দুষ্ট মেয়ে, দুষ্টু বালিকা, দুষ্টা নারী

 
সেদিন একটা পোস্টের কমেন্টে লিখেছিলাম, মেয়েরা সাধারণত ৩ ধরনের হয়: দুষ্ট, দুষ্টু, দুষ্টা।
অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন, এ আবার কী?............ আচ্ছা, বলছি ..............
দুষ্ট মেয়েরা দুষ্ট টাইপের হয়। ওরা কী কী করে?
দুষ্টমি করে, শেক্সপিয়ারের ছলনাময়ীদের মতই ছলনায় বাঁচে।
প্যাঁচ লাগায়, প্যাঁচ না লাগালে পেটের ভাত হজম হয় না।
সংসারে ভাঙন ধরায়, এর কথা ওকে গিয়ে লাগায়, ওর কথা একে গিয়ে লাগায়।
দুষ্টবুদ্ধি দেয় এবং নেয়, ওদের ব্রেইনের ডিজাইনটা এমনভাবে তৈরি, বুদ্ধির পুরোটাই শয়তানিতে ঠাসা।
হাজব্যান্ডকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে দেয়, কারওর সুখ সহ্য করতে পারে না।
বয়ফ্রেন্ডকে কারওর সাথে, এমনকি ছেলেদের সাথেও মিশতে দেয় না।
সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়, এমনকি ফেসবুকে People You May Know’তে যদি কোন মেয়ের নাম আসে, নির্ঘাত জিজ্ঞেস করে বসে, এই মেয়েকে তুমি কীভাবে চিন? ফেসবুক তোমাকে ওর সাজেশন পাঠায় কেন?
হুদাই গাল ফুলিয়ে থাকে এমনভাবে যে, ঘুষি মেরে সত্যি-সত্যি গাল ফুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।
সংসারটাকে জিবাংলা স্টারপ্লাসের সংসার বানিয়ে ফেলে।
শাশুড়ির শাড়ির টাকা বাঁচিয়ে নিজে দামি শাড়ি কিনে।
দুষ্টু মেয়েরা ‘যাহ্ দুষ্টু!’ টাইপের হয়।
ফুড়ুৎফাড়ুৎ করে ও করায়, ওদেরকে নিয়ে ধুম করে রাস্তার পাশের কাশখেতে বসে যেতে ইচ্ছে করে।
একটু ঢং করে ও আধটু ঢং করায়, ওদেরকে খেপিয়ে দিতে না পারলে মনে হয়, জীবনটাই বৃথা!
রাগ নয়, অভিমান করে। ওদের অভিমানে উল্টেথাকা ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলতে ইচ্ছে করে, এই পচাটাকে বড় ভালোবাসি!
গাল ফুলিয়ে থাকে এমনভাবে যে, ধরে টেনে দিতে ইচ্ছে করে। মাথায়, নাকে, গালে আঙুলের উল্টোপিঠ দিয়ে টোকা মারতে ইচ্ছে করে।
মাঝরাতে হুট করে ঘুম থেকে উঠে বলে, আমি আইসক্রিম খাবো। চলো!
কোনও কাজ করার সময় ওকে সময় না দিলে পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে বসে থাকে, ‘একটু যাও, আমি আসছি’ বললেও যায় না।
মুখে যা বলে, চোখের চাহনিতে তার দ্বিগুণ বলে। চোখের যাদু এমনই যে, ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে!
খুব কিউট-কিউট প্রাণীর নাম দিয়ে প্রিয় মানুষটাকে ডাকে।
ওকে ওর প্রিয় মানুষটি সোনা, বাবু, মণি, যাদু, পচা কিংবা অন্য যেকোনও নামেই ডাকুক না কেন, সেই নামে না ডাকলে বুঝতে পারে, নিশ্চয়ই ও কোনও একটা ভুলটুল করেছে। সে দুঃখে আর অনুশোচনায় বড় মিষ্টি করে কেঁদে ফেলে!
ওর প্রিয় মানুষটার কাছে সবসময়ই অবুঝ কিশোরী হয়েই থাকে। (অবশ্য, মেয়েরা সারাজীবনই অবুঝ কিশোরী হয়েই থাকে। না থাকলে, এটা ওর দোষ নয়, ওর প্রিয়তমের দোষ।)
দুষ্টা মেয়েরা আবদুল্লাহ উপন্যাসের ‘মাইয়ামানুষ জাহান্নামের লাকড়ি’ টাইপের হয়।
কম ভালোবাসে, বেশিবেশি প্রেম করে। প্রেম কম পেলে প্রয়োজনে প্রেমিক বদলে ফেলে।
সকালে একজনের সাথে ‘আমার জানু’ ক্যাপশনে দিয়ে ছবি আপলোড করে রাতের বেলায় অন্যজনের সাথে রঙ্গ করে।
কুটনামিতে বিশেষ নাম করে।
নষ্টামিতে কখনও-কখনও ছেলেদেরকেও ছাড়িয়ে যায়।
হ্যামলেটের মা গারট্রুডের কার্বনকপি হয়। পরপুরুষ মাত্রই আপন ভাবে। সবাইকেই ধারণ করতে পারে, এরকম বড় হৃদয়ের অধিকারিণী হয়।
জোর করে ভালোবাসা আদায় করতে না পারলে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে, ক্ষতি করার চেষ্টা করে। (এটা কি আসলেই ভালোবাসা? যে ভালোবাসে, সে ক্ষতি করে কীভাবে?)
বান্ধবী একটু ভাল থাকলে রাগে জ্বলতে থাকে। নিজে স্মার্টফোন কিনতে পারল না, রুমমেট কিনল; তখন রাতের বেলায় রুমমেট ঘুমিয়ে পড়লে ওর ফোনটা নিয়ে এক জগ পানিতে রেখে ক্রমাগত মিসড্‌ কল দেয়।
পরীক্ষার খাতায় ‘আমার প্রিয় সখ প্রেম-প্রেম খেলা’ লিখতে পারে না বলে মনে-মনে মনখারাপ করে। পুরুষমানুষের মতই ভালোবাসাহীন শারীরিক প্রেমে বিশ্বাস করে।
টিস্যু পেপারের মতো করে বয়ফ্রেন্ড বদলায়, এমনকি বিয়ের পরেও। পুরুষমানুষ মাত্রই যেমনি বহুগামী প্রবৃত্তির, তেমনি দুষ্টা মেয়েরাও।
এর বাইরেও অনেক ধরনের মেয়ে আছে, যেমন…………
বৃক্ষমেয়ে: এরা গাছ-গাছ টাইপের। কাছে এলে ভাল লাগে, না এলে আরও ভাল লাগে। এদের ছুঁয়ে দেখলেও ‘কিছু’ হয় না।
পণ্ডিতমেয়ে: এদের দেখলে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না, শুধুই সম্মান আর পা ছুঁয়ে সালাম করতে ইচ্ছে করে।
ঐরাবতমেয়ে: এদেরকে দেখলে ‘আন্টি, স্লামালিকুম’ বলতে ইচ্ছে করে।
পরীমেয়ে: এদেরকে দেখলে জ্বিন হয়ে আকাশে উড়ে যেত ইচ্ছে করে।
ঢংগীমেয়ে: এদেরকে দেখলে তুলে আছাড় মারতে ইচ্ছে করে।
খ্যাতমেয়ে: ওদের সাথে গল্প করার চাইতে স্পঞ্জের স্যান্ডেল দিয়ে তেলাপোকা মারাও অনেক ভাল, এটা মনে হয়।
প্যানপ্যানানিমেয়ে: ওদের সাথে যতক্ষণ থাকবেন, ততক্ষণই মনে একটা প্রশ্নই এসে বারেবারে আঘাত করবে: জীবন এত বড় ক্যানে??
বেহায়ামেয়ে: ওদেরকে দেখলে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করবে।
নাকউঁচামেয়ে: ওদের সাথে কথা বললে ঘুষি মেরে নাক থ্যাবড়া করে দিতে ইচ্ছে করবে।
আটাময়দাসুজিমেয়ে: ওদেরকে দেখলেই গান গাইতে ইচ্ছে করবে: ওগো বৃষ্টি, ওর মুখের উপর পড় না!
বিলাইমেয়ে: ওদের মধ্যে সারাক্ষণ গাঘেঁষাভাব প্রবল। ওদের সাথে প্রেম করার সময় মনে হবে, এরকম বেড়াল পালার চাইতে মুরগি পালাও ভাল।
মিসডকল মেয়ে: ওদের মিসডকলের জ্বালায় প্রায়ই সেলুলার-এয়ারপ্লেনে চড়তে বাধ্য হবেন।
পকপকানিমেয়ে: ওরা ফোন করলে মোবাইলটা কয়েক মিনিট কান থেকে দূরে রেখে আবারও কানে ধরলে দেখবেন, একই কথাটাই ঘুরিয়েফিরিয়ে বলছে।
(ধুররর.........আর কত ফাজলামো করা যায়! লিমিটেরও তো একটা ফাজলামো আছে! এমনিতে আছি বিখ্যাত সাতক্ষীরা টু ঢাকা অতি জঘন্য রাস্তার উপরে; বাসে। এমন খানাখন্দ অজপাড়াগাঁয়ের রাস্তায়ও থাকে না! এ রাস্তায় বাস তো চলে না, যেন দুলে। রাস্তায়ই রিয়েল নৌকাভ্রমণের অ্যাডভেঞ্চার! সামনের সিঙ্গেল সিটটা যাত্রীসমেত পুরো হেলে আছে আমার পায়ের উপর। ল্যাপটপের স্ক্রিনটা অনেক বাঁকিয়ে কিবোর্ডের উপরে আলো ফেলে-ফেলে ঘাড় সামনের দিকে হেলে অনেক কষ্ট করে টাইপ করতে-করতে এতক্ষণ ধরে উপরের ফাজলামি, পাগলামি, ছাগলামি করলাম। এভাবে লেখা বড়ই বিরক্তিকর এবং কষ্টকর! ঘাড়পিঠ ব্যথা করে, চোখের উপর ভাল রকমেরই চাপ পড়ে। ................ তবে, একটা কথা ঠিক, দুষ্টু মেয়ে ঘরে না এলে জীবনটা হয়ে যাবে মোল্লা নাসিরুদ্দিনের সেই গল্পের জীবনের মতই পানসে। গল্পটা বলি: মোল্লা নাসিরুদ্দিন বিয়ের পর বাসররাতে প্রথমবারের মতো ঘোমটা সরিয়ে নতুন বৌয়ের মুখটা দেখলেন। দেখে প্রচণ্ড হতাশ হলেন। বৌ যখন মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, আমি এ বাড়ির কার-কার সামনে পর্দা করব?” ঝটপট উত্তরে তিনি বললেন, “আর কারওর সামনে করার দরকার নাই, শুধু আমার সামনে করলেই হবে!” .............. তাই, দুষ্টুতে আপত্তি নাই!)