বাঁচবার রাস্তাটা

  
 তুমি আমার চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ করতে বসবার আগেই তোমাকে সম্পূর্ণ দ্ব্যর্থহীন স্বরে দায়িত্ব নিয়েই জানিয়ে দিই, আমার চরিত্র ভালো নয়; অন্তত, চরিত্র কী, তা বুঝবার দৌড়ে তোমার দৌড় যতদূর বলে আমি জেনেছি, ততদূর পর্যন্ত…ভালো নয়।
 তোমাকে কতটা ভালোবাসি কিংবা আদৌ বাসি কি না, তা নিয়ে তুমি অনুসন্ধানে নামবার আগেই জেনে রাখো, তুমিই একমাত্র মানুষ নও, যাকে আমি ভালোবাসি কিংবা ভালোবাসবার চেষ্টা করি, এবং এই সত্যটা তোমাকে ভালোবাসবার ক্ষেত্রে আমার বোধে কোনও বাধার সৃষ্টি কখনও করে না।
 তোমাকে কেন সময় দিই না, তা নিয়ে তোমার সমস্ত অভিযোগ উত্থাপন করবার আগেই তুমি মাথায় রাখো, তোমাকে ভালোবাসাই আমার কাছে সবচাইতে জরুরি কাজ নয়, কেননা এই পৃথিবী এখনও পর্যন্ত, ভালোবাসাকেই সবচাইতে জরুরি বানিয়ে ফেলবার মতো সহজ কোনও জায়গা নয়।
 তুমি বিভিন্নজনের কাছ থেকে আমার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করবার আগেই মগজে ঢুকিয়ে রাখো, তুমিই একমাত্র মানুষটি না-ও হতে পারো, যার সাথে আমি সময় দিই কিংবা যার সাথে সময় কাটালে আমার আজও বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে।
 আমার কবিতায় কার মুখচ্ছবি, সেটা নিয়ে ভাবতে বসবার আগেই তুমি নিশ্চিত হয়ে নাও, আমি কেবলই তোমাকে ভেবে কখনও কিছু লিখিনি, ভবিষ্যতেও তেমন বুদ্ধিমত্তাগত দুর্ঘটনা ঘটবার আশঙ্কা অতিঅল্প।
 আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করবার আগেই তুমি তোমার মনকে কাছে ডেকে বলে দাও, তুমি যা যা ভাবছ, তার প্রত্যেকটিই সত্যি, তার কোনওটিই অমূলক কিছু নয়, অতএব এখানে এলোমেলো বা অসত্য কিছু অনুমান করবার কিছু নেই।
 তোমাকে আমি তোমার মতো করে সারাক্ষণই ভাবি কি ভাবি না, তা ভেবে ভেবে মাথাটা নষ্ট করে ফেলবার আগেই সরাসরি জানিয়ে দিই, না, প্রকৃতপক্ষে, তোমাকে আমি কখনও কখনও মাত্র ভাবি।
 আমি তোমাকে সব সময়ই মিস করি কি না, কিংবা তোমার মুখটা আমার চোখের সামনে প্রতিটি মুহূর্তেই ঠায় লটকে থাকে কি না, তা যদি তোমার জানতে ইচ্ছে করে, তবে জেনে নাও, দুটোর একটাও আমার মধ্যে ঘটে না।
 তোমাকে নিয়ে আমি অনেকদূর পর্যন্ত ভাবি কি ভাবি না, তা জিজ্ঞেস করতে করতে নিজেকে ক্লান্ত করে ফেলবার আগেই শুনে রাখো, তোমাকে নিয়ে আমি বড়োজোর আজকের দিনটা পর্যন্তই ভাবি, এর বেশি নয়; কেননা রাতের ঘুমটা ভাঙতে আর না-ও পারে, এটা মাথায় ধারণ করেই আমি প্রতিরাতে ঘুমাতে যাই।
 আমার ব্যক্তিগত জীবনে তোমার অবাধ প্রবেশাধিকার আছে, এমনটা ভেবে নেবার আগেই অনুগ্রহ করে এখুনিই থেমে যাও, কেননা আমি তোমাকে নিয়ে ওরকম একচ্ছত্র অধিকারে ভুল করেও ভাবি না, আমৃত্যু ভাববও না।
 তুমি যদি আমার পরিচিত কারও সাথে সখ্য গড়ে তুলো কিংবা কাউকে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করো আমার সম্পর্কে খোঁজ রাখতে,---তা যে কারণেই হোক না কেন,...তবে মাথায় রেখো, এটা নিয়ে আমি সত্যিই তেমন পরোয়া করি না।
 কেবল ভালোবাসো বলেই যদি আমাকে যন্ত্রণায় রেখে দেবার সকল অধিকারই কুক্ষিগত করে ফেলবার বিন্দুমাত্রও ইচ্ছে তোমার মনে কখনও এসে থাকে, তবে আমি মিনতি করে বলছি, ওখান থেকে এই মুহূর্তেই সরে আসো, কেননা তোমার ভালোবাসার চাইতে আমার শান্তি-স্বস্তি আমার কাছে অনেক বড়ো কিছু।
 আমি মানুষ হিসেবে ভালো কি মন্দ, তা নিয়ে সংশয়ে ডুবে যাবার আগেই আমি তোমাকে এ-ই বলে নির্ভার করে দিতে চাই যে তোমার চেনা সবচাইতে খারাপ মানুষটির চাইতেও আমি খারাপ, এটা তুমি তোমার ভাবনায় নির্ভাবনায় আটকে রাখতে পারো।
 তুমি যদি বিশ্বাস করে ফেলো,...আজকের প্রেম মানেই সারাজীবনের প্রেম, সুতরাং আমি তোমার সারাজীবনের সম্পত্তি,...তবে নিজেকে একটু ঠান্ডামাথায় বুঝিয়ে বলো, এই পৃথিবীতে কেউই বিক্রয়যোগ্য আলু কিংবা পটল নয় যে কিনে ফেললাম, আর অমনিই পকেটে পুরে রেখে দিলাম এই জন্মের মতো...আর ওরকম কোনও আলুমানব কিংবা পটলমানব থেকেও যদি থাকে পৃথিবীর কোনও-না-কোনও প্রান্তে, তবে আমি সেই অত্যাশ্চর্য মানবসন্তানটি কোনওভাবেই নই!
  
 হ্যাঁ, আমি এরকমই। ভেবো না, এখন সুস্থশরীরে আছি বলেই, এমন উপেক্ষার সুরে কথা বলছি; যদি অমন করে ভাবোই, তবে জেনো, আমার মৃত্যুক্ষণ এসে উপস্থিত হলেও তোমাকে জানতে না দিয়েই হাসতে হাসতে মরে যাবার আস্পর্ধা আমার সত্যিই আছে।
 হ্যাঁ, আমি এরকমই বাজে একজন মানুষ। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো, এর বাইরে আমার আর কোনও পরিচয় কিংবা চেহারা আছে কি নেই, তবে আমি বলব,...নেই, নেই এবং নেই---এমনই ধরে নাও, এবং তা মেনে নিতে না পারলে তুমি আমার কাছে আর কখনও এসো না।
 হ্যাঁ, আমি মরে গেলে তুমি কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে ফেলবে কি ফেলবে না, বেঁচেথাকার সময়টাতে তা নিয়ে ভেবে ভেবে কোনও তৃপ্তি বা অতৃপ্তিতে ভেসে যেতে আমি চাইছি না; বরং চাইছি, যে মুহূর্তে বেঁচে আছি, সে মুহূর্তে যেন তোমার কারণে আমাকে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতে না হয়, কেননা মৃত্যুর পর আর কিছু নেই বলেই আমি বিশ্বাস করি।
  
 কাছে এলেই আজীবন থেকে যেতে হয় না।
 সরে গেলেই আজীবন সরে থাকতে হয় না।
 জীবনের রাস্তা একটাই---যে রাস্তাটা বেঁচেথাকার সময়টাতে ভালো থাকতে দেয়, ভালো রাখতে দেয়।