ক্রাইসিস

 
আমরা একটা ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই কোভিড-নাইনটিন না এলে ঠিক জানতেই পারতাম না, ‘ক্রাইসিস’ বলতে আমরা যা বুঝছি, তা আসলে সবার কাছে ঠিক ‘ক্রাইসিস’ নয়, এই ‘ক্রাইসিস’ ব্যাপারটার নতুন কিছু দিক আবিষ্কৃত হয়েছে এই কোভিড-নাইনটিনের কারণে।


কীরকম? আসুন, দেখি।


আমাদের দুইটা ভাড়াটিয়া। তাদের চলাফেরা আমাদের চাইতে অনেক হাই লেভেলের। দেখলে মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরাই ভাড়া থাকি তাদের বাড়িতে। তো যা-ই হোক, করোনা আসার পর তাদের নানাবিধ ক্রাইসিস শুরু হলো। যেদিন বাংলাদেশে করোনা-আক্রান্ত রোগী প্রথম সনাক্ত করা হলো, সেদিন থেকে তাদের বলতে শুনেছি যে তারা অনেক ক্রাইসিসে আছে। তখনও লকডাউন ঠিক শুরু হয়নি। একদিন দুপুরের ঠিক আগমুহূর্তে এক ভাড়াটিয়া আন্টি এসে বললেন, ‘ভাবি, কী যে হবে! অনেক ক্রাইসিসে পড়ে যাব। চলতে কষ্ট হয়ে যাবে।’ ঠিক সেদিনই বাজারে গিয়ে আন্টি তাঁর নিজের জন্য দুইটা শাড়ি ও মেয়ের জন্য দুইটা ড্রেস কিনে আনলেন। আর কিছু কসমেটিকস। হাজার হোক, ক্রাইসিস আসছে বলে কথা…প্রস্তুতি তো একটু নিতেই হয়!


ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়, এখন তো আসল ক্রাইসিসটাই বাকি!


এই তো গত মাসের ২৯ কি ৩০ তারিখ, মানে লকডাউন-মুহূর্তে সেই আন্টির হাজব্যান্ড বাজারে গেলেন। গিয়ে ওঁদের ছোট ছেলের জন্য প্রায় ৭৫০০ টাকার ড্রাইফুড কিনলেন। এর সাথে ১৭টা মুরগি কিনলেন। ৫০ কেজি চাল, ২০ কেজি ডালসহ অন্যান্য মুদিসামগ্রী কিনলেন অনেক বেশি পরিমাণে। তার পরের দিন সেই ভাড়াটিয়া আন্টি এলেন। এসে বললেন, ‘জানেন ভাবি, খুবই টেনশন হচ্ছে। কী যে হবে! ব্যবসা চলবে কী করে? খাবোটা কী? খুবই ক্রাইসিসে আছি।’ তারপর শুরু হলো আমতা আমতা করা। হাজার হোক, এমন ‘ক্রাইসিস’ মোমেন্টে তিনি কী চাইতে পারেন, তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম।


এইবার শুরু হলো…উনি ফেইসবুক, টিভিতে কী কী দেখছেন, সেসবের দীর্ঘ ও অতিরঞ্জিত বয়ান। এই বাড়িওয়ালা, সেই বাড়িওয়ালা বাড়িভাড়া নিচ্ছে না, কেউ কেউ তো কমিয়ে দিয়েছে, আবার কেউ কেউ এই ক্রাইসিস মোমেন্টে পর্যন্ত বাড়িভাড়া নিচ্ছেন। গালটা হাতের তালুতে রেখে আমার মাকে বললেন, ‘হায় আল্লাহ্‌! কী কসাই, ভাবি, বলুন তো!’ (আন্টি আবার সারাদিন হিন্দি সিরিয়াল দেখেন। বাংলাদেশি কী কী চ্যানেল আছে, তা তিনি জানেনই না, আবার সেই উনিই দেখছেন বাংলাদেশের চ্যানেল? এটা বলছেন আসলে আমদের বিশ্বাস করাতে। উনি যা-ই বলছেন, সবই আসলে ফেইসবুক ঘেঁটে ঘেঁটে বের করা।) উনি কথাগুলি বলে যাচ্ছিলেন চরম লেভেলের ঢং করে করে। আমি চুপচাপ গিলছিলাম ওঁর কথাগুলি, আর ভাবছিলাম, ঠিক কখন আসল কথাটা বলবেন। উনি বলে চললেন, ভাবি, সাফাত (ওঁর ছেলের নাম) কিছু না খেতে পেরে আবার শুকিয়ে না যায়! আমি খুবই টেনশনে আছি। আমার ছেলেটার যে কী হবে! বুঝেনই তো ভাবি, ক্রাইসিস চলছে…এইটুকু বলেই আবার তিনি ডান বাম করা শুরু করলেন।


এইবার বলেই দিলেন! ‘ইয়ে মানে কী ভাবি, ক্রাইসিস চলছে তো, তাই ওর আব্বু বলছিল যে এই মাসের ভাড়াটা যদি একটু অফ রাখতেন,…পরের মাসে ঠিকই দিয়ে দেবো।’ শুনে কিছুই বললেন না আমার মা। চুপ রইলেন, তারপর আন্টি চলে গেলেন। ওদের কারেন্টবিল আমরা দিয়ে দিই, ওরা পরে আমাদের দেয়। গত ২ মাসের বিল এখনও দেয়নি। এখন আবার বলছে ভাড়া অফ করতে! ওদের বাসায় গেস্ট, গিফট, খানাপিনা লেগেই থাকে, এখন যেন আরও বেড়ে গেছে! হাজার হোক, ক্রাইসিস চলছে বলে কথা…


এইবার বলি আর এক ভাড়াটিয়ার কথা।


তারা তো মোটামুটি, যেদিন থেকে ভারতে করোনা এল, সেদিন থেকেই ক্রাইসিসে আছে। উঠতে বসতে তাদের মুখে ক্রাইসিস-এর খই ফোটে। তাদের কথা একটু বলি।


তারা সকালের নাস্তা করে বার্গার বা চিকেনফ্রাই দিয়ে, সারাদিনে এত খাওয়াদাওয়া করে যে ৮/১০টা ফ্যামিলির খাবার তারা একাই খায়। প্রচুর এবং প্রচুর খাবার নষ্ট করে। ফ্যামিলির ৩ জন সদস্যই ছোটোখাটো হাতির সমান। সবচাইতে কম ওজন যার, ওদের ক্লাস নাইনে পড়ুয়া ছেলেটার, তার ওজনই ১০২ কেজি। মাঝে মাঝে ভাবি, ভাগ্যিস, চিড়িয়াখানার লোকজন এখনও তাদের দেখেনি, একবার ওদের খোঁজ পেলে নিশ্চয়ই অন্য কিছু হতো। সে যা-ই হোক, ওদের টাকায় ওরা খাচ্ছে, কার কী এসে যায়!


লকডাউন আসার আগে ও পরে তারাও অন্য ভাড়াটিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে সব কিছু কিনেছে। এই তো কালই, বাজারে গিয়ে ১৮০০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি গলদাচিংড়ি কিনেছে। তাদের ছেলেটাও নাকি শুকিয়ে যাচ্ছে, খুব বায়না ধরেছে খাওয়ার। হাজার হোক, বাবা-মা তো! সন্তান চাইলে তো আর ‘না’ করতে পারেন না। রান্না করতে ইচ্ছে না করলে ফুডপান্ডার মাধ্যমে অর্ডার দিয়ে খাবার আনান, কেননা আশেপাশের রেস্টুরেন্টগুলি বন্ধ। হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে সবই আনান! তারাও বললেন যে বাড়িভাড়া দিতে পারবেন না। তাদেরও বিল বাকি। কারণ একটাই…ওই যে…ক্রাইসিস!


এইবার আর এক ক্রাইসিসের কথা বলি। আমাদের পাশের বাসার এক আঙ্কেল প্রচণ্ড ক্রাইসিসে আছেন। তিনি এই লকডাউনের মধ্যেই তিনতলা বাড়ির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর লজিকটা এমন, তিনি নাকি বাড়ির কাজ যদি চালিয়ে না চালিয়ে যান, তা হলে তো শ্রমিকরা না খেয়ে মরবে! আহা আহা! সে কী জনদরদি মানুষ, যিনি কিনা নির্মাণশ্রমিকদের টাকা আটকে রাখেন, বাসার বুয়ার টাকা কেটে রাখেন প্রতিমাসেই নানা অজুহাতে, মুদির দোকান থেকে বাকি করে করে জিনিস কেনেন…টাকার অভাবে নয়, ইচ্ছে করেই! তাঁর স্বভাবই এটা। গতমাসের বেতন না দিয়েই বুয়াকে কিছুদিন আসতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তিনিও বলেন, খুবই ক্রাইসিসে আছি। হাতে তেমন টাকাই নেই, তার উপর আবার এমন গজব! কীভাবে যে চলব!


আসুন, জনদরদি লোকজন নিয়ে আরও কিছু কথা বলা যাক। এই নতুন ক্রাইসিসের আগমনে জনদরদির বেশ কিছু নমুনা পেয়ে যাচ্ছি প্রতিদিনই…


তো আমার পাশের বাসার ওই আঙ্কেল এখন ক্রাইসিসে ভুগছেন, কিন্তু তাঁর মনটা খুবই বড়ো। তিনি চাইছেন মানুষকে সাহায্য করতে, কিন্তু তার ক্রাইসিস চলার কারণে তিনি কিছু করতে পারছেন না। তাঁর এতটাই ক্রাইসিস চলছে যে তিনি তিনতলা বাড়ি করতে পারলেও শ্রমিকদের নাস্তা দিতে পারেন না। এই করোনা আসার আগেও দিতেন না, আর এখন তো প্রশ্নই ওঠে না! হাজার হোক, ক্রাইসিস তো! সে যা-ই হোক, বলছিলাম আঙ্কেলের মন নিয়ে। আঙ্কেল তাঁর ছেলেকে বললেন, দ্যাখ, এই ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। বাবার কথা শুনে সেই ছেলে যোগাযোগ করল তার ফ্রেন্ডসার্কেলের সাথে। তারপর ঠিক হলো, সেই ছেলের এক ফ্রেন্ড (স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির ছেলে) ত্রাণ দিবে। কিন্তু ৫ জনের বেশি একজনকেও দিতে পারবে না। আর সেই ৫ জন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে তারা যাওয়ার আগেই, নইলে দিবে না।


তারপর বেছে বেছে ৫ জন ঠিক করা হলো। দেখলাম, আছরের নামাজের আগে থেকে একটু ত্রাণ পাবার আশায় তারা দাঁড়িয়ে আছে। আর পেল কিনা এশার সময়। আছর থেকে এশা অবধি তাদের সব নামাজই কাজা হয়ে গেল। তাদের ত্রাণ দেওয়া হলো, তারপর তাদের সাথে ছবি তোলা হলো, ভিডিও করা হলো। ফেইসবুকে খুব মাখা মাখা ক্যাপশন দিয়ে আপলোড করা হলো। আমরা সবই দেখলাম, আর ছবিতে লাভ রিঅ্যাক্ট দিলাম। ত্রাণের পেছনে ব্যয়িত টাকার পরিমাণ দুই হাজারের মতো।


ক্রাইসিসের কথা বলছিলাম। যখনই ত্রাণ এল, তখনই কিন্তু তা ওই ৫ জনের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। আন্টি সে ত্রাণ ভেতরে নিলেন। আর নিজেদের জন্য কিছু রাখলেন। আমি জিজ্ঞেস করাতে আমাকে বললেন, ত্রাণ খেলে নাকি সওয়াব হয়। উনি নাকি কখনও খান নাই ত্রাণ। তাই সওয়াব পাওয়ার আশায় এইগুলি সরিয়ে রাখছেন। আহ্‌! কী লজিক। এখানে কিন্তু আমরা নতুন একটি লজিক পেলাম। ত্রাণের খাবার খেলে সওয়াব হয়, তাই ত্রাণ থেকে নিজের জন্য কিছু সরিয়ে রাখা জায়েজ আছে।


আর একটা জনদরদি কাজ দেখলাম কাল সন্ধ্যায়। লোকজনকে একপ্রকার মাইকিং করে ডাকা হচ্ছে, পাশের এক বাসায় ত্রাণ দেওয়া হবে। সেখানে লোকজনের জটলা লেগে গেছে। তারপর দেওয়া হলো হাফ কিলো করে আটা। হ্যাঁ, শুধুই আটা। তা-ও লোকজন নিল, আর গালি দিতে দিতে চলে গেল। সব মিলে ৩০-৩৫ জন মানুষ সেই মহামূল্যবান ত্রাণ পেল। ত্রাণটা যারা দিল, ওরা কিন্তু বেশ ভালোই অবস্থাপন্ন লোক।


এই কয়েকদিনে খেয়াল করলাম, নিজেকে জনদরদি হিসেবে পরিচয় দেওয়া আর ফেইসবুকে শোঅফ করাটা ভালোই বেড়ে গেছে। এটাই তো সেই মুহূর্তটাও, যখন নিজের পরিচিতি বাড়ানো যাবে। একরকম তো কম্পিটিশনই হচ্ছে নিজেকে জাহির করার জন্য, আমি যেখানে থাকি, সেখানেও, চারিদিকে। আবার সমালোচনা হচ্ছে, আমরা নাকি লোকজনকে কিছুই দিচ্ছি না। তাদের জন্য একটাই কথা, ভাই, তোরা মরার চিন্তা না-ই করতে পারিস, আমরা করছি। আমাদের জন্য বর্তমান সময়টা উৎসব করার সময় নয়। আমরা শোঅফ করতে চাইছি না। যে দেখার সে দেখছে, আর সে দেখলেই চলবে, তোদের জানাতে চাইছি না। এ সমাজে যাদের দানের পরিমাণ সবচাইতে বেশি, তাদের লোকদেখানোর পরিমাণ সবচাইতে কম।


এই সময়ে কিছু কিছু মানুষের উদয় হয়েছে, যাদের পকেটে ফুটো পয়সাও নাই, এর কাছ থেকে ওর কাছ থেকে ধার করে আর পয়সা মেরে দিয়েই সারাবছর ওরা চলে। ওরা এখন বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে পয়সা এনে এনে চারভাগের অন্তত একভাগ নিজেদের পকেটে ঢুকাচ্ছে আর বাকিটা দিয়ে ত্রাণ দিচ্ছে মূলত ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য, আর কিছুই না। ছবি আর ভিডিওর নিচে আবার ক্যাপশন লিখছে, আমার আয়ের কিছু অংশ এই সময়ে দান করাটা আমার কর্তব্য। আমি আমার কর্তব্য পালন করলাম, আর আপনি?...নিচে লোকজন কমেন্ট করছে, লাভ রিঅ্যাক্ট দিচ্ছে…সে-ও রিপ্লাই করছে এমনভাবে যেন এই টাকাটা নিজের পকেট থেকে দিয়েছে, বড়ো বড়ো ডায়লগ ঝাড়ছে…


আর ও হ্যাঁ, সেই জনদরদি আঙ্কেলের কথা একটু বলি। তাঁর মতোই তাঁর ছেলেরও মন বড়ো, সে তাঁর মা-বাবার সাথে অকথ্য ভাষার গালি দিয়ে কথা বলে, ৬ মাসের বেশি ১টা মেয়েকে তার ভালো লাগে না, আবার একসাথেই ২/৩টা মেয়েকে ভালো লাগে তার। ফ্যামিলি সবই জানে। কিছুই করার নেই। সে যা-ই হোক, লোকে তো জানল যে ছেলেটার মন বড়ো। অথচ এক আল্লাহ্‌ আর সেই মেয়েগুলি জানে, সত্যিই তো তার মনটা বেশ বড়োই, সে মনে কতজনের জায়গা হয়ে যায় অনায়াসেই। ওদিকে বাবা-মা’ও এত কিছুর পরও বাইরে বলতে পারছেন, তাঁদের ও তাঁদের ছেলের মন অনেক বড়ো। সে কী তৃপ্তি।


সেই ছেলের কাজই হচ্ছে মেয়েদের সাথে প্রেম করে বেড়ানো আর লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মেরে দেওয়া। সে এলাকায় বলে বেড়ায়, তার বাবার এই আছে সেই আছে। তার কোন কোন চাচা নাকি কী সব পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, হাবিজাবি…ছাতার মাথা, ইত্যাদি ইত্যাদি! সে এখন বাসায় বসে থাকে বেশিরভাগ সময়। যেহেতু সে একটা বেকার ও একই সাথে অথর্ব, তাই ফেসবুকে বসে বসে মেয়েদের বিরক্ত করা আর অন্যদের লেগে থাকা ছাড়া তার তেমন আর কোনও কাজ নেই। মাঝেমধ্যে লোকজনের কাছ থেকে বিকাশে টাকাপয়সা চায়।


মাঝে মাঝে মনে হয়, এই করোনা আসাটা খুবই দরকার ছিল। মানুষ হিসেবে আমরা খুবই উড়ছিলাম ইচ্ছামতন। এখনও কিন্তু থামছি না, বরং আরও বেশি করে উড়ছি। আর আমাদের কাজের মাধ্যমে আমরা নানান বিষয়ের নতুন নতুন সংজ্ঞা আবিষ্কার করে চাকরিপ্রার্থীদের মাথায় আরও চাপ দিচ্ছি, কেননা নতুন কোনও শব্দ মানেই তো সেইটাও পড়ো! হা হা হা! মজা করলাম, এই মুহূর্তে মজা করা ঠিক নয়, তবু করলাম। মাথা ঠিক নাই তো, তাই। আর ঠিক কাজটা না করা তো আমাদের পুরনো অভ্যাস!


এই সময়ে ক্রাইসিস-মার্কা, জনদরদি-সাজা লোকদের মতো আরও নানান নতুন সংজ্ঞাযুক্ত মানুষদের ধিক্কার জানাই, যারা বেশি বেশি উড়েছে বলেই আজ নিরীহ মানুষগুলিকে সত্যিকারের ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এটা সত্যি খুবই দুঃখজনক। এ এমনই এক বৈশ্বিক দুর্যোগ, যেখানে আমাদের কিছুই করার নেই, কেবল সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা আর ক্ষমাচাওয়া ছাড়া। এ বিপদ থেকে কবে মুক্তি পাব, তা আমরা কেউই জানি না। এই সময়টাতে ধৈর্য ও সহনশীলতা খুবই দরকার।


এই দুর্যোগে যারা সবচাইতে বেশি কাজ করছেন দুর্গত মানুষের জন্য, তাদের কেউ ফেইসবুকে লাইভে আসেন না, ছবি আর ভিডিও পোস্ট করে করে মানুষকে অস্থির করে তুলেন না, কোনও ধরনের শো-অফ করেন না। তাদের আমরা কেউ চিনি না, তাদের চেনেন শুধু বিধাতা আর তাদের নিজের বিবেক। তাদের কেউ কখনও মনে রাখবে না, তাদের দেখলেও কেউ কখনও চিনতে পারবে না, তাদের হাতে কোনও পুরস্কার কিংবা স্বীকৃতি একদিনও উঠবে না। তবু, ঈশ্বরের খাতায় মানুষ হিসেবে যাদের নাম লেখা আছে, তারা সে তালিকায় আছেন। তারা সুস্থ থাকুক, বেঁচে থাকুক। পৃথিবীর আয়ুর জন্যই তাদের আয়ু আজ খুব প্রয়োজন।