অলস চোখে দেখা

 
ঘুমন্ত ট্রেনগুলি কুয়াশায় গর্জন করে,
ওদের আশেপাশে কয়েকটি বড় ক্ষেত বেকার ঘুরছে।
পুরানো পৌত্তলিক মন্দিরের দরোজায়
ধূপের গন্ধ।
এক পাহাড়ের পাদদেশে অর্ধনগ্ন মানুষের
একটি বিশাল বাহিনি কাঁপছে এবং কলহ করছে।
সে কলহের সহজ নাম অকারণ কলহ।


সাথে কাঁদছে মহাসড়ক,
ওদিকে বাগানে ঝর্ণা কাঁপছে,
তার নিচে ধ্যানরত দম্পতিরা প্রেমে বুঁদ হয়ে আছে দেড়শ বছর ধরে।
হ্রদে মৃত পাতারা ঘুরছে।
একগুঁয়ে, ধূসর কেশের বয়স্ক
পুরুষরা বাতাস কাঁপিয়ে হাসছে,
এবং কেবল বৃদ্ধরাই, খুব বৃদ্ধ হয়ে গেছেন যাঁরা,
তাঁরা নতুন করে ক্লান্তির অর্থ খুঁজতে বসেছেন।
আমরা ওঁদের কাছ থেকে আশীর্বাদ চাইছি,
ওঁরা আমাদের কাছ থেকে অবসর চাইছেন।


ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর মানুষের চাইতেও ক্ষুদ্র পিঁপড়াদের জন্য
প্রার্থনা করা হোক, ওদের মধ্যে প্রাণ ছড়িয়ে যাক।
নদীতে প্রচুর পরিমাণে মাছ থাকতে হবে,
বনের মধ্যে শহর ঢুকে না পড়ুক, বন হয়ে উঠুক আরও বুনো,
এবং সবারই জীবনে আর কিছু থাক না থাক, স্বস্তিটুকু যেন থাকে।
ধন্য সেই মহিলারা, যাঁরা আজও ভালদের দয়ার চোখে দেখেন,
স্বামীদের সাথে সুর মিলিয়ে হাসেন।
তাঁদের ঘরে সুখ আসুক, তাঁদের সুন্দর সন্তান হোক।
ধন্য সেই সোনার ছেলেরা, যারা নির্জন মাঠে
আমার ক্ষয়েযাওয়া হাড়গুলি বাঁচিয়ে রাখে।


কবিরা নির্ঘাত তাদের বানানো বসন্তটি থেকেই পালিয়ে যায়,
কিংবা বিতাড়িত হয়।
তাদের ঠোঁট শুকনো, সেখানে চুম্বনের কোনো চিহ্ন নেই,
ওরা যা উচ্চারণ করে, তা কেবল কানেই শোনা যায়,
একসময় ওদের মরেযাওয়া ইচ্ছেগুলি শীতল হয়ে যায়,
এবং ওদের নিষ্প্রাণ মুখগুলি বরফের মতো সাদা হয়ে যায়।
ওদের সমস্ত স্বপ্ন মহাকাশে উড়ে চলছিল, তবে লুপ্ত তেজে।
আজ অসহায় কবিরা কেবল পাপীদের চুমু খেয়ে বেঁচে আছে।


সূর্যের চাইতেও জ্ঞানী তারারা আগেআগে চলে,
কখনও থামে না, কোথাও না, এমন-কী শহরের
সবচাইতে জাগ্রত মন্দিরের উপরেও ওরা কখনও থামেনি।
বোধ এবং স্বচ্ছতা একটি বড় গাছের পেছনে লুকিয়ে ছিল,
আমার ভ্রমণের রুটি তেতো স্বাদের ছিল,
সাথের পকেটঘড়িটা বন্ধই হয়ে গেল।
এবং আমার সাথে পেয়েছি এক দুর্দান্ত ছায়াকে,
মনে হয়েছিল, ছায়াটা মৃত্যুর।
আমার মুখ থেকে দামি কিছু বের হয়নি,
কেবল একটিই মূল্যবান সম্পদ রেখে দিতে পেরেছিলাম শেষ পর্যন্ত, সেটির নাম হাসি।


আমি কি তবে ধ্বংসস্তূপ দিয়েই যজ্ঞের বেদী সাজিয়ে নেবো?
কচি কংকালের বাহুগুলি আজও ভোরের পথ দেখায়।
ওরা আমার প্রিয়, দেরিতে হলেও
আমি পুষ্পিত গুল্মগুলির ভেতরে এক টুকরো তাজা হাসির সন্ধান করছি,
কেননা, বস্তুত, আমি পৃথিবীর শেষটিকে ভয় পাচ্ছি।
আজ এক পরিত্যক্ত মন্দিরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, আমি
সেই পেটুক মৃত্যুকে আশীর্বাদ করি,
যিনি তাঁর কালো পোশাকের নিচে
একদিন জীবন দেখিয়েছিলেন।


গলিত আইসক্রিম,
কিছু দুর্দান্ত অপ্রকাশ্য প্রেম
মাঠগুলিতে ফুঁকছে
সুখের জন্য দীর্ঘায়িত, বেদনাদায়ক, অন্তহীন কান্নায়।
ছোট পায়রাগুলি তাদের ধবধবে সাদা ডানাগুলি মেলে দিয়ে
সিগারেটের প্রচুর ধোঁয়ায় ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে।
এইবার বুঝি একটু বিপ্লব কিংবা
আধটু পুনরুত্থান হলে ভালই হবে!


আকাশের দিকে প্রসারিত দীর্ঘ বাহুগুলি
বসন্তের জীবনকে বিঘ্নিত করে।
কেউ কি কখনও দুঃখকে অপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যটাতে পৌঁছতে পেরেছে?
দোর্দণ্ড প্রতাপের সিংহগুলি বিশাল পাথরের সমাধির উপরে
নীরবে শুয়ে থাকে। ওদের বেলায় দুইদিন ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই
তৃতীয় দিনটির মৃত্যু হয়েছে।


………এবং এইসবের অন্য কোনও সমাধান না হলে আমি বরং
একটি শান্ত নদীর তীরে শুয়ে থাকবো।
জলের গণ্ডগোল স্থলের সারল্যের চাইতে বরাবরই উপাদেয়।