কিছু একটা

ভালোবাসি বললেই ভালোবাসাটা প্রকাশ হয়ে যায় না।
আবার না বললেই যে তা রয়েছে, এমনটাও নয়!
এই আমি, যে কিনা আসলে ভালোবাসা শব্দটির অস্তিত্বে বিশ্বাসই করি না,
তা-ও, কত মানুষকেই তো সেই আমিই বলেছি…ভালোবাসি!
কিংবা কখনও বলিইনি!
তবে ভালো ঠিকই বেসেছি!


এসব মাথায় এলে হাসি পায়!
কী অদ্ভুত, তাই না?
আসলে ভালোবাসা কী?
একটা অনুভূতি!
একটা টান!
পাশে থেকে যাওয়া!
কারও ভালো করা!
কারও ভালো চাওয়া!
দায় ও দায়িত্ববোধ!
ভালোথাকা!
অসীম ত্যাগ!
নিঃস্বার্থতা!
অনেকটা সততা!
কিছুটা মহত্ত্ব!
না কি…ভালোবাসা আসলে এইসবসহ আরও কিছু ভালো দিকের এক অপূর্ব মিশেল?


ভালোবাসা আদতে কোনটা!
কী জানি…কোনটা!
আসলে ভালোবাসা কিছু নয় বলেই আমি বিশ্বাস করি!
তবু কিছু তো একটা অবশ্যই আছে!
যে ‘কিছু’টা না থাকলে দুজন সম্পূর্ণ অপিরিচিত মানুষ একদিন চিরচেনা হয়ে পরস্পরের প্রতি সমর্পিত হতো না।
বাবা এবং মা তাঁদের সন্তানদের জন্য জীবনবাজি রাখতেন না।
শিক্ষক তাঁর ছাত্রের কাছ থেকে গুরুদক্ষিণা পেতেন না!
বন্ধুত্ব বলে কোনও শব্দই তৈরি হতো না।
প্রেমের নাট্যমঞ্চ প্রেমিক-প্রেমিকার রূপায়ণ দেখত না!
হাজারো শত্রুতা ভুলে মিলনের কাহিনি রচিত হতো না!
ক্ষমা বলে কোনও মহৎকর্ম কোথাও ঘটত না!
লক্ষ লক্ষ অপরিচিত বা অপরিচিতারা কখনও কোনও সূত্রেই সখ্য খুঁজে পেত না!
শরতের দত্তার সাথে কারও শুভ পরিণয়সূত্র গাঁথা হতো না!


আবার একই সাথে, অভিমানে অভিযোগে কেউ জর্জরিত আর হতো না!
প্রতারণা যে কাকে বলে, তা জানাই হতো না!
বহু অপ্রাসঙ্গিকতা ও অযৌক্তিকতা প্রকাশ্যে বা আড়ালে বিরল হয়ে থাকত না!
বুনো প্রেমটাই আর তৈরি হতো না!
স্বার্থপরতায় ডুবে কাউকে পেতে চাইতে দেখা যেত না!
ভুল বুঝে কারও দূরে সরে যাওয়া হতো না!
রবির কল্যাণী কিংবা হৈমন্তীর অভিমানিনী হয়ে ওঠাটা আর হতো না!


হয়তো তৈরিই হতো না---
আরও কত অব্যক্ত, অবুঝ ভাষা!
নিঃশব্দে কথা বলে যাওয়া!
চোখের ভাষায় পৃথিবীকে পড়তে জানা!
কবির সাথে কবিতাকে কিংবা কবিতার সাথে কবিকে সৃষ্টি করা!
পটে আঁকা ছবিতে জীবন ফুটিয়ে তোলা!
রংতুলিতে অবাধ মেলামেশা!
গানের ভাষায় জীবন খোঁজা!
নাচের তালে ছন্দ বোঝা!
সুভাষিণীর সাথে শুচিস্মিতাকে কিংবা প্রিয়ংবদাকে খুঁজে পাওয়া!
হতো না আরও কত কত সৃষ্টির শুভসূচনা!


এমনই তো ‘কিছু একটা’ তোমাদের ওই ভালোবাসা?
আসলেই শব্দটির অস্তিত্বে সবকিছুই?
না কি এসব সংমিশ্রণের অস্তিত্বেই সবকিছু?
---এমনকি ‘ভালোবাসা’ শব্দটিরও!