জীবনের গল্প (অসমাপ্ত)

পছন্দ না হলে বিয়ে করতে হবে কেন? ক্যারিয়ার খুব ভাল? সুখে থাকবেন? শিওর? আপনি একজন মানুষকে বিয়ে করবেন, উনার ক্যারিয়ারকে নয়। আমি কোনওদিনও ওরকম করে ভাবি না, ভাববও না।

চাকরি দিয়ে কী হয়? জীবনটাই তো আসল। বাকি সবকিছুই ছেলেভুলানো গপ্পো।

আমি ক্যারিয়ারিস্ট মানুষ পছন্দ করি না। আমি নিজে বিন্দুমাত্রও ওরকম নাতো, তাই। যারা ওরকম, ওরা থাক ওদের মতো করে ভাল। আমি একজনকে ফিরিয়ে দিয়েছি, কিংবা ও-ই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে, কিংবা ভাগ্যই আমাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে, কারণ ও ভাবত, আগে ক্যারিয়ার, এরপর জীবন। আমি উল্টোটা ভাবি। আগে জীবন, সময় পেলে, ক্যারিয়ার। বাঁচবই বা কদিন? মরে গেলে এসব দিয়ে কী হবে? জীবনটাকে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। হাসতে ইচ্ছে করে। পাখি আর ফুলের সাথে খেলতে ইচ্ছে করে। ভুল করতে ইচ্ছে করে। নিজের মতো করে বাঁচতে ইচ্ছে করে। আফসোস ছাড়া বাঁচতে ইচ্ছে করে। কারওর প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করে। বাঁচব, হাসব, ভুল করব, এই একটু ঘুরেটুরে দেখব, এরপর একদিন হুট করে হাসতে হাসতেই নেই হয়ে যাবো। এইতো!

বেঁচে যে আছি, এইতো বেশি!! এটাই বোনাস! আর কী-ই বা চাইবার থাকতে পারে? এমন তো আর নয় যে আমাকে বাঁচিয়ে রাখতেই হয়েছে ঈশ্বরকে। সবার মতো ভাবতে হবে কেন? আমি হব আমার মতো। আমি অমলকান্তির মতো না হয় রোদ্দুরই হব। কে কবে কোথায় এমন দিব্যি দিয়েছে যে কিছু হতেই হবে? দেয়নি তো! কী হবে কিছু না হলে? হোক, তবুও!

আমি হিপোক্রিসি করতে পারি না। প্রাণ গেলেও না। যা ভাবি, বিশ্বাস করি, সেটাই বলি। সবাই এগিয়ে যাক। কিচ্ছু হবে না। কালকে বাঁচব কিনা তারই তো ঠিক নেই। ১০০ বছরের প্ল্যান গুছিয়ে কী হবে? আমি প্রতি মুহূর্তের পৃথিবীতে বেঁচেথাকা বোকাসোকা মানুষ। যতক্ষণ বেঁচে আছি, বাঁচব। এই ধরুন, যদি আজকের পরই নেই হয়ে যাই, কোনও দুঃখ থাকবে না। চড়ুইয়ের মতো ফুড়ুৎফাড়ুৎ একটা জীবন হবে আমার; ছোট্টো জীবন। খুব বেশিদিন বাঁচতে চাই না। একটাই চাওয়া, যতদিন বাঁচি, যাতে আফসোস ছাড়া বাঁচি। কারওর মনে কষ্ট না দিয়ে, কারওর কোনও ক্ষতি না করে বাঁচি। এইতো!

আমি আসলে এই সিভিল সার্ভিসের জন্য উপযুক্ত না। তেলবাজি করতে পারি না, মনভুলানো মিথ্যে বলতে পারি না, হিপোক্রিসি করতে পারি না। আমাকে বসরা আমাকে যে খুব একটা যে পছন্দ করেন, তাও না। আমি ‘ইয়েস স্যার’ ‘ইয়েস স্যার’ করতে পারি না। প্রচণ্ড রকমের আত্মসম্মান নিয়ে চলি। মধ্যবিত্তের আর আছেই বা কী? প্রাণ যায় যাক, তবুও সম্মানটুকু থাক। আমি ভাবি, ওরা যেখানে ইচ্ছে সেখানে পোস্টিং দিক। নোংরাভাবে মাথা নত করতে পারব না। মরে গেলেও না। ছোট্টো একটা জীবন। কাটিয়ে দেয়া যায়ই তো!

এই যে মুভি দেখি, বই পড়ি, গান শুনি, গান করি, কীসব যেন লিখি……… অনেক ভাল আছি তো! এতটা ভাল না থাকলেই বা কী এসে যেত? আমি এমন কে??? আমাকে ঈশ্বরের বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছেই বা কেন? বেঁচে আছি, এই বেশ! শুধু বেঁচে থাকলেও অনেককিছু হয়। আমার যে কিছুই পাওয়ার কথা ছিল না। পেয়েছি তো! অনার্স পাস করার কথা ছিল না, করেছি তো! বিসিএস’য়ে ফার্স্ট হয়েছি, আইবিএ’তে পড়েছি। অনেককিছু পাওয়া হয়ে গেছে! আর কী চাই! আরও দূর যেতে হবে। আমি জানি, আমি যাবই! স্রেফ বেঁচে থাকলেই হবে। বাকিটা এমনিতেই হয়ে যাবে।

এত লোক ভালোবাসে!! ইসসস……..! কষ্ট হয়! খুউব কষ্ট! ওদের ভালোবাসা আমাকে প্রতি মুহূর্তেই অপরাধী করে দেয়। ওদেরকে যে ভালোবাসবার সময়ই হয় না আমার। উঁহু, মনে থাকে না প্রায়ই! ওরা তবুও বাসে। কেন বাসে? আমি এমন কে?? আমাকে ভালোবাসতে হবেই বা কেন??? তাই আমি ঠিক করেছি, আমি ওদের পাশে থাকব। যারা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে, ওদেরকে স্বপ্ন দেখতে শেখাব। এইতো! যারা বাঁচতে ভুলে গেছে, ওদের বাঁচতে শেখাব। যারা হাসতে ভুলে গেছে, ওদের হাসতে শেখাব। আমি চাই, কেউই হারিয়ে না যাক। আমি জানি, হারিয়ে যেতে কতটা কষ্ট হয়! একদিন আমিও যে ওদের দলেই ছিলাম। আমিও যে নোবডি হয়েই ছিলাম। রাস্তার কুকুরের চাইতেও অবহেলার পাত্র ছিলাম। বেঁচে থাকার কথাও ছিল না আমার। তাই, আর ভয় নেই। বেঁচে আছি, এই বেশি। আর দশটা উজ্জ্বল মানুষের মতো না হোক, অন্তত একটা অনুজ্জ্বল মানুষ হয়ে বেঁচে থাকলেও অনেককিছু হয়। আর কেউ না জানুক, আমি তো জানি! একদিন ভেবেছিলাম, ওসব বেঁচে থেকেটেকে কী হবে? ইসস!! কী যে ভুল ভাবতাম!! ছেলেমানুষি আরকি! এসবই মাথায় আসে এখন।

আমার অনেক সাহস। জীবনটাকে নিয়ে যারা জুয়া খেলতে পারে, তাদের সাহসের অভাব হয় না। এই সাহসের কথা কেউ বিশ্বাসও করবে না হয়তো। এত কেয়ার করে জীবন কাটাতে ইচ্ছে করে না। আমি ক্ষতিকর লোক সহ্যই করতে পারি না। ওরা বলে, সুশান্ত, একটু সমঝে চল। আমি মনে-মনে হাসি। হবেটা কী, শুনি? এসিআর’য়ে মার্কস কম দিবে? দিক। বাজে পোস্টিং দিবে? দিক। পারব না জীবনকে জীবিকার কাছে হেরে যেতে দিতে। যা হয় হোক। জীবন তো একটাই। ওরা বলে, না, না সুশান্ত, একটু তোয়াজ করে চল। ওসব বিরক্তিকর মানুষ তোমার বস হয়ে যেতে পারে কখনও না কখনও। আমি বলি, আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে আমি অতদিন বেঁচে থাকব? অত আয়ু লেখা আছে নাকি আমার কপালে? যতক্ষণ বেঁচে আছি, ভালভাবে বাঁচব। যা হওয়ার তা-ই হবে। ল্যাটিনে বলেঃ Que sera, sera. মানে, Whatever was, was; whatever is, is; whatever will be, will be. এইতো! যা হওয়ার তা-ই হবে। আমি অত ধার্মিক না। কিন্তু গীতার মূল কথায় খুব বিশ্বাস করি। ওটাকে জীবনে ধারণ করি। এভাবে করেই বেঁচে আছি। ওরা জিতে যাক! পারব না আমি! তোমরা দেখো, আমি হেরে গিয়ে একদিন জিতে যাবো। ইঁদুরদৌড় আমার জন্য নয়। কোনদিনও হয়নি। হবেও না, আমি জানি। চাকরি স্থায়ী হলে দুম করে ঘুরতে চলে যাবো। সাথে পিএইচডি’টাও করে আসব। এসে চাকরি করব, সংসার করব। একটু ভুল করে আধটু শুধরে দিয়ে পুষিয়ে দেবো। জীবনের গান শুনব, শোনাবো। এরপর? এরপর কী হবে? আগে ওইটুক আসুক তো!