প্রাক্তনকে

প্রিয় প্রাক্তন, জানোই তো, পৃথিবীর সব প্রাক্তনই একদিন প্রেমিক ছিল!
একদিন সেই প্রেমিকের জন্য কত কী যে সাজানো ছিল,
ছিল মুঠোয় মুঠোয় স্বপ্ন ছড়ানো।
এত স্বপ্নরাশির তীরটা ফুঁড়ে শেষে গজায় কিনা বিরহের নীল পতাকাই!


প্রিয় বিচ্ছেদ, প্রিয় ভালোবাসা,
এখনও মধ্যরাতে তোমায় ভেবে কেঁপে ওঠে বুক, জলে চোখ ভিজে যায়।
এখনও ঘুমটা ভেঙে আধো আধো চোখে খুঁজি তোমার ছোঁয়াই।
এখনও ভাবি, যেন ফোনের রিংটোনটা উঠবে বেজে, আর তুমি হেসে বলবে,
‘এসো প্রিয়া, ওসব খেলার ছল সরাও দূরে, তোমায় ছেড়ে আমি বাঁচব কী করে?’


আচ্ছা, সত্যি করে বলো তো এবার,
তোমায় নতুন মানুষ ভালোবাসে আমারই মতন?
আমার মতো তোমার ঘুমকণ্ঠের প্রথম হ্যালো শুনতে কি চায়?
বায়না ধরে একটি বৃষ্টিস্নাত কদমফুলের?


আমার মতো ওকেও কি, ‘আজকে নাহয় কালো শাড়িটাই…পরবে?’ বলো?
ওর চোখ দুটোকে চাও নাকি দেখতে ছুঁয়ে হাজারটা বার?
ওকেও ডাকো কোনও ব্যক্তিগত…নিজের নামে?
মেয়ের নাম কী হবে, ওটা নিয়ে ঝগড়া কি হয় ওর সাথেও?
রিকশায় বসে, হুডটা তুলে, চুমু এঁকে দাও?
শক্ত করে হাত দুটো কি ধরেই রাখো?


মনে পড়ে, আমরা দুজন কত যত্নে ভেবে রেখেছি,
আমাদের একটা মেয়ে হবে, তার চোখ দুটো খুব মায়াজড়ানো,---
ঠিক তোমারই মতো? তার কথা তোমার মনে আছে তো?
সে প্রথম ‘মা’ ডাকবে, না কি ডাকবে ‘বাবা’ই,
এসব নিয়ে খুব ঝগড়া হতো, আমার সবই মনে এসে যায়…


অনস্তিত্বের সেই অনাগতার জন্য মাতৃত্ববোধ আর গাঢ় ভালোবাসা,
আমার নিবিড় কল্পনাতে তার চোখ নাক মুখ…পুরো অবয়ব,
বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা আর আকুলতা…তাকে পাবার জন্য…
ওসব এখনও বিশ্বাসে আর অনুভবে ঠায় লেপটে থাকে…
মায়াটুকু যেমনি থাকে তোমার জন্য!


এখনও মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখি,
একটা সবুজ মাঠের পথটা ধরে তুমি আমি যাচ্ছি হেঁটে,
বাবা-মায়ের মাঝখানেতে আমাদের ছোট্ট মেয়ে গুটি গুটি পায়ে
চলছে হেঁটে, আর খিলখিলিয়ে হাসছে কেমন!
অথচ দেখো, আমার চোখের সামনে
তুমিও নেই, নেই আমাদের মেয়েটিও,
পড়ে আছে শুধু কিছু মৃতছায়া আর স্বপ্নভস্ম!
প্রিয় প্রাক্তন, তুমি প্রাক্তন যত, আজও প্রেমিক ততই!


একদিন তোমার প্রেমিকা ছিলাম, সে অধিকারে বলছি শোনো,
নিজেকে খুব ভালো রেখো,---আজ আমি তো নেই, তাই নিজেই রেখো!
চলতে পথে, কখনও কোনও রাস্তা ভুলে কিংবা গলির মোড়ে,
দেখা হয়ে যাবে। সেদিন হয়তো, দুটো চিরচেনা মুখ অচেনা চোখে
পথ ঘুরিয়ে পথ ধরবে অন্য পথের।


কিছু দেখা হয়, কথা হয় না।
কিছু কথা হয়, দেখা হয় না।