ভাবনাত্রয়ী


এক। প্রত্যেকটা বড়ো বড়ো অপরাধের শুরুর স্টেপটা কিন্তু খুব ছোটো হয়ে থাকে। ধরুন, একদিন আপনি ছোট্ট একটা অপরাধ করলেন, কিন্তু কেউ তা জানল না। সেদিন কাজটা করার সময় যদি আপনার একটুও বুক না কাঁপে, তাহলে জেনে রাখুন, আপনি নেক্সট স্টেপে যেতে, মানে আরেকটু বড়ো অপরাধ করতে, সম্পূর্ণই প্রস্তুত! জি হ্যাঁ!


আমরা না চাইতেও অবচেতন মনে কিছু অলিখিত নিয়মের সূত্র ধরেই চলি। যেই মানুষ একটা বড়ো ব্যাংক ডাকাতি করে, সে কিন্তু প্রথম শুরুটা করেছিল হালকা-পাতলা হাতটান কিংবা ছোটোখাটো পকেটমারি করে। সেখান থেকে ধরা পড়ে পড়ে কিংবা না পড়ে পড়ে তার সাহস ক্রমেই বাড়তে থাকে। ব্যাংক-ডাকাতির মতন দুঃসাহস একদিনে কিন্তু মানুষের মধ্যে আসে না। সাহস বিরাট একটা জিনিস, ওটা কাকে কখন কোথায় যে তোলে, আর কখন কোথায় যে নামায়! তবে দু-একজন থাকে, যারা প্রথম বারেই ব্যাংক-ডাকাতি বা ওরকম কিছু করে ফেলতে পারে। তাদের কথা আলাদা। চোরের মধ্যেও তো এক্সট্রাঅর্ডিনারি হবার কিছু ব্যাপার আছে। তবে এটাই সত্যি, যে-কোনও বড়ো অন্যায় ছোটো কিছু দিয়েই শুরু হয়। যেমন সিগ্রেটই কিন্তু নেশার জগতে ঢোকার প্রবেশপত্র। জীবনে সিগ্রেট খায়নি, এমন কোনও মানুষকে সচরাচর নেশার জগতে ঢুকে হারিয়ে যেতে দেখা যায় না।


দুই। জেনে অবাক হবেন বা আপনি অলরেডি জানেন যে, ‘তুই আমারে চিনোস?’ কিংবা ‘তুই জানোস আমি কে?’ এই জাতীয় কথাবার্তা আর এই টাইপের এক্সপ্রেশনের উপরেই বাংলাদেশের অনেক কিছু এখন টিকে আছে। সত্যিই, শুধু মুখের বুলিতে কোনও দেশ টিকে থাকলে, সে যে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ, তা আর বলে দিতে হয় না। সাধারণত এই টাইপের কথাগুলো তারাই ব্যবহার করে, যারা এসব ব্যবহার করতে অভ্যস্ত।


তবে আশ্চর্যজনক সত্য এই যে, এইসব কথায় সত্যিই অনেক কাজ হয়। মানুষ ধরেই নেয়, এই কথা যে বলেছে, সে নিশ্চয়ই ‘বড়ো কেউ’ই হবে! হা হা হা…! অথচ অনেক নাইন-টেন কিংবা ইন্টারপড়ুয়া বাচ্চা ছেলে-মেয়েও এসব বলেটলে নিজেদের কাজ হাসিল করে নেয়। তবে ক্ষমতাশালী লোকজনের অনেকেই নিজের মেজাজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এসব বলেন, আর যাঁরা ওরকম বলেন, খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, তাঁরা আসলে খুবই অসহায় আর নিম্নশ্রেণির মানুষ।


যে কয়েক জন হাতেগোনা মানুষ প্রকৃতই এই ধরনের কথা বলার যোগ্যতা রাখেন, তাঁরা কখনওই এ ধরনের কথা বলেন না। কেন, জানেন? কারণ, তাঁরা জানেন, অতিরিক্ত আর অহেতুক কোনও কথা বলতে নেই। মনে রাখবেন, যে আপনাকে মারবে, সে কখনও বলে বলে মারবে না, চুপচাপ মেরে দেবে। যার মুখের দৌড় যত বেশি, তার ক্ষমতার দৌড় তত কম।


তিন। ফেইসবুকের রাজ্যে, এক ছিল রাজা,
নামেমাত্রই ভালোবেসে তাকে
দিলাম বলেই, আমি তারই প্রজা!


যতদিন রাজা পারল দিতে, নিলাম আমি দুহাত পেতে।
আর চললাম বলে, ওহে, শোনো! উনি কেবলই রাজা নয় গো,
উনি যে…আহা আহা, মহারাজা মহারাজা!


একদিন হুট করে, মনে হলো, এ কী রে!
বয়সে যে আমারই সমান, তাকেও কেন মানব এমন?
খাই কি আমি ভাত, না কি গাঁজা?


উঠে গিয়েই বলি তাকে, অ্যাই রাজা!
দ্যাখ তো, মাথায় মাথায় এত তফাত কীসের?
তোর মাথায় ঘিলুর সাগর যেন,
তবে আমার মাথায় গোবর কেন?
দুজনই একই দেশি,
তবে ঘিলু কেন তোর বেশি?
তুই পাবিই পাবি এর চরমসাজা!


ভালোবেসেছি যাকে এই গতকালই,
আজই তার বুকে মেরে একলাথি,
বললাম, শালা, দ্যাখ এবার, লাগে কেমন মজা!


কিছু গেল কি বোঝা?
যদি না যায়, বাদ দাও ঠায়,
এ তোমার ঘিলুতে আঁটা…নয় অত সোজা!