নীল খাম

আমি জানি না আমার পাঠানো এই নীল খামটা তোমার কাছে আদৌ কোনও দিন পৌঁছুবে কি না।
কখনও যদি খামটা তোমার কাছে পৌঁছেই যায়,
তবে এটি খুলে যে চিঠিটা পাবে, তা যত্ন করে পোড়ো।


আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে চিঠিসহই খামটা পুড়িয়ে ফেলো।
তবুও, আমায় যেমনি খেলার পুতুল বানিয়ে রেখেছিলে,
তেমনি করে চিঠিটাকে অযত্নেই রেখে দিয়ো না।


যথাযোগ্য মান যদি না-ই দিতে পারো, অসুবিধে নেই;
তবু, অপমানটুকু কোরো না, যেমনটা আমায় করেছিলে।


এই চিঠিটা যখন তোমার কাছে পৌঁছুবে,
তখন এর পাঠপ্রতিক্রিয়া জানবার জন্য
আমি আর তোমার নাগালের মধ্যে থাকব না।
হাতে সময় কম। ডাক এসেছে। যেতে হবে আমায়।
---তোমাকে এসব সরাসরি বলা আর হলো না।


তুমি যে ব্যস্ত ভীষণ। না আমার কথা শোনার সময় সেদিন তোমার ছিল, না আজ আছে।
তোমার সময়ের অভাবের সাথে তোমার ব্যস্ততার মেলবন্ধন…বরাররই খুব নিপট ছিল।
আর যদি তা হতো আমার বেলায়, তবে তো আর কোনও কথাই থাকত না!


হ্যাঁ, আমার হাতেও এখন সময় বড্ড কম,
তবে কোনও ব্যস্ততা নেই। আর যদি তা হয় তোমার বেলায়, তবে তো আমার অফুরন্ত অবসর!
---আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমনই রয়ে গেছে।


সত্যি-মিথ্যের বিচার আজ আর না-ইবা করি! আমি ভীষণ ক্লান্ত থাকি এখন।
এসবে এখন আর মন টানে না, শরীরও চলে না।


তুমি কোথায় আছ বা থাকো, এটা জানতে আমাকে এ পর্যন্ত অনেক বুদ্ধি খরচ করতে হয়েছে।
সে খবর অবশ্য তুমি রাখোনি।
রাখবে না বলেই তো ঠিকানাবিহীন হতে চেয়েছিলে!
আমি তোমায় আদ্যোপান্তই ভুল চিনলেও তুমি আমায় পুরোটাই ঠিক চিনেছিলে।
তাই আমি যে তোমায় ঠিকানাবিহীন হতে দেবো না, এ তুমি জানতে নিশ্চয়ই!


তবে এটা ঠিক, তুমি আমায় চিনেছ হয়তো ঠিকই, কিন্তু কোনও দিনই বুঝতে আমায় পারোনি।
যদি পারতে, তাহলে হয়তোবা খামের মধ্যে ভরে এই কথাগুলি এভাবে আমাকে পাঠাতে হতো না।


আজ পঁচিশে মাঘ।
মনে রেখো দিনটিকে।


আজ থেকে ঠিক দশ বছর বাদে, যখন এই দিনটি তুমি মনে করবে,
সেদিন কিন্তু অনুশোচনার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে-যাওয়া কিছু ভস্ম হয়ে বেঁচে রইবে তুমি।


না, আমি তোমায় অভিশাপ দিচ্ছি না,
শুধু তোমার ভবিতব্যকে দেখিয়ে দিচ্ছি চোখে আঙুল দিয়ে।
পৃথিবীসুদ্ধ লোক তোমায় দিব্যজ্ঞানে পরিপূর্ণ এক দিব্যজ্যোতি বললেও আমি তো জানি, তুমি অন্ধ!
তাই এটুকু করে রেখে গেলাম তোমার জন্য।


আজ বেলাশেষে বিদায় আর বলব না।
শেষ করা যায়নি কখনও কিছুই। আজও যায় না।


ভালো থেকো, বলব না তা-ও।
কেননা ওইটুক মিথ্যে আশ্বাস আমি দেবো না।
শুধু এইটুকু জেনে রেখো, তুমি আমায় চিনেও ঠিক বুঝতে পারোনি,
যদিও আমি তোমায় না চিনেও বুঝেছি ভালো করেই!


আমার শূন্যতা তোমায় গ্রাস করে ফেলবে,---সে তুমি না জানলেও আমি সত্যিই জানি।
আমি আমার এই বক্তব্য চাপিয়ে দিচ্ছি না,
তোমার তুমি’টাকে ভেঙেচুরে বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিচ্ছি মাত্র!


আমি প্রার্থনা করি,
ভালো তুমি থাকো আর না-ই থাকো,
তবে আমায় হারানোর কষ্টটা যেন সহ্য করতে পারো।
আমি সত্যিই জানি, এ কষ্ট সহ্য হবার নয়! আমি তো পারিনি!
তুমি যাতে পারো, সে কামনাই করি।


আমার নীল খাম আর ওতে পাঠানো চিঠি---যত্ন করে রেখো, কেমন?