ডিভোর্সপাপ মহাপাপ!

 
সমবেত মাননীয় এবং মাননীয়াগণ,
ডিভোর্স তখনই মহাপাপ হয়, যখন তা হয় আপনার ঘরের বেকার ভবঘুরে মাদকাসক্ত আদরের ছেলের সাথে।
ডিভোর্স মহাপাপ, যখন তা হয় আপনার ঘরের মানসিক রোগে আক্রান্ত বড়ো ছেলের সঙ্গে।
ডিভোর্স পাপ মহাপাপ, যখন একটা ডিভোর্সি মেয়ে হয় আপনার একমাত্র কাছের বান্ধবীটি,
যখন আপনার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার মেয়ের পাশে এসে দাঁড়ানো তার খালাতো বোনটা ডিভোর্সি হয়,
এবং আপনার মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে তার পরিচয়টা দিতে হচ্ছে এই সত্যিকথাটা বলেই।
ডিভোর্স মহাপাপ তখনই, যখন আপনার ছেলে অথবা বন্ধু কোনও ডিভোর্সি মেয়েকে নিয়ে পার্কে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয় হৃদয়ের টানে!
ডিভোর্স এক মহাপাপই তো, যখন সব ফ্রেন্ডকে নিয়ে বাইরে যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ানো যায়, কেবল আপনাদের ডিভোর্সি ফ্রেন্ডটি বাদে।
ডিভোর্স সবচেয়ে বড়ো মহাপাপটি, যখন আপনার এলাকার সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছেলের জন্য পাত্রী হিসেবে একটা ডিভোর্সি মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসার প্রশ্নটা ওঠে!
ডিভোর্স সত্যি সত্যিই মহাপাপ, যখন একজন অবিবাহিত ছেলে ডিভোর্সি একটা মেয়েকে তার পরিবারের সদস্য করতে চায়।


ডিভোর্স মহাপাপ না তো কী, যখন আপনার দুর্দিনে আপনাকে সব ধরনের মেন্টাল সাপোর্ট দিয়ে একটা ডিভোর্সি মেয়ে তার নিজের জীবনের কঠিনতম মুহূর্তগুলো পার করার সময়েও আপনাকে সামনে এগোতে সাহায্য করে!
যখন সে মেয়েটিই থাকে সবচে’ কাছের, আপনার একমাত্র পৃথিবী হয়ে, অথচ সেই ছোট্ট পৃথিবীর একদিন অকালমৃত্যু ঘটে যায়,
এবং সমাজে তাকে আপনার সহধর্মিণী পরিচয় দিতে আপনার নিজেরই আত্মসম্মানে কোথায় জানি বাধে!
তখন আপনি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ, নির্ভার ও নিঃশঙ্ক, অতএব সেই মেয়েটিকে আপনার আর দরকার নেই।


ডিভোর্সটা বড়ো পাপ হে, যখন আপনার মেয়েরই বয়সি একটা ডিভোর্সি মেয়ে আপনার মেয়ের মতোই সুন্দর পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়,
যখন আপনার মেয়ে মাথায় ওড়না ছাড়া ঘুরে বেড়ালে কোনও অসুবিধে নেই, অথচ ঠিক একই মুহূর্তে একটা ডিভোর্সি মেয়ে মাথায় কাপড় না রেখে ঘুরে বেড়ায়!
ডিভোর্সের চেয়েও বড়ো পাপ আর কী আছে, যখন আপনার আদরের মেয়েটি ফ্রেন্ডের বার্থডে-পার্টিতে রাত নয়টার সময় বাসায় এসেছে, আর একটা ডিভোর্সি মেয়ে একই মুহূর্তে তার কলেজের স্টুডেন্ট এবং স্যারদের সাথে সারাদিন পিকনিকশেষে ঠিক ওই সময়েই বাসায় ফেরে।
ডিভোর্স আপনার জন্য অনেক অনেক সমস্যা তৈরি করে দিচ্ছেই তো, যখন আপনার মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে সন্ধ্যার পর রাত আটটা পর্যন্ত অন্ধকারে ঘুরে বেড়ায়, অথচ একই মুহূর্তে কোনও ডিভোর্সি মেয়ে তার অসুস্থ মাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফেরে।


ডিভোর্সপাপ এক সত্যিকারের মহাপাপ, যখন আপনার ছোটো ছেলে কিংবা মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আপনার সব অনাত্মীয়ও আমন্ত্রিত হন, তবু আপনার ভাইয়ের ডিভোর্সি মেয়েটিকে আসতে বলার সাহসটা ঠিক আসে না ভেতর থেকে!
এমন পাপ আর কী আছে, যখন আপনার আদরের মেয়েটি তার ভার্সিটিতে ছেলেবন্ধু নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ঠিক একই মুহূর্তে কোনও ডিভোর্সি মেয়ে রাস্তায় তার ছেলেবন্ধুর সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা হলে কেবল কুশলবিনিময়টুকু করে।
এমন জঘন্য পাপে আপনার আয়ুই যেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়, যখন আপনার অবিবাহিত ছেলেটি কোনও ডিভোর্সি মেয়েকে ভালোবেসে সসম্মানে ঘরের বউ করে নিয়ে আসে।
কিংবা, ওই মেয়েটাকে হৃদয়উজাড় করে যদি ভালোবাসে আপনারই ছেলে, তবে আপনি কেনই-বা তা চোখের সামনে দেখেও সহ্য করবেন, বলুন?
একটা ডিভোর্সি মেয়ে আর যা-ই হোক, কারও বউ হবার বা ভালোবাসা পাবার যোগ্য তো নয়ই!


আরে, ঠিক আছে ভাই, ঠিকই আছে! কথায় বলে না, যার মাথা তারই তো ব্যথা!
আপনার তো মাথাই নেই, তা হলে ব্যথাটা আর হবেই-বা কেন? যে যেখানে খুশি মরুক গিয়ে!
যার ক্ষত, সেই তো মলমটা লাগায়! জীবনের কোনও পর্যায়েই এমন ঘা আপনার হবেই তো না!


সুধীবৃন্দ,
জেনে রাখুন, ডিভোর্স সেদিনই শুধু আপনার চোখে মহাপাপ আর হবে না,
যেদিন এর শিকার হবে আপনার ঘরের মেয়ে কিংবা আপনারই বোনটি!
যার জীবনটাকে নতুনভাবে সাজাতে, যাকে একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে দেখার আশায়…
আপনি নিজেই তাকে ডিভোর্সটা নিয়ে দিয়ে আপনার সাথে করে আপনারই ঘরে নিয়ে আসবেন যেদিন,
সেদিনই আপনার মনে হবে, এ সমাজ চুলোয় যাক! আমার ঘরের মেয়ে ঘরেই ফিরে আসুক,
আর কিছু হোক না হোক, বেঁচে অন্তত থাকুক!
এর আগ পর্যন্ত অন্যের মেয়ের জীবনের ঘা শুকাতে ওকে তেঁতুলটকের সাপ্লাইটা আপনিই নাহয় দিলেন!
…আজকের দিনে এইটুকু আনুকূল্যই-বা কে কার জন্য দেখায়, বলুন!