জুয়া থেকে জোছনা

 
প্রিয় অজিত, এই জীবনে আপনাকে আর তুমি বলা হলো না।
আপনি আমাকে যা দিয়েছেন,
আমার জীবনের গত পঁচিশটি বছর তার ছিটেফোঁটাও আমাকে দিতে পারেনি,
সামনের নব্বই বছরও যদি বেঁচে থাকি, কথাটা প্রাসঙ্গিক থেকে যাবে তখনও।
আপনি চলে গেলে আমি অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতাম।
আমার সাথে থেকে যাবার জন্যে ধন্যবাদ।


আপনি নিজেই জানেন না, আপনি আমাকে কী দিয়ে ফেলেছেন!
আপনি আমাকে পুরো একটা জীবন দিয়েছেন।
একটাবছর স্বর্গে থাকার সুযোগ দিয়েছেন।
অজিত, আমি জন্মের পর কখনও বেঁচে ছিলাম না।
আপনি আমাকে অন্তত একটাবছর সত্যি সত্যি বাঁচিয়েছেন।
এটা আপনি নিজেও হয়তো জানতেন না। তাই জানালাম।

আপনি আমাকে শিখিয়েছেন, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনটা কীভাবে শুনতে হয়।
আমার ভেতর এমন আশ্চর্য একটা পৃথিবী আছে,
যা কেউ কখনও দেখতে পায়নি, সেটার অনেকটা পথ আপনি হেঁটেছেন।
বিশ্বাস করুন অজিত, আমি ভয়ংকর রকমের ভালো একজন মানুষ।
আমি নিজেকে অনেক ভালোবাসি, তাই নিজেকে ভালো রাখতে আমিও চাই!
…আপনার সাথে পরিচয় না হলে এই সত্যটা আমার জানা হতো না।

আমি অনেক বছর মন খারাপ করেই কাটিয়ে দিয়েছি। 
এখন মনে হয়, শুধুই আপনার জন্য বেঁচে থাকা যায় হাসতে হাসতে।
নিজের দিকে তাকালে আমার মনে হয়, আমার চাইতে বেশি সৌভাগ্য নিয়ে কেউ কখনও আসেনি।
…এসব কথা আপনাকে কখনও বলিনি, অজিত।
একটা ব্যাপার কী জানেন, আমার ভেতরে জীবনের প্রতি তৃষ্ণা অল্প,
তবে আপনি পাশে থাকলে এই সমস্যাটাও একসময় ঠিক কেটে যাবে।


প্রিয় অজিত, আপনি আমাকে এমন একটা পৃথিবী দিয়েছেন,
যেটার খোঁজ আপনি নিজেই শুরুতে জানতেন না। সেই পৃথিবীটা আপনি আমার জন্য বানিয়েছেন।
বাইরে থেকে সবাই আমাকে হাসিখুশি আর চঞ্চল হিসেবেই চেনে।
আমি বাইরে বেরোলে অনেক হাসি হাসি মুখ নিয়ে থাকি,
চেহারায় ছড়িয়ে থাকে একরাশ উচ্ছলতা।
অথচ, পৃথিবীর কেউই জানে না, আমি একদমই হাসি না।
বাসায় ঢুকলেই আমি সম্পূর্ণ অন্য মানুষ।
অজিত, আপনি জানেন না, আপনার কথা ভাবতে ভাবতে
দিনরাত আমি একা একা হেসেছি, একা একা কথা বলেছি। বহু বহুদিন!

আপনি প্রায়ই বলেন,
আপনি আমাকে ঠিক আমার মতো করে ভালোবাসতে পারেন না।
বার বার এমন করে কেন বলেন, অজিত?
আমার মতো করে ভালোবাসা…আপনার চোখে এটা ঠিক কীরকম, বলুন তো?
আজ একটা কথা সাফ সাফ জানিয়ে রাখি।
আপনি আর আমি গত একবছরে যতটা কাছাকাছি এসেছি,
দশবছরের পুরনো প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীও এতটা কাছে আসতে পারে না।
বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিয়ে দেখুন না! ভালোবাসা খুবই আপেক্ষিক একটা ব্যাপার, অজিত।
আপনার ভাবনা, আপনার ব্যাকরণ, আপনার বিশ্বাস…এর বাইরেও অনেক কিছু আছে!


এই যে আমি লিখতে পারি, এটা তো আগে কখনও জানতামই না!
আমার ভেতরের সুন্দর মানুষটাকে আপনিই তো বের করে এনেছেন!
আপনি ভাবতে পারেন অজিত, এই যে আমার ভেতরও
একটা পুরাদস্তুর প্রেমিকা এবং সংসারী মানুষ বাস করে, তা তো আমি নিজেও জানতাম না!
এ যে আপনারই দান। বলুন, তা-ই নয় কি?

আমাকে চিনতে আপনার অনেক সময় লেগেছে। কেন, জানেন?
কেননা, আমি আপনাকে মুগ্ধ করে দেবার কোনও চেষ্টাই কখনও করিনি!
আপনি আমার যা দেখেছেন, তার সবটাই ধীরে ধীরে একটু একটু করে দেখতে পেয়েছেন।
আমিও জানতাম, আমাকে আবিষ্কার করে নিতে হবে। বুঝতে পারছেন, অজিত?
যদি তা করতে পারেন, তা হলে আমি আরও অনেক কিছুই, যা আপনি জানেন না!
যতটা আপনি জানেন, তার চাইতে অনেক বেশি আপনার অজানা থেকে যাচ্ছে।
আমি চেয়েছি, এটা আপনি বুঝুন। আর যদি ব্যর্থ হন,
তবে আপনার কাছে আমি কিছুই নই!...আমার অবশ্য ওতেও কোনও দুঃখ থাকত না।


আমি আমার আইডিতে কী লিখে রেখেছি, কখনও খেয়াল করেছেন, অজিত?
খেয়াল না করে থাকলে এখন একটু করুন। দেখবেন,
আমি নিজের সম্পর্কে বলেছি, আমি সাইকোপ্যাথ, আমি অ্যারোগ্যান্ট।
এর একটা কারণ আছে। লেখার সময় আমি ভেবেছি,
যদি কেউ এই জীবনে আসতে চায়, তবে
সে প্রথমেই মাথায় এটা সেট করে রাখুক যে,
আমি মানুষ হিসেবে খুবই অদ্ভুত এবং একই সাথে উদ্ভট প্রকৃতির।


তে করে আমার যা সুবিধে হবে, তা হলো,
তেমন একটা কিছু আশা করে কেউ আমার জীবনে আসবে না।
বস্তুত, ওই দুই পরিচয় জেনে কেউ আসতেই চাইবে না!
তার পরও, যদি কেউ ভুলক্রমে চলেই আসে, মানে আপনি যেমন এসেছেন আরকি,
তবে সে নিজেই আমার ভেতরের আশ্চর্য জগতটা আবিষ্কার করুক!
করতে পারলে সে চমৎকার কিছু সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে!
আমি এটাই চেয়েছি সব সময়। আমার মনে হয়েছে,
যে আমাকে আবিষ্কার করতে জানে না, এই জীবনে তাকে আমার দরকার নেই।


আমি আপনাকে সেই প্রথমদিন থেকেই ‘অজিত’ বলেই ডাকি।
এর আগে পরে কিছুই ডাকি না। দাদা, ভাইয়া, স্যার, মিস্টার কিছুই কখনও বসাইনি।
আপনার মাথায় কি এটা কখনও এসেছে? খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা?
করেননি বোধ হয়। কাজটা কেন করলাম, জানেন?
কারণ, আমি চেয়েছি, আমাদের পরিচয়ের শেষদিনটা পর্যন্ত যাতে
আমি আপনাকে একটা নামেই ডাকতে পারি।