বেলাক্ষয়ের লেটার-বক্স / দ্বিতীয় অংশ

 চিঠি-৬
----------------------
শুভ নববর্ষ, আমার পৃথিবী! ৯ তারিখ লিখেছিলাম, আর আজকে লিখছি ১৪ তারিখ। মাঝখানে লিখিনি। তুমি পছন্দ করো না, তাই।


জানো, আজ না তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে! খুব, খুব, খুব। কিন্তু আমার কপালে তো এত কিছু লেখা নেই যে আপনাকে দেখতে পাব। আপনি সারাজীবন শুধু আমার বেলায় কঠোর থেকেছেন কেন? এটার উত্তর আমার কাছে দিতে হবে না। নিজের বিবেকের কাছে উত্তরটা দিয়েন। খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে তোমাকে সামনে বসিয়ে রেখে। তুমি চাইলে আমার সাথে কান্না করতে পারো। আবার না-ও পারো। সবই তোমার ইচ্ছা। তোমার ইচ্ছার বাইরে কিছুই যে হয় না, সেটা তো বুঝি। দেখো না, তুমি চাইছ তোমার ইনবক্সে আমি কিছু লিখে না পাঠাই, নিজের ওয়ালে পোস্ট দিই, তাই আর আসি না তোমার ইনবক্সে। আমার ভালোবাসা বাকিদের তুলনায় ব্যতিক্রম। বাকিদের সাথে ভুল করেও আমাকে মিলাবে না। তোমার কাছে হাতজোড় করে রিকোয়েস্ট থাকল। ভালো আমাকে না-ই বাসতে পারো, কিন্তু আমার ভালোবাসাটাকে সস্তা ভেবো না। বাকিরা কে কী, তা দিয়ে আমার কিছুই করার নেই। আমি আমার ভালোবাসার কথাই জানি।


কেন এ কথাটা বললাম, বলি। কেউ ভালোবেসেছে তোমাকে পাওয়ার জন্য, কেউবা বিয়ের জন্য, কেউবা প্রেম করার জন্য, কেউবা শুধুই তোমার পাত্তা পাওয়ার জন্য, আর কেউবা তোমাকে ভালোবেসেই সুখী। আমি শুধুই ভালোবাসতে চেয়েছি, বিনিময়ে তোমার কাছ থেকে কোনও চাওয়া বা পাওয়ার আশা ছিল না। সত্যিই না। আমি কখনও তোমাকে প্রেমিক হিসেবে, জামাই হিসেবে চাইনি। মন থেকেই বলছি, চাইনি। সত্যিই চাইনি। আমি সব সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে একটা দোয়াই করেছি, আর সেটা হচ্ছে, তুমি যাকে চাও, তুমি যেন তাকেই পাও। আর যেসব চাওয়া-পাওয়া আছে, তোমার স্রষ্টা যেন সব দিয়ে দেন তোমাকে। ভুল করেও কখনও তোমাকে চেয়ে বসিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে। আমার ভালোবাসা মানে এটা না, তোমাকে বন্দি করে ফেলা। আমার ভালোবাসার মানেই হচ্ছে, আগে তোমার চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা।


আমার সাথে যদি তোমার বিয়ে হতো, তবে কী হতো, বলো তো? ঝগড়া হতো মাঝে মাঝে। ঝগড়া ছাড়া কোনও সম্পর্ক কেমন জানি! আমার তো মনে হয় যেখানে ঝগড়া নেই, সেখানে কোনও সম্পর্কই নেই। সেখানে শুধু অভিনয় আর অভিনয়। মা, দাদিদের বলতে শুনেছি, রান্নাঘরে যখন বাসনপত্র থাকে, তখন একটা আর একটার সাথে একসময় না একসময় ধাক্কা খাবেই। এটাই নিয়ম। তবে তোমার সাথে ঝগড়া হলে আমি ৭/৮ দিনের বেশি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারতাম না। আর তুমি তো জানো, আমার বিচারের জায়গা ও ভালোবাসার জায়গা, দুইটাই তুমি। তোমার সাথে বিয়ে হলে আর কী কী হতো, এইসব এখন ভাবি। অথচ এতদিন কিছুই ভাবিনি। এতদিন চেয়ে এসেছি, তুমি যাকে নিয়ে থাকতে চাও, তাকেই যেন পাও। আজ খুব ইচ্ছে করে, তোমাকে সাহস করে কল্পনায় আনি। আমার মেয়ের বাবা হিসেবে কল্পনা করি। তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসি, একদমই মনের কাছে। তোমাকে পাওয়া মানেই আমার পুরো পৃথিবীটাকে আমার করে পেয়ে যাওয়া। সত্যিই আর কিছু লাগে, যদি তোমাকে পাওয়া হয়ে যায়?


একটা বিষয় কী দেখো, শাহরুখ খান আজকে যে পজিশনে এসেছেন বা যে নামডাক ওঁর, এটা ওঁর একার পক্ষে কখনওই সম্ভব হতো না যদি না ওঁর বউ গৌরী খান ওঁর পাশে না থাকতেন। পাশে গৌরী আছে বলেই তিনি শাহরুখ খান। এটা সবাই মানে আর বিশ্বাস করে। গৌরীর মতো মেয়ে হওয়া আসলেই কঠিন। যখন বিয়ে করেছেন, তখন শাহরুখের তেমন কোনও কিছুই ছিল না, গৌরী পাশে থেকে কীভাবে সহযোগিতা করেছেন, সেটা বলার বাইরে। কাজল আর শাহরুখ খান খুব ভালো বন্ধু। কিছুদিন আগে শুনলাম, কাজলও নাকি শাহরুখকে বিয়ে করার জন্য পাগল ছিলেন, না কী যেন! অথচ গৌরীকে দেখে অবাক হই, খুব সুন্দরভাবেই কাজল আর শাহরুখের বন্ধুত্ব মেনে নিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে এইরকম হলে জামাইকে ওই মেয়ে পিটাতে পিটাতে বা খোঁচা দিতে দিতে জান বের করে ফেলত!


এর মানে আমি বলছি না, জামাইয়ের সকল অনৈতিক কারবার মেনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু একটা জিনিস কী জানো, যাকে পাগলের মতো ভালোবাসা যায়, তার সুখের জন্য, তার মুখের হাসির জন্য অনেক কিছুই ছাড় দিতে হয়। আবার এটাও ঠিক, প্রিয় মানুষকে অন্য কারও সাথে ভাগাভাগি করা যায় না। যদি বিয়ে করি, ভবিষ্যতে আমার জামাইকেও যদি দেখি কখনও, আমার পর তার অন্য কাউকে ভালো লেগেছে বা ভালোবেসে ফেলেছে, তবে আমি একটা সময় পর গিয়ে নিজেকে সরিয়ে নিব চিরদিনের জন্য। তুমি তো জানোই, নিজেকে সরিয়ে নিতে আমি জানি। আমার কথা হচ্ছে, যে ভালোবাসবে আমাকে, সে আমার সবটা নিয়েই বাসবে---ভালো ও খারাপ, দুইটাকেই। ব্যক্তি আমি যেমন শতভাগ ভালো না, তেমনি কেউই শতভাগ ভালো না। অতএব, এত কথা কীসের? যে আমাকে সত্যিই ভালোবাসে, সে আমার পাশে শেষদিন পর্যন্ত থেকেই যাবে, এটাই আমার মনে হয়। না থাকলেও আমার আফসোস নেই। কারণ আমি অনেক কিছুই হজম করে ফেলি। আর কষ্ট তো পান্তাভাত আমার জন্য।


জানো, একটা ঘটনা তোমাকে বলি। বলতে চাইনি, তবুও বলছি তোমার প্রতি আমার টান কেমন সেটা বোঝানোর জন্য। যে মানুষটাকে তুমি আমার ব্যাপারে সন্দেহ করো, ওই মানুষটার সাথে যেদিন দেখা হয়েছিল, সেদিনের একটা কথা বলি। আমি তোমাকে কিন্তু আগেই বলেছি ওঁর সাথে আমার দেখা হবার কথা। তোমার মনে নেই। কিন্তু আমি তোমাকে বলেছিলাম অনেক আগেই। তো যেদিন দেখা হয় গুলশানে, সেদিন না বারবার আমার মন তোমাকে খুঁজছিল। কেন, জানি না। আমার হাতে মোবাইলের দিকে আমি চেয়ে ছিলাম আর তোমাকে মেসেজ করতে চাইছিলাম। বলতে চাইছিলাম, আমি বাইরে বের হয়েছি, আমি কি একজনের সাথে দেখা করতে পারি? এই জিনিসটা আমার মাথায় ঘুরছিল, আর রেস্টুরেন্টে বসে আমি শুধু দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তুমি বিশ্বাস করবে কি না জানি না। কী পরিমাণে যে ছটফট করেছি, এটা বলে বোঝানো যাবে না। আমার উপরে মনে হয়, তখন কেউ ভর করেছে। আর সেটা তুমিই। সিরিয়াসলি বলছি। তোমাকে আমি আগে বলিনি। তোমার তো আমার কথা শোনারই সময় হয় না। কী করে বলব!


তিনি কী করলেন, তাঁর মোবাইলটা আমার সামনে রেখে কাউন্টারে গেলেন, খাবারের অর্ডার দিলেন। উনি সেখানে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি একা বসে ছিলাম। উনি নিজের মোবাইল আমার সামনে রেখে গেছেন, যেন আমি এটা ভুল করেও না বুঝি যে উনি কারও সাথে কথা বলার জন্য উঠে গেছেন। আর বাস্তবেও তা-ই, কারণ ওঁর ফোন আমার সামনে ছিল, তা হলে কথা বলবেনই-বা কী করে! বিশ্বাস করো, আমি একবার ডানে, একবার বামে তাকাচ্ছিলাম, আর একবার জানালা দিয়ে নিচের রাস্তায়। তুমি সেই রেস্টুরেন্টে একবার গিয়েছিলে, আমি ফেসবুকে দেখেছি। তুমি যে টেবিলটায় বসেছিলে, ঠিক সেই টেবিলটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। আমার শুধু বারবার মনে হচ্ছিল, একটাবার শুধু তোমাকে জানাই। কিন্তু সাথে সাথেই আমার এটাও মনে হয়েছে, আমি তোমাকে জানালে আবার তুমিই বলবে, ফোন দিলে কেন? তুমি কী করবে কী করবে না, সেটা আমাকে জানাও কেন? আমি কী করব?...ওইদিন ওইখানে বসেই আমি তোমার মেসেঞ্জারের ইনবক্স পর্যন্ত গিয়েও আর কিছুই বলতে পারিনি।


আসলে তোমার আর আমার ভেতর কিছুই নেই। কমিটমেন্টও নেই। যা ভালোবাসা ছিল, তা একতরফা, তা-ও আমি তোমাকে জানাতে চেয়েছি। আবার ভাবলাম, তুমি বকা দিয়ে যদি বলেই বসো, আমাকে বিরক্ত করবে না।…তাই আর বলা হয়নি। আর দেখো, মানুষটার সাথে শুধু দেখা হয়েছে। তেমন কিছু তো না। খুব সিম্পল একটা বিষয়। অথচ এটাই আমার কাছে তখন খুব খারাপ লেগেছে, তখন তোমাকে কেন না জানিয়ে গেলাম, সেজন্য। সেদিন রাতেই উনি বাসায় যাওয়ার পর আমি নক করে বললাম, দেখুন, একটা কথা বলি। ছেলেদের সাথে ঘুরি বা দেখা করি সবার সাথে, এই রকম মেয়ে কিন্তু আমি না। আমি একজনকে তীব্রভাবে ভালোবাসি, শুধু ওঁর সাথেই দেখা করি। যদিও মানুষটার সাথে আমার দেখাই হয় না অনেক বছর হবে। আর আমি ঢাকায় ঘুরতে বের হই কাজিনদের সাথে। উনি তখন বললেন, তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়, তুমি যে ঘুরতে যাও না ছেলেদের সাথে। আমি তোমাকে দেখেই বুঝেছি, তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে। আর তোমাকে রেখে আমি ১৫ মিনিটের জন্য এই কারণে চলে গিয়েছিলাম, তুমি একটু ইজি হও, সেই কারণে। আমি বুঝতে পেরেছি তোমাকে দেখেই যে, তুমি দেখা করো না বা ঘুরতে যাও না কারও সাথে। ওঁর ব্যবহার আসলেই অনেক ভালো। উনি আমাকে নিয়ে একটা মন্তব্য করেছেন একদিন। উনি বলেছেন, তুমি অনেক বেশি ভালো। আর এত বেশি ভালোদের কিন্তু কষ্ট অনেক। তুমি এত ভালো কেন! একটু কম ভালো হও।…জানো, ওঁর এই কথা শুনে আমি শুধুই হেসেছিলাম। কী বলব! বলার তো কিছুই নেই। আমি জানি, আমি অনেক খারাপ মানুষ, লোকে কেন যে ভালো বলে, জানি না!


আজ না তোমাকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছিল। অনেকক্ষণ কেঁদেছি নামাজে বসে। এই শেষমুহূর্তে এসে আমি কেন নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি নিজের উপর, বুঝতে পারছি না! আগে আমি অনেক কিছুই বুঝতাম না। জানো, এখন না বাবা মারা যাওয়ার পর একটা জিনিস খুব করে বুঝে গেছি, আর সেটা হচ্ছে, ‘বাপ-মরা মেয়েদের খুব একটা শখ, আহ্লাদ থাকতে নেই। কোনও চাওয়া-পাওয়াও থাকতে নেই। যেদিন থেকে এরা বাবা ছাড়া এতিম হয়ে যায়, সেদিন থেকেই এদের বুঝ হয়ে যায় অনেক কিছুর।’ আমি অনেকের কাছ থেকে দূরে সরে এসেছি। অনেকে বুঝতে পারেনি। আমি সবার কাছ থেকেই দূরে সরে যাচ্ছি। ভালো লাগছে আমার দূরে থাকতে। শেষবেলায় এসে তুমি এত বড়ো রকমের ভুল বুঝলে, এটা ভাবলে আমার এখন আরও বেশি করে বিশ্বাস হয় যে এই দুনিয়ায় বাবা যাওয়ার সাথে সাথে আমার সব সুখ চলে গেছে। এই দুনিয়া এতিমদের না। শুধুই ভণ্ড আর যার আছে রাশি রাশি, তাদের জন্য এই দুনিয়া।


আমার তোমার কাছে কিচ্ছু চাওয়ার নেই। পাওয়ার তো আরও নেই। দেখা করার কথা বলেছিলাম সেদিন। সরি, দেখা করতে হবে না আমার সাথে। বাবা মারা যাওয়ার পর একটা দিন ভুল করেও দেখতে আসোনি, ভুল করেও ফোন দাওনি। অনেক রাত না খেয়ে পার করেছি, অনেকে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে, অনেকে এখনও আঘাত করছে, এর কিছুই তুমি জানো না, তুমি জানো না কত খারাপ খারাপ কথা যে আমাকে শুনতে হয়েছে, আজও শুনেই চলেছি। তোমার কাছে আমিও যাইনি এইসব বলে বলে ইনবক্স ভারী করার জন্য। আমি একাই আমার সকল কষ্ট বহন করেছি। আর আজ আমি ভালোই আছি। তাই বলছি, তুমি তাদের নিয়েই থাকো, যাদের তোমার ভালো লাগে। যারা তোমার ইনবক্সে এসে তোমাকে হাজারটা বকা দিলেও তুমি রাগ করো না। বরঞ্চ তাদের রাগ ফুটে উঠে তোমার কবিতায় নিঃসংকোচে, তাদের কটুকথাও ভালো লাগে তোমার। তাদের দাবিদাওয়াও ন্যায়সঙ্গত তোমার কাছে। যাদের ভালো লাগে, তাদের নিয়েই সুখে, শান্তিতে থাকুন আপনি। আমার কোনও কিছু বলার নেই। শোনো, তুমি ভালো থেকো। আমি এখন অনেক ভালো আছি। বাবা মারা যাবার পর অনেক কষ্টে কেটেছে সময়, কিন্তু সেসব বলে তোমাকে আমি বিরক্ত করিনি কখনও। আমি সত্যিই ব্যতিক্রম, বাকিদের মতো না আমি। এটা মাথায় রেখো।


শেষসময়ে বলতে ইচ্ছে করছে, তোমাকে ভালোবেসে কিছু না পেলেও শেষবেলায় অনেক অভিযোগ নিয়ে গেলাম সাথে করে। এ-ই আমার বিশাল পাওয়া। তোমার কাছ থেকে আমার সত্যিই কিছু চাওয়ার নেই। সুস্থ থেকো। আমাকে মাফ করে দিয়ো সব কিছুর জন্য।


চিঠি-৭
----------------------
একটা অনুরোধ। শোনো, নিজেকে বদলে ফেলো না, প্লিজ। কোনও বিষয় যদি কষ্ট দেয় তোমাকে বা কেউ যদি তোমাকে খুব কষ্ট দেয়, অপেক্ষা করো, সময় উত্তর দিবে। সত্যিই বলছি, তোমার স্ট্যাটাস পড়ে সবার প্রথম নিজের দিকেই প্রশ্নগুলো ছুড়েছি একটা একটা করে। আমার কিছু অভিযোগ ছিল, যেগুলো আমি বলে ফেলেছি তোমাকে। আমি না মনে কিছু রাখতে পারি না, বলে ফেলি! এতটুকুই। আচ্ছা, এই যে শেষবেলায় এসে অভিযোগ করলাম, তুমি কি খুব কষ্ট পেয়েছ? তুমি নিশ্চয়ই বলবে, ‘তুমি ভালোবাসোনি আমাকে, তাই অভিযোগ আর জাজ করতে পেরেছ।’ শোনো তবে বলি, ভালোবাসতে পেরেছি বলেই শেষসময়ে এসে কিছু অভিযোগ আর কিছু কথা বলে ফেলেছি। আমার সবকিছুই যে তোমার কাছে জমা রেখে দিই। আর তুমি বললে না আমার উপর তোমার কোনও রাগ নেই? আচ্ছা, রাগ তো মানুষ কাছের জনের উপর করে, ধরেই নিচ্ছি, আমি তোমার কাছের কেউ না। তবে রাগ, অভিযোগ, অভিমান থাকবে কী করে!


প্রেম আর ভালোবাসা দুইটা ভিন্ন জিনিস। একটা সময় পর গিয়ে প্রেমের সেই আকর্ষণ কিন্তু আর থাকে না। মূলত প্রেমটাই থাকে না। কিন্তু ভালোবাসা, এটা সারাটা জীবন থেকেই যায়। মৃত্যুই একমাত্র এর সমাপ্তি ঘটায়। ভালোবাসা জিনিসটা সত্যিই এরকম। তোমাকে ভালোবেসে যে সুখ, এই সুখ হাজারবার শারীরিক মিলনেও নেই, আমার মতে। যদিও ফিজিক্যাল রিলেশন নিয়ে আমার ধারণা নেই, তবুও বলতেই পারি, ভালোবাসার উপরে কিছু নেই। শারীরিক চাহিদা একসময় শেষ হয়, কিন্তু ভালোবাসা কেবল মৃত্যুতেই শেষ হয়। তুমি কখনও আমার আগে চলে যেয়ো না দুনিয়া থেকে। আমার বেঁচেথাকা তা হলে সত্যিই কঠিন হয়ে যাবে। আমি মন থেকে চাই, আমি যেন আগে যাই দুনিয়া থেকে, কারণ আমার জন্য তোমার খারাপ লাগবে না, কিন্তু তুমিই যে আমার পৃথিবী। আমার পৃথিবী সরে গেলে আমার বেঁচেথাকা কঠিন হয়ে যাবে, প্রিয়। দোয়া কোরো, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেন আমিই চলে যাই। আমার এতদিন বাঁচার ইচ্ছে নেই। সত্যিই নেই। আর শোনো, ভালোবাসি। অনেক বেশিই বাসি।


এই যে দেখো, আমি না এখনও জেগে আছি! কেন, বলো তো? আমার মন বলছে, তুমি জেগে আছ, তাই আমি আর ঘুমাচ্ছি না। তুমি জানোই না, দূরে একজন তোমার জন্য জেগে আছে। আমাদের কথা হচ্ছে না। মেসেজও দিচ্ছি না। তবুও তোমার সাথেই আমি জেগে আছি। ব্যাপারটা অনেক মধুর না?


শুভ সকাল, আমার পৃথিবী!


সেই যে সকালে টেক্সট করেছি, দেখোনি। কারণটা খুব স্বাভাবিক। আমার চাইতেও ইম্পরট্যান্ট অনেকেই আছে। এটা যেমন জানি, তেমনি মানিও। আমি কই যাই, বলো তো…যেখানে তুমি নেই, তোমার কোনও কিছুই আমার মাথায় আসবে না! তুমি অনলাইনে আছ তা-ও আমার মেসেজ দেখো না, এইসব জেনে আর ভেবে আর কষ্ট হবে না! কই যাই! মৃত্যুই একমাত্র সমাধান। সবকিছু থেকে বাঁচার। তোমার কাছে না আমি একটা জিনিস চেয়েছিলাম! একটা চিঠি দিবে আমাকে। শুধুই আমাকে। আর কেউ দেখবে না, কেউ জানবে না। শুধুই আমি জানব। কিন্তু তোমার আর দেওয়া হলো না, সময় হয়নি। সময় আছে, কিন্তু আমাকে দিবে না! এটাও একটা কারণ। জানি, সেটা বলেছি তো আগেই। বাপ-মরা মেয়েদের এত চাওয়া-পাওয়া থাকতে নেই। এটা আমার বোঝা হয়ে গেছে। এমনকি, ভার্চুয়াল জগতেও ওদের কোনও জায়গা নেই। আস্তে আস্তে তাই সব কিছু থেকে সরে আসছি।


তুমি আমার পুরনো অভ্যাস। সেই সাথে আমার গোটা পৃথিবী। বুঝতেই তো পারো, এতগুলো বছর হতে চলল, সেখানে ভালোবাসা কমার চাইতে আরও বাড়ছে দিন দিন। অবশ্য তোমাকে অনেকেই ভালোবাসে, তোমার বউও বাসে। তাই আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার কী হবে! যাকে এত মানুষ ভালোবাসে, তার একজনের ভালোবাসা দিয়ে কী আর হবে! জানো? রবি ঠাকুর ‘শেষের কবিতা’য় বলেছেন, ‘ভালোবাসা কথাটা বিবাহ কথার চেয়ে আরও বেশি জ্যান্ত।’ আমারও মনে হয়, উনি ভয়ানক সুন্দর একটা কথা বলেছেন। কারণ সকল বিয়েতে ভালোবাসা থাকে না। আবার সকল ভালোবাসায় বিয়ে হয়ও না।


একটা সত্যিকথা বলি তোমাকে নিয়ে? তোমার মেয়েদের সাথে কথাবলা, কাউকে ভালোবাসি বলে ফেলা, কাউকে নিয়ে তোমার লেখা কবিতায় যখন দেখি, তুমি খুব করে চাইছ মানুষটা ফিরে আসুক তোমার জীবনে…এইগুলো আমার ভালো লাগে না। এটা আমার সহজ স্বীকারোক্তি তোমার কাছে তোমাকেই নিয়ে। আবার এর মানে এটাও না, এইসব কারণে তোমাকে ভালোবাসা যাবে না। তোমাকে ভালোবাসি মানেই তোমার ভালো ও খারাপ, দুই দিক নিয়েই বাসি, কোনওটাই আমার কাছে ফেলনা না। আচ্ছা, এই যে তোমাকে এখন অনেকেই বলে, ভালোবাসি।…জানি, ইদানীং অনেক মেয়েই বলে। তোমার লেখা পড়ে বোঝা যায়। একদম সব যে নিজের মন থেকে লিখো, তা তো আর না, কিছুটা ঘটে যাওয়া জিনিসও থাকে।…তো কথা হচ্ছে, যারা ভালোবাসে, তাদেরকে একটা প্রশ্ন করবে। শুধু বলবে, ক’ফোঁটা চোখের জল ফেলছ যে বলো ভালোবাসি?


তুমি মেসেজ দেখো না, কেউ ফোন দিলে ফোন ধরো না, তুমি কাউকে কড়াকথা বললে কেউ কেঁদে ফেলে, তুমি দেখা না করলে তোমার দিকে রাগ হয়…এইসব কারণে যদি কোনও মেয়ে কান্নাকাটি করে, তা হলে তুমি শিওর থাকো, এরা সবাই তোমার কাছ থেকে শুধু ভালোটাই আশা করছে। তুমি ফোন না ধরলে, কল না দিলে, দেখা না করলে কান্নাকাটি করা মানেই তোমার ব্যবহারে সে কষ্ট পাচ্ছে, তাই কান্নাকাটি করছে। শুধুমাত্র ব্যক্তি তোমার জন্য যার চোখ দিয়ে পানি পড়বে, সেই সত্যিকার অর্থে তোমাকে ভালোবাসে। তোমার ব্যবহার আমার প্রতি ভালো না থাকলেও আমি তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি আমাকে না চাইলেও আমি তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি আমার সাথে যেরকমই দুর্ব্যবহার করো না কেন, আমাকে হাজারটা বকাই নাহয় দাও, আমাকে যা-ই করো তুমি, যা-ই বলো, যেমন আচরণই করো,…তা-ও আমি তোমাকেই ভালোবাসি, তোমাকেই ভালোবাসব, তোমাকে ছেড়ে আমৃত্যু যাব না, তাড়িয়ে দিলেও না। মিলিয়ে নিয়ো তুমি।


তোমার পিঠে যখন ব্যথা হতো, ঠিক ওই মুহূর্তে আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরত, কেউ যখন তোমাকে আঘাত করত, তখন আঘাতটা আসলে আমাকেই করত। তোমার বিপদের সময় শুধু চিৎকার করে মোনাজাতে কান্না করেছি, শুধু বলেছি, ‘আল্লাহ্‌, আমার চাকরি লাগবে না, আমার সবচাইতে প্রিয় জিনিসও আমি আর কখনও চাইব না, শুধু আমার প্রিয় মানুষটাকে বাঁচাও। আমার জীবনে আমি যদি কোনও ভালো কাজ করে থাকি, সেটার পুরস্কার হিসেবে তুমি আমার প্রিয় মানুষকে বাঁচাও।’ তোমাকে পেলে আমার সব পাওয়া হয়ে যেত। কিন্তু তোমাকে পেয়ে হারাতে আমি পারব না। কক্ষনোই না! তাই তোমাকে না পাওয়াই আমার জন্য ভালো।


তোমার সকল দোষের কাছে আমার ভালোবাসা জিতে যায়। কারণ তোমার দোষগুলো ক্ষুদ্র, আর আমার ভালোবাসাটা অনেক বড়ো; এতটাই বড়ো, যার মাপকাঠি আমার জানা নেই, কিন্তু এতটুকু জানি, ভালোবাসাটা বিশাল দেখেই বাকি সব দোষই তুচ্ছ আমার কাছে এখন অবধি। খুব দূরে কোথাও পালিয়ে যাব একদিন। আর কখনওই ভালোবাসার অত্যাচার নিয়ে আসব না তোমার কাছে। শুধু জেনে রেখো, ভালোবাসি!


অ্যাই ছেলে, আমাকে সত্যি সত্যি একটু ভালোবাসলে কী হয়? কোনও অধিকার চাইব না তো! আমাকে দেখতেই পারে না মানুষটা! একটু পর পর কাকে জানি দেখার জন্য আসে হোয়াটসঅ্যাপে!


তুমি আমাকে বললে, নিজেকে ভালো রেখো। অথচ তুমি বললে না তোমাকে ছাড়া কীভাবে ভালোথাকা যায়! কেন বললে না? তবে কি তোমার জীবনে নতুন কেউ এসেছে? আমাকে ছেড়ে দিতে হবে তার জন্য স্থান? কেন, বলো তো? তোমার ঘরের জনকেই তো আমি মেনে নিয়েছি। আমি তো অনেক শক্ত, সেটা তুমি বুঝো না? তুমি সেদিন বললে, একজন বেশ্যাও যদি তোমাকে শান্তি দেয়, তবে তুমি যন্ত্রণাদায়ক ভালোবাসা রেখে তার কাছে শান্তির জন্য চলে যাবে। আচ্ছা, মেনে নিলাম। আমার কাজই তো সব মেনে নেওয়া। তোমার যত ইচ্ছে আছে, যত শখ আছে, সব মেনে নেওয়াই আমার কাজ। এটাই তো হয়ে আসছে পাঁচ বছর ধরে। আচ্ছা, একটা কথা বলো তো, বেশ্যা তো টাকার বিনিময়েই থাকবে কিছুক্ষণের জন্য। তার কাজ হতে যতক্ষণ লাগে, ততক্ষণ। এর বাইরের সময়টুকু? তখন? হুম্‌, তখন তো কাউকে না কাউকে লাগে, তাই না? মনের কথা বলার জন্য, নিজের সুখদুঃখ ভাগাভাগি করার জন্য। তাই না?


তুমি এখন বলবে, আছে আমার অনেকেই। আচ্ছা, ওরা থাকুক। আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর পর এসে দেখে যাব তাদের। আমি জানি, সময় উত্তর দেয়। ওই সময়ের অপেক্ষায় আমি আছি। আমি তোমাকে যখন পেয়েছিলাম, তখন তুমি একা ছিলে। অবিবাহিত। আমার ভালোলাগা, ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও আমি তোমাকে কিছু বুঝতে দিইনি, মুখ ফুটে কিছু চাইব, সেটা তো দূরের কথা। তোমার ভালোলাগাটাই আমার কাছে বড়ো ছিল। এই কারণেই আমি তোমাকে কখনওই চাইনি। আমি চেয়েছি, তুমি যাকে চাও, তুমি তাকেই পাও। তাই নিজের ভাগটা বা চাওয়াটা আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি তোমার চাওয়ার কাছে। আজকাল না তোমাকে পাওয়ার খুব লোভ হয়। আমি কীভাবে যেন হেরে যাচ্ছি নিজের কাছে। আমি পারছি না অনেক কিছুই। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি আমি, আর এখন তোমাকে না পাওয়ার বেদনা আরও বেশি করে পাগল করে তুলছে আমাকে।


আমার কাছে না প্রতিটি জিনিসই মূল্যবান! কিছু সম্পর্কও মূল্যবান। আমার ছোটবেলার খেলনা এখনও আছে, যত্ন করে রেখেছি, তাই। তোমাকে দেখাব খেলনার ছবি। জানোই তো, তোমাকে কিছু না বলে আমি থাকতে পারি না। আমার যত কথা আছে, সব তোমার কাছেই থাকে। তোমার নামে অভিযোগও আমি তোমার কাছেই দিই। কার কাছে দিব তোমার নামে অভিযোগগুলো? বাপের বাড়িতে দিব তোমার নামে অভিযোগ? আমি যে ওইরকম মেয়ে না। আমি তো বলেছি, আমার সকল প্রশ্ন তুমি, সকল প্রশ্নের জবাবও তুমি। কেন দূরে সরিয়ে দিতে চাইছ? আমি ওই মানুষের কাছে গেলে তুমি খুশি হবে? সে তো জানে, আমি কাউকে ভালোবাসি তীব্রভাবে। পাঁচ বছর ধরে। কিন্তু ব্যক্তিটা কে, সেটা সে জানে না। সে জানেই, আমি ওইরকমভাবে আর কাউকে ভালোবাসতে পারব না। সে জানে, আমি ভালোবাসি একজনকেই। তীব্রভাবে…


মোবাইলে একদমই চার্জ নেই। চাইলেও লিখতে পারছি না। আজ আসি, আমার ভালোবাসা। বেশি রাত জেগো না, প্লিজ।


চিঠি-৮
----------------------
জান, তুমি কই? আমার যে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আমার যে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। আমার খুব খুব একা লাগছে, যদিও আমি সত্যিই একা। কোথাও কেউ ছিল না আমার। একজন শুধু খোঁজ নিত। তুমি এইভাবে আমাকে যেতে দিচ্ছ কী করে? আমি বারবার চাইছি, তুমি আমার হাতটা ধরে আটকে রাখো, আর তুমি আমার হাতটাই ছেড়ে দিলে? কেন করলে? কেন আর একজনের কাছে ছেড়ে দিলে! তোমার কাছে কি দামি বাড়ি, গাড়ি, অলংকার, মোবাইল, ল্যাপটপ চেয়েছি? কখনও কি ভুলেও ইশারায় ইঙ্গিতে শুনিয়েছি যে ওইসব জিনিস আমার খুব দরকার? আমার যে কোনও কালেই কিছুর দরকার ছিল না। শুধু ভালোবাসার কথাই বলে গিয়েছি। তা হলে এখন বুঝো, আমার আসলে কোনটার দরকার, জিনিস না ভালোবাসা? অবশ্যই ভালোবাসা। বাড়ি, গাড়ি আমার লাগবে না। আর অলংকার পরতে ইচ্ছে করলে তোমায় জড়িয়ে নিব। তুমি ছাড়া আর কার সাহস হবে আমার শরীরে থাকার! একটা মেয়ের জন্য তার ভালোবাসার মানুষটাই বড়ো অলংকার। আর মোবাইল, ল্যাপটপ এইসব আমার লাগবে কেন, যখন তুমি পাশে? তুমি থাকলে আমার কিছুই লাগে না, শুধু তোমাকেই চাই। এই দেখো, আমি কান্না করছি। তুমি নিশ্চয়ই বিজি। ঘুমে? নাকি ফোনে? এই বুড়ালোক! ভালোবাসি!


খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে, খুব আদর পেতে ইচ্ছে করছে, তোমার ওই বাহুডোরে নিজেকে লুকোতে ইচ্ছে করছে। তোমার চোখে ডুবে গিয়ে স্নান করতে ইচ্ছে করছে। তোমার ওই ফরসা ফরসা হাতের ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করছে আবার। তোমার ওই ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শ্রবণ করতে ইচ্ছে করছে। তোমার হাতে মেখে-দেওয়া গরমভাতে, আলুভর্তা আর সাথে ঘি দিয়ে ভালোবাসায় মাখা ভাতের লোকমা খেতে ইচ্ছে করছে আবার। তোমায় নিয়ে একসাথে ভালোবাসার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে। তোমার মুঠোফোন হতে ইচ্ছে করছে, যার স্পর্শে একটু পর পর কেঁপে ওঠাই আনন্দের! আমার সব কিছুতেই তুমি থাকা চাই। চাই-ই চাই! আমার শুধু তুমি চাই। আমার বুড়ালোকটার সাথে বৃদ্ধবয়সে একসাথে বৃদ্ধ হতে চাই। আমি তার ব্যথার মলম হতে চাই। তোমার মনে আছে কি না জানি না, একবার তোমার সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়ে ছিল, তুমি কী যেন একটা কথা বলেছিলে। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আর রাগও করেছিলাম। এরপর তিন মাস তোমার সাথে কথা বলিনি। এরপর একদিন তুমি স্ট্যাটাস দিয়ে বললে---‘কিছু কিছু মেয়ে এত জেদি, এদের কাছে ভালোবাসার চাইতে জেদটার দাম বেশি। এরা জেদটাকেই জিতিয়ে দেয়।’ তুমি এটা আমাকে নিয়ে লিখেছিলে। হি হি…জানি আমি। সেই তিন মাস পর কাঁদতে কাঁদতে দুপুরবেলা তোমার জিপি নাম্বারে মেসেজ দিলাম ‘মিস ইউ…’ লিখে। ওমা, তুমি সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই দিলে…অভিমান ভাঙল তবে?


তুমি যে এত হাজার ফেসবুক ফ্রেন্ডের মাঝে আমার অভিমানের কথা মনে রেখে দিয়েছ, এটা সত্যিই আমার ধারণার বাইরে ছিল। তুমি যে বাকিদের চাইতে আলাদা করে আমার অভিমানটাকে মনে রেখে দিয়েছ, এটা আমি বুঝতে পারিনি। তুমি এমন কেন! অভিমান বুঝো, অথচ ভালোবাসা বুঝো না! বুঝো বুঝো, আমার ভালোবাসাও তুমি বুঝো। সেদিন তো বললেই। আজ অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে। এই যে তোমার ছুটি শুরু হলো, বাসায় আছ। প্রতিদিন একবার করে হলেও খোঁজ নিচ্ছ। গলাব্যথা কেন, কেন নিজের প্রতি যত্ন নিই না, আম্মু কেমন আছে জানতে চাওয়া। সবই করছ তুমি। তবে ভালো কেন বাসছ না? তোমার একটুকুও খারাপ লাগে না আমাকে ভালো না বাসার জন্য? না কি আমাকে ভালো না বাসলেও কিছু হয় না তোমার, এজন্য আর কষ্ট করে বাসও না?


আম্মুকে সব সময় বলতাম, আমি জব করি আর না-ই করি, একটা ব্যবসা তো থাকবেই। জব করলেও জবের পাশাপাশি ব্যবসা একটা থাকবেই। আম্মু বলত, কীসের ব্যবসা? আমি বলতাম, ঘরে বসে বসে নিজেকে নিরাপদ রেখে করা যায়, এমন ব্যবসা। এমনও হতে পারে, কেকের অনলাইন-শপ দিয়ে দিতে পারি। আম্মুর ইচ্ছে গভর্নমেন্ট জব, কিন্তু গভর্নমেন্ট জব হলে যে দূরে পোস্টিং হবে, আর দূরে গেলে আম্মুকে দেখবে কে, এটা আম্মুর মাথায় আর ঢুকে না। যা-ই হোক, একটা পেইজ খুললাম। এটা যে কেন খুলেছি, নিজেও অত একটা শিওর না। জাস্ট ফান করেই করা। ভাবলাম, বসে থাকার চেয়ে কিছু করি। ব্যস্তথাকা ভালো, অন্তত মাথায় কোনও ধরনের উলটাপালটা চিন্তা যেন না আসে, তাই ভালো। অনেকে অনেক কিছু বলে থাকতে পারে বা না-ও পারে। ওইসব নিয়ে ভাবার কিছুই নেই। কারণ আমার জন্য কেউ উল্লেখযোগ্য কিছু করে নাই, সেটা আমি বলতে পারি। টাকাটা বড়ো কথা না। কিছু মানুষের ভালোবাসা আমাকে অবাক করে। চিনে না, জানে না, কীভাবে বিশ্বাস করে আর ভালোবাসে আমাকে, অবাক হই এইসব দেখলে। খুব বেশি কাজ করি না, সব অর্ডার নিই না। ক্যানসেল করি অনেক অর্ডার। ভালো লাগে না। একটু একা থাকতে চাই, কিন্তু আপুরা থাকতে দেয় কই! সারাদিনে ৫০টার মতো মেসেজের রিপ্লাই দিলাম পেইজে। ক্লান্ত লাগে। তবুও তাদের খুশি দেখে ক্লান্তিটা হাসিতে পরিণত হয়।


আমি তোমাকে এটা ভেবেই বললাম যে আমাকে সব ধর্মের মানুষই অনেক পছন্দ করে। এটা বলার সময় আমার মাথায় আর অন্য কিছুই ছিল না। আর তুমি আজ এইটা কী বললে? এমন কথা কীভাবে বললে? আমি তোমাকে ভালোবেসেছি জাত, পাত, ধর্ম সব কিছুর চিন্তা বাদ দিয়ে। আমাদের ধর্ম এক না হলেও ভালোবাসার কোনও কমতি কি তুমি দেখেছ কখনও? কখনও বলেছি ধর্ম নিয়ে কথা? আমি শুধু আজ বলেছি, বাকি ধর্মের মানুষজনও আমাকে খুব ভালোবাসে। এখানে আমি বাকি ধর্ম বলতে সব ধর্মের সকল মানুষের কথা বুঝিয়েছি। ধর্মটাকে যদি সত্যিই বড়ো করে দেখতাম, তবে তোমাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে পারতাম না। আমি আমার পরিবার থেকে এমন শিক্ষা পাইনি কোনও দিনই। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি আমার নিজেরই পছন্দ না। সত্যিই যদি ধর্মের বাড়াবাড়ি থাকত, তবে তোমার জন্য লোকনাথ মন্দির, দুর্গাবাড়ি বা আশ্রমে গিয়ে পুরোহিতমশাইকে দিয়ে পূজা করাতে পারতাম না তোমার বিপদের সময়ে। তুমি এভাবে আমাকে ফেলে দাও কিছু প্রশ্নের মাঝে, যেটার উত্তর জানা থাকলেও, আমার পক্ষ থেকে সব দিক দিয়েই স্বচ্ছ হবার পরও, আমি দিতে পারি না। চুপ হয়ে যাই কেমন জানি! আমি বোঝাতে পারবো না ওই সময়ের চুপ থাকার কারণ, কিন্তু আমি পারি না তোমাকে বোঝাতে।


আচ্ছা, ভালোবাসা এত কষ্ট কেন দেয়? বলতে পারো? দেখো, সেই যে কখন মেসেজ দিয়েছি, তোমার দেখার সময়ই হয় না। আমার আগে কারওটা দেখছ হয়তো, কেননা তুমি হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাকটিভ হয়েছ, আমি দেখেছি। আচ্ছা, একটা কথা বলবে? ভালোবাসা কি শুধুই শরীর বুঝে? তবে আমি কি এতকাল পেয়েছি তোমার শরীরের স্বাদ? তবে কী করে এতকাল কোনও কিছু ছাড়াই ভালোবেসে গেছি? কী করে? তোমার আর কোনও কিছুর জবাব দিতে হবে না। আমি আর দেখব না তোমার মেসেজ। আমি এখন তুমি হব। দেখে নিয়ো, তুমিই হব। আচ্ছা, থাকো তাদের নিয়ে, যাদের তুমি প্রায়োরিটি লিস্টে উপরে রেখেছ। আমি তো চলেই যাচ্ছি। আচ্ছা, একটা কথা বলবে? সত্যি করে আমার কসম কেটে বল তো, তুমি তাকে অনেক ভালোবাস, না? তাকে নিয়ে লিখলে সেই লেখাটা, কী যেন নাম…‘ছেঁড়া চিরকুটে লেখা আছে যা’ না কী যেন…এটা তাকে নিয়েই লিখেছ, তাই না? তুমি তাকে এত ভালোবাস! আর আমি গাধি কিনা সারাজীবনই পার করে দিচ্ছি তোমাকে ভালোবেসে বেসে! তোমাকে এত এত না ডেকে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকলে তাঁকেও পেয়ে যেতাম মনে হয়। এতকিছুর পরও তোমাকে পাওয়া হলো না।


এত সহজে কাউকে বসিয়ে দাও মনে? কই, আমি তো পেলাম না সেখানে থাকার অনুমতি! খুব খারাপ লাগছে, তবুও লিখছি। বুকের ভেতরটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে, আমার মাথাতেও খুব খারাপ লাগছে। তোমাকে একটু চেয়েছিলাম পাশে…রেখে চলে গেছ। ভালো। যাও। যাওয়াটা একদিন আমারও হবে, তুমি দেখো! আর শোনো, একটা জিনিস শুধু মনে মনে ফলো করে যাও, সে-ও কি আমার মতো ৫-৬ বছর থাকে কি না, কোনও কিছুর আশা ছাড়া। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারি, সে পারবে না এই আমার মতো করে তোমাকে আগলে রাখতে। তুমি তাকে নিয়ে বিশাল গর্ব করে লিখো, তাই না? সে তার ফ্রেন্ডদের কাছে বলে, তুমি নাকি তার সংসার? আচ্ছা, সংসার থেকেও তো মানুষ কখনও না কখনও বের হয়, বাইরে যায়, অফিসে যায়, বা দূরে কোথাও ঘুরতে যায়। অপেক্ষা করো, দেখো কী হয়। আর আমি তো তোমাকে বলেইছি, আমার জন্য তুমি আমার গোটা পৃথিবী। পৃথিবী থেকে তো মানুষ কেবল একবারই বের হতে পারে মৃত্যুর মাধ্যমে। আমার গোটা পৃথিবীই তুমি। তুমি তার সংসার, আর আমার পৃথিবী। বাকিটা তুমি বুঝে নাও!


এই যে পাশে আম্মু শুয়ে আছে, চিৎকার করে তাই কাঁদতেও পারছি না। শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। সারাদিন কাজের চাপে হাতব্যথাটা তীব্রভাবে বেড়েছে। নাপা-এক্সটেন্ডও কাজে আসছে না। তীব্রব্যথায় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আমি তো এরকম না। এর চাইতে অনেক বড়ো বড়ো ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা আমি রাখি। রাতের এই নির্জনতা সব সময়ই আমার কাছে আপন মনে হয়। এই সময়টা শুধুই নিজের। নিজে নিজে কথা বলার, অনেক হিসেব মেলাবার। যখন একজন মানুষ আর একজন মানুষের সাথে কথাবলায় ব্যস্ত রাতে, আমি তখন ব্যস্ত লেখায়, ব্যস্ত আকাশের তারা দেখায়, ব্যস্ত হিসেব মেলানোয়। আর কখনও লিখব না তোমাকে। আর কখনও লেখার মনমানসিকতা যেন তৈরি না হয়, সৃষ্টিকর্তার কাছে এই দোয়া। কখনও পাব বলে ভালো আমি বাসিনি। বিনিময় প্রথা আজও শিখিনি। পাবার বিনিময়ে যে চাওয়া-পাওয়া, সেটা একদিন ফুরোয়। কাউকে পাবে না জেনেই যে মানুষ মন থেকে তাকে মেনে নেওয়ার মতো শক্তভাবে একা একাই দাঁড়ায়, সে মানুষটার পাশে বাকি সবই ভেঙে যায়। আজ মনে হয়, ভালোবাসার মতো যদি কোনও গুণ আমার মধ্যে থেকে থাকে, তা-ও সৃষ্টিকর্তা নিয়ে নিক, এটাও আমার দোয়া। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ অনেক বড়ো কিছুতে ভেঙে না পড়লেও অনেক অল্পতে ভেঙে যায়। জেদটা কখন যে কোন দিক থেকে ওঠে, তা বলে বোঝানো মুশকিল।


তোমার অবহেলার ঠিক পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আজও আমার ভালোবাসা রয়ে গেছে।
তোমার আমাকে এই না-চাওয়াতে আজও আমার গোটা পৃথিবী তুমিই হয়ে আছ।
তোমার তুমিকে জিতিয়ে দেওয়ার নেশায় আজও আমার ভালোবাসা তুমিই রয়ে গেছ।