পৌরুষ সমাচার

পুরুষমাত্রেরই পৌরুষ থাকে। এর প্রকাশ করতে না পারলে পুরুষ অস্বস্তিতে ভোগে। পুরুষমানুষ পৌরুষ দেখায় তার আর্থসামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থা আর অবস্থান ব্যবহার করে। পৌরুষ দেখানো আর ভাব নেয়া, দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার; যেমনটা গর্ব আর দম্ভ। কিছু-কিছু পুরুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অপকর্ষের কারণে পরিবারে ও সমাজে পৌরুষের অসুস্থ প্রদর্শন চলতে থাকে। কয়েকটি ক্ষেত্র দিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবা যাক।

এক। আমরা আশেপাশে তাকালে একটা মজার ব্যাপার খেয়াল করি। আমরা দেখি, একই পদমর্যাদার দুইজন মানুষের সামাজিক ব্যবহার সম্পূর্ণ ভিন্ন দুইমেরুর। একজনের ভাবের ঠ্যালায় মাটিতে পা-ই পড়ে না, আরেকজনের অতো ভাবটাব নেই। কেন এরকম হয়? দেখা যাক, একজন মানুষ কখন ভাব নেয়? তখনই নেয় যখন সে তার পক্ষে সর্বোচ্চ যতদূর যাওয়া সম্ভব, ততদূর পথ পাড়ি দিয়ে ফেলে। সে যা করেছে, এর চাইতে বেশিকিছু করে দেখানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। তার দৌড় কিংবা যোগ্যতা অতোটুকুই। প্রথমজনের ক্ষেত্রে এরকমটাই হয়েছে। কিন্তু যদি এমন হয় যে, যেটুকু পথ হাঁটা হল, কারওর পক্ষে আরও অনেকদূর পাড়ি দেয়া সম্ভব, তাহলে সে ওইটুকু পথকে তার সমস্ত পথের কিছু অংশমাত্র ধরে নেবে, তার যাত্রা এখনও শেষ হয়নি, থেমে যাওয়ার সময় আসেনি, এবং পরের পথ পাড়ি দেয়ার ব্যস্ততা তাকে ভাব নেয়ার অবসরটুকু আর দেয় না। সাধারণত যার ভাব যত বেশি তার যোগ্যতা তত কম। সে ভাব দেখিয়ে তার অযোগ্যতাকে কৌশলে লুকিয়ে রাখে। কথায় বলে, “ছোটলোক বড় হলে বন্ধুকে কাঁদায়।” খুব সত্য কথা। ভাব নেয়া পৌরুষ নয়, দুর্বলতার লক্ষণ।

দুই। আমরা কিছু লোককে দেখি, যারা পরিবারের লোকদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। নিজের সমস্ত অসুস্থ পৌরুষ দেখায় ঘরের বউয়ের সাথে। কারা করে ওরকম? যে অশিক্ষিত রিকশাওয়ালাটি ঘরের বাইরে চড়থাপ্পড় খায় আর ঘরে গিয়ে বউ পেটায়, তার সাথে ঘরের বউয়ের সাথে দুর্ব্যবহার করে যে শিক্ষিত বাবুসাহেব, তার পার্থক্য শুধু কয়েকটি সার্টিফিকেটের। দুইজনেরই মনোবৃত্তিক বৈশিষ্ট্য কমবেশি একই ধরনের। নড়বড়ে সামাজিক অবস্থানের পুরুষদের পৌরুষ হয় অসুস্থ ও আদিম। বড় সার্টিফিকেট কখনওই ছোটলোককে বড় করতে পারে না।

তিন। একজন সহকারী সচিব পরিচিতজনের সালামের উত্তরে হাসিমুখে বলেন ওয়ালাইকুমআসসালাম; সাথে ওই লোকের এবং উনার পরিবারের সদস্যদের খবরাখবরও জিজ্ঞেস করেন। যখন সেই একই অফিসার, সালাম দিলেন যিনি, শুধু তাঁর খবর নেন, তখন বুঝতে হবে, তিনি সিনিয়র সহকারী সচিব হয়েছেন। উপসচিব হওয়ার পর শুধু ওয়ালাইকুমআসসালাম বলবেন। যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি হলে সেটা ছোট হয়ে যাবে ওয়ালাইকুম-এ। যখন সালামের উত্তর হবে হাসিমুখে নিঃশব্দে মাথা নোয়ানো, তখন বুঝে নিতে হবে অতিরিক্তসচিব মহোদয় দয়া করে যা দিয়েছেন, সেটাই মহাপ্রসাদ! সেই একই অফিসারকে সালাম দেয়ার পর যদি তিনি এমনভাবে তাকান যে, উনি যে তাকিয়েছেন, এ-ই ঢের, তবে উনি নিশ্চয়ই অধঃপতনের (পড়ুন, পদসোপানের) শেষ পর্যায়ে, মানে সচিব! একদিন সেই মানুষটিই পরিচিতজন এবং অপরিচিতজনদের নিজ থেকেই ডেকে-ডেকে সালাম দেন, পরিবারের সবার কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন। খোঁজ নিয়ে দেখুন, উনি তখন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা! বড়ই করুণা হয় এদেরকে দেখলে! তবে সুখের বিষয়, এরকম অফিসারদের সংখ্যা এখন আমলাতন্ত্রে আগের যেকোনও সময়ের চাইতে অনেক কম। আমার প্রায়ই মনে হয়, আইন করে একটা সিস্টেম দাঁড় করিয়ে আমলাদের বই কেনা ও পড়াটা বাধ্যতামূলক করে দেয়া উচিত। আমলারা যত বেশি বই পড়বেন, তাঁদের মানবিক হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি বাড়বে।

চার। অফিসের বসরা ভাল হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। একজন ভাল বস, একটা ভাল পোস্টিংয়ের চাইতে অনেকবেশি গুরুত্বপূর্ণ। বসদের প্রবৃত্তিই হল এরকম, অধস্তনদের অবস্থানকে অবমূল্যায়ন করবেন এবং সারাক্ষণ চাটুকার পরিবৃত হয়ে থাকতে পছন্দ করবেন। অনেক বসই প্রায় এটা ভুলে থাকেন, কর্মকর্তা আর কর্মচারীকে দিয়ে একইভাবে কাজ করানো সম্ভব নয়। আমাদের দেশের কালচার হল, অফিসের কাজ নয়, বসকে খুশি রাখাই আপনার প্রধান কাজ। যদি কখনও এমন হয়, আপনার ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আপনার বসের চাইতে উন্নত, তবে উনি একধরনের অসুস্থ নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করবেন এবং আপনাকে উনার ব্যক্তিসত্তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে যেতে চাইবেন। যেসব লোকের পরিচয় ও সামাজিক অবস্থান শুধু চাকরির জোরেই, তারা বস হিসেবে এবং বন্ধু হিসেবে সাধারণত ভাল হন না। তারা সারাক্ষণ এই চিন্তায় মগ্ন থাকেন, কীভাবে তার অধস্তনদের ক্ষতি করতে পারবেন। ছোটলোক ছোট অপরাধে বড় শাস্তি দিয়ে আত্মসুখ অনুভব করে। চাকরির মায়া বড় মায়া। সে মায়ায় অধস্তনরা বসকে মেকি সম্মান দেখায় আর আড়ালে পৃথিবীর সকল শ্রাব্য-অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে। যে বস মনে করেন, অবস্থানগত কারণে উনিই সবার চাইতে জ্ঞানী, তার অধীনে কাজ করা অত্যন্ত কঠিন। তাদের সকল দম্ভ আর লাফালাফি চাকরির সীমিত গণ্ডির মধ্যেই। চাকরি শেষ তো সব শেষ। আমি আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অবসরগ্রহণের পর এ ধরনের ক্ষতিকর স্বৈরাচারী বসকে পুরনো জুনিয়র কলিগরা দূরে থাক, রাস্তার নেড়িকুত্তাগুলিও গোনে না।

পাঁচ। বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলেন, চায়ের কাপটা নিয়ে আসতে দেরি হয়ে গেল বলে বয়ফ্রেন্ড ওয়েটারকে ইচ্ছেমত গালাগালি করল। সুযোগ বুঝে দুটো চড়ও বসিয়ে দিল। কেন দিল? মেয়েমানুষ সামনে থাকলে অথর্বদের বাহুবল বাড়ে। যার সিংহ শিকার করার শক্তি নেই, সে একবার বন্দুক হাতে পেয়ে গেলে গাধা শিকার করে মৃত গাধার শরীরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে রাখে নির্লজ্জের মতো বাসার ড্রয়িংরুমে টাঙিয়ে রাখার জন্য। যে পুরুষের মেরুদণ্ড নেই, সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য মেরুদণ্ডের জায়গায় একটা বাঁশ বসিয়ে দেয়। ওতে কাজ চলে হয়তো, তবে ওই অসহায়ত্ব দেখতে বড় কুৎসিত লাগে! কিছু বেকুব শ্রেণীর মেয়ে আছে, যারা ঘিলুর অভাবে ছেলেদের পেশীকে ঘিলু ভেবে ভুল করে। যে ছেলে যত বেশি অন্তঃসারশূন্য, সে ছেলে তত বেশি বাহুবলের উপর নির্ভরশীল। রাজনৈতিক পরিচয়ের পেশিশক্তিতে শক্তিশালী স্টুডেন্টদের পাস করার পর যখন একটা পিওনের চাকরিও নিজের যোগ্যতায় জোটে না, তখন তাদের ‘অতীত পৌরুষ’-এর ব্যর্থ রোমন্থন দেখতে বড়ই আরাম লাগে।

ছয়। ছোটলোকের ছোটকাজে নজর দেয়ার সময় সবসময়ই বেশি থাকে। বড়কাজ করতে হলে বড় যোগ্যতা লাগে। যার সেটি নেই, সে পৌরুষ দেখাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই ছোটকাজে বড় ভাব নেয়। বড়লোক করে জানায়, ছোটলোক বলে জানায়। যার মাথার জোর যত কম, তার ঔদ্ধত্যের জোর তত বেশি। চায়ে চিনি কম হল বলে বাসার কাজের বুয়াকে আধা ঘণ্টা ধরে শাসায়। বেচারা করবেটা আর কী! কাজের বুয়াকে শাসাতে তো আর বাড়তি কোন যোগ্যতা লাগে না। বসের একটা অন্যায় সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে বসকে আধা মিনিট শাসাক না একটু দেখি! শাড়িপরা জীবকে শাসিয়ে যে পুরুষ নিজেকে ‘ব্যাটা’ মনে করে, তার একমাত্র শিশ্নছাড়া পুরুষ হওয়ার আর কোনও বাড়তি যোগ্যতাই নেই।

সাত। আরেক শ্রেণীর ফেসবুক সেলিব্রিটিদের দেখবেন, ফেসবুকের বাইরে রাস্তায় নামলে যাদের কুকুরও ‘ফলো’ করে না। ভার্চুয়াল জগতে ওদের ভাব বরাবরই বেশি থাকে। বিশাল সংখ্যক ফলোয়ার যোগাড় করা ছাড়া জীবনে আর তেমন কোনও অর্জনই তাদের ঝুলিতে নেই। যাকে মানুষ মাথায় তুলে নাচে, সে ভাবে, আকাশটা একটু নিচে সরে এসেছে, সে হাতটা বাড়ালেই আকাশটাকে ছুঁয়ে ফেলতে পারবে। সে বিশ্বাস করে, আকাশটা আমার! মানুষের নাচ বন্ধ হয়ে গেলে, তখন সে থাকে মাটিতে। তখন সে আর আকাশ ছোঁওয়ার কথা ভাবতেও সাহস করে না। মাটি থেকে আকাশ ছুঁতে কিছু বাড়তি অবস্থান ও যোগ্যতা লাগে। অনলাইন পৌরুষ, অফলাইন খোজাত্ব!

আট। পয়সার একটা উত্তাপ আছে। সে উত্তাপ, যার পয়সা, তার আশেপাশের সবকিছুকেই পুড়িয়ে দিতে চায়। যার পয়সা যত বেশি, ‘আমি সবকিছুকেই কিনে ফেলতে পারি’ এই মূর্খতা তার তত বেশি। পয়সার ভাব ধরে যে লোক, তার কাছে কোনওভাবেই বিক্রি না হলে আপনি খুব সহজেই তার অস্তিত্বকে পাত্তা না দিয়ে মহাসুখে বেঁচে থাকতে পারেন। ধনীর চাটুকারিতার পেছনে থাকে প্রয়োজন নয়, লোভ। এ জগতে সে ব্যক্তিই সবচাইতে ঐশ্বর্যশালী, যে ধনী আর ক্ষমতাবানদের বিন্দুমাত্রও কেয়ার না করে চলতে পারে। যার পৌরুষ স্রেফ অর্থের মধ্যেই, সে সাধারণত খুবই দুর্বল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়। এ ধরনের বিত্তশালীকে একবার নিজের দৃঢ়তা বুঝিয়ে দিন; এরপর দেখবেন, উনিই আপনাকে সমীহ করে চলছেন। কারওর কাছে আর্থিক দায়বদ্ধতা আর ক্রীতদাসত্ব, দুইই সমান।

নয়। যে শিক্ষক যত কম জানেন, সে শিক্ষক পরীক্ষার প্রশ্ন তত কঠিন করে পৌরুষ দেখান। একজন ছাত্র কম জানেই বলেই কিন্তু সে ছাত্র। নাহলে তো সে শিক্ষকই হত। প্রশ্ন কঠিন করা মানে নিজের নাজুকতা লুকানোর চেষ্টা করে সেটিকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরা। অনেক শিক্ষককে দেখেছি, ক্লাসে এসে নিজের সিজিপিএ’র গল্প করতে থাকেন। তাদেরকে দেখে মনে হয়, তাদের জন্মই হয়েছে সিজিপিএ পাওয়ার জন্য। এর চাইতে বেশি কিছু করে পৌরুষ দেখানোর শক্তি উনাদের ছিল না। তাদের অনেকেই পরীক্ষার খাতায় মার্কস কম দেন। উদ্দেশ্য, যাতে ছাত্ররা বেশি পড়াশোনা করে। এ পদ্ধতিটা ছাত্রদের বেশি পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করার সবচাইতে বাজে পদ্ধতি। খাতায় মার্কস কম না দিয়ে যদি ওদেরকে বুঝিয়ে দেয়া যেত পড়াশোনাটা কেন করবে, তাহলে সেটা বোধ হয় বেশি কাজে আসত। বেশি-বেশি ফেল করিয়ে বেশি-বেশি পড়াশোনা করানো গেছে, এমন ঘটনা পৃথিবীর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।

দশ। আরেকজনকে ছোট করে নিজে বড় হওয়ার পৌরুষ দেখান কিছু-কিছু পুরুষ। সেভাবে বড় হওয়াটা সহজ, কারণ ওতে শুধু গীবত করতে জানলেই চলে। পৃথিবীতে বাঙালিই একমাত্র জাতি, যারা জন্মগতভাবেই পরশ্রীকাতরতায় অসীম প্রতিভাসম্পন্ন। পরশ্রীকাতরতা নিজের মানসিক শক্তি কমিয়ে দেয়। আমি মনে করি, যদি ছুরি বসাতেই হয়, যে প্রকৃত পুরুষ, সে ছুরিটা বসায় বুকে, পিঠে নয়। আপনার চারপাশে কিছু মানুষ আছেন, হয়তো যাদের সম্পর্কে ভাববার সময় পর্যন্ত আপনার নেই, এমনকি তাদের অস্তিত্ব কিংবা অনস্তিত্ব নিয়ে আপনার বিন্দুমাত্রও মাথাব্যথা নেই, অথচ আপনার সম্পর্কে আজেবাজে কথা ছড়িয়ে আপনাকে হেয় করার অফুরন্ত সময় ওরা কীভাবে কীভাবে যেন ঠিকই বের করে নেয়। আহা! কত সময় ওদের হাতে! সত্যিই ঈর্ষা হয়! প্রত্যেক অফিসেই কিছু-কিছু বস আছেন, যারা বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই মাথাটা ফেলে রেখে শুধু কানটা নিয়ে অফিসে চলে আসেন। অফিসে আসার পর থেকেই শুধু কানের উপর ভর করে অফিস চালাতে থাকেন। যার মাথাই নেই, সে বেচারা কানকথা বিশ্বাস করবে নাতো কী করবে? কানকথায় সিদ্ধান্ত নেয়ার পৌরুষ কানের পৌরুষ, মাথার নয়। প্রচলিত ধারণা, মেয়েরা ঈর্ষাপরায়ণ হয়। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় অনেকবেশি ঈর্ষাপরায়ণ হয়। আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে কিছু ঈর্ষান্বিত অসুস্থ পুরুষের পৌরুষের বীভৎস প্রদর্শনে নাভিশ্বাস ওঠে প্রতিনিয়তই। আমার কাছে ঈর্ষাপরায়ণ পুরুষদের চিরকালই হিজড়া মনে হয়েছে। যার কিছু করে দেখানোর ন্যূনতম যোগ্যতাও আছে, তাকে আর যা-ই হোক ঈর্ষায় জীবনযাপন করতে হয় না।

পৌরুষ যার মধ্যে আছে, তার মধ্যে হিপোক্রিসি নেই। সে দুর্বলকে আঘাত করে নয়, সবলের আঘাত সহ্য করে নিজের শক্তি বাড়িয়ে নিতে শেখে। যে ক্ষমাটা করে দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না, সে ক্ষমাটা পৌরুষ না থাকলে করা যায় না। কোনও পুরুষের পৌরুষ বোঝা যায় তার নিচের অবস্থানের কারওর সাথে তার ব্যবহার দেখে। নষ্ট হওয়ার সুযোগ পেলে কতটা নষ্ট না হয়ে থাকা যায়, সেটা দেখে পৌরুষ চেনা যায়। পৌরুষ তারই, যার শক্তি বাহুতে নয়, মাথায়। আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যে সমাজ অদৃশ্য চুড়ি-ফিতাপরা পুরুষমানুষ থেকে মুক্ত! আমরা এমন পৌরুষ চাই, যে পৌরুষের আগুন জ্বলে গনগনে সিগ্রেটের ধোঁয়াশায় নয়, ফ্রেঞ্চকাট দাড়িতেও নয়, বরং চোখের কোণায় লুকিয়েথাকা নিজেকে গড়ে নেয়ার প্রবল জেদে!