দ্বিধা ঝাড়তে গিয়ে

 আজকাল আমার অনেক দূরে চলে যেতে ইচ্ছে হয়।
এমন কোথাও, যেখানে একেবারেই চলে যাওয়া যায়,
কোনও পিছুটানই আটকায় না আর।
এত হৈচৈ আর ভালো লাগে না, বয়স বোধহয় বেড়েছে আরও।
এই মায়া, পুরনো বাঁধন, কিছুই আমায় আর টানে না আগের মতো।
 
দূরে চলে যাব, আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়,
দূরে সরে যাব। সেখানে থাকব একাই, নিজের সাথে!
সাথে নেব তোমার রাশিরাশি কথার ঝুড়ি,
আর কিছু নয়। কারও সাথেই কথা আর হয় না এখন।
তুমি মনে এলে কী এক নেশায় বুঁদ হয়ে থাকি…
প্রেম নাকি সে? তবে ভালোবাসা নয়?
যদি তা না হবে, তবে যন্ত্রণা কেন?
যা হয় হোক, সহ্য করি! সহ্য নাকি করতেই হয়!
 
আজকাল একেকটা কষ্ট আসে আর সময় চুরি করে।
নিজেকে লুকাই কাজের ভানে, ঠিক বুঝে নিই,
এমন কাজের অনেক মানে! সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়,
সন্ধে অবধি কাজের সাজে, ভালোবাসাটা লেপটে থাকে জামার ভাঁজে।
 
আচ্ছা, তুমি এমন কেন? আমার বুঝি বাঁচতে নেই?
তোমার সাথে কথা বলি না। জানো, কেন?
কত কথা বলব বলে ঠোঁট খুলতেই গলা ধরে যায়!
কথা বললে চলে যাও যদি…ভয় করে যে!
আজকাল এক ভয় হয়েছে--হারিয়ে যাওয়ার, হারিয়ে ফেলার।
তোমাকে আবার পেলাম কখন? হারিয়ে যাবে, এতই সোজা?
এখন বুঝি, প্রেমে পড়লে সব শালা হয় সত্যি বোকা!
 
গতকালই তো! হাতে কলম নিলাম, চিঠি লিখব।
হঠাৎ ভাবি, তোমাকে ভেবে এ মনে যদি কিছু না আসে,
খাতা যদি খালি পড়ে রয়, ভাষা যদি পালায় দূরে,
গুছিয়ে চিঠি যদি না বেরোয়, তুমি কি তখন হারিয়ে যাবে?
তোমায় দেবার মতন যদি কিছু না থাকে, ফুরায় সবই,
সেদিনও কি থাকবে পাশে? নাকি আলগোছে যাবে অন্য নীড়ে?
 
যদি চলে যাও, আর ফিরে না আস,
সেদিন খুব কান্না পাবে, বেয়াড়া স্মৃতি এসেই যাবে,
মন বুঝি ভালোবাসাটা ভিক্ষা চাবে!
যদি তা করেও, মন কি সেদিন তোমায় পাবে?
পায়ও যদি, আমাকে দেখে তোমার খুব করুণা হবে, তাই না, বলো?
 
খুব মনে আছে,
কোনও এক রোদেলা দিনে,
তোমার হাতটা ধরে এক কাশের বনে হেঁটেছিলাম।
বলেছিলাম, আমায় ভালোবাসবে?
চলো না আজ দুজন মিলে সূর্য নামাই
বুকের মাঝে! কৃষ্ণচূড়ার রং দেখেছ?
একটুকু রং আমায় দেবে?
সেদিন ফুলের ঘরে প্রজাপতিটা,
গাছের গায়ে সুখ পাখিটা,
আমার চাওয়ার সাক্ষী ছিল।
হেসে তুমি লাজুক চোখে বলনি কিছুই,
শুধুই হাতটা ধরে হেঁটেছিলে।
 
একটাসময় ভেবেইছিলাম, ভালোবাসার স্মৃতি থাকলে
মানুষ বাঁচে দারুণ করে! এই বুকটা উজাড় করে
ভালোবাসি যদি…কান্না নিয়ে, আঘাত সয়ে, যদি তাকে রেখে দিই
হাসির ঘায়ে, তখন সে কি আমায় ছুঁড়বে ফেলে?
এখন তো তুমিই আছ! কত কথাই আসে মনে,
তোমায় কাছে বসিয়ে খুব জমিয়ে আড্ডা দেব,
রান্না করে খাইয়ে দেব, এলোমেলো চুল আঁচড়ে দেব,
নাকে আলতো করে মারব টোকা, মাথায় একটা গাট্টা দেব,
চোখের দিকে ঠায় তাকিয়ে বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেব…
তবু কেন পারি না কিছুই?
তুমি সামনে এলে, প্রাণটা খুলে বলতে গেলে,
যেন সরে না কথা জিভের ডগায়, সব ভুলে যাই!
 
তুমিও তো কিপটে কেমন! ভালোবাসা সব শিকেয় রাখ!
পাগলামিটা দেখলে আমার, খুব বুঝিয়ে দমিয়ে রাখ!
চিঠিগুলি সব দাও তো রেখে যত্ন করে?
নাকি ফেলই ফেল একটু না পড়ে? ভাব বুঝি
ওসব চিঠি তো কথার ছল, চুপিচুপি ভাবার ফল!
তুমি কখনও ভাব না আমায়,
একটু করেও লিখ না আমায়,
তোমার বর্ণমিছিল খোঁজে না আমায়…
 
এমন কেন?
আমাকে তুমি ভাব কি না,
ভালোবাসাটা সত্যি কি না,
তোমার মধ্যে আমি কি না,
শুঁটকিভর্তা খাও কি না,
রৌদ্র গায়ে মাখ কি না,
শাড়ি পরলে হাস কি না,
খোঁপায় বেলি দাও কি না,
পেছন ফিরে তাকাও কি না,
লাল টিপটা দেখ কি না,
কাঁচের চুড়ি শোন কি না,
নাকের ফুল ছোঁও কি না,
ঠোঁটে ঠোঁট মিলাও কি না,
গোধূলিআলো বাঁধ কি না…
এসব বুঝি জানতে মানা?
 
তুমি আছ তবু এখনও সাজি নিজেরই মতো…
আমার বুঝি রাগ হয় না?
কপাল থেকে টিপটা খুলে পাতায় লাগাই,
চুড়ির গোছা আটকে থাকে কাঁচের খাঁচায়!
আলতা পায়ে, রাঙা ঠোঁটে, কাজল চোখে
কেউ দেখে না…শাড়ি কি জামা, পড়েই থাকে ওয়্যারড্রবে!
জিন্সে হাঁটি, টপসে ছুটি…এসব আমার ভালো লাগে না,
তবুও পরি, ইচ্ছে করেই! দেখ তো সবই!
তবু কেন বল না কিছুই? এই যে তোমার উদাসীনতা আমার প্রতি,
এটা যখন মাথায় আসে, সাজতে কি আর ইচ্ছে করে?
 
তবুও ভাবি, তুমি কিন্তু মানুষ ভালো!
এই যে এত জ্বালাই, পোড়াই,
কই, কখনও বক নাতো!
তখন বুঝি, ভালোবাসো! নইলে,
কেউ কি অতো সহ্য করে?
তবুও মুখে বল না কেন--ভালোবাসি!
আমার বুঝি শুনতে বারণ?
ধরা পড়বে, এমন ভাব?
ধরা পড়লে কী এসে যায়?
ভালোবাসলে কীসের দ্বিধা?
এ জীবনে যা পেয়েছি, জমিয়েছি যা,
সব দিতে রাজি, তুমি যদি এঘরে আস!