বেহালাই বিষণ্ণ, তার নয়

 
এই তো সেদিন! ভাবছিলাম, তুমি আমার কে হও?
উত্তরে বোকামনটা আমায় কী বলেছে, শুনবে? বলেছে,
ওই যে, আকাশের গায়ে ঝুলে-থাকা চাঁদটি, ওটাই নাকি তুমি!
সন্ধের কোলে ঢলেপড়া গোধূলিবেলার ইমনরাগটাই নাকি তুমি!
ঘাসের বুকে ঝরেপড়া শিশিরফোঁটা তুমিই! নাম-না-জানা নীলকণ্ঠের
ওই পাখিটা ডানা ঝাপটায় যখন, তখন তুমি নাকি আসোই আসো!


তুমি নাকি রৌদ্রগায়ে সোনালিহলুদ আলোক,
চুপটি করে বসেথাকা এক শুভ্রবকের পালক!
ঈশানকোণে হেসেওঠা লালসূর্যের টিপ,
সারারাত্রির দহনে কালো আলোগর্ভা দীপ।


তুমি নাকি পদ্মাপারে কুবের মাঝির ঘর,
সাগরফেড়ে জেগেওঠা ধূসর কোনও চর।
মেঘলাদিনে ময়ূরনাচা আবছা কোনও টান,
মনখারাপেও গেয়েওঠা কোকিলকন্ঠে গান।


তুমি নাকি বাবুইপাখি, টুনটুনিটার ঝোঁক,
মধ্যরাতে ঘুমকাতুরে কাজলাদিদির শ্লোক।
মেঘের ডাকে চমকেওঠা হঠাৎ-পাওয়া ভয়,
ছলাৎ ছলাৎ শব্দতানে বৃষ্টি শরীরময়!


হয় যেমন আমার, তোমারও তেমন হয়…
তোমারও কি সবকিছুতেই আমায় মনে রয়?
তোমারও এমন এলোমেলো উড়ু উড়ু মন?
আমার মতোই তুমিও কি উদাস সারাক্ষণ?


মন আমার বেয়াড়া ভীষণ, কথা শুনতে চায় না,
যখন তখন করেই বসে তোমায় পাবার বায়না!
যায়-না-বলা, এমন আরও কত কী যে বাহানা,
মনটা ইস্‌ এমন কেন? কেন ঘরেই বাঁধা যায় না?


দ্যাখো কাণ্ড! দেখছ, মনের বেড়েছে কেমন বাড়!
তুমি এসে যাও না দিয়েই খুব কষে এক মার!
এটা ওটা যেটাই বলি, বসবে না সে কোথাও,
আসো না কাছে, পাশে বসে ওকে একটু বোঝাও!


দেখতে তোমায় কেমন লাগে, যখন তুমি বকো?
চোখদুটো কি লাল হয়ে যায়? ঠোঁট কামড়ে রাখো?
উচ্চস্বরে কথা কি বলো? আর তর্জনী খুব নাড়ো?
যদি দিই রাগিয়ে হঠাৎ করে, মারবে…যেমন পারো?


ধুত্তোরি ছাই! কোনও কথা নাই, ওলটপালট ক্ষণ!
জাপটে ধরে মান ভেঙে দাও, মন করছে যে কেমন!
আঙুলটুকুন দাও এগিয়ে, এই দিয়েই দিলাম আড়ি!
তুমি যদি রাগ না ভাঙাও, ফিরব না তো বাড়ি!


ইচ্ছে ভীষণ, হই দ্বীপান্তরে তোমার মনের নাটাই,
ছন দিয়ে এক ঘর বানিয়ে জনম জনম কাটাই।
ষোলোকণাই পূর্ণ হবে এই সাধের জীবনটায়,
আর কিছুই চাই না, বাপু, একটা তুমি চাই!