তুমি নেই বলে

 তুমি ছিলে শুধু কাচের পুতুল...
যেদিন তুমি দরোজা দিয়ে বেরিয়ে গেলে,
সেদিন আমার জীবন হাতে কোথায় যেন হারিয়ে গেলে!
আমার মেঝেতে পুতুল যখন ভাঙল ভীষণ ঝনঝনিয়ে,
আমার স্বপ্ন, আমার স্মৃতি টুকরো-টুকরো স্ফটিক হয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে!
ভুলতে পারি না, মনে পড়ে যায়, যেদিন তুমি চলে গেলে...
 
আমি এখনও স্বপ্নে ভাসি, হৃদয়ের ভাঙা টুকরোগুলি লাগবে জোড়া,
আসবে তুমি, হাসব দুজন, আমার দিকে তাকিয়ে দেখো,
আমি কেমন করে ভালোবাসি, আহত হয়েও কেমন হাসি...একটাই কারণ--তোমায় বড় ভালোবাসি!
তোমার একটু স্মৃতি আমায় কেমন বাঁচিয়ে রাখে,
ওগো প্রিয়...ফিরে এসো, ফিরে এসো, আমি যে বাঁচছি তোমারই প্রতীক্ষাতে।
 
তুমি বলেছিলে, যে কাচ ভাঙে, সে ভেঙেই যায় একেবারেই!
সে কাচ জোড়া কখনও লাগে না।
যে যায় চলে, চলেই সে যায়...
তবু ওসব আমি মানব না আজ, অন্য উপায় নেই গো আমার বেঁচে থাকার,
আর কিছু নয়, তুমিই আমার বাঁচার উপায়!
আমি তোমার টুকরো-টুকরো হৃদয় জমাই শুধু এ আশাতেই...এক-এক করে লাগিয়ে জোড়া বাঁচাব জীবন!
ওরা বলে, টুকরো এসব! আমি তো জানি, এটুকই জীবন!
 
ওগো! কেন চলে গেছ? কেন ভেঙে গেছ? কী আশ্চর্য! কীভাবে হলে এমন তুমি? এমন বদলে গেলে! কোন যাদুতে?
চলে গেছ তুমি, একবারও পিছু ফিরে চাওনি, বলোনি বিদায়, শুধু চলে গেছ!
তুমি খেলনার মত ফেলেছ ভেঙে পৃথিবী আমার কত সহজেই!
সে ভাঙা পৃথিবী নিয়ে পড়ে আছি আমি...কিছুই গো আর নেই যে বাকি!
আমি এখন শুধুই দুঃখ জমাই, কষ্টে বাঁচি!
 
একবার বলো, পারলে কীভাবে!
তোমার মধুর কথায় কত বিষ ছিল, বুঝিনি কখনও।
কত সহজেই ভাঙলে শপথ কাচের মতন,
চোখ দুটো তুমি খুলে দিয়ে হায় হৃদয়ের দ্বার বন্ধ করেছ,
কোন কাজে তবে দৃষ্টি আমার লাগবে, বলো!
তোমার এক চুম্বনে পৃথিবী আমার হারিয়ে গেছে,
কেন বললে না আগে, শুধু ওটাই পুরো পৃথিবী নয়কো,
আরও যে পৃথিবী আছে, সে পৃথিবীর নতুন কত স্বপ্ন আছে...কেন বললে না?
 
জানি, চলে যেতে হবে, তবু পারি নাতো যেতে,
আমি যেতে ভুলে গেছি, যখন তোমার কাছে থাকতে শিখেছি!
সে দায় তুমি কেন ভুলে গেলে?
ঠিকানা তোমার অন্য কোথাও...অনেক আগেই--আমি জানব কীকরে, তুমিই বলো!
তুমি নেই তবু কত কী যে আছে,
তুমি নেই তবু জীবন তো আছে--
কিছুতেই আমি এসব কথা ভাবতে পারি না!
সময় আমার আর কাটে না,
জীবন আমার এগোয় না আর আগের মত,
তুমি নেই বলে আর কখনও স্বপ্ন দেখি না।
 
ইচ্ছে থাকলে বাঁচা যায় নাকি, ওদের দেখেছি, ওটাই বলে!
তুমিই আমার ইচ্ছে ওগো, তোমায় ছেড়ে বাঁচব কীভাবে?
আমার বিবেক বলে, তোমায় ছেড়েই বাঁচতে হবে,
আমার মন তবু বলে, তোমায় ছেড়েও বাঁচা যায়, প্রিয়!...সে কী বলো! সে কীভাবে?
চলে গেছ তুমি--সত্য এটাই! তবুও আমি যে মানতে পারি না,
তবু কিছুতেই ভাবতে পারি না--তোমায় ভুলতে হবে বাঁচতে হলে!
 
একবার বলো, তোমার ওই ঠোঁট দুটো এত মাতাল করে কেন!
একবার বলো, দেখলে তোমায় কিছুই আমি আর দেখি না কেন!
ফিরে আসো প্রিয়, নৌকো আমার পাল ফেরাবে, দিচ্ছি কথা!
বলে দাও না, বুঝব কীভাবে, কী বলো তুমি, কী ভাবো তুমি!
তুমি কী চাইছ, আর চাইছ না কী, কোন সে ভাষায় বুঝব আমি, বলে দাও, প্রিয়!
তুমি ধরে নিয়েছিলে, আমার হৃদয় আত্মা শুধু তোমারই,
আমি তো প্রিয় আছি তেমনই, তবু কেন তুমি বদলে গেলে? কীসের মোহে? কোন সে ভুলে?
 
এই শূন্যতা কষ্টের বড়,
এই একাকীত্ব জ্বালায় ভীষণ!
আমি সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি, রাত কেটে যায় এমনি করেই, তবুও আমার ঘুম আসে না।
ফোন ধরে থাকি, ফোন আসে যদি, কিংবা মেসেজ--আসে না কিছুই!
ফোন বাজলে লাফ দিয়ে ধরি, পুরো পৃথিবী ফোন করে যায়, শুধু তুমি কর না!
 
এ মন তবু স্বপ্নে ভাসে--তুমি কখনও ফিরে আসবে,
আমরা দুজন গাইব দারুণ, নাচব সুরে, বেড়াব ঘুরে, হাসব সুখে।
তোমার মধুর হাসিতে চাঁদ লুকোবে, তোমার ঝকঝকে ওই রোদের শরীর মাতাবে আমায় আগের মত!
তোমার চুম্বন, তোমার ছোঁয়া, আচমকাতে জড়িয়ে ধরা পেছন থেকে--
চলেই যদি যাবে দূরে, কেন বলো, অমন একটা জীবন দিলে?
কোন অভ্যেসে বাঁচব এখন? তুমি বলে দাও!
তোমার পরশে দিন ফুরোতো,
তোমার সুরেই রাত ভাঙত।
এখন আর আমার ফুরোয় না দিন, ফুরোয় না রাত!
 
এখন আমি আর কাঁদি না, দিনরাত্রি হাতড়ে বেড়াই তোমার স্মৃতি!
এ দুটো চোখ পোড়ায় না আর, পাথরের মত নিশ্চল হয়ে তোমায় ভাবে, তোমায় দেখে,
প্রতীক্ষায় আছি হাজার বছর, আরও কত প্রহর কাটবে এমন, বলতে পারো?
আমি পাগল হয়ে তোমায় খুঁজি, তোমায় ডাকি, তাকাও না ফিরে তুমি কখনওই--
নেই প্রেম, তাই...এখন শুধুই মৃত্যু খুঁজি!