দ্য তুরিন হর্স (২০১১)

এ সিনেমা এমনই এক সিনেমা যা দেখার কিছু নেই। এ সিনেমার শুরু, মাঝ, শেষ একই। এ সিনেমা মৌন, অক্ষম, মৃত। এ সিনেমা আপনাকে বিরক্ত করেই ছাড়বে এবং যদি খুব বেশি বিরক্ত হয়ে সিনেমা অর্ধেক দেখার আগেই আপনি পালিয়ে যান, তবেই নির্মাতা সফল। এ সিনেমা না-দেখার সিনেমা।

আপনার সমর্থনে জানাচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র কেন্দ্র ‘নন্দন’-এ এই ছবির মাঝপথে ৮০% দর্শক বিরক্তিতে উঠে গিয়েছিলেন। তার মানে, আপনার দলটা বেশ ভারি!

একেবারে তিল পরিমাণও বৈচিত্র্য না পেয়ে পৃথিবীতে কত মানুষ বেঁচে আছে, সে খোঁজ আমরা রাখি না।

ওরা প্রতিদিনই ঘুম থেকে ওঠে, কারণ এর বাইরে ওদের আর কিছু করার নেই।

ঘুমাতে যাওয়ার সময় যে পোশাক পরেছিল, তা বদলে ফেলে, কারণ পোশাক না বদলে অন্য কী করা যায়, তা ওরা জানে না।

স্রেফ প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে দুপুর হওয়ার অপেক্ষা করে এবং দুপুর হলে একই খাবার ওরা প্রতিদিনই খায়, কারণ ওদের অন্য কোনো খাবার নেই।

একই ঘরেই দিনের পর দিন কাটিয়ে দেয়, কারণ অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ওদের মাথায় কখনো আসে না।

ওদের কোনো স্বপ্ন নেই, প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও ওরা জানে, পরেরদিনটা আজকের দিনের মতোই হবে।

ওদের কাছে জীবনের একমাত্র মহত্ত্ব বেঁচেথাকা। ওদের চোখে, মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত একটা ছকে আটপৌরে জীবনযাপন করাই পৃথিবী। যদি নতুন কিছু ওদের জীবনে ঘটেও যায়, ওরা সেটাকে পুরনো জীবনের অংশ হিসেবেই গ্রহণ করে নেয়। সকল অভিনবত্বকে ওরা খুব সহজে গিলে ফেলতে পারে। ওরা জানে না ওরা কী জন্য বেঁচে আছে, বেঁচে আছে, এইটুকই শুধু জানে।

এর নাম বিষণ্ণতা নয়, এর নাম জীবন।

এর নাম একঘেয়েমি নয়, এর নাম জীবন।

এর নাম বিষাদ নয়, এর নাম জীবন।

এর নাম অসহায়ত্ব নয়, এর নাম জীবন।

এর নাম টানাপোড়েন নয়, এর নাম জীবন।

ওরা ঈশ্বরকে চেনে না, ওরা জীবনকে চেনে। ওরা নিয়তি বোঝে না, ওরা জীবন বোঝে। প্রাচুর্য কী, ওরা জানে না, বস্তুত, প্রাচুর্য বলে যে কিছু হয়, তা-ই হয়তো ওদের জানা নেই।

হাঙ্গেরির নির্মাতা বেলা টার মাত্র ৫৫ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নিলেন এই ছবিটিই তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ছবি। বিস্ময়ের কাণ্ড হল এ-ই, পরিচালক যে মুভি দিয়ে তাঁর যাত্রা শেষ করে দিলেন, সে মুভিটিরই কোনো উপসংহার নেই।

দ্য তুরিন হর্স। দেখুন। প্রচণ্ড ঘুম পাবে। সিনেমাদেখা শেষ হলে ঘুম ঘুমিয়ে পড়বে, ভাবনারা জেগে উঠবে। তাই দেখুন। আপনার দেখা সবচাইতে বিবর্ণ, সহজ ও বিশুদ্ধ সিনেমার তালিকায় আরেকটি যুক্ত হবে।

জানিয়ে রাখি, এখনো পর্যন্ত এই ঘোড়া বিশ্বজুড়ে ১৪ টি নমিনেশন ও ৭টি অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে।