কেবল ঘুম চেয়ে

 আকাশটা আজ ভিন্ন ছিল,
ঘ্রাণটা হাওয়ার ভুল ছিল,
নীলটা কোথায় চুপ ছিল,
মেঘের চোখে জল ছিল,
আলোর গায়ে ঘুম ছিল।
তবু বললে কেন...মেঘ এসেছে, মেঘ এসেছে!
 
ওই যে পথের বাঁকটাতে,
জন্মের দায়ে হাঁটছে শিশু কাৎরাতে;
সেখানে গেছ, মেতেছ ভীষণ ফুচকাতে,
বেচারা তখন তোমার দিকে তাকিয়ে ছিল কান্নাতে।
দেখনি তো?
ওই রাস্তাতে......যত কুকুর আর বেড়াল ঘোরে,
কাঁদত কেমন বিশ্রী স্বরে,
দেখনি তাও?
চৌরঙ্গীর ওই মোড়টাতে,
ভিখিরিটা কাঁদছে বলে......পালাতে,
মনে পড়ে না?
 
ওর কবিতা বোঝো, কান্না বোঝো না!
তোমার আমার গদ্য লাগে, পদ্য লাগে,
ওর কেবলই দুই মুঠোতে ভাত লাগে,
আর কিছু নয়।
যখন তুমি খুব বকে দাও,
খুব কাঁদি;
জীবন ওদের কেমন বকে.....কাঁদে নাতো!
যার কষ্ট বোঝার কেউ থাকে না, কাঁদে না সে।
ওদের চোখের জলটা......শুকোয়, দেখায় ছলটা!
ওদেরও তো বাবা ছিল, মাও ছিল,
ভালোবাসাটাই ছিল না কেবল!
 
আছে সন্তান--হয়ে গেছে, তাই;
এমন আছে, অনেকই আছে,
নেই মমতা কিংবা স্নেহ।
এক টুকরো জমির ফালি
কাঁদে নিয়ে বুকে শিউলির বাপ,
কেউ দেখে না।
ওদের যত রাগ-অভিমান, নদীর সাথেই!
স্রোতের সাথে গল্প করে,
ঢেউয়ের সাথে আলাপ জুড়ে,
পাড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে......ঘর ভাঙে।
শিউলির মাকে খেয়েছে নদী সেই কবে!
 
কালকের ফিকে ঘাসগুলো--
দুমড়ানো; তবু জেগেই কেমন হাসছে দেখো চমকানো!
আর কিছু নয়, শুধু আলো চায়,
ওরা ফাগুনের ডাক চায়নি কখনও।
যৌবন কেমন নদীর মতন
চলে এঁকেবেঁকে......সাগরের ডাকে!
ঢেউ ছুটে যায়--আমাদের বুকে, বাহুতে, ঊরুতে আর কাঁধে।
আমাদের যত প্রেম, চেতনার যত হেম--
বলে ওঠে, আজকে নাহয় থাকিই বেঁচে
মানুষের সাথে ফুল নিয়ে,
মৃত্যুর বুকে চুম দিয়ে!
 
একটু ঘুম হবে গো, ঘুম?
ক্লান্ত কিবা শ্রান্ত ঘুম,
কান্না কিবা হাসির ঘুম?
যেকোনও ঘুমেই খুব চলবে!
একটু ঘুম দাও না!
এর বদলে হৃদয় দেবো!
লাগবে আরও?
 
শক্ত একটা পাঁজর দেবো--সেখানে হেঁটো।
একগাছি নীল চুড়ি দেবো--বাজিয়ে দেখো!
দুচোখ ভরে স্বপ্নমাখা হাসি দেবো--ভাল থেকো।
আমার তো আর ঘর নেই,
চাল কিবা চুলোও নেই--কী দেবো আর?
এক আকাশ রোদ দেবো,
বৃষ্টিভরা মেঘ দেবো,
আর কী নেবে?
এই তাপসী মন দেবো!
চাই না কিছুই--স্রেফ একটুখানি ঘুম দেবে?