আকাশ হব

 শোন না আকাশ,
ব্যস্ত নাকি?
আয় না কাছে,
বোস না খানিক,
এই পাশেতে।
একটা কথা বলতো আমায়,
একটু ভেবে, একটু বুঝে,
ফাঁকটুকুও রাখিস না তুই বলার ফাঁকে।
এই যে সবাই হৃদয় দিয়ে
খুব আদরে তোকে ডাকে,
তোর চোখেতে উদাস চোখে
হারিয়ে দারুণ সুখ খুঁজে নেয়,
থাকে চেয়ে অপলকে তোরই কায়ায়,
রৌদ্রসুখের পরশ মাখে,
ক্লান্তি জুড়ায় তোর শরীরের মেঘের মায়ায়।
তোর ভাবনায়
গল্প ছোটে, কবিতা ঢোকে মাথার ঝোঁকে,
গানটা আসে হাওয়ায় ভেসে,
গুনগুনিয়ে তোরই নেশায় নীল-ধূসরের গায়ে মেশে।
তোর অসীমে মন মজিয়ে
দুঃখ ভুলে সুখের খোঁজে খেয়াল আঁকে,
ওড়ায় ঘুড়ি, নাচায় নাটাই, নানান রঙের স্বপ্ন সাজায়।
এসবকিছু মানিয়ে মেনে বেশ তো আছিস নিজের মতো!
একটু ভেবে সত্যিটাকে বলতো দেখি,
তুই যা আছিস, তোর যা আছে,
ওইটুকুতেই ভর করে স্রেফ
এসবকিছু পাস বা কীসে?
তোর নিজেকে সত্যি করে
তুই যতোটা বুঝিস চিনিস,
ওই ততোটা কেউ জানে না, কেউ বোঝে না।
তাইতো তোকে ঠিক চিনতে
তোর কাছেতেই শুধাই সাধি
মনের প্রাণের এটুক কথা।
 
তুই কেবলই শূন্য আকাশ,
থাকিস দূরে, পাই না ছুঁতে।
তবু কত করিস মাতাল
এই আমাদের সকাল বিকাল,
শূন্যে মিলাই অসীম বেগে,
কী যাদু তোর, হারাই দিশা।
 
এসব শুনে, অভিমানে,
কাঁদবে বলে লুকায় মেঘে
আচমকাতে।
মুখটা ভীষণ গোমড়া ঢঙে
ওঠে কেঁপে, “আসি তবে।
থেকো ভালো। খোঁজ রেখো না
ভুলেও হঠাৎ, কেমন আছি।”
লুকায় আকাশ এটুক বলেই!
 
আকাশটা নেই, সুখটা উধাও!
দ্বৈধ বলে,
অমন কথা বলতে আছে?
কোন অহমে সবকিছুতেই ঠোঁটটা নাড়াস?
কিছু না বলার জিতটা যে কী, বুঝবি কবে?
বুদ্ধু ওরে,
ভালোই যখন বাসিস অত
এসবকিছুর মানে কত?
আকাশটাতো পা ধরেনি
আর বলেনি, বাসতে আমায় হবেই ভালো!
তোর খুশিতেই বাসিস ভালো--এ তো মানিস!
কেন তবে বিষাদটাকে ঘরের মাঝে আনিস ডেকে?
এমনি করেই ইগোর খেলায় সবসময়ই হারিস জিতে!
 
দ্বৈত আহা! খেপিস কেন?
আমার কথায় খারাপটা কী?
মানুষ কেন বাসছে ভালো,
চলার পথে ভুললে সেটা, হোঁচট আসে--আসেই আসে!
সাবধানে পা ফেললে আকাশ,
বাঁচবে দারুণ মনের মতন!
জীবন চলে জটিল ধাঁধায়, বুঝলি নাকো!
দেখিস না তুই,
ছাড়ায় আকাশ বিশাল তেজে
ওর নিজেকেই, খেলায় হেলায়
কী হাসিতে জয়ীর বেশে ওঠে মেতে!
দেখিস তো তুই,
কেমন করে শূন্য আকাশ
বৃষ্টি আঁকে বুকের মাঝে!
রঙধনুটাও ছড়ায় ছটা ওর ইশারায়,
রৌদ্র হাসে, মেঘের চিঠির খামটা খোলে।
রাত্রি নামে, ওই আকাশের ঘুম ভেঙে যায়
নিযুত তারার রাজ্যে এসে।
ওর ঘরেতে হাজারটা ঘর--
এই খুশিতে উদার মনে ঠাঁই সে যোগায়
সকলজনে। ভাবতে পারিস, মহৎ কত!
তুই কাঁদলে আকাশ কাঁদে,
তুই হাসলে আকাশ হাসে,
কান্নাহাসির আলপনাতে যায় মিলিয়ে মিষ্টি আকাশ।
বললে কথা, চুপটি আকাশ কান পেতে রয়,
বকলে তবু রাগ করে না, মুচকি হেসে টানে কাছে।
বিশাল চোখে দৃষ্টি ছাড়ে আকাশমিতা,
বিরাট রথের বহর ছোটায় পথের ধারায়।
দেখিস কি তুই,
মন যে আমার আকাশ ভেবে
এইটুকু ওই মুখটা লুকায় লজ্জারাগে!
 
কথার কথন চলছে যখন,
এসব দেখে, আকাশ হাসে শান্ত ঠোঁটে।
অধরযুগল ছোঁয় কাঁপিয়ে আমার কানে--
এই যে আমায় রাখো মনে,
ওই আদরে শক্ত বাঁধো আপন ঘরে,
প্রাণের পরশ দাও বুলিয়ে ভালোবাসায়,
হৃদয় সেধে আমায় ডাকো স্নেহের ছায়ায়--
সত্যি করে বলছি শোনো,
ভালোবাসার অমন যাদুয়
বাঁচছি কেন, বাড়ছি কেন,
জানি নাকো!
নাও না ধরেই,
বাসার মতো একটু ভালো,
কিছুই আমার নেইকো মোটেও।
তবু আমায় বাসছ ভালো,
মাতছ নেশায় আমার মায়ায়,
আমার খেলায় কাটছে বেলা এই তোমাদের,
আমার সুরে বাঁধছ জীবন।
এমনি করে সব হারিয়ে সবই জেতা--
জিতের মানে এই বুঝেছি, আর কিছু নয়।
 
আকাশ কেন আকাশ হলো,
মন আকাশের কেমন বড়ো,
নিলাম বুঝে।
নিজের কথা সব লুকালো,
কৌশলে তার রঙ চেনালো,
প্রশ্নপিঠেই প্রশ্ন ছুঁড়ে
উত্তরটুকুই জানান দিলো!
আমায় তোকে করলো বড়ো,
নিজের প্রভা রাখলো আড়াল।
দ্বৈধ রে তুই, এমন বিনয় রাখিস বোধে।
 
আসবে সেদিন
যেদিন আঁধার বিদেয় হবে,
আলোর শরীর আলিঙ্গনে স্বার্থ ভুলে
অসীম সীমায় ছড়িয়ে রবো।
ভাবছি বসে,
আমরা কবে আকাশ হব?