দুঃখী ডুবুরির গল্প

 

রোদ পড়ছে।
আজকেও পাখির পালক পিছলে সকাল হল।
এইতো গতকালই গতকালটা গেল! সাথে গেছে
আনন্দ, দুঃখ। দুইই গেছে।
আমাদের উঠোনের ডালিমগাছে প্রতি বসন্তে ফুল ফোটে।
সে ফুলে আমি একটা চুমু খেলাম, কিছুটা শক্তি দিলাম।
আজ বুঝি, অনেককিছুর বিনিময়ে আমি খুব কম পেয়েছি।
মনে আসে, পৃথিবীটা তো বিনিময়ের নিয়মে চলে না!
মন বলে, পৃথিবীটা শেষ পর্যন্ত বিনিময়ের নিয়মেই চলে!


উত্তপ্ত সাহারায় মস্তিষ্কের অশ্রু,
স্নায়ুহীন চিরন্তন যুদ্ধ, নতুন বিপ্লব,
তবে আমার প্রিয় মুখটি
রক্তের মতো লাল হয়ে জ্বলছে।


ওরা ঘণ্টা বাজায়, ওরা আমাকে কবর দিয়ে দেয়,
ভেজা কবরে ঘাস হাসে;
সত্যিই, একদিন,
এখানে সূর্য পড়বে।
আমার বাবা মারা যাচ্ছেন, আমার ছেলে মারা যাচ্ছে,
রঙের গর্জনের ক্রমটি মারা যাচ্ছে
এবং,
আমি আমার পেছনেপেছনে জটবাঁধার অর্থের সন্ধান করছি।


আবার সব শেষ।
প্রাচীন যা কিছু---
নিজেই জানে না, তার চেয়ে নতুন কিছুই কি নয়?
আমাদের ক্লান্ত হাসি কেন জীবনের বিছানায় জেগে উঠল?
আমরা হাজারহাজার কালো মাইলের মধ্যে থাকা
কেবল একটিই নিরীহ সিংহদরোজায় কেন রক্তাক্ত মুষ্টিতে আঘাত করব?


শীতের সন্ধ্যায় তীব্রভাবে গানগাওয়া থামিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ি---
আমাদের পূর্বপুরুষ এবং নাতি-নাতনিরা
কেন ঝর্ণার মতো দীর্ঘ চুল দড়ি বেঁধে রাখে?
আমরা ক্ষুধার্ত না হয়েও কেন একে অপরকে খাই?
এবং কেন আমাদের মেরুদণ্ডটি বেঁকে বসে
যখন এটির মধ্য দিয়েই বিবেক চলে যায়?
এবং কেন আমরা ঝর্ণার নিচে চোখের জলের মতো স্বচ্ছ প্রস্রবণে শুয়ে থাকতে চাই না?


তোমাদের মতো আমরাও বড়োবড়ো গোলচোখে অন্ধকার দেখি। দেখি,
ঘূর্ণি ঘুরে, ঘূর্ণি ঘুরায় ঘুরঘূর্ণি ঘূর্ণিতে।
আপনি যখন এক মিনিট চুপচাপ বসে আছেন,
তখনও কেন আপনি আরও কিছু দেখতে পাচ্ছেন?
পাচ্ছেন বলেই কি আপনি চোখ বন্ধ করে ফেললেন?
দেখতে পেলে চোখ বন্ধ করে ফেলাই কি নিয়ম?


আমি একজন শ্রদ্ধেয় ডুবুরিকে দেখেছি। দেখেছি,
তাঁকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, অমনিই তিনি পড়ে গিয়েছিলেন।
পড়েছিলেন, উঠেওছিলেন।
শ্যাওলাসবুজ জল হাহাকার করে তাঁর গলা গিলে ফেলে
তাঁকে আবারও ফেলে দিল।
কেননা, তিনি কিছু অদ্ভুত জিনিস এনেছিলেন:
উজ্জ্বল মাছ,
রাজাদের মুকুট,
ভিক্ষুকের কান্না,
অদৃশ্য বিশ্বের ছায়া,
সাহায্যের জন্য চিৎকার।
কিছুটা বোধহয়, সমাগতঅজানা সময়ের
বয়েযাওয়া বার্তা,
ডুবেযাওয়া জাহাজের ঝাঁকুনি,
খুনির চোখের করুণ দৃষ্টি,
একটি মৃতবধূর হাসি।


তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন, জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন,
তার অন্যথায় তিনি কল্পনাতেও আনতে পারেননি;
যদিও মুক্ত জেলেরা সকলেই হেসেছিল,
এবং তাদের হাতে কী ধন ছিল,
কোথা থেকে তা এসেছে এবং কেন,
আপনি কখনোই তা জানতে পারবেন না।