বাঁচতে শেখা, বাঁচতে শেখানো

 
২৫/১০/২০১৪। দুপুর ২:১৫টা। লিফটের সামনে বিশাল লাইন দেখে সিঁড়ি ভেঙে রাফিন প্লাজার তৃতীয় তলায় উঠলাম। দেখি, সিঁড়ি দিয়ে অনেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
: বস, উপরে যাওয়া যাবে না, লাইনে দাঁড়ান।
: আমাকে যেতে দ্যান।
: না, আমরা এখানে ১:০০টা থেকে দাঁড়ায়ে আছি। লাইন ব্রেক করা যাবে না।
: আপনারা এখানে দাঁড়াইসেন কেনো?
: আমরা একটা বিসিএস সেমিনারে আসছি। ৮তলায় আর জায়গা নাই। ৫:০০টার সেশনে করবো। আপনিও লাইনে দাঁড়ান।
: ভাই, আমি সেমিনার করবো না। আমি অন্য কাজে আসছি। আমাকে যেতে দ্যান।
এরপর ওরা যেতে দিলো। অনেক ভিড় ঠেলে খুব কষ্ট করে ৮তলায় উঠলাম। আশেপাশে অসংখ্য মানুষ। ধাক্কাধাক্কিতে আমার ক্যাজুয়াল শার্টের বোতামগুলো খুলে গেলো। লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে বোতাম লাগালাম। রুমে তিল ধারণেরও জায়গা নেই। অনেকেই গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে। রুমের দরোজার বাইরেও ছেলেমেয়ের ভিড়। কয়েকজন রুমের দরোজার কাছের জানালার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বিসিএস নিয়ে ক্যান্ডিডেটদের পাগলামি দেখে রীতিমত স্তম্ভিত! আমি জীবনেও কল্পনা করিনি, আমি যে চাকরিটা করি, সেটাকে এতো মানুষ এতো বড়ো করে দেখে! সেমিনার শুরু হলো ২:৩০টায়। আমি সত্যি-সত্যি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম! আমার দিকে তাকিয়ে আছে অন্তত ৯০০ মানুষ! প্রথম সেশনটা শেষ করলাম ৫:১৫টায়। সেশনের শেষের দিকে রীতিমত মারামারি লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা! বাইরে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টার দাঁড়িয়ে ছিলেন, ওরা রীতিমত উত্তপ্ত স্লোগান দিচ্ছিলেন। অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও উনারা শান্ত হচ্ছিলেন না। আমি এক পর্যায়ে রেগে গিয়ে শাউট করি। পরে বের হয়ে যখন জানলাম, ৮তলা থেকে ১তলা অবধি অনেকে অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, আমার নিজেরই অনেক কষ্ট লাগে। পরে সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। পরের সেশনটা শুরু হয়েছিল ৫:৪০টায়। সেখানে ছিল প্রায় ৬০০ ক্যান্ডিডেট। এই প্রায় ১৫০০ জন ক্যান্ডিডেট গত ২৪/১০/২০১৪ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের কনফারেন্স হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব আয়োজিত ফ্রি সেমিনারে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সীমিত আসনসংখ্যার (২০০) কারণে থাকতে পারেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফবিএস এবং রাফিন প্লাজার সেমিনার দুটো যতোটা ছিল বিসিএস নিয়ে, তার চেয়ে অনেকবেশি মোটিভেশনাল। কয়েকটা ফিডব্যাক শেয়ার করছি।
# স্যার, আমার জীবনে অনেক প্রশ্নের উত্তর আজ আমি পেয়ে গেছি। এই প্রশ্নগুলো কখনও কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারি নাই। আপনি এগুলো জানলেন কীভাবে? আমি নামাজ পড়ে আপনার জন্যে প্রার্থনা করবো যাতে আল্লাহ আপনাকে আপনার শেষ দিন পর্যন্ত সুখে রাখেন।
# আপনার জীবনের শতকরা ৮০ভাগ কথাই আমার নিজের জীবনের সাথে মিলে গেছে। আমি কখনওই এগুলো প্রকাশ করতে পারিনি আপনার মতো করে। আজকের দিনের আগ পর্যন্ত আমি ঠিক করে রেখেছিলাম, আমি বিদেশে চলে যাবো। কিন্তু, এখন ভাবছি, আর যাবো না। দেশেই আমি ভালকিছু করতে পারবো।
# আজ আপনার সেমিনারটাতে অংশ নিতে পেরে খুব ভাল লাগছে, ভাইয়া। জানিনা জীবনে কখনও ক্যাডার হতে পারবো কি না, কারণ আপনিই তো বলেছেন, রিজিক আল্লাহই ঠিক করে রেখেছেন। তবে যাই করি না কেন আপনার কিছু কথা আমার আজীবন মনে থাকবে। আশা আছে, যদি কখনও ক্যাডার হতে পারি অথবা অন্য কোন ভাল চাকরি পাই, তবে সশরীরে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করে আপনাকে জড়িয়ে ধরে একটি মিষ্টি নিজের হাতে খাওয়াব। এই ছোট ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করবেন।
# ব্যক্তিগতভাবে কখনও আপনের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি কিন্তু শুধু আপনি আসবেন বলেই আমি এফবিএস-এর সেমিনারে অ্যাপ্লাই করি। আলহামদুল্লিলাহ আল্লাহ্র রহমতে ডাক পাই। কোনও কিছু না ভেবে গত পরশু রাত ৯টায় রওনা দিয়ে গতকাল রাত ৮টা ৩০মিনিটে আমি খুলনায় পৌঁছাই। সাড়ে ২৩ ঘন্টার জার্নি শেষে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বাসে ভোর ৪টায় পোঁছে সকাল ৬টা পর্যন্ত গুলিস্তানে দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে ঢাবি'র বিজনেস ফ্যাকাল্টির সামনে ৬টা ৪৫ থেকে ৮টা ২০ পর্যন্ত অপেক্ষা। কোনও কিছুকেই কষ্টের মনে হচ্ছে না শুধুমাত্র ১০টা ১৫ থেকে ১২টা ৩০ পর্যন্ত আপনার সেশনের জন্য। অনেক ধন্যবাদ ভাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আল্লাহ্ আপনার ভাল করুন। আর আমাদের জন্য প্রার্থনা রাখবেন।
# আমি জানি না, আমার লেখা কথাগুলো আপনি বিশ্বাস করবেন কি না। আমি ২৪ অক্টোবরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারের অত্যন্ত সৌভাগ্যবান ২০০ জনের মধ্যে একজন। সেইদিন আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়েতে না গিয়ে আপনার কথা শুনতে আর শুধু আপনাকে একবার দেখতে ঢাকা গিয়েছিলাম। আমার বাড়ি নরসিংদী, ভোর ৪টায় উঠে ৪.৩০টায় অন্ধকারেই ভোরের ট্রেনের জন্য রওনা দিই, ৫টার চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন ৬.১৫ মিনিটে আসলে উঠে দেখি কোন সিট খালি নাই, অতঃপর ট্রেনের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ঢাকা যাই। কপাল ভাল, সময়মতো আপনার সেই সেমিনারে আমি থাকতে পেরেছিলাম। ভাইয়া বিশ্বাস করেন, আমি ভেবেছিলাম ঠিক ১২ টায় আমি সেমিনার থেকে বের হয়ে আসব, ২/৩ ঘণ্টায় নরসিংদীতে ফিরে অন্তত আমার বন্ধুর বিয়েটা অ্যাটেন্ড করবো। কিন্তু রিদওয়ান ভাইয়ার অসাধারণ সেশনটার পর যখন আপনার সেশন শুরু হলো, তখন আমি শুধু মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে গেছি। কখন ১টা বেজে গেছে বুঝতেও পারি নাই। ভাইয়া, সেইদিন সেমিনার শেষে বলা যায়, আমি দৌড়ে বাড়ির দিকে রওনা দিই , কিন্তু শুধুমাত্র বিআরটিসি বাসের আলস্যে ফিরতে ৫.৩০টা বেজে গেল এবং ..............যাই হোক ভাইয়া, সে আমার বন্ধু তো, তাকে না বলে চলে গিয়েছিলাম ভয়ে কিন্তু ফিরে এসে সব বলার পর একটি হাসিমুখ সবকিছুর সমাধান করে দিল। আপনার কাছে, নিজের অজান্তে কতটুকু কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম তা বোঝানোর ভাষা জানা নেই আমার। আপনার কথা শুনে আমরা যারা নতুন করে পথ চলায় আগ্রহী হয়ে উঠলাম, যারা আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম তারা সফল হই বা না হই, তবুও এইটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি--- আপনার যে কোনও কাজে আমরা আপনার পাশে থাকবো।
# আমার ২৩ বছরের জীবনে আজকে এমন একজনকে দেখলাম, যার প্রতিটা কথা আশা জাগায়, যিনি মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পারেন কোনও অলীক গল্প দিয়ে নয়, একদম নিজের জীবন থেকে কিছু কথা দিয়ে যেগুলোকে কিছুতেই অন্যকারওর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু মনে হয় না। আমি আল্লাহ্র কাছে আজকের দিনটার জন্যে অনেকবেশি কৃতজ্ঞ, কারণ উনিই আমাকে ওইখানে যাওয়ার তৌফিক দিয়েছেন। জানি না, কতোটুকু কাজে লাগাতে পারবো, তবে আপনার কথা আমার মনে থাকবে। আর আপনার যে বিষয়টা আমার কাছে সবচেয়ে ভাল লেগেছে, সেটা হলো, আপনি মনে করেন, আপনার সকল অর্জন আল্লাহ্র দেয়া সৌভাগ্য। একমাত্র আল্লাহই জানেন, আমাদের জন্যে সর্বোত্তম উপহার কোনটি। আমাদের রিজিক আল্লাহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত। আল্লাহ মাঝেমাঝে প্রার্থনা কবুল করেন প্রার্থনা কবুল না করার মাধ্যমে। আপনি সবকিছুর জন্যই শুকরিয়া আদায় করেছেন। এতো বিশ্বাস নিয়ে অনেক মুসলমানও বলে না। আমি মনেপ্রাণে প্রার্থনা করি, আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুন, সরলপথে রাখুন। আমীন।
# আমাদের একটা প্রজন্মের কাছে আপনার মোহনীয় অনুপ্রেরণার আবেশ চিরজাগ্রত থাকবে, এটা নিশ্চিত। দূর থেকে ভাবলে আপনাকে কখনওই সম্পূর্ণটা জানা যায় না। এরকম সাবলীল উপস্থাপনা, কৃত্রিমতাবর্জিত আবেগের বহিঃপ্রকাশ বিরল। আর সেজন্যই আপনার এমন প্রাণবন্ত অনুপ্রেরণা নিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে ঘরে ফিরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। জীবনের প্রকৃত মানে খুঁজে দেয়া, জীবনকে উপভোগ করার মন্ত্র এমনভাবে কেউ কখনওই আমাকে দিতে পারেনি। প্রতিমুহূর্তে জীবনটাকে উপভোগ করার অনুপ্রেরণা, স্রেফ বেঁচে থাকলেই অনেক কিছু হয়---এমন অকপট পরম সত্য উজ্জীবিত না করে পারে? জীবনের চরম নির্মমতাকে মাড়িয়ে আসা ছেলেটির চেয়ে জীবনের চরম সত্য আর কে ভাল বুঝবে? ভীষণ আবেগী মানুষটির জীবনের গল্পগুলো শুনলে সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হয়। বৃহস্পতিবারের সারাদিনের পরিশ্রম, সাথে স্মাগলারের পেছন-পেছন গাড়ি নিয়ে ছুটে যাওয়া, দিনের ক্লান্তি মিলিয়ে যেতে না যেতেই আবার চট্রগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা, এসবকিছুই আপনাকে অনন্য করে তুলে। ফরেন ক্যাডারে প্রথম হওয়া রিদওয়ান ভাই আপনাকে স্যার বলে ডেকেছিল। আপনি আসলে সবারই শ্রদ্ধেয় স্যার । ঠিক আগেরদিন এত কষ্ট করে ডিউটি করতে-করতে স্লাইডগুলো তৈরি করে আমাদের জন্য একটি সুন্দর সেমিনার উপহার দেয়াই আপনার লক্ষ্য ছিল। ছাত্রদের মনের সব প্রশ্নের উত্তর ছিল আপনার প্রাণবন্ত উপস্থাপনায়। এরকম স্মরণীয় একটি সেমিনার উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে স্যালুট জানাচ্ছি, স্যার.....
# আমার ছোটবোন ঢাকায় একটা পাবলিক ভার্সিটিতে স্নাতক ১ম বর্ষের ছাত্রী। ও আমাকে ২৪/১০/২০১৪ তারিখ রাতে আপনার সেমিনারের কথা জানায়। (ও সম্ভবত আপনার FB তে follower।) আমার অফিসে ব্যস্ততা থাকায় আমি যেতে পারবো না জানালাম। কিন্তু ও 'আমার জন্য' আপনার কথাগুলো জেনে নেয়ার জন্য আমাকে না জানিয়েই আপনার সেমিনারে দুপুরে অংশগ্রহন করে। আমিও তাকে না জানিয়েই অফিসের সব কাজ ফেলে দুপুর ১২.০০টায় মিরপুর-১৪ থেকে রওনা দেই। দুপুর ১.৪০-এ আসাদ গেইট পৌছাই। কিন্তু সময় আছে আর মাত্র ২০ মিনিট, তার উপর আরও ৫ মিনিট রাস্তায় জ্যামে বসে রইলাম। পরে গাড়ি থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে ঠিক ২.০৫ মিনিটে রাফিন প্লাজায় পৌঁছাই। তারপর আরও ১৫ মিনিট ধরে ভিড় ঠেলে কোনরকমে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় একটা টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলাম আমার ছোটবোন উপস্থিত!! ক্ষুধা/ক্লান্তি সব দূর হয়ে গেল, তারপর আসলেন আপনি... কিভাবে যে এত দ্রুত বিকাল ৫.৩০ বেজে গেল বুঝলামই না। একজন Nobody-এর গল্প কীভাবে এত গলগল করে বলে ফেললেন আপনি?? গল্প কেন এত দ্রুত শেষ হয়ে যায়... না, কর্তৃপক্ষ আমাকে ২য় বার সেমিনারে থাকার সুযোগ দিল না। যাই হোক, একটা তৃপ্তি নিয়ে বাসায় ফিরলাম। এমন চমৎকার একটা প্রোগ্রাম এর জন্য Sushanta Paul দাদার নিকট কৃতজ্ঞতা রইল।
[পুনশ্চঃ আমার ছোটবোন ঐ দিনই 'BCS পরীক্ষা' দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল !!!]
(এই ব্যক্তি (সম্ভবত) ৩৩তম বিসিএস-এ পুলিশ ক্যাডারে জয়েন করেছেন।)
# আপনার কথাগুলো শুনলে নিজের মধ্যে একটা প্রচণ্ড ইচ্ছে জন্মে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে। কিছুতেই মনে করতে ইচ্ছে করে না যে আমি তুচ্ছ। কোনও দুর্ভাগ্যের জন্যেই আফসোস করতে ইচ্ছে হয় না। জীবনের সকল ব্যর্থতাকেও আপন বলে মনে হয়। মনে হতে থাকে, আমিও পারবো, আমিও পারবো। জীবনের কাছে পরাজিত হতে লজ্জা হয়। আপনার কথাগুলো শোনার সময় বারবার মনে-মনে বলছিলাম, আল্লাহ, তুমি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছো। আমি কতো সৌভাগ্যবান। শুকরিয়া। প্রার্থনা করি, আপনি এভাবে করে আলো ছড়িয়ে যান। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন।
এরকম আরও অনেক-অনেক কথা, যার বেশিরভাগই আমি সত্যিই ডিজার্ভ করি না।
এবার কিছু মজার কনভারসেশন শেয়ার করি।
এক।
: বান্ধবী, দ্যাখ তো আমার লিপস্টিকটা ঠোঁট বরাবর ঠিকাসে, নাকি লেপ্টে গ্যাসে?
: ঠিকাসে। কিন্তু তুই সন্ধ্যার প্রোগ্রামে এরকম ক্যাটকেইট্যা কালারের লিপস্টিক দিসস কেনো?
: ধুরর বেটি! আমি হিজাবের কালারের সাথে ম্যাচিং করে লিপস্টিক দিসি। কেনো, দেখতে ভাল লাগতেসে না?
: লাগতেসে, আবার খ্যাতখ্যাতও লাগতেসে।
: ভাল হইসে! নিজে তো চোখে কাজল দিসস পেত্নীর মতন! এই! টিস্যু দিয়ে লিপস্টিকটা একটু সমান করে দিবি? মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরায় দেখলাম, একটু নিচের দিকে বের হয়ে গ্যাসে মনে হয়।
দুই।
: (কোনও এক বিসিএস ক্যাডারের নাম উল্লেখ করে) ভাইয়া কী পরিমাণ হ্যান্ডসাম দেখসস? আহ! কী ফিগার! কী হাইট! দেখলেই খালি বিয়া করতে ইচ্ছা করে!
: শুনো, ভাল হইয়া যাও! তোমার এইসব উল্টাপাল্টা কথা উনার গার্লফ্রেন্ডের কানে গেলে তোমারে একেবারে কাঁচা খেয়ে ফেলবে!
: এহ! উনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে উনার ঝামেলা চলতেসে, আমি খবর নিসি।
: এতো খুশির কী হইসে? ব্রেকআপ তো আর হয় নাই!
: সেটা ঠিক, কিন্তু হতেও আর বেশি দেরি নাই। যে প্রবলেম শুরু হইসে ওদের মধ্যে, ইনশাল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি ব্রেকআপ হয়ে যাবে! হিহিহি........
: তোমার তো নজরই খারাপ! খালি সেকেন্ডহ্যান্ড জিনিস ভাল লাগে।
: তোমার নিজের বয়ফ্রেন্ড যে আগে তিনটার সাথে লাইন মেরে আসছে, সেইটা তোমার মনে থাকে না?
তিন।
: দোস্তো, ভাইয়া কী সুন্দর করে কথা বলে, শুনলেই খালি মায়ামায়া লাগে!
: এতো মায়া লাগাইস না, লাভ নাই!
: ক্যান? আমি কি ভুল বলসি? আল্লাহ উনারে পুরা একটা কমপ্লিট প্যাকেজ করে পাঠাইসে! উনার চেহারা আর হাইট দেখসিস?
: তুই বোধ হয় খেয়াল করিস নাই, উনি একটা গরুর পাল নিয়া চলে!
: আরে গাধী! তো কী হইসে? আমি কি উনাকে বিয়া করতেসি নাকি?
: তাইলে এতো ফটরফটর করতেসিস ক্যান?
: ওমা! উনার সাথে ফ্লার্ট করবো। তোর কোনও প্রবলেম আছে?
: না, না, কোনও অসুবিধা নাই। কর, কর, যত ইচ্ছা কর!
: ক্যান? তোর হিংসা লাগতেসে?
চার।
: স্যার কতো ভাল দেখসিস? কী সুন্দর করে শুদ্ধভাবে সালাম দেয়, নামাজের সময় পর্যন্ত ব্রেক দিসে। উনি ইসলাম নিয়ে অলরেডি কী গভীরভাবে ভাবসে, দেখসিস? আমি তো অবাক হয়ে গেসি!
: হ্যাঁ, উনি অন্য ধর্মকে অনেক রেসপেক্ট করেন, এটা আমারও খুব পছন্দ হইসে। স্যারের খালি একটাই দোষ, স্যার হিন্দু।
পাঁচ।
: ভাইয়ারে দেখলে মনে হয় না যে ভাজা মাছটাও উল্টায়ে খাইতে জানে না? আসলে ব্যাটা শয়তান আছে। আমার এক বান্ধবীর সাথে ফ্লার্ট করে। আর সুন্দরী ছাড়া আর কারওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করে না। পুরাই বদ একটা!
: তোর প্রবলেমটা কী বলতো? তোর সাথে ফ্লার্ট করে না, এইটা প্রবলেম? নাকি, তোর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা ঝুলায়ে রাখসে, এইটা প্রবলেম? তাছাড়া তুই তো বদনা! তুই উনারে রিকোয়েস্ট পাঠাইসস ক্যান? কই, আমারটা তো অ্যাক্সেপ্ট করসে!
ছয়।
: তোরা টেনশন লইস না। ভাইয়া আমার খুব কাছের মানুষ! পাঁচটার ব্যাচে আমি তোদের কনফার্ম ঢোকার ব্যবস্থা কইরা দিমু।
: ভাব লস, না? নিজেই আগের ব্যাচে ঢুকতে পারস নাই।
: আরে পোলাপান বোঝেই নাই! আমি তো ইচ্ছা কইরাই ঢুকি নাই। তোরা আসতেসস কইলি, ভাবলাম, এক লগেই ঢুকি।
: হ, হালায় ভাব লয়! ভাইয়ার ক্লাসেই ঢুকতে পারস নাই, আবার কয় কাছের মানুষ!
: কী কইলি? দেখবি? দেখবি? ভাইয়ারে ফোন দিমু? অহন ফোন দিলে অহনই রিসিভ করবো! কিন্তু ব্যস্ত আছে তো, তাই আর ডিস্টার্ব দিলাম না।
: ধুর ব্যাটা হম্মন্দির পো! অফ যা! চাপাগুলা রাইখা দে, পরে কামে লাগবো!
: তোরা ব্যাটা বুঝলি না, বুঝলি না! রতন চিনলি না। বুঝবি, বুঝবি, একদিন আমার লগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়া দেখা করন লাগবো!
(উপরের কথোপকথনগুলো আমার ছোটো ভাইয়ের কাছ থেকে শোনা। ওকে ওরা কেউ চিনতে পারেনি, ও নিজেও বোকাবোকা ভাব ধরে সব শুনে নিয়েছে! ও মিমিক্রিতে মহাওস্তাদ! বাসায় এসে মিমিক্রি করে দেখাচ্ছিল আর আমি শুনে হাসতে-হাসতে শেষ! ভাবছি, বাঙালি জাতিটা এতো বেশি কিউট ক্যান? পুরাই পিউর বিনোদন!)
জীবনের প্রতি চরম হতাশা আর ক্লান্তি থেকে একটা সময় ঠিক করেছিলাম, সুইসাইড করবো। অনেক কষ্ট অনেক কান্না থেকে কয়েকবার চেষ্টাও করেছিলাম। করতে পারিনি ২টা কারণে। এক। কেমন জানি ভয়ভয় লাগছিল। মনে হচ্ছিল, মরে গেলে কী হয়, কী হবে...এইসব। মানে, সাহসের অভাব ছিল। দুই। ভাবছিলাম, আমার জীবনটা তো আমার মায়ের দেয়া। আমি মরে গেলে মা অনেকঅনেক কাঁদবে। মায়ের কষ্টটা কল্পনা করতেই কান্না পাচ্ছিল। (এখন ভাবি, কী ছেলেমানুষি চিন্তা! মরে গেলে কী হবে সেটা নিয়ে ভাববারই দরকার কী! মরে গেলে তো চলেই গেলাম, সব শেষ! হয়তো এতোটা স্বার্থপর হতে পারিনি শেষ পর্যন্ত।)........পরে ভাবলাম, একটু বেঁচে থেকে দেখিই না, কী হয়!
আসলেই স্রেফ বেঁচে থাকলেও অনেককিছু হয়। ঈশ্বর কাউকেই সারাজীবন অসম্মানিত করে রাখেন না।
আমি গত শুক্রবার আর শনিবারে ৩টা সেমিনারে যা যা বলেছি, তার শতকরা ৩০ভাগ প্রথম লিঙ্কটাতে দেয়া আছে। এটাকে বিসিএস প্রস্তুতিকৌশল কিংবা এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে নিতে পারেন। দ্বিতীয় লিঙ্কদুটোতে আমার একটা হ্যান্ডআউট দিয়েছি। এটাকে শুধু অনুপ্রেরণার গল্প হিসেবেই নেবেন। (আমার নষ্ট হয়ে-যাওয়া ফেসবুক আইডি’তে লেখা দুটো ছিল।)
চট্টগ্রামের বন্ধুদের সাথে এরকম একটা আড্ডা হবে আগামী ০১/১১/২০১৪ তারিখ শনিবার বিকেল ৩:০০টায় মুসলিম হলে।
আঁ'ই অনারারে কথা দিয়্যিলাম, চিটাগাংঅর মইদ্দে এইরম্যা এক্কান সেমিনার গইজ্যম৷ আঁ'ই আঁ-র কথা রাখির৷ অনারা বেয়াকগুন আইস্যন৷ হাহাহাহাহা............
পুনশ্চ। রাফিন প্লাজার সেমিনার থেকে আমি যা শিখেছি: শুধু নামিদামি ডেভেলাপার কোম্পানির বানানো বিল্ডিংই মজবুত হয়, এটা ঠিক নয়। রাফিন প্লাজা যথেষ্ট মজবুত! নাহলে অমন জনসমুদ্রের চাপে ওই বিল্ডিংয়ের বেঁচে থাকার কথা ছিল না!