ঘৃণার জন্য প্রার্থনা

 তোমাকে বুঝি--বিপদ এটাই।
তোমাকে চিনে দেখেছি যত, বুঝেছি তত--
সবাইকেই হয় না বুঝতে।
তোমায় না বুঝলেই বড় বেঁচে যেতেম!
প্রিয়, তোমায় বুঝি বলেই কষ্ট হয়, নষ্ট হই।
 
আমায় চিন না?
আমি সে-ই, যাকে ঘৃণায় বেঁধে খুব ভাল থাকো,
তোমার দরোজায় থাকে প্রতীক্ষায় যে অনাহূত,
যাকে তুমি রাখতে দূরে বুদ্ধি আঁটো,
আমিই তো সে-ই!
ঠিক আছে, প্রিয়, যত খুশি আঘাত করো--সইতে পারি।
 
আমি তোমার ঘৃণায় বাঁচি,
বাড়ুক ঘৃণা ইচ্ছেমত আমার ভাগে,
তবু অন্য কাউকে করো না আঘাত এমন করে,
সবাই কি আর ‘আমি’, বলো?
আমি পৃথিবীর সকল ঘৃণায় বাঁচি,
তোমার ওটুক ঘৃণায় কী এসে যায়?
তোমায় আমি বাঁধব প্রেমে,
আমায় তুমি ঘৃণায় বেঁধো।
 
তোমার ঘৃণা--সে কী দারুণ!
আমি যে আছি--সেটাই তোমায় জ্বালায় বুঝি?
বুঝি সবই! তবু থাকবো আমি অনন্তকাল।
তোমার যত দুঃস্বপ্ন আর রাতের ছায়া,
উপহাস আর ভয় যত সব তোমায় বাঁধে--
এ শরীরে জড়িয়ে নেবো প্রবল জেদে,
শুধু রাখতে তোমায় সুরক্ষিত সইবো সবই!
 
আমি পৃথিবীর পাপের জাহাজ,
মিথ্যে তোমার নেবো কেড়ে নিজের করে,
নষ্ট যত বীজ বুনেছ মনের ভুলে,
যত ভুল তুমি করবে ভুলে ভবিষ্যতে,
পাপ আছে যত পাথরভারি তোমার বাড়ি--
পাঠিয়ে দিয়ো এই জাহাজে,
এক জীবনের ভুলগুলি সব বইব হেসে এই কাঁধেতেই!
 
দুঃখ তোমার হোক আমারই,
আনন্দটা থাক তোমারই,
হতাশা যত, আমায় দিয়ো।
এর বদলে স্বপ্ন সুখের বুনব সুখে তোমার চোখে,
তোমায় প্রিয় সাগরে সুখের ভাসিয়ে নেবো, আস্থা রেখো।
তোমার দুঃখের স্বপ্ন যত, আমার ঘরে খেলবে, দেখো!
শুধু এই মিনতি--আমায় তুমি ফেলে দিয়ো না,
আর কিছু নয়, ঘৃণায় বেঁধো!
 
একি প্রিয়! কাঁদছ তুমি!
মনে তোমার কী আক্ষেপ, কীসের প্রপাত?
মনের ঝড়কে থামাও, প্রিয়,
নইলে পৃথিবী তোমার নরক হবে!
আমি হাঁটু গেড়ে আছি, চোখ মেলে দেখো,
তোমার সবটা অ-সুখ শুধুই আমায় দিয়ো, হাত পেতে নেবো--
এ সাধ মনে।
পৃথিবীর সব কষ্ট মিলেও কম হয়ে যায়,
তোমায় যখন কাঁদতে দেখি!
তোমার কাছে খুঁজব না সুখ,
আর কিছু নয়, কষ্ট ঢেলো, দুঃখ দিয়ো,
বেহিসেবে ঘৃণায় রেখো।
 
ওই কবরের আড়ালটাতে নোংরা মাটি,
আঁধারটাও পাকিয়ে দলা লুকিয়ে থাকে সেখানটাতে,
ওই ওখানে প্রত্যাখ্যাত আর ব্যর্থ জীবন ঘর বেঁধেছে,
আমায় পাবে সেখানে, প্রিয়--এক কষ্টজয়ী পাগল যুবক,
যার হৃদয় নাচে সময় গুনে!
তোমার শাপে মত্ত ভীষণ সকল কাজে,
অভেদ্য এক দেয়ালে তুমি ঠেলেছ যাকে--
দূরের দ্বীপে।
 
আমি পৃথিবীর সব অসুস্থ আর রোগাক্রান্তের হবো আশ্রয়,
তোমার যত নিভৃত ব্যথা, আমায় দিয়ো--বুকে রাখব চেপে শক্ত করে!
কাঁদব ব্যথায়, ভাঙব না তবু,
ভারে নুয়ে যাবো, হারব না তবু।
তোমার পাপের বোঝায় থামব না পথে,
এ মনের ক্ষমতা আমার অসীম জেনো!
শেষ দৃশ্য দেখার আগেই যাবো না সরে--তোমার নামে নিলাম শপথ!
 
অভিশপ্ত আর মন্দ যত--সবই আমার!
আমি আঁধার গিলে কিরণ ছড়াই,
তোমার ঘৃণায় শক্তি বাড়াই!
নরকের দ্বারে জাগি পাহারায়,
শীতল আঁধারে অতল সাগরে ডুব দিয়ে আমি মুক্তো খুঁজি!
আমার কয়েদ আমার হৃদয়--বাঁধবে আমায় সাধ্যটা কার?
এ জীবনের ভুল আছে যত--বিঁধলে বিঁধুক কাঁটার মতন--নেই আফসোস!
হে প্রিয় মন, ভালবাসাটুকু ফুরিয়ে গেলেও যত্নে ঘৃণা জমিয়ে রেখো!
 
যতই আমায় করো হেলা, পরোয়া করি না, বাঁচব ঠিকই!
দিনের শেষে চাওয়া এতটুকুই--
কখনও যদি ঈশ্বর আমায় করেন দয়া,
উনার পায়ে ঠাঁই যদি পাই ওই জীবনে,
সেদিন আমায় ক্ষমা করো,
রেখো না ঘৃণায় আর বাঁচিয়ে।
জীবনে যাকে বাসোনি ভালো,
মরণে হলেও মুক্তি দিয়ো--তোমার ঘৃণার আগুন থেকে!
...এক ব্যর্থ যুবকের এই প্রার্থনা রেখো।