বাবা এবং আমরা যেভাবে বেঁচে আছি

(লেখাটি প্রায় সাড়ে চার বছর আগে লেখা)

“বাবা, তুই চুল কাটাসনি কেন? চুল তো বড় হয়ে গেছে।”

গত পরশু বিকেলে সিলেট থেকে ফিরে ক্যারিয়ার আড্ডায় যাওয়ার আগে বাবাকে দেখতে কিছুক্ষণের জন্য বাসায় এলে বাবা প্রথমেই এ কথাটা বললেন। বাবা এখন আগের মত কথা বলতে পারেন না। খুব আস্তে-আস্তে একটু-একটু কথা বলেন। বাবা অবশ্য বরাবরই স্বল্পভাষী। স্ট্রোক করার পর এখন কথা আটকে যায়, কথা একটার সাথে আরেকটা মিশিয়ে ফেলেন। পারতপক্ষে তেমন কোন কথাই বলেন না। আমি যখন দূরে ছিলাম, তখন মা বলতেন, “তুই ফোনে তোর বাবার সাথে কথা বল। তোর সাথে কথা বললে উনি একটু খুশি থাকেন মনে হয়।” আমাকে দেখে তো বাবা মহাখুশি! মা’কে বললেন, “মম, বাপ্পিকে কিছু খেতে দাও। ওর মুখটা কেমন যেন শুকিয়ে গেছে।” মা চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। বললেন, “গত দেড় সপ্তাহে স্ট্রোকের পর তোর বাবা এ প্রথম আমাকে নাম ধরে ডাকল।” বাবা নিজে অসুস্থ, সেদিকে খেয়াল নেই। আমি যখন বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে-করতে বাবা কেমন আছেন জিজ্ঞেস করছিলাম, তখন বাবা খুব ক্ষীণ কণ্ঠে আমার খবর জানতে চাইছেন। আমি কোথায় থাকি, কী খাই, অফিসে যাই কিনা, খুলনাতে কবে জয়েন করতে হবে, কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা, আরও কত কী! মুখে সেই পুরনো পরিচিত হাসি। বাবার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকে। কখনো রাগেন না। বাবার সাথে ঠাট্টা করলেও রাগেন না, হেসে তাকিয়ে থাকেন, কখনো-কখনো লাজুক ভঙ্গিতে চোখ নামিয়ে রাখেন।

ইদানীং বাবাকে আমরা ইচ্ছে করেই জিজ্ঞেস করি, “বাবা, কী দিয়ে খেয়েছ? তোমাকে কে কে দেখতে এসেছিল যেন? টিভিতে কী চলছে এখন?” এসব কিছু এবং আরও কিছু। বাবা একটু আগে কী দিয়ে খেলেন ঠিক মনে করতে পারেন না। কে কে দেখতে এল, ভুলে যান। বাবাকে মনে করানোর জন্যই আমরা এটা করছি ইদানীং। এছাড়া কিছু মজাও করি। গত কালকের কথা। মা খাওয়ার টেবিলে বলছিলেন, “আমরা বাপ্পিকে বিয়ে করাবো তো! আমাদের ঘর আলো করে তোমার বউমা আসবে। আমরা একসাথে ঘুরতে যাবো। অনেক মজা হবে।” বাবা, কিছুই বলেন না, মাথা নিচু করে হাসেন শুধু। আমি বললাম, “বাবা, কী বল? বিয়ে করে ফেলব?” বাবা একটু করে চোখ তুলে বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, “কিন্তু বাবা, সুন্দর মেয়ে তো পাচ্ছি না। সুন্দর মেয়েরা সব প্রেম করে বেড়াচ্ছে। সুন্দর মেয়ে ছাড়া বিয়ে করে কী লাভ, বল! বাবা, তুমি ৩৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলে না? আমিও ঠিক একই কাজ করব। বাচ্চা বয়সে বিয়ে করা তো ভাল না। সে হিসেবে আমার হাতে এখনো সময় আছে ৩ বছর। একটু অপেক্ষা করলে সুন্দর মেয়ে পাব। এই যে তুমি অপেক্ষা করে সুন্দর আর ভাল একটা মেয়েকে বিয়ে করেছ না? ওরকম।” বাবা সে কী ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলেন! আমি বললাম, “কী বাবা? মা সুন্দর না?” বাবা লজ্জায় লাল হয়ে বললেন, “হ্যাঁ বাবা, তোর মা এখনো অনেক সুন্দর।” মার চোখ বেয়ে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। পাপ্পুর চোখে হাসির আভা। বেচারা খুব কষ্টে পড়ে গেছে। বাসায় বাজার করা, রান্না করা, মাকে সব কাজে হেল্প করা, বাবা-মা’র ওষুধ কিনে আনা, বাসার সব টুকিটাকি কাজ, নিজের পড়াশোনা, সব কিছুই ওকে করতে হচ্ছে। বাবা সুস্থ থাকতে আমাদের দুই ভাইকে কোনওদিন বাজার করতে হয়নি। খুব কষ্ট হত, তবুও নিজ হাতে সবকিছু করতেন। মা একটু অসুস্থ, তাই বাসায় এসে মাকে ঘরের সব কাজে হেল্প করতেন। বাবাকে কোনদিনও নিজের কোন কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করাতে দেখিনি। এসব কাজ এখন পাপ্পু করে। জীবিকার প্রয়োজনে আমি তো বাসায় থাকতে পারি না। ও-ই সব করে। বেচারার উপর সত্যিই খুব ধকল যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। এরপরেও ওর সবসময়ই হাসিমুখ। এটা বাবার শিক্ষা। ভাল কথা, পাপ্পু বেশ ভাল রাঁধতে জানে! আজকে মা দুষ্টুমি করে বলছিলেন, তোর বৌভাতের সময় পাপ্পু আর বউমাকে রান্নাঘরে ঢুকিয়ে দেবো।

মা-বাবা’র ধারণা, ওরা আমার বউ দেখে যেতে পারবেন না। এটা নিয়েই যত টেনশন। আমাদের পরিবারে টেনশন করার মত একেবারে কিছুই নেই। অসম্ভব রকমের সুখী শান্তিপূর্ণ ছিমছাম আদর্শ পরিবার। এই যে বাবা-মা এত টেনশন করেন, এটাকে আমার বিলাসিতা মনে হয়। টেনশন করার সত্যিই কিছু নেই। কিন্তু এরপরেও কথা থাকে। বয়স হলে সব বাবা-মা’ই বোধহয় ছেলেবউ দেখতে চায়। কিন্তু ওদেরকে কীভাবে বোঝাবো যে বিয়েটা তো আর বিসিএস পরীক্ষা কিংবা আইবিএ’র ভর্তি পরীক্ষা নয় যে দিলাম আর ফার্স্ট হয়ে গেলাম। বিয়ে করা বড় কঠিন কাজ! যদি বলা হয়, বিয়ের পরীক্ষা দেবে নাকি আরও ১০বার বিসিএস পরীক্ষা দেবে, আমি সেকেন্ডটাকেই বেছে নেবো। বাবা-মা’কে মজা করে এসব বলছিলাম আর অমনিই পাপ্পু বলে উঠল, “মা, দাদাকে এসব বলে লাভ নেই। আমরা একটা বউদি এনে ওর হাতে ধরিয়ে দিতে হবে। আর কোন অপশন নেই।” এর মধ্যে আরও একটা মহাসমস্যা যুক্ত হয়েছে। আমাদের কাজের মেয়েটা চলে গেছে, ওর বিয়ে হয়ে যাবে। আধুনিক মানুষের সময় বড় কঠিন সময়। বউ ছাড়াও চলে, কিন্তু বুয়া ছাড়া? কিছুতেই না! যার বাসায় বউ আছে, বুয়া আছে, সে বড় সুখী মানুষ। তার উপর মা অসুস্থ। হন্যে হয়ে বুয়া খুঁজছি, পাচ্ছি না। বিশ্বস্ত কাজের মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। পাপ্পুকেই সব রকমের ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। একেবারেই ছোট্টো একটা পরিবার, কিন্তু মা অনেক কাজ কীভাবে-কীভাবে যেন খুঁজে-খুঁজে কাজ বের করেন। সবকিছু ঝকঝকে তকতকে রাখার চেষ্টা করেন। বাসায় বুকশেলফ ২৪টা, মা প্রায়ই ওগুলোর গ্লাস মোছেন আর আমার কথা বলতে-বলতে চোখ দিয়ে টপটপ জল পড়তে থাকে। ভালকিছু রান্না করলে আমার কথা ভাবেন আর ফোন করে বলেন, “বাবা, খাওয়াদাওয়া করছিস তো ঠিকমতো? তুই বাসায় কবে আসবি?” বাবা আগে বলতেন, এখন আর তেমন কিছুই বলেন না, এখন বাবার বলতে মনে থাকে কম। সবার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকেন। “বাবা, কী খাবে? কী খেতে ইচ্ছে করছে?” এটা জিজ্ঞেস করলে বলেন, “আমার এখন আর কিছুই ইচ্ছে করে না।” ডান হাত আর ডান পায়ে জোর একটু কমে গেছে। তবে আমি বাসায় আসার পর থেকে একটু হাসিখুশি আছেন। ভাবি, “আহা! বাসায় থেকে যেতে পারতাম!” বাবা একেবারে ছেলেমানুষের মত হয়ে গেছেন। যে যা কিছুই বলুক, শুধু হাসেন। একটু আগে কী দিয়ে খেয়েছেন, খুব একটা মনে করতে পারেন না। ছোট্টো শিশুর মতন করে কথা বলেন, নড়াচড়া করেন। বাবার কোনও কালেই কারোর প্রতি কোন অভিযোগ কিংবা কারও কাছে কোনও আবদার ছিল না। এ ব্যাপারটি এখন আরও স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। কাউকে কিছুই বলেন না। প্রায়ই ঘুমিয়ে থাকেন। টিভি দেখলে টিভি দেখতেই থাকেন, আর হাসেন।

বাবা পেশায় আইনজীবী, অনেক বিষয়ে অনেক বেশি পড়াশোনা করেন, পড়াশোনার অভ্যেসটা বাবার কাছ থেকেই পাওয়া। বাবাকে প্রচুর লিখতে হয়। বাবাকে পড়াশোনা কিংবা লেখালেখি ছাড়া কখনোই দেখিনি। এখন উনি পড়তে পারেন না অতটা, লিখতে গেলে অক্ষর মনে আসে না, কিছুক্ষণ লেখার পর মাথা কেমন যেন ধরে আসে। খুব কষ্ট হয় দেখলে। বাবাকে দেখতে আমাদের আত্মীয়স্বজন আর কলিগরা বাসায় আসছেন। বাবা ছিলেন পুরোপুরি আদর্শ সাদা মনের ভালমানুষ, কোনওদিন কারও ক্ষতি করেননি, মানুষের মঙ্গলকামনা করেছেন, কাউকে কোনদিনও ঠকাননি, খুব সহজভাবে জীবনযাপন করেছেন সবসময়ই। (বাবাকে নিয়ে আমি আগেও অনেককিছু লিখেছি। সেসব লেখা জড়ো করা নেই। সেগুলোকে জড়ো করে আবারও লিখব, দেখি।) বাবা কখনো কারও সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন, কিংবা রাগ করেছেন, কিংবা কাউকে কোনওদিন অসম্মান করে কথা বলেছেন, কিংবা কারও সম্পর্কে গীবত করেছেন, এমনটা কখনোই ঘটেনি। অসংখ্য অসহায় লোকের মামলা চালিয়ে নিয়েছেন, বিনে পয়সায় কিংবা কম পয়সায়। কেউ পয়সা নেই, গরীব, এসব কথা বললে বাবা খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলেন। আমাদেরকে বলতেন, “বাবা, মানুষ নিতান্ত অসহায় না হলে সারেন্ডার করে না। এ পৃথিবীতে তুই যা দিবি, তার চাইতে বহুগুণে ফেরত পাবি। এটাই নিয়ম।” এসব শুনলে তখন ভীষণ রাগ হতো, বাবাকে দেখলেই বিরক্ত লাগত। এখন বুঝি, বাবার জীবনদর্শনই সঠিক। প্রায়ই বলেন, “সবসময় মানুষের উপকার করার চেষ্টা করবি। মানুষের ক্ষতি করার সুযোগ দিনে ১০০টা পাবি, কিন্তু উপকার করার সৌভাগ্য হয়তো ১০০ দিনেও ১টা আসবে না।” বাবা-মা’কে ছোটবেলা থেকেই দেখছি, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের উপকার করতে, সুবুদ্ধি দিতে। আমি জানি, বাবা অনেক-অনেক মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে আছেন। অনেককেই বলতে শুনেছি, “তোমার বাবা জীবনে কোনও দিনই কষ্ট পাননি, কোনও দিন পাবেনও না।” সত্যিই আমরা অনেক ভাল আছি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। মানুষের ভালোবাসার শক্তি অনেক-অনেক বেশি। জীবনে এটা পেলে আর কিছু লাগে না। কলিগরা বাবাকে দেখতে এসে আবেগে কেঁদে ফেলেন। আমাকে, পাপ্পুকে আর মাকে বলেন, “উনার মতন ভাল মানুষের সান্নিধ্য পেতে ভাগ্য লাগে। খুব ভাল মনের সহজ একজন মানুষ। অনেক মামলা ফিরিয়ে দিয়েছেন, যেগুলোতে উনি লড়লে কারও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এমনটা দেখা যায় না, বাবা।” এসব শুনলে মনে হয়, পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেন নেমে এসেছে আমাদের ঘরে। একজন মানুষের জীবনে এর চাইতে বড় সাফল্য আর কী-ই বা হতে পারে? লোকের ক্ষতি করে হয়তো দুই পয়সা বেশি আয় করা যায়, তবে ওইটুকু পয়সা না হলেও জীবন খুব সুন্দরভাবে কেটে যায়। পরিবারের আর সমাজের সামনে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারাটা অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার।

বাবার স্ট্রোক ধরা পড়ে ৭ এপ্রিল ২০১৫। মা আর পাপ্পু দেখে, বাবা শুধু ঘুমিয়ে থাকছেন, কথা বলতে পারছেন না, কোনও কাজই নিজে করতে পারছেন না। মা আর পাপ্পু ভাবল, বাবার বুঝি প্রেশার বেড়ে গেছে। সাথে-সাথে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। উনি বললেন, তখুনি ক্লিনিকে ভর্তি করাতে। পরে চেকআপে দেখা গেল, মাইল্ড স্ট্রোক। ডাক্তারের ধারণা, বাবার স্ট্রোক হয়েছে ৬ এপ্রিল। বাবা সবসময়ই রোগ লুকিয়ে রাখেন। কখনোই কাউকে কিছু বলেন না, এমনকি মাকেও না। খুবই ভীতু স্বভাবের মানুষ, ডাক্তারকে খুব ভয় করেন। পারতপক্ষে কখনোই ডাক্তারের কাছে যান না। এমনকি জোর করেও নিয়ে যাওয়া যায় না। আগের দিন শরীর খারাপ লাগছিল কিন্তু বাসার সবাইকে বলছিলেন, প্রেশারটা একটু বেড়ে গেছে, আর কিছু না। এমনকি কোর্টেও গেছেন, কাজ করেছেন। তখন সাথে-সাথে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারলে ব্রেইনে আঘাত পেতেন একেবারেই অল্প। এখন ভাবি, বাসায় একজন ডাক্তার থাকলে বড় ভাল হতো। বাবা এখন আগের চাইতে কিছুটা ভাল। তবে এখনো কোর্টে যাওয়ার মত ভাল হননি। বাবা বড্ডো কাজপাগল মানুষ, বাসায় বসে থাকাটা বাবার জন্য সহজ নয়। বাসায় সবাই বাবাকে দেখতে আসছে। কাউকে দেখলে বাবা কী যে শান্তভাবে হাসেন! সে হাসির তুলনা হয় না। সে হাসির জন্য সব কিছু করা যায়। গতকাল দেখলাম বাবার পা থেকে কিছু জায়গা দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বাবা বলছেন, “আমাকে পিঁপড়া কামড় দিয়েছে। তেমন কিছু না।” অথচ সেরকম কোনও কিছুই নয়। বাবা চাইছেন, বাবাকে নিয়ে যাতে আমরা কোনও দুশ্চিন্তাই না করি। ডাক্তারের সাথে পাপ্পু ফোনে কথা বলল। ডাক্তারের ধারণা, ডায়বেটিস থেকে এ ব্যাপারটা ঘটে থাকতে পারে, ওসব জায়গায় আপাতত ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে রাখতে। আজকে সন্ধ্যায় আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। উনার নাম এহসানুল করিম, মেডিসিন স্পেশালিস্ট। বড্ড ভালমানুষ, হাসিখুশি। আমাদের ফ্যামিলি ডাক্তার বলা চলে। উনার সাথে কথা বললে রোগী অর্ধেক ভাল হয়ে যাবে। আরও একজন ডাক্তার দেখাচ্ছি। হাসানুজ্জামান, নিউরোমেডিসিন স্পেশালিস্ট। আজকে উনার কাছেও যাবো। কথা বলব, দেশের বাইরে নিতে হলে সেটাই করব। একটু আগে মা বললেন, বাবা বোধহয় আরও কিছু সমস্যা লুকিয়ে রাখছেন। কাউকেই বলছেন না উনার ভেতরে কী ঘটছে। আমাদের না বললে আমরা জানব কী করে? উফফ! বাবাটা এমন কেন? শুধু লুকিয়ে রাখেন! খুব রাগ হয়!

বাবার সাথে কথা বলতে বাবার রুমে গেলাম। বাবা রুমে নেই, ব্যালকনিতে। একটা মোড়ায় বসে বসে গ্রীষ্মের এই রাগী দুপুরে নিচের রাস্তা ধরে টুংটাং শব্দ করতে-করতে চলে-যাওয়া কিছু সাইকেল আর রিকশার দিকে তাকিয়ে-তাকিয়ে আনমনে হাসছেন। সে হাসিতে কোনও অভিযোগ নেই, কোনও চাওয়া নেই, কোনও কোলাহল নেই, কোনও ভাবনা নেই, এমনকি কোনও রহস্যও নেই। সে হাসি একজন সহজ মানুষের হাসি। চোখে জল এসে গেল, বাবাকে কিছুই না বলে চলে এলাম। এমন মানুষের সাথে রাগ করা যায় নাকি!

শেষকথা। আমি কখনোই আমার কোন ব্যক্তিগত কষ্টের কথা ফেসবুকে লিখি না। লিখে লাভ নেই। প্রত্যেকেই ধরে নেয়, অন্যরা ওর চাইতে ভাল আছে। ও-ই পৃথিবীর সবচাইতে দুঃখী মানুষ। অতএব, নিজের কষ্টের সচিত্র বিজ্ঞাপন করাটাই কর্তব্য। ফেসবুকে কেউ অন্যের কষ্টের গল্প শুনতে আসে না। মুখে যা-ই বলুক না কেন, মনে-মনে আসলে কেউ কারও কষ্ট নিয়ে ভাবে না। তবে এই প্রথমবার নিজের কষ্ট নিয়ে লিখলাম; লিখতে খুব ইচ্ছে হল, তাই। বিরক্ত হয়ে থাকলে আমার পাঠকরা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।