প্রাতিস্বিক ত্রস্তবচন

 বুড়ো বটটার ছায়ায় বসে পাহাড় ঘেঁষে ভাবছি আমি,
রৌদ্র যখন ঝলমলিয়ে ওঠে হেসে, দুঃখ আমার বেড়ায় ভেসে।
নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি, প্রকৃতি আজ মাতছে ভীষণ,
নাটুকে ওই নদীর বাঁকে, অচিন বাঁশি আমায় ডাকে। সে কী মায়া!
 
ঝর্ণা ছোটে মুক্তো-জলে, পাথর কাঁদে হাওয়ার তালে,
সাপের শরীর ছড়িয়ে দিয়ে পথটা হারায় দূর কিনারায়।
হ্রদটা নেবে সবটুকু জল, খেলবে সেথায় বাজিয়ে কি মল?
এমনি করে সন্ধ্যা নামে পাহাড় বেয়ে, পুরনো এই রাতটা জাগে।
 
আবিররাঙা গোধূলিছটায় বিষণ্ণতা চাদর ছড়ায়,
গাছের ভারে পাহাড় সরে, আগুনেপোকার নৈবেদ্যতে রাত্রি জাগে।
নৈঃশব্দ্যের সুরটা বাজে, কুয়াশার ওই রথটা সাজে,
রাতের ছায়ায় জাগল ভুবন হিমের বুড়ির শুভ্র প্রভায়।
 
হাওয়াই তীরের ডানায় চড়ে পুণ্যধ্বনি আসে ভেসে,
পাতায়-পাতায় ছড়ায় সে সুর, মিলিয়ে গেছে ওই আকাশে।
পথিক হঠাৎ থমকে ভাবে, রাতের কায়ায়, কে প্রাণ জাগায়?
হৃদয় ভাসে, শরীর হাসে, রাত্তিরের এই ঘ্রাণটা মেশে পথ হারিয়ে ওই সে দেশে।
 
রাতকুমারীর উৎসবেতে, মৃতের আলয় আমায় ডাকে,
সুখটা হারায়, বিষাদ ছড়ায় এ শরীরে, এ হৃদয়ে।
অন্ধকারের আলোয় নাচে ছায়ার শরীর, হারানো এক গীতির মতন।
সূর্য ওঠে, ছড়ায় আঁধার। সূর্য এমন শত্রু হবে, এ কথা কে ভাবত কবে?
 
এ কোণ থেকে ওই সে কোণে, ছাড়িয়ে ঊষা নিশীথ মনে,
চোখের আলো ম্লান হয়ে যায়, পাহাড়দেশের ছন্দ তবু কষ্ট বাড়ায়।
এই অসীমে ঘুরছি ভীষণ,
বুঝছি কেঁদে, “সুখই তো নেই!”
 
এসবকিছুর কী মানে হয়? পর্ণকুটির, জীর্ণ প্রাসাদ, অচল পাহাড়?
রংটা বিলায়, মায়া ছড়ায়, দৃষ্টি কাড়ে, নজর দোলায়--সবই ফাঁকি!
নদীর বাঁকে বনটা কেবল পাথর হয়ে নির্জনতার বীজটা বোনে।
এক সে ‘তুমি’ নেই বলে আজ শূন্য সবই কী আভাসে!
 
সূর্য ওঠে, সূর্য নামে। চাঁদটা ওঠে, চাঁদটা নামে।
কী এসে যায়? এইতো আমি, আগের মতোই!
উঠুক নামুক, হাসুক কাঁদুক, কার কী তাতে?
আলোর দেখা পাই বা না পাই, এ আঁধারই থাকুক পাশে।
 
আকাশ আমার আঁধারে ডোবে, অন্য আকাশ আলোয় ভাসে।
সূর্য মশাই, বলছি শোনো, “মিত্র এমন হলো সবাই, আমি হলাম শত্রু কীসে?”
দেহের ভারে ক্লান্ত আমি, চলছি নাতো, টানছি বেশি।
নইলে কবেই নিতাম খুঁজে স্বপ্ন আমার এই আমাতেই!
 
দুনিয়াটা দেখছি বিশাল, আমিই আছি ক্ষুদ্র হয়ে,
বিষাদ-মরুর যাত্রী আমি, রিক্ততাকেই আঁকড়ে আছি।
কাছের দূরের, নিজের পরের, সবকিছুকেই ছাড়তে পারি,
সময়টুকু ফুরিয়ে গেলেও, থাকব এমন--খালিহাতেই ছাড়ব বাড়ি।
 
আশীর্বাদের ঝর্ণা পেলে মিটিয়ে নেবো সব পিপাসা,
ভালোবাসা আর সুখকে খুঁজে বাঁধব যে ঘর, এইতো আশা!
সেইখানেতেই ঠিকানা আমার, ঘুরছি মরে বাঁচতে সেথায়।
হৃদয় আমার শান্ত হবে, নাম না জানা ওই চালাতেই। সেইতো বাঁচা!
 
সূর্যদেবের করুণাতে যাবো আমি ওই তোমাতেই,
ভালোবাসার সবকিছুতেই ভাগটা দেবো, দিব্য আমার।
নির্বাসনে, জনান্তিকে, আড়ালঘরে আর এ কত?
অন্য দ্বীপের এ অঁচলে থাকব না আর, শূন্য দেবো শূন্য নেবো কোন ইশারায়?
 
পাতাঝরা দিনগুলিতে নবডঙ্কার রাজ্য ঘুরে,
ঝরাপাতার বন্ধু হয়ে, আবছা আলোর হাওয়ায় ভেসে
উড়ব হেসে। এই কি জীবন? ফ্যাকাসে পাতার ফ্যাকাসে জীবন! এ যে শুধুই মরার মতন!
ওগো দখিন হাওয়া, আমি তোমার সাথী হব। ওড়াও আমায় প্রবল ঝড়ে, বাঁচলে পরে বাঁচব ভীষণ!