উন-খুঁটি

 
আমাকে ব্যস্ত রাখার কথা…কখনও ভুলে যেয়ো না। সারারাজ্যের উটকো যত কাজ জমবে, সবকটাই এক এক করে এক আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ো। আমাকে কথা দিয়ে…কম, আর কাজ দিয়ে…বেশি, রেখেই দিয়ো ভুলিয়ে ভালিয়ে তোমার যেমন খুশি!


আচ্ছা, মাঝে মাঝেই, আমার কেন মনে হয়, আজকাল, আমি হাঁটছি কেবল উল্টোপথেই? একটা পুরনো কাব্য মাঝেমধ্যে জ্বালায় ভীষণ…!...আর ঠিক তখনই, মনে আসে এমন আবোলতাবোল! আমি যে সে কাব্যে কোনও মন দিইনি…কখনও তো! কাগজে কেবল শিষের আঁচড় কেটেই গেছি বেখেয়ালে! সে কাব্যই কিনা আজ আমাকে এই নৈঃশব্দ্যেও কিছু প্রশ্ন ছোড়ে!


ওরা বলে, যা-কিছু তুমি হেলায় ফেলো, তা-কিছুই তোমার ভীষণ কাছের!...আহা, যদি জানতে এমন! কখনও কখনও, কেবলই সময় খরচ করি, বোধ নয়। সে বোধের শূন্যতায় মুড়ে কিছু পানসে প্রবোধ,…দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকেও ভীষণ জ্বালায়!---আমি, তুমি, আমরা…সবাই এমনই বোধহয়!


আজ অনেক দিন বাদে, সেই কোনও হেলায় লেখা পুরনো কবিতার, এক প্রেমিক খুঁজে পেলাম। এসব নেই-ঠিক গতিকের প্রেমিকদের আমার ভীষণ ভয় হয়! এরা আসে, এরা যায়…কখন, কেন…জানাও যায় না! কাছের সম্পর্কেও দেয়াল তৈরিতে ব্যস্ত থাকে, কী যে শুঁয়োকীটের দল! ওদের ভোলটা…পাল্টেই যাবে যখন তখন…কাজ ফুরোলেই!


মাথায় রেখো, সব কিছু ভুলতে নেই! সম্পর্কের চোরাবালি আজ চিনে গেছি বেশ,…সম্ভবত, তোমার থেকেও ঢের বেশি! শুনে অনেক বুঝি আশ্চর্য লাগল? মনে হলো, খুব পাকা পাকা কথা শিখে গেছি? দেখো, কাঠে ঘুণপোকা ধুকতে দিয়ো না গো,…নয়তো হঠাৎ ভেঙে যাবে, টেরই পাবে না!


আচ্ছা, ধরো, আজ ভীষণ জবরদস্ত জীবন কাটাচ্ছ! ঠিক এই মুহূর্তে, জীবন যদি তোমার দিকে দুটো অপশন ছুড়ে দেয়…এক, আত্নহত্যা। দুই, ভালোবাসা।…তখন? ধরে নাও, এর বাইরে আর কিচ্ছু নেই! সাফল্য নেই, ব্যর্থতা নেই। সার্থকতা…নেই সে-ও!...তুমি কোনটা নেবে? বেশি গভীরে যেয়ো না, সব সময় বেশি গভীরে যেতে নেই। কখনও কখনও, গভীরে গেলেই বরং হিসেব মেলাতে বড়ো কষ্ট হয়।


আচ্ছা, প্রেমিক কখনও ভালো বন্ধু…হয়ে ওঠে না? হলে দোষ কীসে হয়? জীবন চালাতে, একইসাথে প্রেম, বন্ধুত্ব…দুটোই তো চাই, তাই না, বলো? যদি অমনই হবে, তবে তোমরা অনেকেই ভালোবাসার মানুষের বন্ধু হতে কেন চাও না, বলো? কেন গো…?


আজকাল লেখালেখি একেবারেই ভুলে গেছো! সারাক্ষণই শুধু মৃত্যু আর কেবলই মৃত্যু নিয়ে লিখতে থাকো। তবে যে এখনও বেঁচে আছো? তুমি যে আজও মৃত নও, তা বুঝি মনেই থাকে না?


বলেছিলাম অনেক অনেক বার! বলে বলে মাথাটাও হয়তো নষ্ট করে দিয়েছিলাম। জোর করতে পারি তো নি, কিন্তু তবুও, জানতে চেয়েছি বারবার…কবে আসবে? কবে আসবে? কবে…? তোমার এই কাজ সেই কাজ, এই ব্যস্ততা সেই ব্যস্ততা, সবই আগে থেকে ঠিক-করা থাকে। শুধু আমার জন্য কিছুই ঠিক করা থাকে না তোমার! কিছুতেই সময় পেলে না তখন, এবার হলো তো?


এখন যদি হুট করে মরে যাই, তবে কিন্তু ওরকম একশো দোষ চাপিয়ো না আমার উপর! আমি আর কীভাবেই-বা বলতে পারতাম, বলো? আমি তো জোর করতে চাইইনি! বলতেই পারো, অধিকার থাকলে জোর তো করাই যায়! আমি আসলে কখনও আপন করেই নিইনি!...বলো যা খুশি! আচ্ছা, এমন যে করো, এসবে তোমাকে মানায়, সত্যি?


আমি কখনও তোমার উপর নিজেকে চাপিয়ে দিতে চাইনি। আমাকেও, একটু বোঝাবার সুযোগ তো দাও? এই যে যেমন ধরো, এখন, তোমাকে হারাবার ভয় যা ছিল একসময়, তা কিছুটা হালকা হয়েছে। কেন, জানো?


ভালোবাসলে রাগ করা যায়, অভিমানও হয়; ঝগড়া লাগে, ব্যথা চাপে; অভিযোগের ভারটা নিশ্চিতভাবেই দিন দিন বাড়তেই থাকে। তাই বলে…ছেড়ে যেতে হবে? ভালোবাসলে, ছেড়ে যাওয়া যায়? তুমি পারবে?


আমি তো আগেই হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি, আমার দ্বারা ওসব হবে না। মাঝে মাঝে চাই যদিও, …তোমাকে কিছুটা তোমার নিজের মতো করে স্পেস ছেড়ে দিতে,…মনে হয়, সব মানুষেরই কিছুটা একা একা, পুরোপুরি নিজের সাথে,…কাটাবার অধিকারটা আছে।


আর, এই যে রোজ ঘ্যানর ঘ্যান ঘ্যানর ঘ্যান করি আর করতেই থাকি, এগুলোকেও তো একটু আপডেট করতে হয়, তাই না? এজন্যই তো ছেড়ে দিই পাল! ভাবি, যেদিক খুশি যাক না, সময় হলে ঠিকই ফিরবে ঘরে! যাবেটা আর কোথায়!


আচ্ছা, ধরো, আমার প্রতি তোমার এই একঘেয়েমি…এটা যদি ধীরেই বাড়ে? কখনও আবার, আমি যদি হই পুরনো? তখন? ছুড়ে ফেলে দেবে? সম্পর্ক বুড়ো হলেই এর যৌবনটা শুরু হয়ে যায় ঠিক তখুনিই! এমনই তো জানি! দেখো, আমার মধ্যে ভয় জাগছে…


ইদানীং, তুমি আমার সাথে আগের মতো অত কথাটথা আর বল না…এমন করছ কেন? আজ এসো ঘরে, আজকে তোমার বিচার হবে! শাস্তি তোমার অবধারিত! কানে ধরে উঠবসটা করাব এবার গুনে গুনে একশোবারই! তারপর…গুনে গুনে একশো চুমু! এরপরে…মাফ!


আমি ভালোই জানি, এমন একটা শাস্তি পেলে, আর কখনও ভুলেও এমন থাকবে না চুপ, এই এতক্ষণ! কেন এমন কর? আদর বুঝি আর লাগে না, আমি বুঝি অবশেষে পুরনোই হলাম?