কিছু নিরুদ্‌বেগ থেকে-যাওয়া

  
 প্রিয় সায়ন, তোমাকে এত ডাকি, তুমি শুনতে পাও না।
 আমার ডাকে তোমার হৃৎপিণ্ড আর কাঁপে না। কাঁপলে ঠিকই শুনতে পেতে।
 তুমি এতদিন কোথায় ছিলে, বলো তো!
  
 মেঘের দেশে যাবে, সায়ন? কী যে সুন্দর! কী যে সুন্দর!
 আমার খুব ইচ্ছে করে তোমার হাত ধরে
 সাদা মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাই অনেকদূরে…
  
 সায়ন, তোমাকে অনেকগুলি বকা। অনেক অভিমানও।
 তুমি একটু আমার পাশে এলে আমি কি বকব?
 না কি তোমাকে কেউ খুব কড়া করে বারণ করে দিয়েছে
 আমার পাশে আসতে? সত্যি করে বলো তো?
  
 সেদিন ফোন করলাম, তা-ও ধরলে না।
 আমি অপেক্ষায় ছিলাম। পরে কি একটা ফোন আসতে পারত না, সায়ন?
 এমন করো কেন আমার সাথে?
  
 মেঘ ভেসে যাচ্ছে, সায়ন। আমাকে একটু মেঘ ধরে দেবে?
 আচ্ছা, তুমি কি রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে আছ?
  
 জানো, তোমাকে দেখি, তুমি গাল ফুলিয়ে একমনে অভিমান এঁকে চলেছ।
 এই যে তোমার কাছে এলাম, তোমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি,
 তুমি চোখ তুলে এক বারও দেখলে না।
  
 এমন কেন করো, সায়ন?
 আমি তো আর তোমার তুমিটাকে কেড়ে নিচ্ছি না! ও তো শুধুই তোমার!
 ওকে আজীবন বুকের গভীরে রেখে দাও।
 তোমার চেয়ে বেশি যত্ন করে ওকে কে রাখবে, বলো তো?
  
 আমি তোমাকে একটু দেখতে এসেছিলাম, তুমি বসতেও বললে না।
 আমাকে বুঝি ভয় লাগে তোমার? ভয়টা কবে থেকে?
  
 তোমার তুমিকে নাহয় আজীবনই ভালোবেসো, তবু
 আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমাকে কি একটু
 বুকের গভীরে ঠাঁই দেওয়া যায় না, সায়ন?
  
 আমি তো তোমার মতো অমন কঠিন নই…
 আমি যে ভীষণ ছেলেমানুষ, এটা তুমি খুব বুঝতে পারো, আমি জানি।
  
 জানো সায়ন, আমার এখনও খেলতে ইচ্ছে করে,
 মারামারি করতে ইচ্ছে করে, মন উজাড় করে খিলখিল শব্দে হাসতে ইচ্ছে করে,
 তোমার হাতদুটো মুঠোয় পুরে চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করে।
  
 সায়ন, কিচ্ছুটি বোঝো না তুমি, বোঝো কেবলই তোমার তুমিকে।
 ওকে এত ভালোবাসতে হবে কেন গো? ও কি পালিয়ে যাচ্ছে?
  
 ঠিক আছে, বাসো। বেশি করে বাসো! আমি তোমার কে হই? কেউ না।
 আমি হলাম পাথরের বুক চুইয়ে-পড়া একফোঁটা জল মাত্র।
 সে জল ছুঁতে তোমার ভয় হয়, তাই না, বলো?
  
 সায়ন, আমাকে না ছুঁয়ে যদি তুমি ভালো থাকো,
 তা হলে আমার কোনও কষ্ট নেই। আমি খুশি!
  
 আমি তো কেবল চেয়েছি, তুমি আবার হাসবে
 উচ্ছল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো শব্দ করে!
 তোমার হাসির শব্দে ওরা জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাবে!
 ওরা ভাববে, এই লোকটা আবারও জেগে উঠল কেমন করে!
  
 হৃদয়ে ভালোবাসা থাকলে জেগে ওঠা যায়, মানুষকে ভালোবাসা যায়।
 সে ভালোবাসার খোঁজ ওরা কখনও জানবে না, সায়ন।
  
 ওদের কোনও দোষ নেই।
 ওরা কবিতা লিখতে চেয়েছিল, পারেনি।
 তাই আজ ওরা কবিতা-হন্তারক!
 ওদের ক্রোধ তুমি ক্ষমা কোরো…
  
 দেখো, আবারও, তোমার তুমিটা তোমার দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকবে,
 তোমার হাসির রেখা ওর হৃদয়ে প্রাপ্তির সুখ ছড়িয়ে দেবে।
  
 তোমার তুমিকে আজ ফিরিয়ে দিয়ো না।
 সে তোমাকে বড্ড ভালোবাসে। তাকে আনন্দের সেই হাসিটি হাসতে দিয়ো।
 পারবে না, সায়ন? পারতে যে হবেই!
 আমি বলছি, তুমি পারবে! আমাকে নিরাশ কোরো না।
  
 আমি তোমার সেই সাফল্য, তোমার সেই ছুটেচলা…না দেখে
 মরে যেতে চাই না। তোমাকে যে ভালো থাকতেই হবে, সায়ন! কেন বোঝো না?
  
 সব কিছু থেকে নিজেকে কেন এমন লুকিয়ে রেখেছ? আর লুকিয়ো না।
 বাইরের পৃথিবীটা আবার দেখতে হবে যে!
  
 জানো সায়ন, আমাকে কেউ ভালোবাসবে এভাবে, বুঝিনি কখনও!
 আমি তো নিজেকে ভালোবাসতেই ভুলে গেছি।
 এখন আমার কত সুখ, ভাবতে পারো!
 তুমি আমাকে ভালোবেসেছ। এমন করে! এতটা বছর! নিঃশব্দতায়! কিছুই না বলে!
  
 কখনও তুমি কিছু বললে আমি ধরে নিয়েছি, বোধ হয় দুষ্টুমি করছ।
 এখন যে তা আর ভাবতে পারি না। এই ভাবতে না-পারাটা ভীষণ ভালো লাগে।
  
 সায়ন, আমাকে একটা ফোন কোরো।
 তোমার হ্যালোটা শুনতে ইচ্ছে করে আমার! তুমি বোঝো না?
 কেন বোঝো না? তুমি কি বোঝো শুধু তোমার ওই তুমিটাকেই?
  
 এসব ভাবলে অভিমান জমে যায়! আমার মনে অভিমান ভিড় করে।
 তখন অনেক জ্বালাই তোমাকে, কাজ করতে দিই না। আর তুমি খুব রাগ করো।
 আমি কিন্তু সব বুঝতে পারি, সায়ন!
  
 আমি খুব বেশি কিছু চেয়ে ফেলছি কি না, জানি না।
 তুমি একটু হাসো না সেই আগের মতো শব্দ করে…!
 একটু কথা বলো…স্পষ্ট কণ্ঠে, দৃপ্ত স্বরে!
 এ পৃথিবীর কেউ যেন আর তোমাকে ভেঙে দিতে না পারে, সায়ন!
  
 আমার পাশে একটু বসবে, সায়ন…আমার একান্ত একটা তুমি হয়ে?
 বোসো না একটু…
 একটু ধরে দেখি তোমায়…
 আমার তুমিটা ঠিক কেমন, একটু জানি!