ক্যাস্ট্রোর কিছু কথা

ফিডেল ক্যাস্ট্রোর কিছু কথা, যেগুলি আমার ভাল লাগে:

এক। আমি মনে করি, মানুষ যে মুহূর্ত থেকে ধ্বংস হয়ে যেতে শুরু করে, সে মুহূর্তের পরও বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় না।

দুই। আমাকে শাস্তি দাও, আমি পরোয়া করি না: ইতিহাস আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।

তিন। মানুষ নিয়তিকে গড়ে না, নিয়তিই তার প্রয়োজনমাফিক নিজস্ব আদলে মানুষকে গড়ে নেয়।

চার। আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্বে এবং সাহসিকতায়, এই মানুষটিই হিমালয়! তাই উনাকে দেখেই আমার হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।

পাঁচ। আজ এতগুলি বছর পর আমি এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমরা এ পর্যন্ত যতগুলি ভুল করেছি, সেগুলির মধ্যে সবচাইতে বড় ভুলটি হল এই, আমরা ধরেই নিয়েছি, অন্তত কেউ একজন সমাজতন্ত্র সম্পর্কে সত্যিই কিছু জানে, কিংবা সত্যিই জানে কীভাবে করে সমাজতন্ত্র গড়তে হয়।

ছয়। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন বাবা আমাকে শেখাতেন কীভাবে একজন ভাল গোঁড়া খৃষ্টান হওয়া যায়। আমাকে বলা হল, যদি কখনো কোনো মেয়ের সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কোনো চিন্তা আমার মাথায় আসে, সেদিন সন্ধ্যায়ই যেন আমি এক দৌড়ে চার্চে গিয়ে আমার সেই অপরাধটি স্বীকার করে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি। এক সপ্তাহ আমি বাবার কথামতো চললাম। এরপর বুঝলাম, আমার জন্য আর যা-ই হোক, ধর্ম নয়।

সাত। মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই আত্ম-অহংকারী। একমাত্র শিক্ষাই পারে মানুষকে সে ছাঁচ থেকে বের করে এনে বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত করতে।

আট। নাহ্‌, আমি মেয়র সাহেবকে ভোট দেবো না। উনি আমাকে ডিনারে নিমন্ত্রণ করেননি, আমার রাগটা শুধু সেখানে নয়। এয়ারপোর্ট থেকে শহরে আসার পথে আমি রাস্তায় রাস্তায় অসংখ্য গর্ত দেখেছি। এমন অদক্ষ লোককে ভোট দেয়া যায় না।

নয়। আমি বিপ্লব শুরু করেছিলাম ৮২ জনকে সাথে নিয়ে। যদি এই শুরুটা আমি আজকের দিনে করতাম, তবে আমি সাথে নিতাম ১০-১৫ জনকে। এর সাথে যা রাখতাম তা হল, অগাধ বিশ্বাস। তুমি যতোই ক্ষুদ্র হও না কেন, যদি তোমার নিজের উপর বিশ্বাস আর সঠিক পরিকল্পনা থাকে, তবে তুমি জয়ী হবেই হবে।

দশ। সম্পদশালীদের অস্ত্রাগার ক্রমেই অস্ত্রে-অস্ত্রে ভরে উঠছে। বিশ্বের ক্ষমতাধররা অশিক্ষিত, অসুস্থ, দরিদ্র আর ক্ষুধার্তদের সহজেই হত্যা করতে পারে, কিন্তু অজ্ঞতা, রোগ, দারিদ্র্য কিংবা ক্ষুধাকে হত্যা করার ক্ষমতা তাদের নেই।

এগারো। আমি কোনোকিছুর প্রতিই আসক্ত নই। যদি এমনকিছু দেখি, যেটা করাটাকে আমার কাছে দায়িত্ব বলে মনে হয়, শুধু তখনই আমি সেটা করার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। আমার ইচ্ছে, আমি যাতে আমার দায়িত্ব পালন করতে করতেই মারা যাই।

বারো। জীবনের গুণগত মান নির্ভর করে জ্ঞান আর সংস্কৃতির উপর। মূল্যবোধই জীবনের উৎকর্ষ ঠিক করে দেয়। জীবনে খাদ্য, বাসস্থান এবং পোশাকের চাইতে মূল্যবোধের দাম অনেকবেশি।

তেরো। মানবাধিকার নিয়ে অনেক কথাই হয়, কিন্তু মানবতার অধিকার নিয়ে কথা বলাটাও জরুরি। কেন কিছু লোক খালিপায়ে হাঁটবে, যাতে করে অন্যরা দামি গাড়িতে চড়তে পারে? কেন কিছু লোক পঁয়ত্রিশেই মারা যাবে, যদি অন্যরা সত্তর পর্যন্ত বাঁচে? কিছু লোককে হতদরিদ্র করেই কেন বাকিদের অতিধনী হতে হবে? বিশ্বের যেসব শিশুরা এক টুকরো রুটিও খেতে পায় না, আমি তাদের পক্ষে কথা বলছি। যে অসুস্থ মানুষগুলি কোনো ওষুধ পায় না, মানুষ হিসেবে ন্যূনতম মর্যাদা নিয়ে যারা বাঁচতে পারে না, আমি তাদের হয়ে বলছি।

চৌদ্দ। (কিউবাতে শিক্ষার হার কেন সবচাইতে বেশি সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে) আমাদের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বিশ্বে সর্বনিম্ন, আর আমরা যুদ্ধের পেছনে যা খরচ করি, তার পাঁচ গুণ খরচ করি স্কুলের পেছনে—যা যুক্তরাষ্ট্র করে না।

পনেরো। আমি জীবনে সবসময়ই, যা সত্য, তার পক্ষে লড়াই করেছি, ন্যায়বিচারের পক্ষে নয়।

পণ্ডিত জওহরলাল নেহ্রু ক্যাস্ট্রোকে বলেছিলেন, “অনেক কারণেই আমি আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছি। সেগুলির মধ্যে সবচাইতে বড় কারণটি হল এই, আপনি অনেক সাহসী একজন মানুষ।”

ক্যাস্ট্রো বেঁচে থাকুক।

সৎ বিপ্লব বেঁচে থাকুক।