(যখন স্টুডেন্ট পড়াতাম, তখন স্টুডেন্টদেরকে সারমর্মের নোট তৈরি করে দিতাম। এরকম কিছু সারমর্ম নিচে দিয়ে দিলাম। পরে সময়সুযোগ পেলে আরও দেবো। আপনাদের কিংবা আপনাদের পরিচিত কারোর কাজে লাগলে, আমার ভাল লাগবে।)
দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,.............(চৈতালি - সভ্যতার প্রতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
ইটপাথরের শহুরে সভ্যতায় নাগরিক মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। এখানকার যান্ত্রিক আবহে নেই কোনও প্রশান্তি, জীবনের পরমার্থিক আলোচনা। মানুষ তাই ফিরে পেতে চায় শান্ত-সমাহিত প্রাচীন তপোবনের বিলাস-বিসর্জিত পরিবেশ।
বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা..................(গীতাঞ্জলি/৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
বিপদঝঞ্ঝা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। আত্মশক্তিতে বলীয়ান মানুষ জাগতিক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রবঞ্চনায় হতোদ্যম না হয়ে স্বীয় চেষ্টায় সকল বাধাবিপত্তি অবলীলায় অতিক্রম করে।
মহাজ্ঞানী মহাজন/ যে পথে ক’রে গমন/ হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়,............(জীবনসঙ্গীত / হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)
অতীতের যশস্বী মানুষ যে অক্ষয় পথে গৌরব অর্জন করেছেন, আজকের মানুষকে সেই পথ প্রেরণা যোগায়। সংসার-জীবনসাগরে গা ভাসিয়ে না দিয়ে যথার্থ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কৃতিত্ব প্রদর্শনই কর্তব্য।
বহু দিন ধ'রে বহু ক্রোশ দূরে............(স্ফুলিঙ্গ - ১৬৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
সুন্দরের পূজারি মানুষ সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য বহু অর্থ ব্যয় করে, কষ্ট স্বীকার করে দূরদূরান্তে গমন করে। অথচ তার নিকট পরিবেশের সহজ উপভোগ্য সৌন্দর্য তার কাছে চিরকালই উপেক্ষিত থাকে।
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলই দাও.............(সুখ, আলো ও ছায়া। কামিনী রায়)
স্বার্থসর্বস্ব মানুষ আত্মসুখের দিশায় আজীবন ছুটে মরে। স্বার্থক্লিষ্ট আত্মবিসর্জিত সেই সুখ একদিন তার জীবনে বোঝা হয়ে ওঠে। নিখিল মানবের সাথে সমভাগী হয়ে যে অনির্বচনীয় সুখ পাওয়া যায়, তাতেই নিহিত রয়েছে প্রকৃত সুখের ঠিকানা।
বসুমতি, কেন তুমি এতই কৃপণা,...........(ভিক্ষা ও উপার্জন, কণিকা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
শ্রমলব্ধ ধনসম্পদ অর্জন করতে যে কষ্ট করতে হয়, তাতেই মানুষের গৌরব বাড়ে। যে প্রাপ্তি অনায়েস-সাপেক্ষ, তাতে দাতার মর্যাদা থাকলেও গ্রহীতা পদে-পদে লাঞ্ছিত হয়।
ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,..........(নৈবেদ্য-৭০। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
বিবেকস্থিত ন্যায়শক্তিকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করে সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করা মানুষ মাত্রেরই কর্তব্য। কিন্তু ক্ষমা যেখানে দুর্বলতা বলে পরিহাসিত, সেখানে চরম কঠোরতা অবলম্বনই সমর্থনযোগ্য।
কোথায় স্বর্গ?/ কোথায় নরক?/ কে বলে তা বহুদূর?..........(স্বর্গ ও নরক। শেখ ফজলল করিম)
স্বর্গ ও নরকের ইহজাগতিক উপলব্ধি মানুষের স্বীয় জীবনপ্রবাহের মধ্যে নিহিত। অসূয়া-বিসর্জিত মানুষ প্রেমপ্রীতির ডোরে আবদ্ধ হলে পৃথিবীতে স্বর্গসুখ নেমে আসে। কিন্তু হীনচেতা মানুষ বিবেকদংশনে ইহজগতেই নরকযন্ত্রণা ভোগ করে।
হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান.........(দারিদ্র্য। কাজী নজরুল ইসলাম)
দারিদ্র্য যন্ত্রণাদায়ক, কিন্তু দুঃখের তীব্র দহনে নিকষিত মানুষ অসঙ্কোচ-বিস্ফারিত কণ্ঠে নির্মম বাণী প্রকাশের প্রেরণা পায়। অতি দারিদ্র্য মানুষের কল্পলোককে ঊষর মরুতে পরিনত করে। মানবজীবনে এটিই দারিদ্র্যের নেতিবাচক দিক।
পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে............(চৈতালি - বঙ্গমাতা| রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
দেশের সকল অধিবাসীকে যথার্থভাবে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। সুখদুঃখের পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নিখিল প্রান্তরে নিজেকে অধিষ্ঠিত করার মাধ্যমে সংকীর্ণ আত্মসংস্কারের বেড়াজাল ছিন্ন করে বিশ্বমানবের বন্ধনে জীবনে প্রতিষ্ঠা অর্জন করা যায়।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;...........(ছাড়পত্র। সুকান্ত ভট্টাচার্য)
প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে নতুনের আগমনে পুরাতন বিদায় নেয়। জীর্ণ পৃথিবীর সকল দৈন্য, গ্লানি, বদ্ধসংস্কার ও ধ্বংসস্তূপকে দূর করে তাকে নবীন প্রজন্মের বাসযোগ্য করে গড়ে তোলাই আমাদের কাম্য।
স্বাধীনতা স্পর্শমণি সবাই ভালোবাসে,.........
স্বাধীনতা মানবহৃদয়ের সকল দহনজ্বালা তিরোহিত করে প্রশান্তির সন্ধান দেয়; পদাহতকে সাহস যোগায়, হৃদয়হীনের অন্তরে জাগিয়ে তোলে পরমকাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা।
শৈশবে সদুপদেশ যাহার না রোচে,/জীবনে তাহার কভু মূর্খতা না ঘোচে।...........(উপযুক্ত কাল। রজনীকান্ত সেন)
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করলে পরবর্তী সময়ে সে কাজ অসম্পন্ন থেকে যেতে পারে। তাই জীবনকে সার্থক করতে হলে সততা, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতার যথার্থ অনুশীলন করতে হবে।
সবারে বাসিব ভালো, করিব না আত্মপর ভেদ...........(মৈত্রী। আবদুল কাদির)
পৃথিবীতে মানুষে-মানুষে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ঈর্ষা-অসূয়া, হানাহানির যে সংকটময় অবস্থা বিরাজমান, তা অপনোদন করে প্রীতি, ভালোবাসা, সৌহার্দ্যের ডোরে মহামিলনের সংগীতে নবস্পন্দনের শুভসূচনা করতে হবে।
নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো.............
পরনিন্দাকারী অপরের দোষত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে সংশোধনের সুযোগ করে দেয়। এতে মানুষ আরো সুন্দর ও পবিত্র জীবনযাপনের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা অর্জন করে।
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,/সবার আমি ছাত্র,..........(সবার আমি ছাত্র। সুনির্মল বসু)
পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অফুরান সম্পদের বিচিত্র ভাণ্ডারই শিক্ষার প্রকৃত উৎস। প্রকৃতিরূপী সুমহান শিক্ষক প্রতিনিয়তই মানুষের কৌতূহল নিবৃত্ত করে।
প্রভু, দণ্ডিতের সাথে/ দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমানে আঘাতে/ সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।.............(কাহিনী - গান্ধারীর আবেদন, ১৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
বিচার ন্যায়শক্তির বহিঃপ্রকাশ। দণ্ডিত ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব বিচারকের হৃদয়ে সংবেদনশীলতা জাগ্রত করলেই প্রকৃত বিচার নিশ্চিত হয়।
আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি,...........(প্রতিদান। জসীমউদ্দীন)
অপরের চরম আঘাত সহ্য করে ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে যথার্থ মনুষ্যত্বের পরিচয় ঘটে। অন্যের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে নিজের সুখ বিসর্জনের মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।
বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি, সে আমার নয়।/ অসংখ্য বন্ধন-মাঝে মহানন্দময়......(আত্মপরিচয় – পর্ব ১। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
ইন্দ্রিয়বৃত্তিকে রুদ্ধ রেখে, জগতের সমস্ত পবিত্র আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রেখে আত্মার মুক্তি অর্জন করা সম্ভব নয়। বিশ্বচরাচরের বিচিত্র সৌন্দর্যলাভের মাধ্যমে সুন্দরের যথার্থ উপলব্ধিতেই প্রকৃত মুক্তি ঘটে।
হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়.........(হে মহাজীবন। সুকান্ত ভট্টাচার্য)
ক্ষুধা নামক জৈবিক চাহিদা দ্বারা মানুষ অনুক্ষণ তাড়িত হয়। বুভুক্ষু মানুষের কাছে কল্পনাবিলাস পরিহাস বলে পরিগণিত হয়। দুর্ভিক্ষের দিনে মানুষের কাছে কাব্যের ছান্দিকতা অপেক্ষা গদ্যের কঠোরতাই শ্রেয়তর বলে মনে হয়।
ধন্য আশা কুহকিনী।...........(আশা, পলাশির যুদ্ধ। নবীনচন্দ্র সেন)
আশার বশবর্তী হয়ে মানুষ সংসারসাগরের মায়ায় আবদ্ধ হয়। ভবিষ্যৎ সুদিনের সম্ভাবনায় মানুষ কাজ করে; অমোঘ মোহে জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। আশার কাছে মানুষ তাই ক্রীড়নক।
সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।...........(স্বদেশ-২৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
জন্মভূমির ন্যায় প্রীতিময়, সুমহান স্থান এ জগতে বিরল। জন্মভূমির স্নিগ্ধ রূপ আমাদের হিয়ায় আনন্দের হিল্লোল বইয়ে দেয়। তাই দেশের মাটিতে অন্তিম শয্যা সকলেরই পরমার্থিক কামনা।
পরের মুখে শেখা বুলি পাখির মতো কেন বলিস?............(-কামিনী রায়)
বিধাতাপ্রদত্ত স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে পরের অন্ধ অনুকরণ আত্মহত্যার নামান্তর। পরের মুখাপেক্ষী না হয়ে আত্মশক্তির যথার্থ স্ফুরণেই স্থাপিত হয় অক্ষয় কীর্তি, চিরন্তন গৌরব।
আসিতেছে শুভ দিন,/দিনে-দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা,...........(কুলি-মজুর। কাজী নজরুল ইসলাম)
নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত শ্রমজীবী মানুষের সেবায় স্বার্থান্বেষী ধনিক শ্রেণীর সুখে থাকার দিন শেষ হয়েছে। এবার দৈন্যগ্রস্ত শ্রমিকের ঋণশোধ করার সময় এসেছে। তাই তাদের ব্যথাহত হৃদয়ের আর্তিতে আজ শোনা যায় নব জাগৃতির বাণী।
দৈন্য যদি আসে, আসুক্, লজ্জা কিবা তাহে? মাথা উচু রাখিস্।...........(লক্ষ্যপথে। যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত)
জীবনে শত আঘাতের মধ্যেও অপরের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের ধৈর্য ও মনোবলকে সম্বল করে দুঃখদারিদ্র্যকে প্রতিহত করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।
আমার একার সুখ, সুখ নহে ভাই...........
বিশ্বমানবের সুখ-দুঃখের সমভাগী হয়ে আত্মার নিবিড় বন্ধনে রচিত হয় যথার্থ সুখের আত্মীয়পল্লী। তাই নিঃসঙ্গ নিভৃতচারী হয়ে প্রকৃত সুখের উপলব্ধির চেষ্টা বাতুলতা মাত্র।
তোমারি ক্রোড়েতে মোর পিতামহগণ/ নিদ্রিত আছেন সুখে জীবলীলা‐শেষে..........(জন্মভূমি। গোবিন্দচন্দ্র দাস)
জন্মভূমির পরম লালিত্যে গড়া মানুষ একদিন জন্মভুমির পুণ্যভূমিতেই খুঁজে পায় শেষ ঠিকানা। এই অমোঘ সত্যের ধারাবাহিকতায় সবাইই পুরুষ পরম্পরায় স্বভূমির কোলেই আশ্রয় নিতে উন্মুখ।
একদা ছিল না ‘জুতো’ চরণ-যুগলে...........(দুখের তুলনা। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার)
নিষ্পেষিত ও দলিতজনের দুঃখের অনুভূতিতে স্বীয় কষ্টের অনুভূতি লাঘব হয়। নিজের জীবনপ্রবাহের ক্ষুদ্র বলয়ের বৈশ্বিক সম্প্রসারনের মাঝেই জীবনের প্রকৃত তাৎপর্য নিহিত।
6 comments
ধন্যবাদ দাদা।
ভালো লেগেছে
আমি আপনার সাইটের নিয়মিত ভিজিটর। একাডেমিক সেকশনে আরও লেখা আশা করছি।
Nice
Eto unique kore o sohoj o sundor kore Bangla summery er age kokhono porini. Dhonno bad nai ba dilam. Kritoggotai moner kothai onuperana hisebe sob somoy thaken Sir apni
ধন্যবাদ স্যার