না-বিষাদের স্বীকারোক্তি

 
তোমাকে ভালোবাসার আগে কখনও বুঝিনি,
এই পৃথিবীতেও একটা স্বর্গ আছে।
যাবার বেলায় কপালজুড়ে একটুকরো চুমো এঁকে দাও…
মনে হয়, স্বর্গ বুঝি এখানেই…আমার টিপের এই উঠোনটায়!


তোমাকে ভালোবাসার আগে কখনও মনেই আসেনি,
ওই নীলাভ আকাশটা চাইলেই ছোঁয়া যায়!
তোমার প্রশস্ত বুকে মুখ ডুবিয়ে যখন তোমার ঘ্রাণ নিই,
মনে হয়, মেঘের সিঁড়িবেয়ে আকাশের হৃৎপিণ্ডটা গিলে খাচ্ছি!


তোমাকে ভালোবাসার আগে কে জানত,
পাহাড়ের গায়েও এমন জলছবি আঁকা যায়!
আমার কানের গোড়ায় ঠোঁট নামিয়ে ফিসফিস করে ‘ভালোবাসি’ বল…
মনে হয়, সন্ধের সিঁথি ধরে পাহাড়ের বৈকালিক চিবুকটি আমার ঠোঁটের দরোজায় ঠায় দাঁড়িয়ে।


তোমাকে ভালোবাসার আগে কে বুঝেছিল,
ওই চাঁদটাকেও বাক্সে বন্দি করে ফেলা যায়!
আগ্রাসী হয়ে দুহাত বাড়িয়ে তুমি আমায় তোমার প্রশস্ত বুকটাতে আষ্টেপৃষ্ঠে পুরে ফেল…
মনে হয়, রাত্রির গর্ভে জ্যোৎস্নাগলা চাঁদটাই বুঝি আমার বিছানার শুভ্রচাদর!


তোমাকে ভালোবাসার আগে কখনও কল্পনায়ও তো আসেনি,
মুক্তোর পিঠেও আলোর ঝলকে কী সহজেই সিঁদুর এঁকে দেওয়া যায়!
হাতের সীমানায় হাত জড়িয়ে হ্যাঁচকা একটানে আরও কাছে টেনে নাও…
মনে হয়, ঝিনুকের কোলে এক মুক্তোপ্রাসাদের উঠোনজুড়ে শিশুর কলকল হাসি।


তোমাকে ভালোবাসার আগে কখনও তো দেখিনি,
জলনূপুরের শব্দেও সাগরদ্বীপে বসত গড়া যায়।
যখন চোখের ঢেউয়ে দৃষ্টি ছুড়ে ছুড়ে করতে থাকো প্রণয়বিলাস,
মনে হয়, এই চোখের কোণে নীলচেমাঠের এক ইচ্ছেনদীর জোয়ার।


তোমাকে ভালোবাসার আগে কখনও মাথায়ই তো আসেনি,
ওই দর্পী পাহাড়টাকেও পায়ের নিচে রেখে অনায়াসেই ধূলিসাৎ করে দেওয়া যায়!
যখন সূর্যজ্বলা দিঘলঠোঁটে ঈষৎহাসির সুখের রেখা দিচ্ছ এঁকে,
মনে হয়, ওই পাহাড়ের সারাটা শরীরই বুঝি আমার দোরের নীলচাবিটায়।


তোমাকে ভালোবাসার পর বুঝেছি,
জন্মের পরেও জন্মানো যায় হাজারটা বার!


তোমাকে ভালোবাসার পর বুঝেছি,
পৃথিবীতে কেবল ভালোবাসাটাই একমাত্র নবায়নযোগ্য সুখস্বস্তি!


তোমাকে ভালোবাসার পর বুঝেছি,
এক ভালোবাসাই এই পৃথিবীতে ভীষণ মায়ায় স্বর্গ টানে!


তোমাকে ভালোবাসার পর বুঝেছি,
তুমি আমার সাতজন্মের সব পুণ্যের একটাই ঘর!