ওগো, বৃষ্টি ভেঙো না…

 
সেদিনটা মনে আছে, পাখি?
নীরব সন্ধে। একটুকরো আকাশ।
সেখানে হাজারো তারার ভিড়।
সেদিন একটা বাবুইপাখি
সেই আকাশে ডানা মেলেছিল!
সে ক্ষণটায় তোমায় নাম দিয়েছিলাম: বাবুই!


কুঞ্জবাড়ির পুকুরে পদ্মফুল ফুটে ছিল।
পাড়ের হাসনাহেনা গাছটি
দখিনাহাওয়ায় ছড়াচ্ছিল ঘ্রাণ।
মনে আছে?
একফালি চাঁদ, জ্যোৎস্নার আদর। ওরা দুজন মিলে
একটা বিস্তৃত চাদরে
এই পৃথিবীটাকে জড়িয়ে নিয়েছিল।


সময় উড়ে যাচ্ছে…দ্রুত!
রাত পেরিয়ে ভোর, ঝলমলে রৌদ্র।
সামনে সবুজ প্রান্তর। দেখছি। ভাবছি…
আহা কী ভালো, আহা কী ভালো!
আমারও একটা পাখি আছে,
সে ডাকে, ডানা ঝাপটায়।
দেখতে বড্ড আদর লাগে। একসময়,
সুপ্রভাত গড়িয়ে শুভদুপুর এল।


অলস দুপুর। শুয়ে আছি। তোমায় ভাবছি।
ওরা গাইছে, গল্প করছে।
শুধু আমারই কোনও ব্যস্ততা নেই…
আমার মনে কেবলই তুমি।
একরাশ বিকেল এসে চোখে আলো ফেলল।
কোথাও কোকিল ডাকল বুঝি…
নৈঃশব্দ্য ভাঙল। তুমি তখনও আছ।


গোধূলিকালে গোটা একটা দিনের
চোখে জল, সে চলে যাবে।
আমি হাসছি তখনও। দেখেছি, চোখও নাচে।
আমার সাথে তুমি আছ, লেপটে আছ।
আহা, আমার একটা পাখি আছে, বাবুইপাখি!


পাখি, তুমি শুনছ?
অসীম ভালোবাসার অনন্ত যে পথ,
সে পথ আজ তোমার সীমানায় এসে
রুদ্ধ হলো এই জন্মের মতো।
দুহাতভরা স্বচ্ছ চুড়ির
অবোধ অবাধ্য রিনিঝিনি...
আজ এক অস্ফুটস্বরে কাকে যেন
ডেকে চলেছে! জানি, সে-ও তুমি।


পাখি, আজও তোমায় লক্ষ্মী ডাকি…
আগের মতোই। কালোসমুদ্র আজ
শান্ত হয়ে ঘুমায়। ঝড় থেমেছে,
তুমি বলেছিলে, একদিন ঝড় থামবে।
আজ বুঝি সেই দিনটা!
চাপা যত আর্তনাদ, ওরা আর
ময়ূরপঙ্খিতে চাপে না।
আজ নৌকোর পালটাও হলো আধপোড়া।
আমার পাখিটা কেবল ডানা ঝাপটায়…
আমার বাঁচতে বড় ভালো লাগছে!


দেখোনি তুমি…
স্তব্ধ কিছু আগুনগর্ভে
অশান্ত ফুলকিরা কেবল কাঁদত!
কোন এক অচেনা ভূমে কিছু চেনাসুর
কবিতা হয়ে ঝরত একের পর এক।
মনে পড়ে না, বাবুই?
দ্যাখো, কী পাগল আমি! একা একাই বকে যাচ্ছি!


পাখি, শুনছ নাকি?
আমি তোমাকেই ডাকছি!
খুব আদর করে বাবুই নামে ডাকছি!
আজকের জোয়ারটা বড্ড ভোগাচ্ছে গো!
তবু তুমি কথা বলবে না?
বুঝি ঘুমিয়েই পড়লে আমায় ফেলে?
তিনপ্রহর ব্যস্ত ছিলে খুব?
সমস্ত শরীরজুড়ে ক্লান্তি…
কথা বলতে ইচ্ছে করছে না,
মাথায় অনেক ব্যথা…
তাই আসছ না? প্রতীক্ষায় রেখেছ?


প্রতীক্ষার এই উপবনে,
সময়ের এমন উনিশক্ষণে,
এমনি করে দাঁড়িয়ে থাকব ঠায়?
তুমিই বলো, সে কেমন করে হয়?


একটুখানি চেয়ে দ্যাখো,
তোমায় নিয়ে স্বপ্নবোনা
চোখদুটো আর তাকাবে না,
দেখবে না তোমায় দৃষ্টিপেতে,
চাইবে না তোমায় চুমুখেতে…
এ-ও কি হয়, বলো, পাখি?


তোমার হাতের মুঠোয়, আচমকাতে,
আমার হাত নেবে না আর জড়িয়ে…
আদর করে বলবে না আর...
চল্‌ না, পাখি…একটু হাঁটি!
লিখবেই না আর কেউ তোমাকে…
এই পাখিটা! শুনছ নাকি?
আমি সারাক্ষণই তোমায় ডাকি!
…সত্যিই কখনও এমন হলে,
কে বসে থাকবে, বলো…
সেদিন এমন প্রতীক্ষাতে?