানে এসেছি।
 
ভালোবাসতে গেলে, ভালোবাসা রাখতে গেলে…আকাশে মেঘ জমে, ঝড় হয়, বৃষ্টি নামে…
আবার ঠিক ঝুপ করে রৌদ্রটাও পড়ে…ফাঁকি দেয় না।
ওসব আমার জানা আছে খুউব!
আমি যে কষ্ট গিলতে শিখেছি, আঘাতের ভয়ে সরে যাবার মানুষ তো আমি নই।
অবশ্য তুমি স্বেচ্ছামুক্তি নিতেই পার, তোমায় ধরে রাখি, বেঁধে রাখি…এত আমার শক্তিই-বা কই!
আমি যে শুধুই ভালোবাসতে জানি, বেঁধে রাখার ছলকৌশল…সে এখনও আমার অচেনাই আছে!
আমি ভালোবাসব, বেসেই যাব, বাসতেই থাকব…আমি যে শ্রান্ত হবার নই!
যে নদীতে ডুবিয়েছি হাঁটু, তাতে পুরো শরীর ভেজাতে ভয় পাই না, জ্বর আসে তো…আসুক না জ্বর!
 
আমায় কখনও মনখারাপের গল্প বোলো না, ওসব আমার ভাল লাগে না।
আমায় শুধুই ভালোবাসার গল্প বলবে, আদরের গল্প শোনাবে…আরও কাছে আসার, মায়ায় বাঁধার গল্প…
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জীবন পার করে দেয়ার গল্প আমায় শুনিয়ে দিয়ো।
আচ্ছা, তুমি আমায় এমনি করেই ব্যস্ত রাখতে পার না সারাজীবনই?
যদি রাখ, চোখের এক পলকেই কেটে যাবে সবটা জীবন!
ভালোবাসার মানুষের কাছে ছেড়ে যাবার গল্প বলতে নেই…তুমি কি বোঝই না এসব?
তবে কেন ওসব বল? ছেড়ে যাবার ভয়টা কেন দেখিয়েই ছাড়?
ওসব শুনলে সত্যি আমার ভীষণ ভয় হয়!
আর কখনও বোলো না ওসব! বরং বোলো, পরেরবার যখন কাছে আসবে, তখন আরও কতটা বেশি ভালোবাসবে…
শোনো না ওগো, পরেরবার কাছে এলে আমাকে বিগত ভালোবাসা-ঋণের চেয়েও একটু বেশি বাসতে দেবে?
 
কালকে তুমি ভালোবাসবে কি না সেটা নাহয় বুঝব কালকে,
আমি আগেভাগেই অত বোঝাবুঝি চাই না গো!
আজকের দিনে আমি শুধু আজকেরটাই চাই!
আমার ঘরে ওসব বাকিতে লেনাদেনা সব বন্ধ রেখেছি!
আজকে আমায় দেবে, বলো, একসমুদ্র ইচ্ছে-খুশির ভালোবাসতে? দেবে একপৃথিবী গল্প জুড়তে?
আজ আমায় দাও করতে আমার যেমন খুশি…সবটা বেশি!
পরেরটা যে আগেরটারই হাত ধরে চলে আসে ঠিকই!
 
আগে আমায় কী ভাবাত, জানো?
কালকে তোমায় কী লিখি…চিঠিতে আমার কী রাখি!
প্রথম দিকে কী এক দুশ্চিন্তায়ই না গেছে কেটে কয়েকটা দিন!
এই ভেবেছি, সেই ভেবেছি মনেমনে…না জানি তুমি এমন আবোলতাবোল লেখা পেলে…
আমাকে বোধহয় খেয়েই ফেলবে জ্যান্ত কাঁচা, নয়তো হেসেই হবে কুটিকুটি!
তুমি তো জানোই, সদ্য আমি ভাষা শিখেছি, বর্ণমালা অবধি যাইনি এখনও,
সেখানে আমার গল্পলেখার সাধ্যটা কই!
শিশুর মতন আবোলতাবোল রাতে কি দিনে খই ফুটছে, এই তো বেশি!
 
যখনই তুমি বললে হেসে, যা খুশি লিখো…লেখার আবার জোর কীসে?
যেন তখনই হল রাজ্যজয়! এখন দেখি, কী অনায়াসেই অনেক কথা লিখে ফেলা যায়!
আজকেরটা ফেললে লিখে কালকেরটা আপনিই আসে হাতটা ধরে…
আমার যে পুরো রাজ্যই তোমার মাঝে ভেসে বেড়ায়…
তখন কি আর ভয়টা আসে? এলেই-বা কী? যাবেই তো ধ্বসে!
আমাকে ওলট করো, পালট করো…ওপরে তোলো, নিচেই ফেলো…ভালোবাসো কি মন্দই বাসো ভয় নেই তো!
যা খুশি করো, শুধু আমাকে ভালোবাসাটুকু বাসতে দিয়ো…
 
তোমার যে খুব ক্ষমতা…বাসতে যদি না দাও ভালো, তবে ভালোবাসি আর কী করে, বলো?
তবুও বোলো না…চলে যাব, চলেই যাও…ওসব আমার সহ্য হবে না…ও কাজ বড়োই শক্ত কঠিন!
বরং তুমি…সত্যি আমি বলছি ভেবে…থেকেই যেয়ো!
আমার এই দুচোখের মণির ফাঁকে অনেক কিছুই গেছে চলে, ওগুলি আর চাই না আমি…আসুক ফিরে!
আমার এই এক জীবনের শেষে, মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়ে শুধু তুমিই এসো!
আমার চোখের তারায় এক বিকেলের রৌদ্র হয়ে,
জীবন ফুরোবার শেষ প্রহরে…আমার শেষ রাত্রির শেষ ক্ষণটি হয়ে শুধু তুমিই এসো!
এই জীবনের ভোর-আকাশের শুকতারাটির আলো হয়ে,
কিংবা একটা সাঁঝের ক্লান্তির পর একদুপুর জিরিয়ে নেবার ফাঁকটা হয়ে শুধু তুমিই এসো!
তোমায় ছাড়া বাঁচা…সে যেন আর কিছুই নয়…যেন হৃদয় ছাড়া একটি খাঁচা!
 
আমার পুরোটা জীবন কেটেই যাবে…শুধু জানতে তোমায়,
তোমার চোখের ভাষা বুঝে উঠতেই পার করে দেব হাজারটা ক্ষণ,
তোমার বুকের ঘ্রাণটা মেঘে সারাপথই পার করে দেব অভাব ছাড়াই!
ভাবতেই পার…কেন বুকেই শুধু চাই লুকোতে…
রাজ্যের যত ভালোবাসা সব…ওখানেই যদি জড়ো করে রাখ,
তা হলে আমি আর যাবটা কোথায়?
 
কখনওবা, খুব বুঝি জানতে চাও…কী চাই আমার?
বলছি শোনো, সারাটি জীবন তোমার কাছে এই আমি-টা যেন শুধুই বোকা থেকে যাই!
তোমাকে বুঝতে-বুঝতেই যেন বেলা ফুরিয়ে আসে…
এক জীবনে এর চেয়ে বেশি মানুষ কী চায়, বলো?
প্রতিদিনই তো মনেমনে বল, এই, তুমি এত পাগল কেন?
স্থির হয়ে নাও, আস্তে লিখো, ধীরে বলো, গুছিয়ে চলো!
তোমায় ভেবে প্রতিটি মুহূর্তে কী যে অস্থির হয়ে থাকি…আমায় যদি সবটা সময়ই…
এমন মাতাল করেই রাখ…তবে আর স্থির হয়ে থাকি কেমন করে!
 
তুমি আমার অভিমান বোঝ না, রাগ বোঝ না, কষ্ট বোঝ না…কিচ্ছু বোঝ না তুমি আমার!
তোমার একটু কথা শোনার জন্য, তোমার একটা ফোনের জন্য…
আমাকে হাজার বছর প্রতীক্ষায় থাকতে হয়…একদমই বোঝ না তুমি আমায়!