অসহায়ত্ব


এক।



ভালোবাসা আজ আমাকে বড্ড অসহায় করে দিয়ে চলে গেছে,
আমি ভালোবেসেছি রানি হতে, অথচ আজ কিনা ভিখিরি হয়েছি,
তবু আক্ষেপ নেই, তুমি তো ভালো আছ, আমার তাতেই চলবে।
পেছনের কথা তুলব না আর,
কেননা অতীত তো হয় ভালো মন্দ দুই-ই মিলিয়ে।
আমাদের ছেলেমানুষিগুলো,
আমাদের পাগলাটে সব ভালোবাসা,
আমাদেরকে বরং কাছেই এনেছে…সরিয়ে দূরে!



ছেড়ে দিয়েছি অধিকার যত টান-ভালোবাসার,
জেনেছি অবশেষে, ভালোবাসার কোনও হয় না অধিকার।
ভালোবাসা কেবলই ভালোবাসা, দিনের শেষে!
ভালোবেসে অধিকার করতে নেই,
ভালোবেসে কিছু চাইতে নেই ভালোবাসার মানুষটির কাছে,
...এমনকি ভালোবাসাটুকুও নয়!
ভালোবেসে শুধু ভালোবাসার মানুষটিকে সহ্য করে যেতে হয় আমৃত্যু,
ভালোবাসার মানুষটির কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যেতে হয়,
ভালোবাসার মানুষটি যা বোঝায়, তা-ই বুঝতে হয়,
ভালোবাসার মানুষটি ভালোবেসে কিংবা নিতান্ত অবহেলার ছলে যতটুকু দেয়,
ততটুকুই দু-হাত পেতে গ্রহণ করতে হয়,
ভালোবাসার মানুষটি যতটুকুতে রাখে, ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়,
ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষের সব কিছুকে মুখ বুজে কেবলই সহ্য করে যেতে হয়,
ভালোবাসার মানুষটি যা-কিছু বলে, সব কিছু শুনে যেতে হয়,
কেননা ভালোবাসার মানুষটি যা-কিছু করে, যা-কিছু ঘটায়,
তার সবই তার ভালোবাসার অংশ।
সেই ভালোবাসাকে অগ্রাহ্য করলে যে ভালোবাসার মানুষটিকেই অগ্রাহ্য করতে হয়!



যদি ভালোবাসো, তবে ভালোবাসার মতো করে ভালোবাসো,
কেননা ভালোবাসায় প্রাপ্তি সবসময়ই অঢেল হয়,
কখনও সে সম্পদ আমাদের সুখ দেয়,
কখনওবা ডেকে আনে দুঃখ।
আর যদি হিসেব করি দেনাপাওনার,
তবে যে ভালোবাসার মানুষটিই আর থাকে না সেখানে!



ভালোবাসা, তুমি এলে,
কিছুই হলো না চাওয়া,
চাইতে চাইতেই চলে গেলে…



দুই।



আচ্ছা, মানুষটার কি কখনও এতটুকুও মনে পড়ে না?
কষ্ট হয় না কখনও?
ইচ্ছেও কি হয় না শুনতে, আমার কণ্ঠস্বরটুকও?
তবে আর আমি কেন ভালোবেসেছি এতদিন?
আমি কি পারিনি নিজেকে বোঝাতে?
আমি কি এতটাই দুর্বোধ্য ছিলাম তার কাছে?



আচ্ছা, এই মুহূর্তে যদি দম আটকে কিংবা অন্য কোনওভাবে হঠাৎ মরে যাই?
মানুষটি কি পারবে সেই কষ্টটা সহ্য করতে?
তার কি আদৌ কোনও কষ্ট হবে?
কখনও কি মানুষটি খোঁজ করবে আমার?
হে বিধাতা, ভালোবাসায় এ তুমি কেমন শাস্তি দাও?
আমার যতটুকু ছিল এই মনে, তার সবটাই তো ঢেলে দিলাম,
রাখিনি গোপন কিংবা গচ্ছিত নিজের কাছে তার কিছুই,
সবই দিয়েছি দু-হাত ভরে,
তারপরও কি পারিনি তাকে বাসতে ভালো?
তারপরও কি আমার কোনও খুঁত থেকে গেল?



প্রভু, কেন তবে এমন সব অদ্ভুত পথে এনে দাঁড় করাও আমাকে?
যা তুমি দেবেই না খেতে, সে আহার কেন তবে দুই ঠোঁটের সামনে এনে তুলে ধরো?
কেন মারো রোজ, অথচ আমি যে জানতে পারিনি কিছুই আগে!
প্রতি মুহূর্তে এই যে তাকে ভালোবাসি,
মুহূর্ত থেকে মুহূর্তে এই যে তাকে কাছে পেতে চাই,
তার সাথে ভাবনায় কিংবা মনের ভাষায় কথা বলি রোজই, যখন তখন,
রোজই তাকে চিঠি লিখে যাই,
কিংবা যে মুহূর্তগুলো সম্পূর্ণ মুষড়ে পড়ি কষ্টে ব্যথায়,
কিংবা ভালোবাসায়,
সে মুহূর্তেও তার সাথেই কেবল কথা বলে চলি,
তাকেই কেবল ভাবতে থাকি,
আমার শূন্যতা,
আমার পূর্ণতা,
আমার প্রাপ্তি কিংবা অপ্রাপ্তি,
আমার অবসর,
আমার প্রতি মুহূর্তের সচেতনতা এবং অবচেতনতা জুড়ে কেবলই তার নাম,
তারপরও কি সে বোঝে না কিছুই?



সে কেবলই দূর থেকে আরও দূরে সরে যায়,
যত বাঁধতে যাই ভালোবাসায়, তত বারই যেন
সরে সরে যাই তার থেকে আরও একটু দূরে,
ভালোবাসি যাকে, কেন সেই মানুষটিই কেবল থাকে সরে সবচে বেশি?
যখন দূরে সরে যায়,
যখন আর কিছু দিয়েই আগলে রাখতে কখনও না পারি,
তখন নিজেকে যে বড্ড অথর্ব লাগে,
নিজেকে মনে হয় ভালোবাসার এক ব্যর্থ আত্মা,
নিজের দিকে তাকাই আরও নিঁখুত করে, আর দেখি বারে বারে,
নিজের ভেতরে কিছু এমন কি আছে, যা করে চলে আমার ভালোবাসার বিরূদ্ধাচারণ?



এতটা আবেগ, এতটা ভালোবাসা দিয়ে কী হলো তবে,
যদি এই হৃদয় তার ভালোবাসা মানুষটিকেই না পেল কখনও?
আদৌ কি আমি ভালোবাসার সত্তাটি হতে পেরেছি?
না কি কেবলই ভাঙাগলায় বাঁধতে চাইছি সুর?
এ যেন এক যুদ্ধ,
এ যেন সাক্ষাৎ মৃত্যু আমার!
ভালোবাসা নাকি খুব সহজ কিছু?
অন্যদের দিকে তাকালে পরে তা-ই যে দেখি,
তবে কেন পারি না আমি?
আমার হয়েছে কি কিছু ভুল?
হয় ভুলটা ধরাও, নইলে আমায় ধরো!



তিন।



ইচ্ছে হলে বকো,
ভুলভাল কিছু বলে ফেললে বকো যত ইচ্ছেখুশি,
কিন্তু আর যা-ই হোক, কথা তো বলো!
ইচ্ছে হলে নাহয় একগাদা বকা ঝেড়ে দিয়ো,
নাহয় একটু রাগ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দিয়ো যতটা খুশি,
কিন্তু তবুও…কথা তো বলো!



আমি আর কত অপেক্ষা করে যাব, বলো?
মনকে আর কত কিছু দিয়ে বোঝাব?
তোমার শূন্যতা এই মন যে আর মানতে চাইছেই না,
প্রতিক্ষণে মন যে আমার উপরে বেঁকে বসছে, আমি কী করব তার?
কী দিয়ে মনকে বোঝাব বলো, তুমি সত্যিই নেই?
আমার তুমিটা নেই, সে হারিয়ে গেছে!
আমি নাহয় বুঝি, কিন্তু মন যে মানতে চায় না!
মন যে কেবলই তার আত্মার সঙ্গীকে চায়, খোঁজে সারাক্ষণই!



ভাবে সবাই, জ্বরে ভুগে এভাবে পড়ে থাকি বুঝি,
আমি তো জানি, আমার এই জ্বর যে অন্য রকমের জ্বর,
এই জ্বর যে তুমি ছাড়া সারবারই নয়!
কেন পিষছ এভাবে, রোজ রোজই একটু একটু করে?
কেন দেখছ না, হৃদয়ে আমার কতটা ধরে?
আমি কি কেবল ঝগড়ার অজুহাতই খুঁজি?
আগ বাড়িয়ে গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধাতে আসিই আসি?



অথচ আমার ভেতরে যে আগুন জ্বলে তোমাকে না পাওয়ার?
সে আগুন যে আমাকে বেদুইন করে দেয়,
সে আগুন যে নেভে না কিছুতেই,
আমি কোথায় যাব এই আগুন নেভাতে?



তুমি যদি কেবল বলে দিতে এইটুকু যে,
ভালোবাসি তো, পাগলামোটা আর কোরো না!
তাহলেই কি সব যেত না ঠিক হয়ে?
আমিই কি শুধুই কথার সাথে কথা প্যাঁচাই?
আমার যে তোমার এইটুক কথাতেই সব ঠিক হয়ে যায়,
এইটুকও বলতে তোমার ভীষণ বাধে?



যদি ভালোই বাসো, তবে এইটুকু বলতে গেলেও আটকে কেন যাও?
কেন বোঝো না তোমার ভালোবাসাই যে আমার কাছে সব কিছুই?
আমি তো নিয়েছি মেনেই, সব দোষই আমার,
আমাকে যা শাস্তি দেবে দাও না দিয়েই,
তবুও ভালো তো বাসো আগের মতো!
তবুও কথা তো বলো সেই পুরনো আদলে!
তুমি কথা না বললে আমি যে দম আটকে মরতেই থাকি প্রতিক্ষণে!