বিষাদের গায়েও জ্যোৎস্না পড়ে

 
তুমি এমন কেন গো?
মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি তোমায় চিনি।
আর মাঝে মাঝে তোমায় এত যে অচেনা লাগে…
তখন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়।


তখন তোমায় নানান নাম দিয়ে ডাকি। আমার ভালো লাগে ডাকতে।
তোমায় ভুচু ভুচু ডাকি।
তোমায় ভাবলে ভুচুইয়া ভুচুইয়া লাগে,
মুরং-এ-আজম লাগে।
আর ভ্যানিলা-আইসক্রিম লাগে,
পাগলাবাবাই লাগে,
কুটুসকাটুস, টুকুসটাকুস, পুটুসপাটুস লাগে।
আর…আমার নরম কোলবালিশটা লাগে…


কখনও কখনও, আমার জন্মজন্মান্তরের সাথী লাগে,
লুডোখেলার সখি লাগে।
মনে হয়, বৃষ্টিতে ভেজার মজাটা তুমিই!
শীতের মখমলের চাদরটাও তুমি!
গরমে ঠান্ডাজলের ঝাপটায় তুমিই থাকো।
হঠাৎ জেগেওঠা একাকিত্বে তুমি থেকেই যাচ্ছ নিঃশব্দে।
আমার আত্মভোলা মানুষটা তুমি।
জটিলমনের ভ্রুকুটিও তুমি।
আমার হারানো প্রিয় কোনও তীব্রতা তুমি।
আরও অনেক কিছু…বলতে গেলে কয়েকটা রাত পেরিয়ে যাবে।


আমি তোমাকে অনেক জ্বালাই, তাই না?
সত্যি করে বলবে…আমায় দেখলে তোমার অসহ্য লাগে?
ও…আর একটা কথা।
আমার শেষপাতে চেটে-খাওয়া আঙুলটাও তুমিই!
তুমি আমার অনেক কিছুই, আবার যেন…


জানো প্রিয়, তোমার বাসার দখিনদিকের দুটো জানালার প্রথমটা
আমার বাসার ছাদ থেকে দেখা যায়।
আমার ইচ্ছে হয়, আমি অদৃশ্য হয়ে একছুটে তোমার জানালার ধারে উড়ে যাই!
গিয়ে তোমার রুমে ঢুকি, তার পর এক জায়গায় চুপটি করে বসে তোমায় দেখি।
তোমায় দেখার চেয়ে জরুরি কাজ আর হয় না। ইচ্ছে করে,
যখন তুমি শুয়ে পড়বে, তখন ধীরে ধীরে তোমার পাশে গিয়ে বসে থাকি!
তুমি ঘুমিয়ে পড়ার পর তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই…
তোমার ভোঁতাচেহারার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি।


তুমি অনেকদিন বাঁচবে, আমার জাদুসোনা…
তা না হলে আমার প্রিয় খুনসুটিগুলো কার সাথে হবে?
আমার বারবার ‘শুভ…সকাল দুপুর বিকেল সন্ধে রাত্রি’ এইসব বলাটা কার সাথে হবে?
আমার…
যা-ই হোক…ভালো থেকো।
বাঁচতে হলে আমার একটা মানুষ লাগবে গো, যাকে আমি প্রায়ই বলব…ভালো থেকো!


তুমি আমায় কখনও তোমার মৃত্যু নিয়ে বোলো না!
তোমার মুখে ওসব শুনলে আমার খুব কষ্ট হয়! বুকটা অবিরত কাঁপতে থাকে!
এই পৃথিবীতে আমাদের জন্যে কিছু নিশ্চিত হোক না হোক,
মৃত্যুটা নিশ্চয়ই হবে! আমি জানি এটা। তবু,
এটা তো জপ করবার মতো কিছু নয়…
আমার এমন কথা শুনতে ভালো লাগে না।
বেঁচে তো আছিই যতক্ষণ প্রাণ আছে। ততক্ষণ নাহয় জীবন নিয়েই থাকি!
বুঝলে মশাই?…পচামানুষ একটা!


তোমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে খুব ইচ্ছে করছে…এমনিই!
পারলে একবার দিয়ো তো ধরতে…
জানি, তোমায় ছোঁয়া বারণ…তবুও…
নিজের ইচ্ছায় কখনও…দিয়ো, কেমন?
তোমার কাছে আমার এসব কথা খুব হালকা লাগে, তাই না?


জীবনের এটাই নিয়ম। তুমি যাকে খুব করে ভালোবাসবে,
তার বেলায় তোমার ভাবনা ও নিজেকে প্রকাশের ধরনটা অন্যরকম হবে।
কীরকম, তা তুমিও জানো, আমিও জানি। কাজেই, বাদ দাও!
ভালো থেকো, আমার পুচকুটা!…আচ্ছা, বলা হয়নি, তোমায় আমি আদর করে এটাও ডাকি…পুচকু!
কোথাকার কী পাগল একটা!


আমার তোমায় জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে, আসলে ঠিক জড়িয়ে ধরতে নয়, হাগ করতে!
তোমার গায়ে শার্ট গেঞ্জি কিচ্ছু থাকবে না, তবে ইয়ে মানে, প্যান্টটা থাকুক!
আমি তোমার শরীরের ঘ্রাণটা নেব…এমন-কী, ব্যাকটেরিয়াজনিত ঘামের গন্ধটিও!


তোমায় বলেছিলাম, ওসব ঘপাঘপ নিয়ে কোনও কথা হবে না।
আজ কী যে হচ্ছে…আমার না ওই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে!
বলতে পারব? বললে মার খাব?
ভুলভাল কিছু বললে চটে যাবে না তো?


আহা, দিনের শেষে এইসব কল্পনাই তো আমায় বাঁচিয়ে রাখে!