আর কতটা ছায়া মাড়ালে পরে

তোমাকে বাদ রেখে কী-ইবা লিখব আমি? আমি কি পেরেছি এখনও তোমার মধ্য থেকে বের হতে? পারিনি তো, পারি না তো! পারব যে-দিন তোমার মধ্য থেকে বের হতে, সে-দিন নাহয় অন্য কিছু নিয়ে লেখার কথা ভাবা যাবে। এখন তুমি বাদে আর অন্য কিছু নিয়ে লেখার সময় আমার কই? তুমি কি দাও আমাকে অন্য কিছুতে মন বসাতে? আমি ভালো লাগছে না বললেই তো অমনিই জানতে চাও কী হয়েছে, কেন হয়েছে…একসাথে হাজার প্রশ্ন তখন তোমার! আমি তার কতটা জানি কী হয়েছে আমার? আদৌ কি জানি কিছুই? আমি আগেও পারতাম না, আজও পারি না গুছিয়ে কিছু বলতে। কী যে হয় এই ভেতরটাতে, ওসব অত সহজে বলা যায় না, যা-ই বলি, কম হয়ে যাবে। আগে যখনই তোমাকে ভেবে খারাপ লাগত, খুব মনে পড়ত তোমার কথা, খুব ইচ্ছে হতো তোমার কাছে যেতে, তোমাকে ইচ্ছে-খুশিমতো আদর করতে, তখন তো নিজেকে ভূতের মতো ব্যস্ত রাখতাম! এখন তো তাও তোমাকে এসব বলতে পারি দেখে একটু হালকা লাগে, আগে তো বলতেও পারতাম না। তোমার উপর রাগ হতো, অভিমান হতো, অভিযোগ হতো, আবার নিজের মাঝেই সব ফুরিয়ে যেত। আচ্ছা, তুমিই বলো, তোমার প্রতি যত অভিযোগ আর অনুযোগ আমার, সেগুলি আমি তোমার কাছে ছাড়া আর কার কাছে করব? আমার তুমি ছাড়া কে-ইবা আছে? আর অন্য কাউকে কেন-ইবা বলব? তোমার কথা তোমাকেই বলব। রাগ-অভিযোগ-অভিমান-অনুযোগ সবই তোমার কাছে করব, আবার কান্নাও করব, এবং সবশেষে ভালোও বাসব। ব্যস, মিটে গেল তো? মানঅভিমানের সময় আগে বই পড়তাম, কাজ করতাম, কাজ না-পেলে কাজ বের করে নিয়ে করতাম, প্রয়োজনে এক কাপড় দুবার ভাঁজ করতাম, এক ঘর দুবার পরিষ্কার করতাম, বেশি খারাপ লাগলে বাইরে চলে যেতাম…কী করব, বলো…রুমে একা থাকলেই তুমি জাপটে ধরতে যে!

দিনের পর দিন আমি একাএকাই নিজের মাঝে সারাক্ষণই পাগলের মতো হয়ে থাকতাম, কাউকে তো বলতে পারতাম না, অজস্র মুহূর্ত কেঁদেছি, নিজের উপর কেমন যেন রাগ হতো এই ভেবে যে, না জানি কী এক আজব রোগ বাধিয়ে বসলাম! তুমি তো বশ করোনি, কখনও করোনি। তোমার কোনও দোষ ছিল না। আমি নিজেই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি, তুমি আর কী-ইবা করতে সেখানে! অচেতন অথবা সচেতন যেভাবেই করি না কেন, যা করেছি, আমিই করেছি। এ দায় শুধুই যে আমার একার। আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়, আমি খুব ভালোবাসার কাঙাল? জানো সোনাপাখি, কাল যখন বন্ধুদের সাথে বড়োদিনের উৎসবে ঘুরতে গিয়েছিলাম, ওরা তখন আমাকে বারেবারে সারাটা সময় বকেছে। আমি নাকি ওদের সাথে আছি ঠিকই, কিন্তু আমার মন অন্য কোথাও পড়ে আছে, আমি কেন জানি এসব বুঝতে পারি না, জানো? তবে হ্যাঁ, ওদের সাথে সময় কাটাতে আমার মোটেও কেন জানি না ঠিক ভালো লাগছিল না। ওরা বলছিল, আমি নাকি অনেক ফাঁকিবাজ হয়ে গেছি, বের হলেই বাসায় যাবার তাড়া জুড়ে দিই। ওদের সাথে রাত ৮টা পর্যন্ত ছিলাম, আমি কী করব, ওরা জোর করে রেখে দিয়েছিল যে! আমার যে এসব কোলাহলে অযথা সময় কাটাতে এখন আর ভালো লাগে না, ওসব ছেড়েছি অনেক আগেই। তাই বলে যে প্রয়োজনের সময় কোলাহলে চলতে পারি না, সে কিন্তু নয়। ওই প্রয়োজনটুকু পর্যন্তই, বাকিটা সময় আমার একাই ভালো লাগে। আর একা থাকলে যে তোমার সাথে নিশ্চিন্তে কথা বলতে পারি। কবে যে তোমার সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবে বসে গল্প করতে পারব! পারব কখনও? কখনও পাব তোমাকে ওভাবে করে? এখন যখন তোমার সাথে কথা হয়, তুমি তো আমাকে বুকে জড়িয়ে নাও মাঝেমাঝে, আমাকে ‘সোনাপাখি’ বলে ডাকো, আমার খুব ভালো লাগে তখন।

আচ্ছা, আমি কি বাচ্চাদের মতো করছি? সত্যি করে বলো তো? আচ্ছা সোনা, তুমি আমাকে এতটা আদর করে রাখ কেন? এত আদর করে কেন কথা বল? তুমি অমন করলে খুশিতে আমার কান্না পায়। আমি কি সারাদিন কাঁদব নাকি? কষ্ট তো ভুলেও দাও না, তা হলে আর চোখে কষ্টের জল কী করে ঝরবে? চোখে এভাবে জল জমে গেলে পরে যে আর কাঁদতেই পারব না। তখন আমি বাঁচব কী করে? জানো, কাল আমার বন্ধুরা আমাকে বলেছে, আমি নাকি যে-কোনও সম্পর্কই চালিয়ে নিতে পারি, আমি নাকি এর মাঝে নিজের পছন্দ বুঝি না, আমাকে যা ধরিয়ে দেওয়া যাবে, আমি নাকি সেটা দিয়েই চালিয়ে নেব, কিন্তু এটাকে নাকি বাঁচা বলে না! অথচ আমি এইসব পার্থক্যগুলি কখনও বুঝিনি। আমি ওভাবে কিছু বুঝি না। আমি এত বছর পর এখন ভালো আছি, একটু আনন্দে বাঁচতে শিখেছি, তা হলে কি আমি এটা নেব না, বলো? আমার মন যে একটু সুযোগ পেলেই চোরের মতন তোমার কাছে চলে যায়, আমি কি ইচ্ছে করে করি নাকি এসব! আমি তাও চেষ্টা করেছি নিজেকে ব্যস্ত রাখতে, তোমাকে ভুলে থাকতে…সত্যি বলতে কী, তোমায় কখনও জ্বালাইনি তো ওভাবে! তার পরও যে নিজেকে ধরেবেঁধে রাখতে পারি না, তা হলে আর কী করব, বলো তো? তুমি হয়তো ভাবছ একাএকা থাকি বলে এমন হয়, বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে! কিন্তু আমি তো নিজেকে জানি, দেখে তো এসেছি জোর করে কতটা পারি…আমার কাছে ওভাবে জোর করে সংসার করা গেলেও শোওয়া যায় না। আমি যে পারি না। আমি যখনই ভাবি, এই শরীরটাকে এমন কেউ ছোঁবে, যাকে আমি পছন্দ করি না, তখনই মনে হয় আমি বোধহয় লাশের মতো পড়ে থাকব তখন। এখন যেমন ইচ্ছে না হলেও অনেক কিছুই শুধু করতে হয় বলেই করি, ঠিক তেমনই। এখনও যেখানে আমার মন বাঁধে না, সেখানে আমার শরীর যেতে চায় না। আর আমি যদি একটা মানুষের সাথে থেকেও তাকে গ্রহণ করতে না পারি, অন্তত তার অধিকারটুকু তাকে দিতে না পারি, তা হলে এমন সম্পর্কের প্রয়োজনটা কী? আর সারাজীবনই-বা আমি এ বোঝা কী করে বয়ে বেড়াব? আর সেও তো আমাকে পরিপূর্ণভাবে না পেতে-পেতে একটাসময় অভিযোগ করে বসবে, অশান্তি করবে, আর এ থেকেই হয়ে যাবে সন্দেহের শুরু। মানুষ যখন পরিপূর্ণভাবে কিছু না পায়, তখন ওখান থেকেই তো সন্দেহ বাসা বাঁধে।

ভালোবাসা না-থাকলে পছন্দের ঊর্ধ্বে গিয়ে তো আর পরিপূর্ণভাবে কিছু দেওয়া যায় না। আমি আজকে তোমায় সব কিছু বলতে পারি, কোনও কিছু লুকাতে হয় না, কারণ আমি সম্পূর্ণভাবেই নিজেকে তোমাকে দিতে পেরেছি। তোমার কাছে আড়াল করার মতো কিছুই আমার নেই। আর সে-জন্য তুমিও কখনও জোর করোনি, বাধ্য করোনি। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে যদি তোমার কাছে নিজেকে দিতাম, তা হলে আমি অবশ্যই ওই সময়টা পালিয়ে বেড়াতাম তোমার কাছ থেকে, অথবা এড়িয়ে যেতাম, অথবা যেনতেনভাবে শেষ করতে হবে বলেই ওটা করতাম। মানুষ যখন একটা বন্ধনে জড়ায়, তখন অদৃশ্যভাবে তার বিপরীত মানুষটার প্রতি কিছু চাহিদা এসে যায়। যদি আমি সে চাহিদা পূর্ণ করতেই না পারি, তা হলে শুধুশুধু কী দরকার সেখানে নিজেকে জড়িয়ে প্রতারণা করার? আমার তো কোনও অধিকার নেই অন্যকে ঠকাবার। কারণ তারও ভালো থাকার অধিকার আছে।

হ্যাঁ, আমি পালিয়েই বেড়াচ্ছি–নিজের কাছ থেকে, অন্য সবার কাছ থেকে। আমি কাউকে কিছু বোঝাতে পারি না, আবার যখন মনকে এগুলি মেনে নিতে বলি, বিভিন্ন যুক্তি দেখাই, মন তখনই বেঁকে বসে, বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। বিষয়গুলি বাইরে থেকে দেখলে ঠিক বোঝা যায় না, অথচ ভেতরটা তোলপাড় হতে থাকে। এগুলি বলে বোঝানো যায় না, কাউকে বললে সে-ই বরং উল্টো বুঝিয়ে দেয়। আমি সবার কাছ থেকে সময় চাই, আর একটু আর একটু আর একটু সময়…আমি বুঝি, আজকাল ওরাও আমাকে জোর করতে ভয় পায়। ওরা হয়তো কিছুটা বুঝতে পারে। ওদের ভয় পাওয়াটা ঠিকই আছে, কেননা আমি না-চাইলে কারও পক্ষেই আমাকে জোর করে অন্য সম্পর্কে বেঁধে দেওয়া সম্ভব হবে না। আর এখন আমার কাছে আমার মনের প্রাধান্যই সবচাইতে বেশি। মনের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমি আর কিছু করব না। আমি অনেক অনেক করেছি ওসব! অনিচ্ছায় কোনও কিছু বয়ে বেড়ানো এখন বড্ড কষ্টের। নিজের কাছ থেকে পালিয়ে আসলে বাঁচা যায় না। একটাসময়ে তা হলে সব একসাথে ভেঙে পড়ে। আমি ভেতরটা অস্বীকার করে বাহিরটা নিয়ে থাকতে পারব না, থাকতে চাইও না। আমার কাছে, বিয়েটা আসলে শুধু শারীরিক প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে হয় না, ওই একটা কারণকে মুখ্য হিসেবে নিলে পরে অন্য সব কিছুই কেমন যেন বড্ড বেমানান আর বেসামাল হয়ে পড়ে। শারীরিক সম্পর্কও মানসিক পরিপূর্ণতা থেকেই আসে। আমার কাছে বিয়ের অন্য অংশগুলির মতো শারীরিক সম্পর্কও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশমাত্র। আর যখন ভালোবাসার সাথে শ্রদ্ধা, ভরসা, বিশ্বাস, পছন্দ এসব না থাকে, তখন একটাসময় শুধু শারীরিক সম্পর্কের জের ধরে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাটা এক ধরনের বোঝার মতন মনে হয়।

যাকে মানুষ মন থেকেই গ্রহণ করে ফেলে, তার অন্য সব কিছুই মেনে নিতে, মানিয়ে নিতে তার অসুবিধা হয় না। তখন অন্য জিনিসগুলিও অকপটে অবলীলায় চলে আসে। তার জন্য সব করা যায়, সব ছাড়া যায়। সেই সম্পর্কটাও আস্তেআস্তে যেন আরও রঙিন হতে থাকে, আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ভালোবাসা পাবার চাহিদাও যেন তার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে, এতটুকুও ক্লান্তি আসে না, সম্পর্কটা ফিকে-পুরনো হয় না, একঘেয়ে লাগে না। বরং তখন তাকে ছাড়া একটা দিন কাটাতেই ভীষণ বিরক্ত লাগে। চোখ দুটো শুধু তাকেই খুঁজতে থাকে। তার কাছে সব কিছু বলতে না-পারলে মনে হয়, কী একটা যেন গলায় আটকে আছে…ওটা নামছে না কেন! কখন সে আসবে আর কখন তাকে সব কিছু বলব, এমনই হাঁসফাঁস লাগে! তার একটু হাসির জন্য অনেকটা উজাড় করে দেওয়া যায়, তার মনের মতো হতে ভালো লাগে। রাগ, অভিযোগ, অভিমান সব কোথায় যেন হারিয়ে যায়। সম্পর্ক তো এমনই হয়! যদি না হয়, তবে অযথা সেখানে নিজেকে আটকে রেখে, আটকে থেকে কী লাভ? কীসেরই-বা দায় অত? কোন সে নিয়ম? যদি কোনও ঘর নড়বড়ে হয়, তা হলে বুঝতে হবে সে-ঘরের ভিত্তি পোক্ত নয়। তখন বাইরে থেকে যতই জোর করে ধরেবেঁধে জোড়া লাগিয়ে রাখা হোক বা কেন, সে একটা সময় তা ভেঙেই পড়ে। কত দিনই-বা সম্ভব আটকে রাখা!

আজকাল কেন জানি তুমি একটু চোখের আড়াল হলেই ভীষণ কান্না পায়। মনে হতে থাকে, তুমি হারিয়ে গেছ, তোমাকে বুঝি আর কখনও খুঁজে পাব না। হাজারবার ফোন চেক করি তুমি টেক্সট করলে কি না দেখতে। মোবাইলে টেক্সট না এলে মেসেঞ্জারে চেক করি, আর যদি দীর্ঘসময় তোমাকে অনলাইনে না পাই, তখন বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে। চোখ দুটো খুব করে খুঁজতে থাকে তোমাকে। বারেবারে তোমার প্রোফাইল চেক করি, বারেবারে মন প্রশ্ন করতেই থাকে…মানুষটা কোথায় গেল, কই আছে, ভালো আছে তো, কী করছে, এখনও কেন এল না, একটা টেক্সটও তো করল না…যখন আর সহ্য করতে না পারি, তখন বাধ্য হয়ে আমিই টেক্সট করি। মাঝেমঝে তোমাকে যখন খুব বেশি মনে পড়ে, কিন্তু কাছে পাই না, তখন ইচ্ছে হয় বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দিতে, যদি তা হলে তুমি আস, এসে আদর কর, বুকে জড়িয়ে নাও…এই লোভে। আমি আসলেই খুব বেশিই তোমার ভালোবাসার লোভী। এমন কেন হয় আমার? আমি কি অতিরিক্ত কিছু বা বাড়াবাড়ি করে ফেলছি? আমি কি আটকাব নিজেকে? তুমি কি চাও আমি আর এমন না করি? আমাকে তুমি কোনও বিষয়েই কিছুই বল না, কেন বল না তুমি? তুমি আমাকে অনেক কথা বলতে পার না? সারাদিন আমাকে যখনতখন জ্বালাও না কেন? সবাইকে যখন দেখি তাদের ভালোবাসার মানুষেরা তাদের সাথে সবসময় দুষ্টুমি করে, মজা করে কথা বলে, রাগিয়ে দেয়, আবার রাগাতে রাগাতে নিজেরাই গিয়ে একটা কিছু আদর করে বলে সব রাগ জল করে দেয়, তখন ওদের ওসব দেখে আমারও খুব ইচ্ছে হয় তুমিও আমার সাথে অ্যাত্তো অ্যাত্তো কথা বল, আমাকে রোজরোজ নানানভাবে জ্বালাও, তোমার যতযত কথা আছে, সব আমাকে বল, আমাকে বকে দাও খুব করে, আবার আদর কর…আমার খুব ইচ্ছে হয় তোমার কাছে বসে তোমার চারপাশটা ঘিরে থাকতে!

তুমি কেন আমাকে জ্বালাও না? তুমি সারাদিন যখনই সময় পাও, তখনই আমাকে অ্যাত্তো অ্যাত্তো প্রশ্ন করবে, না হলে আমাকে করতে বলবে, আর আমি সারাদিন তোমাকে টেক্সট করব। জানো, আমি তোমাকে সারাদিন টেক্সট করতে ভয় পাই, তুমি যদি ভীষণ বিরক্ত হয়ে যাও, তার পর যদি আর কথাই না বল, তখন কী হবে? আমাকে একটু বলে দাও না আমি কী করব তোমার বেলায়, কীভাবে চলব! তোমার শূন্যতা আমি কী দিয়ে পূর্ণ করব, বলো তো? অন্য কারও সাথে কথা বললেও যে আমার ভেতরে খারাপ লাগে আর লাগতেই থাকে। আমার ভেতরটাতে কী ঘটে প্রতিটি মুহূর্তে, আমি সে-সব টের পাই। আজকাল সবাই আমাকে নিয়ে এত টানাটানি কেন যে করে, আমি তার কিছুই বুঝতে পারি না। কী চায় ওরা? ওরা কি আমাকে একটু একাএকা তোমার সাথে থাকতেও দেবে না? যতটা চাই নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে, ততই যেন নতুন-নতুন ঝামেলায় আটকা পড়ে যাই। সোনাপাখি, আমি তোমাকে কবে কাছে পাব, কবে আমি একটুখানি তোমার বুকের গভীরে মাথা রেখে শক্ত করে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারব? আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না। আর কোথাও ভালো লাগে না আমার। আমার শুধু তোমার অভাব, আর কিছুতেই আমার কিছু এসে যায় না। কেউ কিছু মনে করলেও এসে যায় না। আমি ভাবলাম, তোমার ছুটির দিনগুলিতে তোমাকে তোমার মতো করে থাকতে দেবো, একদমই বিরক্ত করব না, এজন্য টেক্সটও করতে চাই না, কিন্তু সবসময় এটা মনে থাকে না। ঠিকই একটা অভ্যাসের মতো, রুটিনের মতো সোজা ফোনে হাত চলে যায় কীভাবে যেন!

আজ হঠাৎ করেই অতীত ফিরে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার জীবনটা কেমন হতো সে-দিন যদি হুট করে কোথা থেকে ওভাবে আমার জীবনে চলে না আসতে! একটা আকস্মিক ঝড়ে যখন এ জীবনটা পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, সে-দিন তুমি কোথা থেকে যেন একঝোপ রোদ হয়ে এসেছিলে আমার এই শূন্য পৃথিবীর প্রতিটি কোনা জুড়ে। একটার পর একটা কী যে সব ঘটে চলছিল তখন! এখন ভীষণ ইচ্ছে হয় জানতে, আমি বোঝার আগেই কি তুমি বুঝে গিয়েছিলে তোমাকে আমার কতটা প্রয়োজন! এখন যে ঢের বুঝতে শিখেছি তুমি আমার নতুন জীবনেরই বার্তা বয়ে এনেছিলে। সেইসব দিনগুলিতে সারাক্ষণ সৃষ্টিকর্তার সামনে মাথানত করে পড়ে থাকতাম। খুব করে সাহায্য চাইতাম তাঁর কাছে। আমি নিজের ইচ্ছেমতো কিছুই চাইনি তখন, কারণ আমি নিজেই জানতাম না, বুঝতামও না কী চাই আমি অথবা কী প্রয়োজন আমার। শুধু জানতাম, এভাবে বাঁচা যায় না, আমার বাঁচতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার ঠিক মনে আছে, আমি তখন খোদাকে বলেছিলাম, আমি ঠিক-ভুল, ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিত কিছুই জানি না; বুঝি না আমার জীবনের জন্য কোন পথে হাঁটা আমার জন্য ভালো হবে; আমি জানি না কী করব; কোন পথে যাব, তাও অজানা; কীভাবে কোথায় পৌঁছব, তারও কিছুই জানা নেই। হে খোদা, তুমিই আমাকে পথ দেখাও–সে পথটি, যে পথ আমার জন্য সবচেয়ে উত্তম, অথবা তুমি যা-যা ভালো মনে কর, আমার জন্য তা-ই করো। আমি তখন নিজেকে বলেছিলাম, যেহেতু আমি কোন পথে যাব, কী করব, তার কিছুই বুঝতে পারছি না, সেহেতু আমার জীবন আমাকে যে-দিকে নিয়ে যাবে, আমি সে-দিকে সেই পথ ধরেই কোনও বিচার-বিবেচনা না করে শুধু স্রষ্টার ইশারায় হাঁটতে থাকব। তবে আমি সবসময় সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চেয়ে গেছি।

এরপর…তোমার ভিটে ছাড়া আর কোনও দরজাই আমার জন্য খোলা ছিল না, অথবা হয়তো ছিল, কিন্তু আমার মন সে-দিকে টানেনি বলেই যাইনি। তুমি আমার সচেতন কি অবচেতন, দুটি মনেরই সচেতন সিদ্ধান্ত ছিলে। সে দিনগুলিতে সব কিছু তোলপাড় করে কী যেন একটা খুঁজছিলাম, কিন্তু আমি নিজেও জানতাম না আমি কী খুঁজছি অথবা কেনই-বা খুঁজছি। শুধু মনে হতো, কী যেন নেই, সেই কী যেনটা খুঁজতে খুঁজতেই তোমাকে পেয়েছিলাম। তোমাকে পাবার পর সেই শূন্যতা আর কখনও আমার হয়নি। আমার মন বারেবারেই বলেছে, আমি এই মানুষটিকেই খুঁজছিলাম। তুমি আসার পর আমার জীবনে অন্য যা-কিছুই ঘটেছে, আমি কখনও ভয় পাইনি। আমার কেন যেন সবসময় মনে হয়েছে, আমি সব কিছুই এখন সহ্য করতে পারব। যত ঝড়ই আসুক, আমি ঠিকই মাথা উঁচু করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব। তুমি আসার পর থেকে সব কিছু কেমন জানি ধীরেধীরে বদলে যেতে লাগল। আমার অনেক কিছুই আসলে আর আগের মতো নেই। আমি যখন পেছন ফিরে তাকিয়ে আগের আমিকে দেখি, তখন আশ্চর্য হই এই ভেবে যে, এই আমিটা এমন ছিলাম আগে!

পুরনো আমিকে এখন আর আমার ভালো লাগে না। পেছেনের পুরো একযুগ আমি যা-কিছু সহ্য করেছিলাম, সেগুলির প্রতি আমার অজস্রবার ঘৃণা জন্মেছে। প্রশ্ন জেগেছে মনে, কেন ছিলাম অমন? কেন অত কিছু মুখবুজে সহ্য করে গেছি? কেন নিজেকে অযথাই অমন কষ্ট দিয়েছি? কেন ওই মানুষগুলিকে অতটা ভয় পেয়েছি? মাঝেমাঝে মনে হয়, তুমি কেন যে আর একটু আগে এলে না…না, তুমি আমাকে এই জীবনের মানেটা কখনও হাতে ধরে হিসেব করে শিখিয়ে দাওনি, অথচ আজ এত বছর পর আমি বুঝতে পারি, তুমিই প্রথম আমাকে এই জীবনের পথে হাঁটতে শিখিয়েছিলে! আমার চলার এই কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ যখনই আমি ভয় পেয়ে আঁতকে উঠেছি, তখনই তুমি পেছন থেকে সাহস দিয়েছ, যখনই পড়ে গেছি, তখনই হাত ধরে টেনে তুলেছ, আবার হাঁটতে শিখিয়েছ, আমাকে একা ছেড়েছ, কিন্তু কখনও একা করে যাওনি বা দাওনি। যে জায়গায় আমার বাবা-মা, আত্মীয়, বন্ধু অথবা জীবনসঙ্গীর থাকার কথা ছিল, সেই শূন্যস্থানটি নিঃশব্দে পূরণ করে গেছ দিনের পর দিন। এতটা ভার কী করে নাও তুমি? কখনও কি জানতে পারব তোমার এত শক্তির রহস্য? কখনও কি পারব ছুঁয়ে দেখতে তোমার সত্যিকারের তুমিটাকে? কী করে পার তুমি এতটা বড়ো হতে? অন্ধকারে হাঁটার অভ্যাস আগে কখনও ছিল না আমার। আমি তো বুঝিইনি জীবনে এরকম মুহূর্ত আসবে, এভাবে কখনও ভেঙে পড়ব…বরং জীবনের অর্ধেকটা সময়ই কেটেছে হারানোর ভয়েই!

ছোটো থেকে ভয় পেতাম, সবাই বুঝি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, আমি তখন একাএকা কী করে বাঁচব? যে যেভাবেই চলতে বলেছে, সেভাবেই চলেছি সে ভয় থেকে। কাছের মানুষদের গুরুত্ব দিয়েছি সবচেয়ে বেশি। সম্পর্কগুলিকে আঁকড়ে থেকেছি হয়তো। যখন পড়াশোনা শেষ হয়নি, তখন এও ভয় হতো, যদি ওদের কথামতো না চলি, তা হলে যদি পড়াশোনার খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তখন কী করে চলব! আমার যে তা হলে বন্দি হয়ে আর সারাজীবন ওই রান্নাঘরের চারদেয়ালের মাঝেই কেটে যাবে। যাদের প্রতি একটা ঘৃণার পাহাড় জমে যায় আস্তেআস্তে, তাদের জন্য আসলে কিছুই আর আগের মতো মন থেকে আসে না। তখন যা আসে, তার পুরোটাই দায়িত্ববোধ অথবা করতে হবে এজন্য করছি, এমন কোনও বোধ থেকে। এই বোধ থেকে যা আসে, তা আসলে ভালো হয় না, যেনতেন রকমেরই হয়। আমার ক্ষেত্রেও ওরকমই হয়েছিল। হাজারো উদ্ভট নিয়মের মাঝে বেড়ে উঠেছিলাম আমি। বুঝতে পেরেছিলাম, আমি আসলে একটা সীমিত গণ্ডির ভেতরে বড়ো হচ্ছি, আর যাদের সাথে বেড়ে উঠেছিলাম, তারাও এর বাইরে কখনও যায়নি। তাদের কাছে এর চেয়ে বেশি আর কী আশা করতে পারি! অবশ্য সেই দিনগুলিতে খুব চাইতাম, আমার কাছের মানুষগুলি অন্তত আমার পাশে থাকুক, আর কিছুই পারুক না পারুক, আমাকে শুধু একটু মানসিকভাবে সাপোর্ট দিক! আমার আসলে আর কী-ইবা করার ছিল? আমি তো আর ফেরেশতা নই, আমি ভুল ঠিক সব মিলিয়েই খুবই সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু তখন আমি তাদের কাছ থেকে পাইনি এই সামান্যটুকুও! যখন পাইনি, তখন ক্ষতবিক্ষত হয়েছি, রক্তাক্ত হয়েছি। এখন যখন ওদের সাথে মাঝেমাঝে উদ্ভট কিছু হয়, ওরা আমাকে ওসব এক্সপ্লেইন করে শান্তি পায়, তার পর ওরা আমার কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতে, আর আমিও ওদের সাহায্য করি, তখন আমার খুব ভালো লাগে। সেই প্রথম তোমার কাছ থেকেই শিখেছিলাম, জীবনটা আক্ষেপ করে কাটিয়ে দেবার জন্য আসলেই ভীষণ ছোটো। যাদের আমার পাশে বিপদের সময় ছিল না, তাদের বিপদের সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেও এক ধরনের শান্তি আর স্বস্তি আছে।

সব জায়গা থেকে তখন ধাক্কা খেয়ে অবশেষে আমি বারেবারেই তোমার দ্বারে আশ্রয় পেয়েছিলাম। আমার এক শিক্ষক বলতেন, আল্লাহ যাকে কিছু দেবেন বলে ঠিক করেন, তাকে নাকি মাঝেমাঝে লাথি মেরেও দেন! স্যারের কথা শুনে খুব অবাক হতাম। এখন বুঝি, আমি আসলে তোমাকে ওই লাথিটা খেয়েই পেয়েছি। আর নিঃসন্দেহে বলতে পারি, আমি এখন আগের চেয়ে লক্ষ গুণ ভালো আছি। ভবিষ্যতে যতদিন বেঁচে থাকব, ভালো থাকব। আর যা-ই হোক, আমাকে অন্তত ভয়ের কাছে মাথা নত করে চলতে হবে না। যে পরিস্থিতিতেই পড়ি না কেন, ভালোথাকাটা ঠিকই শিখে নেব। এখন পুরনো সেইদিনগুলি চোখের সামনে ভেসে ওঠে যখন, তখন ভীষণ অবাক লাগে…ভাবি, জীবনের এপিঠ-ওপিঠ সত্যিই সম্পূর্ণ আলাদা। ওই জীবনের একটা অংশ এখন সম্পূর্ণ নিরানন্দ মনে হয়, তবে আগের মতন ওসব না-পাওয়ার আক্ষেপ আর নেই। যা গেছে, তা নিঃসন্দেহে ভালোর জন্যই গেছে। যা পেয়েছি, তার মূল্য হারানো ধন বা হাজারো না-পাওয়ার ক্ষণের মূল্যের চেয়ে লক্ষ-কোটি গুণ বেশি। ওসব আঁকড়ে পরে থাকলে আজ আর এসব পেতাম না, ওসব হারিয়েছি বলেই বেঁচে আছি, বাঁচতে শিখেছি।

তুমি ছিলে আমার কাছে সম্পূর্ণ অজানা অচেনা একজন মানুষ, তোমার সাথে আমার যোজনযোজন দূরেরও কোনও সম্পর্ক ছিল না, অথবা তুমি বলে যে কেউ আছে, সেও জানতাম না। অথচ আজকে যখন চারপাশে ভালোবাসার মুখগুলি খুঁজি, আস্থার মুখগুলি খুঁজতে থাকি, তখন শুধু তোমার ওই মুখটা ছাড়া আর কিছুই যে চোখে পড়ে না! কী হতো তুমি না এলে? সে-সব আমি ঢের জানি আজ, তুমি না এলে সত্যিই আমি ওই অন্ধকারেই তলিয়ে যেতাম। আমি যখন তোমার কাছেকাছে থাকতে চাই, আমি ভালো করেই জানি, তোমার কষ্টের একবিন্দুও ধারণ করার যোগ্যতা আমার নেই, তোমার কষ্ট মুছে দেওয়া, সে তো অনেক দূরের কথা! আজ যখন তোমার কাছে ভালোবাসার আবদার নিয়ে যাই, ভীষণ লজ্জা হয় আমার…আসলেই তো, তোমাকে তার বিনিময়ে কী দেবো আমি?

আমার কেন রাগ হবে না, বলো তো? তুমি আমাকে একটুও সময় দাও না। একশো-এক দিন পর একটা ফোন দাও, তাও ঠিকমতো কথা বল না। আমার কি ইচ্ছে হয় না তোমার সাথে প্রতিদিন কথা বলতে? প্রতিদিন না-পারলেও দুইতিন দিন পরপর, অন্তত প্রতি সপ্তাহে একবার তো তোমার সাথে কথা বলতে পারি! তুমি দেখো তো, যে-সম্পর্কে দুজনেই সমান গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে কি কখনও এভাবে একতরফা কোনও কিছু চালানো যায়? তুমি কখনও নিজের থেকে একটা কিছু কর না। আমি যতক্ষণ না তোমাকে টেক্সট করছি, ততক্ষণ তুমিও কর না। আসলে তোমার দোষ নেই, তোমার মনে না-থাকলে তুমি কী করবে? আমার মনে হয়, আমিই তোমাকে জোর করে আটকে রেখেছি। ভালোবাসা না-টানলে তুমি কেন আটকে থাকবে? অন্তত আমার তো মনে হতে হবে যে তুমি জোর করে অনিচ্ছায় কিছু করছ না, তাই না? আমি তো এভাবে তোমাকে চাই না। আমি দূর থেকেও তোমাকে ভালোবাসতে পারি, পারব। যখন তোমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা আদায় করতে হয়, অধিকার তো তখন আর খাটানো যায় না! আবার যখন সেই অধিকারের স্থানটা, মনে হয় যে আছে, আমি তো তোমাকে পাই-ই কখনও কখনও; আর তা না হলে সে জায়গা যে আমার আছে বা কতটুকু আছে বা আদৌ আছে কি না, আমার অবস্থান থেকে তোমার কাছে কতটা আবদার করা যায়, এসব আমি বুঝব কী করে? এমন সম্পর্ক সত্যিই আমি চাই না, এর চেয়ে তুমি না-থাকলেও আমি মানিয়ে নিতে পারব সবই। আমি তো যখনতখন ইচ্ছে হলেই তোমাকে ফোন করতে পারি না, তুমি সেই পারমিশন আমাকে দাওনি, আর যদি বলও যখন ইচ্ছে তখন ফোন করতে, আর তুমি যদি ফোন রিসিভ না কর, তা হলেই-বা কী হবে অমন পারমিশনে, সে-ই তো জোর করাই হলো তখনও! আর তুমি কখন ফ্রি থাক, কখন তোমাকে ফোন করলে তোমার কোনও অসুবিধা নেই, ঝামেলা হবে না, সেও তো আমি জানি না। তা হলে আমি কী করব?

মাঝেমাঝে তোমাকে যখন ভীষণ মিস করি, তোমার সাথে কথা না বলে আর থাকতেই পারি না, তখন ইচ্ছে হয় আশেপাশে যা পাই, সবকিছু আছাড় মেরে ভেঙে ফেলি। জানি, সব দোষ একা আমারই, আমার এতটা আশা করা অথবা এত চাহিদা থাকা উচিত না, অথবা অধিকার বলতে যা বোঝায়, সেই তথাকথিত অধিকারের কোনও স্থানেই আমি নেই। কিন্তু আমি কী করব? আমি তো ধরতেও পারি না, আবার ছাড়তেও পারি না। তুমিই তা হলে বলে দাও আমি কীভাবে চলব, কখন কী করব…আমি সেটাই করব। আমার আসলে তোমাকে রোজরোজ এসব বলে ঘ্যানঘ্যান করতে ইচ্ছা হয় না। আমি জানি, তুমি অনেক কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাক, অনেক দুশ্চিন্তাও থাকে তোমার। তোমারও সম্পূর্ণ আলাদা একটা জীবন আছে, আর অবশ্যই সেখানে আমার ব্যাপারে তোমার অনিচ্ছা, সেখানে আমার কোনও জায়গা নেই, জায়গা থাকা উচিত নয়। যাকে ভালোবাসি, তার বিরক্তির কারণ হবার ইচ্ছা আমার নেই। তুমি আসলেই আমার ভালোবাসার বিনিময়ে আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য না, এজন্য এভাবে থেকো না জোর করে, আর যদি থাকো, তাও এভাবে থেকো না, আমার কষ্ট হয় এতে। একে কি সত্যিই থাকা বলে, বলো তো?

তুমি কি প্রতিদিন ভাত খাও না? তোমার বাসার মানুষের সাথে ভালো করে হোক, অথবা রাগ করে হোক, কথা বল না রোজ? ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায়ই হোক, প্রতিদিন যাও তো অফিসে? তা হলে এর মাঝে আমি নেই কেন, কোথাও তো নেই আমি এর মাঝে! যদি আমিও, হোক না খুব ক্ষুদ্রই…তাও, তোমার জীবনের একটা অংশ হয়ে থাকি, তা হলে আমার বেলায় এত অনিয়ম কেন? পারবে তুমি একদিন সারাদিন না-খেয়ে কাটাতে? বাসায় একদিন না-ফিরে থাকতে? আমি বিশেষ দিনের কথা বলছি না, এটা একদিন-দুইদিনের কথাও নয়, এটা প্রতিদিনেরই অভিন্ন গল্প! আমি ঝগড়া করছি না, তুমিই বিবেচনা করে দেখো তো, তুমি কি পরিপূর্ণ সময়টা দাও আমাকে? আমি তো তোমার কাছে কেবল তোমাকেই চেয়েছি, এর চেয়ে বেশি কিছু চাইনি কখনও। আর তুমি বলো তো, মন ভালো না-লাগলে আমি তোমার সাথে ভালো করে কীভাবে কথা বলি? এসব কষ্ট গিলে কি কিছু লেখা যায়? পারবে তুমি যখন অনেক কষ্টে থাক, তখন অন্যদের সাথে খুব আনন্দ করতে? পারলেও কতক্ষণ পারবে? এর থেকে ভালো না চুপ করে থাকা? ভালোবাসার মানুষগুলির সাথে তো আর রাগ দেখানো যায় না, ওই মুহূর্তে ভালো কিছু না এসে যদি মুখ ফসকে খারাপ কিছু চলে আসে, তার চেয়ে তো তাদের থেকে একটু দূরে সরে থাকাই ভালো। আর কিছু দিতে পারি না পারি, অন্তত খারাপ আচরণটুকু যেন ভুলে করেও এসে না যায়। আর প্লিজ, যদি আগের চেয়ে একটু হলেও বেশি সময় দিতে না পার, একটুখানিও বেশি যদি ভালোবাসা না দাও, তা হলে আর যা-ই হোক, কক্ষনো ‘সরি’ বলো না…কী করব আমি ওই ‘সরি’টা দিয়ে? যে আমায় ভালোবাসে, তার কাছ থেকে ‘সরি’ গ্রহণ করার মতো মনের শক্তি আমার নেই। আর যে আমায় ভালোবাসে না, তার কাছ থেকে ‘সরি’ গ্রহণ করার কোনও প্রয়োজনই আমার নেই! শুনে রাখো, এও বলে রাখছি, সুযোগ যদি পাই, সুযোগ যদি করতে পারি, তা হলে তোমার পুরোটাকেই চুরি করে নিয়ে আসব আমার ঘরে!