আঁধারঘরের স্বগতবিলাপ

 পৃথিবী ভাল নেই একটুকুও,
কেউ এখানে থাকে না ভাল,
ভালথাকার যে পৃথিবী, হারিয়েছে কবেই!
 
মাঝেমাঝেই খুব মনে হয়,
দারুণ একটা স্বর্গ কিনি,
থাকবে তুমি, থাকব আমি, থাকবে সাথে
ভালোবাসা কিছু, আর অসীম আকাশ।
 
সুখের জন্য নয় পৃথিবী,
কালকের দিন ভালই ছিলেম, আজ ভাল নেই,
আজ ভাল আছি, কালকের দিন আসলে দেখি, কই ভাল আছি!
এইতো জীবন! সুখী কে, বলো?
মৃত্যু ধ্রুব, তবু সে দুঃখের,
এতো ঘটা করে অতো ভাবছ কী মিছে?
 
সব থেকে যা কষ্টদায়ক, আমরা তাকে মৃত্যু বলি,
প্রতিদিন তবু মৃত্যু ছুঁয়েই ভুল করেও বেঁচে উঠি!
যেন বাঁচব বলেই খুব মরে যাই,
যেন সুখ ছোঁবো বলেই দুঃখটা পাই।
তোমার খোঁপায় গোলাপ গুঁজে,
কাঁটার ঘায়ের রক্ত লুকাই হাসিমুখে।
অশ্বত্থের ওই শেকড় ছুটে যেখানে থামে,
তত গভীরে লুকিয়ে ব্যথা
হেসে বলে উঠি, বেশ তো আছি!
 
বোঝো নাতো তুমি, সন্ধে হলেই,
কেন হু হু ছোটে বাতাসের স্রোত,
থেকেথেকে ডুকরে কাঁদে বৈশাখী মেঘ এই অবেলায়,
ভাল আছি খুব, তাই না, বলো?
পৃথিবীতে কে ভাল থাকে, হায়!
এখন তো দেখি, ভাল থাকতেই খারাপ থাকে,
ভালথাকার মোহ ফুরোতেই সবাই কেমন খারাপে বাঁচে!
 
মনে পড়ে, খুব ভালোবাসতাম?
বিনিময়ে কষ্ট পেতাম, তবুও ভীষণ ভালোবাসতাম!
চলে গেলে! সব ছেড়েছুঁড়ে তুমি চলে গেলে!
শূন্য হতে কেমন লাগে, বুঝিনি আগে!
তোমাকেই শুধু বেসেছি ভালো অতো গভীরে,
ব্যর্থ এমন প্রতীক্ষাতে সেকেন্ড ঘোরে--যেন ফুরোয় বছর!
এমন হলে যে কেমন লাগে, জানতটা কে!
জানলে কি আর এতটা সেধে মৃত্যু নিতাম?
 
আর কেউ কখনও হাঁটেনি আমার ভাবনা জুড়ে,
ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম; ভাবতাম তাই, তোমাকেই চাই--প্রয়োজনে নাহয় জীবনই দিলাম!
বুকের ভেতর বয়ে যেত ঝড় তোমার প্রেমে...
ফিরে এলে হায়! হাতড়ে দেখি, বেদনার এক নীল মুখোশে তোমার ফেরা!
কাটল প্রহর আগের মতই, ভালথাকা আর হয়নি আমার!
ফিরে এলেই যায় না বাঁচা.....বরাবরই তো ভালথাকার অন্য নিয়ম, অন্য ধরন!
 
বেঁচে যেতাম একটুখানি ভালোবাসা পেলে! হায়, তাও ছিল না!
ছিল অবহেলা আর করুণা....ভালই তো এলে! বললে মুখে, এ তো তোমার প্রাপ্য, জেনো!
ভালোবাসে যে--ভিখিরির প্রাণ!
কষ্ট, আঘাত সব সয়েও ঠিকই ফিরে আসে!
ভালোবাসাটা ভোলার চেয়েও অনর্জিত কষ্ট সহজ!
 
নেই কষ্ট--সে কি আবার মানুষ নাকি?
মানুষ হলেই কষ্ট বোনাস!
আগে ভাবতাম, আর কিছু পাই বা না পাই,
ভালোবাসার প্রতিদানে একটু নাহয় কষ্ট পাব!
ঢের হয়েছে, সাধ মিটেছে! অতো বেশি সাধ সাধ্য-অতীত!
 
কী যেন গেঁথে গভীরে বুকের, নিবিড় জ্বালায় বইত আগুন,
শুধু মনে হত, এই বুঝি তুমি বাসবে ভালো,
টানবে কাছে, বলবে হেসে, এই, শোনো না! ভাল আছ তো?
কখনও তো হায় বাসোনি ভালো! ভালোবাসলে কী হয়, বলো?
 
আমি মানুষ চেয়ে পুতুল পেয়েছি!
আর কিছু নয়, চেয়েছি তোমাকেই--এর চেয়ে বড় সত্যই নেই!
হারিয়ে বুঝি, এর চেয়ে বড় ভুল হয় না!
এ মনের ঠিক কতটা জুড়ে তুমি ছিলে শুধু, বোঝোনি কখনও!
সুস্থ মাথায় অতটা ভালো কেউ বাসে না,
তাইতো আমায় পাগল বল!
ভালোবাসা যদি পাগলামি হয়,
ভালো না বেসেও পাগল পোষা--সে কী তবে?
 
বুঝতে না পারার কষ্টের চেয়েও বোঝাতে না পারার কষ্ট বড়,
এইটুকুও বোঝোনি তো তুমি...দরকারই বা কী!
বুঝলেই বরং কষ্ট বেশি!
এ হৃদয়উঠোন চেয়েছে যারাই, ফিরিয়ে দিয়েছি তোমার দাবিতে,
তোমার প্রেমে সত্য হতে আর কোনও প্রেমে পড়িনি বাঁধা,
ভালোবাসা থাক দূরে থাক, ভাললাগাটাও আসেনি কখনও!
 
শুনেছি, পুরুষের যে ভালোবাসা, সে নাকি শরীর দিয়ে, সেখানে নাকি মনটা ফিকে!
ওরা পোশাক যেমনি বদলে ফেলে, তেমনি আরেক প্রেমিকা মেলে একটা গেলে!
ওই আদিমতা কেবল পুরুষেই মানায়, সবাই বলে!
তবে তুমি কেন এমন হলে? কোন নিয়মে?
ভালোবাসা কোনও খোঁজে না ছুতো,
ছেড়ে গেলে যেদিন, কত অজুহাত!
বলিনি কিছুই, হেসেছি কেবল,
ভালো কখনও বাসতে নাতো--খুব বুঝতাম,
সব বুঝেও ভালোবাসতাম...হারানো তো সোজা--কষ্টের মতন!
 
চলেই গেলে...কত সহজেই!
ভালই তো আছ অন্য ঘরে!
চাওয়া একটাই--তবু ভাল থাকো শান্তি নিয়ে!
পাগলের মত বকতাম যখন, “অ্যাই, ভালোবাসি!”
শুনে হাসতে, না, খুউব?
বোঝেই না যে, ওকে বোঝানোটা বোকামি ভীষণ!
হাত ছেড়ে দেয়া দারুণ তো আর্ট!
শিখে নেয়া যায় যত আগেভাগে, ততই ভাল!
 
পেয়েছি কী বলো, এতো ভালোবেসে?
চলে যে গেছ, ভালই হয়েছে...
পরের চেয়ে আগের দহনই মধুর বেশি!
শুধু ভালোবাসা চেয়ে,
হারিয়েছি সবই!
ইচ্ছেগুলির অনিচ্ছেতে মৃত্যু হল,
রিক্ত হাতে কেমন করে ফিরিয়ে দিলে!
 
এ দুবাহুয় জড়িয়ে নেবো নিবিড়ভাবে!
হৃদয়ের যত তৃষ্ণা আছে, মিটিয়ে নেবো!
চোখের পলকে ঠোঁট কেঁপে যাবে কতশত বার!
এক ছোঁয়াতেই মিটিয়ে দেবো এ জন্মেই জন্মের দায়!
স্বপ্নবুননে কতকত সুখ--হল না কিছুই...তুমি চলে গেলে!
 
চেয়েছি যখনই, ঠেলেছ হেলায়,
বাসলে ভালো খুব কি ক্ষতি?
আমার যত ইচ্ছে ছিল, স্বপ্ন ছিল, প্রেরণা ছিল--
পুড়েছে সবই তোমার খেলায়!
তুমি ভালোবাসাকে খুন করেছ ইচ্ছে করেই খুনির মতন!
ওরা ভালোবেসে প্রেয়সী পেল,
আমি কী দোষে ঘাতক পেলাম?