কুড়িয়ে বাড়িয়ে

 সাগর বলে, আকাশ ছোঁবো
মেঘের ডানায় চড়ে,
আকাশ বলে, সাগর ছোঁবো
বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
আমিও তোমায় রোজ ছুঁয়ে দিই
হাওয়ায় জলে মিশে,
তোমার চোখে চোখ রেখে যাই
বর্ণে; আবার কীসে?
 
ভাবছো, এই লেখাটিও পড়বে না। হয়তো পড়বে, চোখের পাতা বন্ধ করে। এই তো?
আমি তোমায় স্বপ্নে ডাকি, চোখের পাতা বন্ধ রেখেই।
পড়ো না হয় অমন করেই, হাজির হয়ে বলবো ঠিকই--ইয়েস স্যার!
জীবন বড় অদ্ভুত ঠেকে, তাই না, বলো?
যে হারিয়ে যাবে--ভাবিইনি...হারিয়ে যায়!
ধরে রাখার চেষ্টা যাকে---করিইনি...থেকে যায়!
‘আমারই’ বলে কিছু কি আছে?
যে চোখে জল নেই, সে চোখ যতোটা জল ধরে রাখে, তা দিয়ে লক্ষ সমুদ্র ছোটে মহাসমুদ্রের পথে।
লোকে শুধু জল-টলমলে চোখটাই দেখল, হায়!
যে চোখ হায় শুকিয়ে গেছে, তার খোঁজ কেউ রাখল না!
ক্লান্ত কষ্টজল একদিন ঠিক বরফ হয়ে গড়িয়ে পড়ে।
তবু সে চোখ এক চাপা ভয় চেপে রাখে--সে বরফ না আবার গলতে শুরু করে!
আবারও...বাঁধভাঙা বন্যা আসে, শ্রাবণধারায় তাল মিলিয়ে ছোটে ওই পোড়া চোখ।
অশ্রু বৃষ্টি আড়াল করে, বৃষ্টি অশ্রু আড়াল করে--অশ্রুবৃষ্টি বৃষ্টিঅশ্রু--দুটোই ঝরে!
পাহাড় বেয়ে একটা বড় পাথর গড়িয়ে পড়লে সাথে কয়েকটা ছোট পাথরও যে গড়িয়ে পড়ে...সময় থাকতে কে বোঝে এ কথা!!
 
আমি পাথর জেনেই পাথর কুড়োই, যত্নে রাখি হীরের মতোই। লোকে ভাবে, হীরে ভেবে ভুল করছি। আমি তবু পাথর কুড়োই।
চকচকে ওই পিচের সাথে রোদপ্রতিমার মিষ্টি খেলায় দুষ্টু জলের মিষ্টি মায়ায় হেসে উঠি।
মিথ্যে সে জল--জেনেবুঝেই ছোটায় ছায়া আমার কায়ায়।
জেনেও তবু ছুটে চলে আমার ছায়া, দৌড়ে পিছু!
ভাবে সবাই,
মরীচিকার নেশায় বুঝি--হারাই দিশে অলীকে মিশে!
বিস্তীর্ণ ওই বরফপথে খালি পায়ের নিবিড় ছোঁয়ায়;
চামড়া নরম--উষ্ণ হিমের ফোস্কা পড়ে, কেবল খসে!
আগুন ছুঁলেও অমনই হয়...
বিচ্ছিন্ন সে চামড়া চোখে যে-ই দেখে,
বোঝে নাকো, এর অতীতে কীসের খেলা--আগুন নাকি বরফ খেলে সে অতীতে?
 
বাসলে ভালো দূরেই থেকো! সে-ই ভালো!
কাছের যত ভাবছ ওকে ভালোবেসে,
তত দূরে সে থেকে যায় মন্দবেসে!
কাছে গেলেই টের যে পাবে,
কত দূরের তোমায় ভাবে!
যে স্পর্শ স্পর্শিত হয়ে স্পর্শহীনতার জানান দেয় অস্পর্শের বেশি,
যে স্পর্শ এড়িয়ে চলো!
সে স্পর্শ দুঃখীকে হিংস্র করে,
হিংস্রকে করে দুঃখী!
ভারি পৃথিবীর ভার বাড়িয়ে লাভ কী, বলো?
হিংস্র দুঃখী আর দুঃখী হিংস্র--দুই মানুষে পৃথিবী কাঁপে!
বাঁচার শেষ আশ্রয়টুকু...দিয়ো রেখে, শেষ কোরো না!
 
একটু শেখাও...
ভালো না বেসে কেমন করে দিব্যি থাক!
কৃতজ্ঞতায় বাঁধব তোমায় চিরতরে!
দিচ্ছি কথা, আর কখনওই--
জ্বালাব না ওই তোমাকে,
কাঁদাব না এই আমাকে।
মিলিয়ে যাব, থাকব মিশে
নিজের মাঝেই!
আমি কখনও ‘নেই’ হলেও খোঁজ নাও না,
নিখোঁজ হওয়ার কষ্ট যে কী, জানতে যদি,
বুঝতে তখন কষ্টটা ঠিক কোথায় বাজে!
অভিমান হয়, এরই সাথে কষ্ট মিলে
আমার মাথায় হাতুড়ি পেটায়।
ন্যানো সেকেন্ডও খুঁড়িয়ে হাঁটে...গুনতে থাকি,
সময়টাকে পার করে দিই দুঃসময়ের পালা গেঁথে,
ঘড়িতে যখন চোখ রাখি হায়,
সময় দেখি একই আছে!
ঘড়ির কাঁটা আর ঘোরে না,
জীবন আমার আর কাটে না।
 
অনুভূতির তীব্র স্রোতে
আমার আমি আমায় ছাড়ে,
সব ভেসে যায়--সেই যে দূরে...
পুরনো ঘরে নিভৃত কোণে আমি থেকে যাই।
নির্লজ্জতার গাথা বুনি,
ধিক্কার বিঁধাই, গ্লানি শুনি।
একটা সময় ছিঃ ছিঃ-রা সব পাহাড় গড়ে হৃদয়মাঝে!
তবুও দেখো হায়, এ হৃদয়ে হাত রাখলে,
আরও উঁচু পাহাড় বুঝি।
অনুভবে আর ভাবনাস্রোতে
ভালোবাসা--সবচে দামি!
ধাক্কা খেয়েও এটাই মানি!
 
পার হয়ে যায় নিঠুর সময় নির্বিকারে,
যে মুহূর্ত গেছে, তা তো একেবারেই গেছে--
ভাবতেই আমি চিৎকার করে উঠি,
ঝড় ঝাপটায়, বেদনা ঘোরে হৃদয় ফুঁড়ে!
এলোমেলো হয়ে ভাবতে থাকি--
ঘণ্টাগুলো অভিমানে কাটল বলে
অভিমান হয় নিজের উপর।
ওদের ভীষণ মিনতি করি,
ফিরে এসো ফিরে এসো...!
ওরা তবুও আর ফেরে না আর ফেরে না...
ভুলের মাশুল ভুলেই দিয়ে জীবন গেল!
হারাই যখন বারেবারে, নিজেকে খুঁজি সে ঘরেতে,
যে ঘরেতে সবাই আছে, আমিই শুধু অন্য ঘরে!
 
যার কাছে হায় মানুষই নই,
তাকেই কিনা দেবতা ভাবি!
অমানুষের জীবন কেমন কাটছে দেখো,
যতন করে দুঃখ পেলে!
কেমন সুখে জ্বলছি আমি--
আগুন ফুরোয়, আগুন বানাই!
শেষ হয়ে যাই, শেষ হয় না আগুন তবু!
নিজের ঘরটা নিজেই ভেঙে,
পরের ঘরটা বাঁধছি হেসে!
অন্য জীবন ছাড়লে যদি
নিজের জীবন নিজেই ছাড়ে,
কেমনে বাঁচি?
 
কী আর করা!
হাঁটতে গেলেই হোঁচট খেতাম যখন আমি,
হাঁটতে তবু বলেছিলে তোমরা সবাই!
দৌড়নোটাও শেখার পরে,
হাঁটতে আমায় বারণ কর!
চলতে গেলেই ভীষণ বাঁধ!
জীবনটা কি সব মেনে নেয়?
হাঁটতে শিখে পঙ্গু হব--এতই সোজা?