বিগত সকালে চোখ রেখে

 এক।
ভাল লেগেছিল। ভাললাগা বেড়েছিল। ভালোবাসা এসেছিল।
সব শুরু তো এমনই হয়, তাই না, বলো?
আমার এ শরীর যদি প্রদীপ হতো
তোমার বেদীর পাশে,
পুড়িয়ে নিজেকে আলো যে দিতেম
তোমায় ভালোবেসে।
 
শুনছ কি এ স্বর?
আজ নৈঃশব্দ্য ঘুমিয়ে গেছে।
নিঃসঙ্গতা? পালিয়েছে সেও!
নেই কোনও দুঃখ কিবা অশ্রুগাথা......
তুমি আছো তাই!
বুঝলে নাতো?
এই যে দেখছ পাঁজরসারি--তোমারই বসত,
কতো যে কথা একলা মুখে...
একলা কোথায়? তুমি আছো যে!
এ শ্বাসের সাগর আমার নাকি?
তোমার সেও!
সবই তো নিলে! তবু আমায় কেন নিলে নাগো?
 
আগুনের ওরা নাম দিয়েছে শান্ত আকাশ!
ওই ঊর্ধ্বসমুদ্রের নীল স্রোতটাকে ছুঁয়ে দেখো,
এ মনের গভীরে ডুবে দহনের ঘর ঘুরে এসো,
ওরা যা-ই বলে বলুক না......
আমি বলি,
আদিমতার আধুনিক নাম প্রেম,
বাসনার পোশাকি নাম প্রেম,
ওষ্ঠের অমৃতের নাম প্রেম,
তোমার আমার মিলনের নাম প্রেম।
 
আজ চৈত্রশেষেও চিরফাগুনের দোলা,
জাগে হৃদয়ে অনুভূতির উদ্বেল স্রোত,
থেকেথেকে আজ ক্ষুব্ধ শিরায় প্রলয়ের ঢেউ ওঠে,
যত কলি ছিল, ফুটে ওরা সব লালফুল হয়ে গেছে,
তোমারই জন্য!
 
তোমার একটু কষ্ট হলেই এ বুকে এসে ভীষণ লাগে,
বুকের ভেতর স্থির হয়ে আছো যখন থেকে,
তখন থেকেই পাঁজরগুলি কাঙাল বড়ো!
ওরা যে তোমার ডাক পেতে চায়,
আর মৌন হয়ে থেকো নাগো,
জাগিয়ে আমায় ডাক দিয়ে যাও,
মৃত্যু খুঁড়ে উঠে এসো,
এই উঠোনে, এই জোছনায়
এমন রাতে।
 
দুই।
মাঝেমাঝে, এক সকালে, বহুকাল আগে হারিয়ে-যাওয়া সকাল যত,
জটলা পাকায় মাথার কাছে....
যারা গত হয়েছে কতকত আগে
কিংবা হারিয়ে গেছে এইতো সেদিন...
হারায় না কিছু, সব ফিরে আসে!
 
ওরা কাছে এলে বড় ভাল লাগে,
ওদের সাথে গল্প করি,
কি অভিমানে কিংবা রাগে গালফোলানো অতীত কোনও আসে যদি ফিরে,
শুধাই হেসে, এই, কীরে? তারপর বল, আছিস কেমন? সেই রাগটা কি তোর এখনও তাজা?
ও বলে না কিছুই, কেবলই হাসে।
 
প্রবল ঝড়ে যে সকালে এলোমেলো সব,
সে সকাল আজ এসেছে ফিরে--কী শান্ত হয়ে...যায় না চেনাই!
খুব কষ্টে ভীষণ কেঁদে কেটেছে যে সকাল,
সে ফিরে এসে হাসির ঝলকে আমায় জানায়, ভাল আছি বেশ!
এক পুরনো দিনের সকাল দেখি চুপ হয়ে আছে শুভ্র শিশিরে, আগের মতই!
আরেক সকাল বলে না কিছুই--চুপ করে শুধু তাকিয়েই থাকে
বিষণ্ণ দুচোখ অবিরাম কী কথা বলে যায়......
শব্দ শুনতে কান লাগে, নৈঃশব্দ্য শুনতে হৃদয় লাগে,
আমার সমস্ত শ্রবণশক্তিকে এইবেলা তাই ছুটি দিয়ে দিই।
 
সকাল আসে, সকাল যায়....
কিছু সময় থেকে ওরাও তো যায় ফিরে,
তবু ওরা কখনও ‘নেই’ হয় নাকো,
বরাবরই ওরা রয়ে যায় কোনও অবচেতনের কোণে,
ফিরে আসে ঠিক ডাকলে অধীর মনে।
 
আচ্ছা, ওরা কেন থেকে যায়?
ওদের যাওয়ার কোনও জায়গা কি নেই?
সত্যি ওরা রয়ে যায় কি?
এমনি করে......দুপুর তাতায়, পিছলে বিকেল সন্ধে নামে,
ওই পথে শোয় রাতের ছায়া।
 
তিন।
জানি না কেন নিয়েছ ভেবেই
আমার চাওয়া একটু বেশিই!
কত চাওয়া যে আড়ালে তোমার
হয় নিমিষেই অকালে বাসি!
খোঁজ রাখো নাতো!
একটি চাওয়াই শুধু থেকে যায়,
এ হৃদয়ে বৃষ্টি ছুঁলেই,
হৃদয় বলে, তোমায় ভেজাই!
 
এই বোকাটা! ভয় পেয়ো না!
সে বর্ষা আসে নাকো,
ওর হয়ত আসতেই নেই!
বারোমাসি যে বর্ষা মনের, তারই লোনা বৃষ্টিতে
রোজরোজই ভেজাই তোমায় প্রাণের মনের দৃষ্টিতে!
 
চার।
দ্বৈত বলে,
চারপাশে দেখ!
এ জীবনে
এতএত সুখ
জড়িয়ে আছে
নিবিড় মায়ায়,
তবু কেন আরো সুখের খুঁজে
হন্যে হয়ে অমন ছুটিস?
তোকে যে কখনও রাখে না ভুলে বিন্দুতেও,
তাকেই কেন সিন্ধু দিয়ে বৃথাই কাঁদিস?
 
বলি তবে, শোন,
সাধে কি আর হয় রে ছোটা?
সুখেরই কেবল নেইকো ফাঁকি,
সুখের জলটা ঝারতে গিয়ে
অন্য সুখে স্নানটা সারি!
 
সুখের জলটা নীল যখনই,
লালটাকে যাই বেমালুম ভুলে,
ডুবলে হলুদে
সবুজ ভুলি।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ি,
বাহবা ঝাড়ি--
দেখলি, কেমন কালোর জলে
হারিয়ে দিলেম সফেদ সাদা!
এমনি করেই, চলতে থাকে....
 
নইলে বলো, আমার জন্য
রেখেছ যে মরু--রুক্ষ ভীষণ, শুষ্ক দারুণ,
সেখানটাতেও কেমন করে বেঁচে আছি!
 
পাঁচ।
ও হ্যাঁ, শোনো!
এই সুখ কিন্তু
নয় কোনও সুখ!
এই সুখের মুখোশ সরিয়ে দেখো,
কষ্ট পাবে!
‘কষ্ট’ নামে ডাকলে ওকে
জীবন বড় একঘেয়ে হয়,
তাইতো ওকে নতুন নামে
‘সুখ’ বলে ডাকি!
 
শুনেছি, মগজে নাকি
মিথ্যে করে হাসলে পরেও সাড়া মেলে!
তাইতো আমি ‘কষ্ট’টাকে ‘সুখ’ করে দিই,
আশায় থাকি,
যদিবা হেলে
কষ্টগুলো হেসে ফেলে
কখনোবা মনের ভুলে......
সুখের হাসি!
 
ছয়।
অনিচ্ছেতেও
দিয়ো নাতো আর ওসব মিছেই,
মিথ্যে ইমোয় জীবন কাটে....সত্যি বলছি, ভাল লাগে না।
বলো না দায়ে শুভ সকাল, দুপুর বা রাত....
এই......রাখো! তোমার আবার দায়টা কীসের?
বুঝি নাতো!
ভালোবাসে যে, দায় তো তারই! তোমার কেন?
 
তুমি তো জানোই
কত মিথ্যে ওরা!
বোকা হলেও আমিও জানি।
যদি তুমি দাও মিথ্যে আবেগ--অ্যান্ড্রয়েডে,
কোনও ভুল ক্ষণে ভেবে বসে থাকি,
সত্য ওরা!
তবু তো জানি,
কত সচেতনভাবে প্রতি মুহূর্তেই মিথ্যে ওরা!
 
কোরো না খরচ, শব্দ জমাও!
শব্দরা খুব দামি, জানো তো?
মিথ্যে ওদের দিয়ো না ছুঁড়ে
আমার দিকে! কেন বারেবারে মনে করাও
তোমার বলার নেই যে কিছুই!
কোনোকালে ছিলও না, জানি।
আর থাকতেই বা হবে কেন?
তাই না, বলো?
......এবার তো খুশি?
 
এখন জানি, জানতাম আগেও!
তবু ভেতরের যত অনুভূতি সব--বেহায়া খুবই!
ওই ধ্রুব সত্যই
নিজের করে সুবিধেমত
মিথ্যে বোধে গিলত হেসে,
কী যে খুশি! বেকুবের দল!
পৃথিবীটা সত্যি আজব!