প্রণয়-প্রলয়

 এক।
ঘনশ্যাম, ওগো মোর ঘনশ্যাম,
তোমার ও বাঁশি গায় যে কেন
রাধা-রাধা নাম!
কেন কেঁদে যায় গলার ও হার--
বুকে আমার সে হাহাকার!
আমি কী দিয়ে গো শোধি বলো
তোমার ব্যথার দাম!
তোমার ও বাঁশি গায় যে কেন
রাধা-রাধা নাম!
 
ওই যমুনা...
বোঝে সেও কেমন বিঁধে তীরের জ্বালা,
তুমিই কেবল বুঝলে না মোরে, ও প্রাণ-কালা!
বাঁধো কেন এমন ডোরে, বলো না প্রিয়!
বাঁধোই যদি সরাও কেন এমনি দূরে?
দেহমন আর পরানখানি,
সবই তো দিলাম তোমার নামে!
তবু কেন শ্যাম তোমার বাঁশি
আকুল আমায় ঘরটা ছাড়ায়,
শুধু গেয়ে যায় রাধা-রাধা নাম!
 
দুই।
কে ডেকে যায় নিঃশব্দে আজ,
সাগরতীর যেমনি ডাকে ঢেউগুলি ওর,
যেমন করে বাঁশরি ডাকে রাধা নামে--
নীল জোছনায় শুনছি পেতে কান,
ডাকে সে আমায়...
বাসনা ব্যাকুল--এলোমেলো,
হাওয়ায় ওড়ে, হাওয়ায় বাঁধে,
আর স্বপন পুড়ে ওই ওপারে!
 
বন্ধনহীন কোন বেদনায় বেঁধে ফেলে কেউ চপল পাখা,
কাঁদতে থাকি আকুল চোখে এ অবেলায়,
তাই জেগে যাই, আর গেয়ে উঠি,
ভাঙনের সুরে নিঠুর প্রিয়
কাঁদায় শুধু!
মনখারাপের আরেকটা নাম তুমিই যেন,
মেঘগুলি সব আঁচল ফেলে ত্রাসে ওড়ে কী ভাবনায়!
ঘুমচোরা ওই জোছনা সকল ঝরে যায় আজ আনমনে--যেন সর্বহারা!
পিয়াসে তোমার বুক ফেটে যায়! জীবন এটাই!
 
তিন।
ওগো, অনেক কথা ছিল যে বলার,
সময় শোনার হবে কি তোমার?
কেন এসে শুধায় সাঁঝের পাখি, আমায় বকায়?
কেন এ একলা ব্যথায় যে জল ঝরে--
এসে থামে বুকের মাঝে!
এ দুটি চোখ পোড়ায় শুধু,
জল ঝরে না, আগুন ঝরে।
 
দুয়ারে তোমার ঘুরি, ফিরি,
পথের পানে শুধু চেয়ে রই মনের ভুলে,
আড়ালে ভাবি, এই আমি কি আগের আমি!
জীবনে আমার তোমারই যে ঠাঁই,
কতকত বার ভুলতে চেয়েছি,
নিজের সাথেই বিচ্ছিন্নতায় রাত কেটেছে--অগণ্য সে রাত!
চিত্তে আমার নতুন হাওয়ায় লাগবে দোলা,
অন্য অধরে ছুঁইয়ে অধর ভুলেই যাবো--পুরনো ক্ষতের বিষণ্ণতা!
স্বপ্ন কত! তবু ঘুরেফিরে--
ভুল বাসরে আদর করে ফুল যে কুড়াই, গাঁথি মালা।
যে মালাটায় রয়েছে গাঁথা অশ্রুগাথা,
সে মালা তোমায় পারিনি দিতে,
ভুলতে পারিনি কখনও তোমায় শত আঘাতেও!
যত গেছ দূরে, এসেছ ফিরে তত ততবার--
পোড়া দৃষ্টিতে, ভাঙা পাঁজরে,
নীল বেদনার পূর্ণ ভাদরে!