একস্রোতা নদীর দুঃখ

এই যে তোমায় ভালোবাসি এত,
সেই তুমিই কিনা অন্য কারও!
সব কিছুই তো নিয়েছে মেনে এই মনটা…কেবলই ভাবি,
হে ঈশ্বর, ভালোবাসাটা না-ই দেবে যদি,
ভালোবাসার এত তীব্র শক্তি দাও কেন তবে?
আমি তো নিয়েছি সয়েই বেশ কিছুটাই,
আঘাত যা পাবার, সে তো পেয়েই গেছি খানিকটা ওই পথের বাঁকে!
এ পথের শুরুতে যখন এলে না তুমি, করছিলে দেরি,
যখন চেয়েছি তোমায় ব্যাকুলভাবে, অথচ
একটুখানি ছিটেফোঁটাও জোটেনি তোমার,
সেও কি বলো কম কষ্ট?


তবে আর কষ্ট তুমি কাকে বল?
যতটা আঘাতে চলে আসে ভয়, হয় বেদনায় দিন যাপিত,
আছে আমারও কিছু অগ্রিম চাল নয়েছয়ে!
এ কি তবে তার চেয়েও কম কিছু নাকি?
ওই পথের বাঁকে চেয়ে থেকেও হইনি ক্লান্ত কখনও তো,
অবসাদটা ভর করেনি এই দুটি চোখ আর শরীর জুড়ে,
থেকেথেকে কেবলই জিরিয়ে আবার নির্ঘুম চোখ তাকিয়েই ছিল,
যদি এসে এ পথের বাঁকে ফিরে যাও ভুলে অন্য পথে…
সে ভয়েই তো ছিলাম বসে নিঃশব্দেতে চুপটি করে।
ছিল না কোনও ক্রন্দসী-সুর সেখানে কোথাও,
ছিলাম শুধুই একলা আমি।
বলো, নিদারুণ অত যাতনা কি সে নয়?
নাকি এসব চাইলেই যায় হাসিমুখে করা?


ছিলে কখনও দুইএক রাত…
আমার বা অন্য কারও প্রতীক্ষাতে…ভিজিয়ে বালিশ?
থাকোনি তো, ওসব তোমায় সাজে না যে, সে আমি ঢের জানি বুঝি!
তা হলে বুঝবে কী করে…পথ চেয়ে থাকার জ্বালা কী যে!
হাতটা তোমার আলগা করেই ধরেছি তখন…হ্যাঁ, আলগা করেই!
চাও তো যেয়ো, আটকাব না।
আর যাও থেকেই যদি…
তবে ঠিকঠিক মিলিয়ে নিয়ো…একটুকরোও ব্যথা তোমায় দেবো না পেতে!
লুকিয়ে নয় গো, খুব যতন করে রাখব আদরে!
যার যেখানে থাকার কথা, তাকে যে মানায় সেখানেতেই!


আজও আমি আনাড়ি বড়!
প্রেম…সে আমার বড্ড অচিন!
আমি যে বাঁচি কেবলই তোমাকে ঘিরেই!
কখনও দেখেছ খুলে…এই বুকের পাঁজরে কার বসবাস?
হয়তো দেখোনি…সে যে তোমারই অন্য আমি!
ভাবছ বুঝি, বেঁধেছ কেমন মায়ার জালে!
বশ করেছ ছলে, বলে কি ছুতোয়!
ভাবছই তো, আটকে গেছি খুউব বেশি?
বলি, বশ করেছেটা কে? মায়া…সে কি?
মনের যে দড়ি, সে তো ধরা দেবো বলে
বেঁধেছি কবেই আলগা করে!


আজকাল জানো এই নিজেকে কুটিল ভাবি বড্ড বেশি!
জানবে, কেন?
তবে বলছি, শোনো…
যখন তুমি অন্য কোনও গান কি লেখা,
অন্য কারও আবৃত্তিটা অথবা যে-কোনও অন্য কিছু, যা তোমার ওই মন কেড়ে নেয়,
অনুভব কর, অনায়াসে কেমন বলেই ফেলো ‘ভালোবাসি’,
কখনওবা পাগল হয়ে উড়তে থাক…
আমার তখন বড্ড খারাপ লাগে!
কষ্ট পাই…এজন্য নয় তুমি অন্য কিছু ভালোবেসেছ।
কষ্ট আসে যখন ভাবি…
আমি কেন অমন করে তোমার ওই ‘ভালোবাসি’ কথা কেড়ে নিই না…জানি না নিতে?
যা কিনা তোমার ঠোঁট ফসকে চুপটি করে ভালোবাসাটুকু ঠিক কেড়ে নেয়…
আমিও কবে অমন হব? অমন করেই আমিও যে তা পারব কবে?
আমি কবে পারব তোমার অমন একটা ‘ভালোবাসি’ হতে?


এ জীবনে আর পারব কি তা?
গরীব আমি, নেই যে কিছুই…কেবল একটা অসুখ আছে--ভালোবাসার!
আমি কী দিয়ে তোমার ভালোবাসাটা জিতব, বলো?
ওরা কেমন চুপটি করেই তোমার থেকে ভালোবাসাটুকু নেয় বাগিয়ে!
অথচ আমায় দেখো…কী উটকো একটা মানুষ হলাম…একেবারেই যাচ্ছেতাই!
আমায় বল না কিছুই…উল্টো আমিই ভালোবাসি আর ভালোবাসি…বলে জ্বালিয়ে মারি!
ভালোবাসার এই একমুখিতা পোড়ায়, কাঁদায়…গ্রাস করে নেয় ভাবনা যত!
তখন নিজের অস্তিত্ব কি সত্তা বলতে থাকে না কিছুই!