টুকুস টাকুস, টাকুস টুকুস

 
আমার ছোট্ট মিষ্টি টুকুসসোনা!
অনেক দিন পর তোমাকে লিখছি। কেমন আছ?
কী, ভাবছ, তোমাকে ফের টুকুস নামে ডাকছি…! তাই না?
কী করব, বলো! তুমি যখনই আমার ভাবনায় আসো,
আমার নিউরনে কাঁপো, তখনই আমার মনটা বলে,
দরোজাটা খুলেই দ্যাখো! বাইরে তোমার আদুরে টুকুস…!
…অমনি তোমাকে টুকুস নামে ডেকেই ফেলি!
ডেকেছি তো কী হয়েছে, হুঁ? বেশ করেছি! আরও ডাকব!
টুকুস টুকুস! টুকুস টাকুস! টাকুস টুকুস! গুনে গুনে আরও দশ দশবার! শুনি, কী করবে তুমি?


জানো, তুমি চলে যাবার পর…
অপরাজিতার নীলচে ছায়ায় বেড়েওঠা বাগানটাও,
আগাছারা দখলে নিয়েছে! চোখের সামনেই, প্রতিটি কলি
ফোটার আগেই কী সহজেই পড়ছে ঝরে মাটির বুকে!


দেখে এত রাগ উঠল…জানো,
সবকটাকে খুব করে তাই বকে দিয়েছি! ওরা তো ভারি অদ্ভুত!
ভোরের নরম আলো ওদের গায়ে রোজই কেমন মাখিয়ে রাখি,
দমকা হাওয়ার ধাক্কা ঠেলি, ওদের আঁচলে জড়াই,…তা-ও আমি,
যখন রাতে জোছনা ঝরে, তখন ওদের সাথী---সে-ও আমি,
ওদের শোনাব বলে এক এক কত কবিতা গড়েছি,
আর ওরা কিনা…তুমি চলে গেলে,…সেই বেদনায় এমন মলিন হলো! আমাকেই ওরা পর করল!
অ্যাই, ওরা এমন কেন? ওরা আমায় চায় না কেন? এখুনিই বলো! একটা টুকুস ফুকুস!


আমি জানি, ওরা তোমাকে ভালোবাসে।
এ যে শুধুই নিখাদ মনের শুদ্ধ ভালোবাসা!
এখানে কোনও রহস্য নেই, কোনও ভণিতাও নেই।
যে তোমাকে ভালোবাসে,…
ঝরনার স্বচ্ছজলের মতো, যে জলের সামনে গেলে
নিজের মুখ দেখা যায় ঠিক অবিকল,…
সে যত জ্বালা দিক, অবহেলাটা যতই করুক,…হাসিমুখে সবই সহ্য করি।


এত হাসছ কেন, টুকুসসোনা?
আমি কিন্তু এমনটা নই! কারও উচ্ছিষ্টকে আদর করে গিলি না কখনও!
আমায় এমন তবে কে বানাল? আর কেউ নয়, তুমিই শুধু! বুঝেছ, টুকুস?
…বলেই দিলাম মুখের উপরে! ঠকাস্‌ করে! এখন বলো, লাগছে কেমন?
যেমনই লাগুক, বলেছি তো বেশ করেছি! তোমার কিছু বলার আছে?
খবর্দার! কিছু বোলো না যেন! তুমি এখন মুখ খুললে,
গুনে গুনে দশ দশটা খাইয়ে দেবো এলাচ-গোটা! তখন বুঝবে মজা!


আমায় মনে মনে বলছ তো খুব, জংলি-বেড়াল! ফ্যাসাদে-পাখি! আরও অনেক কিছু…!
বললে বলো! হ্যাঁ, বলছ ঠিকই, আমি তো ঠিক ওসবই!
আমি বেঁচেই আছি শুধু তোমাকে জ্বালাব বলে! ইস্‌, আমার লক্ষ্মীমন্ত টুকুসবাবুই!


সত্যি আমি ভীষণ বকি? পক-পকাপক, বক-বকাবক…সারাক্ষণই এমন করি?
জ্বালাই বেশি? দিনে রাতে এমন এমন প্রশ্ন করি, যার উত্তরই নেই?
জানি তো, আমি এসবই করি! করবই তো! তুমি যে আমার আস্ত একটা মিয়াঁও-টুকুস!


জানো, চলে গেলে সেই…আজ বাষট্টি দিন!
এই বন্দিজীবন কাটছে কেমন, কখনও খোঁজ রেখেছ?
এক একটা প্রহর কীভাবে ফুরোয় এখন তোমাকে ছেড়ে…
জানতে তোমার আসে না মনেই! কী করে এত চুপ থাকছ?
থাকলে থাকো! আমিও আছি চুপটি করেই,…থাকব, দেখো!


ডায়রির পাতায় পাতায় কিছু জমে অভিমান…
সেই পাহাড়কিনারে ভালোবাসা শুধুই ঢেউ তুলে যায়…
আর, এক এক করে আছড়ে পড়ে…ওদের বাধা দিই না, আমৃত্যুই পড়ুক এমন…


আজ বহুদিন পর, কত আবোলতাবোল বকে ফেললাম!...বিরক্ত, খুউব?
ঠিক আছে, বাবা…মুখে এইবেলা তবে কুলুপ আঁটি!
শেষ একটা কথা!
তোমাকে নিয়ে একপৃথিবী সুখের স্রোতে ভাসব বলে,
আজও বুকের মধ্যে প্রতীক্ষাকে খুব যত্নে আটকে রেখেছি!
আমার লক্ষ্মীটুকুস, তুমি ফিরবে কবে?