নির্ভার নিবেদনের নৈবেদ্য

 
কেউ একজন থাকে---
যাকে মনে করে ভাবতে সুবিধে হয়।
যাকে মনে করে কাঁদতে সুবিধে হয়।
যাকে মনে করে বাঁচতে সুবিধে হয়।


বাবুই, আমি প্রেমে পড়েছি। মাতালকরা সেই প্রেম!
আমি আবারও তোমার প্রেমে পড়েছি।
এ প্রেমে হারানোর কোনও ভয় নেই।
এ প্রেমে আমি চোখবুজেও তোমায় পাই, চোখমেলেও তোমায় পাই।
এ প্রেমে আমি কান্না পেলে তোমাকে পাই, এ প্রেমে আমি আনন্দেও তোমাকে পাই।


আমি তোমার প্রতিটি কবিতায় আমাকে পাই।
আমি আমার প্রতিটি মুহূর্তে তোমাকে পাই।
তোমার জন্যে কাঁদলে প্রতিটি অশ্রুফোঁটায় আমি তোমাকে পাই।


আমি আর কোনও দিন কাউকে ভালোবাসতে পারব না, বাবুই।
আমি চোখবুজলেই আমাদের সংসারটা দেখতে পাই।
বৃহস্পতিবার সন্ধে নামলে আমি আমাকে তোমার বাসার কাছে দেখতে পাই।
মাঝে মাঝে আমি, ওই যে রেস্টুরেন্টটা, কী যেন নাম,
যেখানে আমি অপেক্ষা করতাম, ওটা দেখতে পাই।
দেখতে পাই, আমি ওখানে বসে আছি আর তোমাকে টেক্সট করছি,
…আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে?


দেখতে পাই, আমি পৌঁছানো মাত্রই তোমার আমাকে পাওয়ার আকুতি!
আমি তোমার মধ্যে আমাকে পাই। আমি আমার আমাতে তোমাকেই খুঁজি।
বাবুই, আমি তোমার মাঝে বড্ড ভালো আছি।


আচ্ছা, আমি যদি দুম্‌ করে মরে যাই,
তুমি কি একা হয়ে যাবে? তোমার কি একলা লাগবে? মনে হবে, কে যেন নেই?


মাঝে মাঝে মনে হয়, তোমাকে আর কখনও টেক্সট না করি।
একেবারে ছেড়ে চলে যাই। সব যোগাযোগ বন্ধ।


তুমি তো তোমাকে নিয়েই দিব্যি আছ!
তোমার কোনও কিছুতে যাওয়া মানেই ঝামেলা এখন।
টেক্সট করলে বউ যেকোনও সময় দেখে ফেলতে পারে,
আর চিঠি-লেখা, সেও সমস্যা। তুমিই বলো, আর কী-ইবা করা যেতে পারে!


চলে যাওয়ার পর মাত্র দুইবার ফোন দিয়েছিলে আমায়।
মাঝেমধ্যে হয়তো ভুল করে টেক্সট পাঠাও।
তোমার পাঠানো টেক্সটে ‘মিয়াঁও’, ‘শুভ সকাল’ এইসব ছাড়া আর কি কিছু আছে!
আর তো কিচ্ছুটি নেই! তোমার মনটাও নেই ওখানে আর। আমি বুঝতে পারি।
তবে কেনই-বা এমন জ্বালাচ্ছি তোমায়?


আমার কাছে ভালোবাসা মানেই তো স্বাধীনতা-দেওয়া।
সেটা ঠিকমতো দিতে পেরেছিলাম বলেই তো সবই অনর্গল বলতে পারতে আমায়।
তবে এখন কেন কীসের টানে আঁকড়ে ধরতে চাই?


কখনও মনে হয়, একেবারেই মুক্তি দিয়ে দিই তোমায়!
মনে হয়, তুমিও হয়তো তা-ই চাইছ। আর কিছু নেই তো হওয়ার!
যদিও-বা কখনও কিছু হওয়ারই ছিল না!
পরক্ষণেই কী মনে হয়, জানো?
…কেন চলে যাব? তোমার জীবনে একজন ‘আমি’ থাকাটা খুব জরুরি।


এই যে তুমি জানো, টুপুস নামে কেয়ারিং মানুষটা আছে এখনও।
কেউ একজন আছে! কেউ একজন ভাবে তোমায়!
এই একজন থাকাটা খুব দরকার। কেউ নেই, এটা ভীষণ যন্ত্রণার।
কোত্থাও তোমায় খুঁজে পাই না! তবু তুমি আছ, এই ভাবনাটা স্বস্তি দেয়।


জানো, তোমাকে পাওয়ার পর সৌম্যকে দিব্যি ভুলে গিয়েছিলাম।
আজও হঠাৎ মনে হলে ওকে ভালোবাসা দূরে থাক, ভালোও এখন লাগে না।
তিন বছর পর ছেলেটা একটা টেক্সট পাঠিয়েছিল তিন মাস আগে।
সেখানে লিখেছিল, সব ভালোবাসা তোকে দেওয়ার পর
আমার কাছে আর কিছুই নেই কাউকে দেওয়ার মতো।
আমি রিপ্লাইতে বলেছিলাম, সব ঠিক হয়ে যাবে রে!
টেক্সটটা পাঠিয়েই ভাবলাম, এটা কী বললাম আমি! আমি যা বলেছি, জেনেবুঝেই ভুল বলেছি!


যা-ই হোক, ওর কিছু ঠিক হোক বা না হোক,
আমি তোমায় সব ভালোবাসা দিয়ে দেওয়ার পর আর কিছু নেই আমার।
তুমি যেদিন স্কলারশিপটা পেয়ে আমাকে ফোন করলে,
আমি ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে ফোনটা ধরে বলেছিলাম, বাবু, ভালোবাসি খুউব!
ওপাশে তোমার কণ্ঠটা বেশ ভারী ছিল। তুমি কাঁদছিলে।


তোমার প্রতি ভুলেও কোনও দিন অভিযোগ করিনি। কেন করব?
তোমার পাশে যখন থাকতাম, দেখেছি তো,
তুমি নিজের বউকেই ফোন করতে ভুলে যাও, দেড়-দুসপ্তাহ পর কথা বলো।
আমি তো জানি, তুমি কতটা আত্মভোলা মানুষ!


জানো, কোনও দিনই তুমি আমায় নিজ থেকে উচ্ছ্বাস নিয়ে
ভালোবাসি বলোনি। তবু তোমার চোখে আমি ভালোবাসা দেখেছিলাম।
আমি কাঁদলে তোমায় চোখ লুকাতে দেখেছিলাম।
এমনটা নয় যে তুমিও কাঁদছিলে, তুমি আমার চোখে চোখ রাখতে পারছিলে না।
বিশ্বাস করো, এইটুকুই আমি চেয়েছিলাম।


মাঝে মাঝে খুব আত্মসংবৃত মনে হয় নিজেকে।
অন্য কার কাছে আমি কী, তা আমি কেয়ার করি না।
তোমার কাছে এক আলাভোলা বোকা হয়েই রইলাম নাহয়।
তোমার কেউ একজন আছে।
সে জানে তোমার ব্যস্ততা, সে জানে তোমার একাকিত্ব, সে জানে তোমার ভালোলাগা।
সে জানে, তুমি যোগাযোগ রাখতে ভুলে যাও।
সে জানে, তুমি মনখারাপের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রাখো।
সে জানে, তোমার মধ্যে কখনও উচ্ছ্বাস এলে
তুমি হা হা হা হাসিতে পৃথিবীকে জানিয়ে দাও।
তার কোনও অভিযোগ নেই, চাওয়াপাওয়ার হিসেব নেই, সে শুধু আছে। ভালোবেসে।


তোমার লুকিয়ে-রাখা কথাগুলো, কষ্টগুলো আমি শুনতে পাই এখনও।
তোমার ভালোবাসার অনুভূতি দিব্যি টের পাই।
তুমি বলেছিলে, আশ্রয় দিতে না পারার যন্ত্রণায় কাউকে প্রশ্রয় দিতে তুমি ভয় পাও।
…সে সময় নাহয় এটা ভেবেই ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে গিয়ে কাঁপতে।
আর আজ মিস করলেও বলো না এটা ভেবে যে আমি কষ্ট পাব।
…এতটা কেয়ারও খুব পোড়ায়, জানো বাবুই?


শোনো, শুধু ভালো থাকো। আর আমাকে একেবারে ছেড়ে দিয়ো না।
শুধু মাঝেমধ্যে জানান দিয়ো, এই আমারও কেউ আছে।
জানি, পেছনফিরে কখনও তাকাও না তুমি।
যাকে ফেলে এসেছ, তাকে ভাববার মতো মানুষ নও তুমি, এও জানি।
আর এও চিনি, প্রতিবার কান্তার কথাগুলো বলার সময় তোমার চোখের মুখের ভাষা।


বাবুই, ভালোবাসা মরে যায় না, শুধু কিছুটা প্রলেপ পড়ে।
ভালোবাসা ফিরে ফিরে আসে। তার আগেই ওকে গলাটিপে হত্যা কোরো না,
কিছুটা জিইয়ে রেখো, যেমনি লোকে একটু জল ঢেলে জিইয়ে রাখে টবের গোলাপ।
ভীষণ রাগ হচ্ছে? রাগ কোরো না। তোমায় যে আমি ভালোবাসি, লক্ষ্মী বাবুই!
এই শোনো না, আমায় ভুলে যেয়ো না, কেমন? খুব ভালো থেকো!