ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (১৪শ অংশ)

ভাবনা: বিরানব্বই।

……………………..

বই আমার কাছে প্রেয়সীর মতো। ধার দেয়া যায় না, নেয়াও না। প্রেয়সী কাছে থাকলেই তো মন ভরে যায়; ছুঁয়ে দেখতেই হবে, এমন তো নয়। বইও তা-ই। থাকুক না কিছু বই আমার আশেপাশে, সেগুলিকে পড়ে দেখতেই হবে, না পড়লে সেগুলি কাছে রাখার কোনো মানেই নেই, এটা আমার মনে হয় না। বই চোখের সামনে থাকবে, দেখলেই মনটা ভরে উঠবে, হৃদয়ে প্রশান্তি কাজ করবে, আমি আমার কাজগুলি ঠিকভাবে করতে পারবো। বই কাছে থাকার শান্তি আর স্বস্তির দাম বইয়ের দামের কয়েকগুণ।

চুমু খাওয়া যতটা শিহরণ জাগায়, চুমু খাওয়া যায় খুব সহজেই, এমন দূরত্বে প্রেয়সীর ঠোঁটযুগল শিহরণ জাগায় কি কম কিছু? খেয়ে ফেললে তো সব প্রতীক্ষা আর আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে গেলো! চুমু খাওয়ার তৃষ্ণা চুমু খাওয়ার স্বস্তির চাইতে মানুষকে বেশি ব্যাকুল ব্যগ্র শিহরিত করে। কিছু-কিছু বই আছে, যেগুলো ‘কাছে আছে’, এটা ভাববার আনন্দের দামও লক্ষ টাকা। বইয়ের কাগুজে মূল্যের চাইতে আত্মিক মূল্য বহুগুণে বেশি।

এক জীবনে মানুষ কতটুকুই বা পায়? কতটুকু সঞ্চয়ই বা ইকোনোমিক্সের থিওরির প্যারালালে চলে? একটা বই কিনতে পারতাম, অথচ কিনলাম না ইচ্ছে করেই, এর আফসোস কয়েকটা মৃত্যুর সমান। দোকানে পছন্দের বইটাকে রেখে এলাম পয়সার অভাবে নয়, বইটা পড়ার সময় হয়ে উঠবে না, কিনে কী লাভ? এমন ভাবনায়; আর সারাক্ষণই মনটা খচ্‌খচ্‌ করতে লাগল বইটার লোভে কিংবা অভাবে, এমন একটা অশান্ত মনকে শান্ত করার দায়ের চাইতে বইয়ের দাম নিঃসন্দেহে অনেক কম। যে দায় দামে মেটে, সেটা পুষে রাখার দায় কীসের? প্রেয়সীকে শুধু এক পলক দেখতে বহু দূর পাড়ি দেয়াটা সময় ও অর্থ সাপেক্ষ হলেও নিরর্থক নয় মোটেও। বইকেনায় পয়সার বাজে খরচাটাই দেখলো সবাই, মনের খোঁজটা কেউ রাখলো না কোনোদিনই। মনকে খুশি করার এতো সহজ উপায় আর কী আছে? বই সাথে থাকলে, চোখে দেখলে, বইয়ের পাতাগুলি ওলটাতে পারলে কী এক অসীম অবারিত শান্তি!

একটা বই কিনলাম, হয়তো ওটা পড়াই হবে না কোনোদিনও, তবুও যেটুকু সময় বাঁচবো, ওটা কিনতে না পারার কষ্ট নিয়ে কেনো বাঁচবো? বেঁচে থাকবার সময়টাতে অন্তত বেঁচে থাকি! পয়সা দিয়ে কেনা স্বস্তি বেঁচেথাকায় ওভারটাইম যোগ করে-করে আয়ু বাড়িয়ে দেয় অনেকখানি। স্রেফ বই কিনে কত সহজে বেশি সময় বেঁচে নেয়া যায়! আমার তো প্রায়ই মনে হয়, মানি ইজ দ্য চিপেস্ট বারগেইন! এতো কম খরচে বেঁচে বাঁচা! ভাবা যায়! একেবারেই সস্তা বইয়ের পাতায়-পাতায়ও দামি সুখের নির্ভার ঠিকানা।

আমি বই কিনে আত্মবিশ্বাস, শক্তি, সাহস, শান্তি আর স্বস্তি বাড়ানোর দর্শনে বিশ্বাসী। তবু কিছু আফসোস কাজ করে। আমি যতটা পাঠক, ততোধিক ক্রেতা। বই কেনা হয় প্রায়ই, পড়া হয় কমই। বই জমে যায় শেলফে, মাথায় নয়। অসহায় আমি আমার লাইব্রেরির দিকে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি, হে ঈশ্বর, আয়ু দিলেই যখন, তখন বই পড়ার আয়ুও কিছু দিয়ো। এই পৃথিবীতে জন্মের প্রয়োজনে আমাকে মৃত করে রেখেছিলে, অন্তত মৃত্যুর প্রয়োজনে একটু বাঁচিয়ে রেখো।

ভাবনা: তিরানব্বই।

……………………..

সরস্বতী পুজো হয় ভ্যালেন্টাইনস্ ডে’র ঠিক আগে-আগে৷ ঈশ্বরের কী লীলা, কী ‘ইশারা’! এই পুজোয় অনেকেই ভবিষ্যত লক্ষ্মী খুঁজে ফেরে৷ পেয়েও যায় কেউ-কেউ; কিংবা নারায়ণ (লক্ষ্মীর বর)৷ কেবল সরস্বতীই পারেন আপন ভগ্নীপতিকে অন্য নারীর বাহুলগ্ন করে দিতে৷ বর হিসেবে বর দেয়া! শুধু এই পুজোতেই এক দেবীর আরাধনায় অন্য দেবীর কৃপালাভ সম্ভব৷ সরস্বতীর কৃপায় লক্ষ্মীলাভ! বিদ্যাদেবীর মাহাত্ম্যে ষোলোকলায় ভক্তের (প্রকৃত) মনোবাসনা পূর্ণ! আহা আহা!

প্রতিমায় মায়ের এতো রূপ! আহ্, কী অপূর্ব! অর্ধেক নারী তার, অর্ধেক কল্পনা৷ অথচ, এই ধরাধামের সরস্বতীদের তো সেই রূপ দেখি না! তাহলে কি ধরেই নেবো, মানুষ (মৃৎশিল্পী) কখনো-কখনো ঈশ্বরের চেয়েও মহত্তর শিল্পী? . . . . . . . . না, সবসময় তা নয়৷ প্রতিমার মতো সুন্দরীদেরও পাঠানো হয়েছে এই ধরাধামে৷ এই টাইপের মেয়েদের দুনিয়াতে পাঠানোই হয় একটা মহান এসাইনমেন্ট হাতে দিয়ে৷ অনেক ছেলের মাথা খারাপ করে দিয়ে অন্য একটা সত্যি-সত্যি মাথা-খারাপ ছেলের ঘরে চলে যাওয়া৷ যে মেয়ে মাথা-খারাপটাইপ ছেলে পছন্দ করে না, সে মেয়ে সুন্দরী হতে যাবেই বা কোন দুঃখে?

যা-ই হোক, এ সবই নিছক স্বগতোক্তি৷ যে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে, সে হয় বাবা, সে পারে না, সে হয় মামা। এই বাবা-মামা’র দ্বন্দ্ব কোনোকালেই আর শেষ হবে না। মুখচোরার দল মুখরার দলের কাছে মুখ থুবড়ে পড়েছে যুগে-যুগে৷ এটাই নিয়ম, এটাই নিয়তি৷ পৃথিবীতে অতি আইরনিক নিষ্কাম কর্ম হলো, অন্যের প্রেয়সীকে দেখে খুশী-খুশী মনে প্রখর দারুণ অতি দীর্ঘ দগ্ধ দিনেও গুনগুন করা ……. আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম …………… রামের গোলায় ধান, সামের গলায় গান। কী কাম! বিধি বাম!

আরো ট্র্যাজিক ব্যাপারস্যাপার আছে। কিছু ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক যেগুলো জোড়া লাগার আগেই ভেঙে গেছে, সেগুলির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাসের মিছিল দীর্ঘ হতে থাকে৷ এমন সম্পর্কের মানে, ‘আমি কেনো বলতে যাবো আগে’ এই ইগো মাথায় নিয়ে কী এক তীব্র প্রতীক্ষায় বসে থেকে-থেকে দীর্ঘ বাজে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ক্লান্তি থেকে মুক্তি খুঁজতে গিয়ে ছোট্টো একটা কথায় অবশেষে চিরমুক্ত হওয়া: সে পাইলো, ইহাকে পাইলো! আর আমি পাইলাম কাঁঠালপাতার ঘ্রাণ-বর্ণ-স্বাদ! (আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে……)

বলদের এই বেদনা বলদ ফেসবুকে প্রসব করে না, হার্টবুকে সখেদে রেখে-রেখে তা দেয়৷ তা-দেয়া বেদনা তাথৈথৈ করে বাড়তেই থাকে। এইসকল নিষ্কাম কর্মে ঈশ্বর বরবরই আশ্চর্যভাবে নিস্পৃহ নির্লিপ্ত উদাসীন৷ কর্মফল শুধুই বিধাতার পরিহাস৷

এ জগতে, হায়, যাহাকেই চাই, আছে তাহার বয়ফ্রেন্ড-হাজব্যান্ড………

প্রেম না করিয়াও ছ্যাঁকা খাইবার যন্ত্রণা প্রেম করিয়া ছ্যাঁকা খাইবার যন্ত্রণা অপেক্ষা তীব্রতর৷

কী আর করা যাবে! সবই নিয়তি! বল ভাই মাভৈঃ মাভৈঃ মাতুলযুগ ঐ এল ঐ…….যারা এই পুজোয় নিজের সাথে নিজে একা সুখে আছেন, তারা আগামী পুজোয় কারো সাথে একাএকা শান্তিতে থাকুন৷ বিদ্যার সাধনায় নিবেদিত জগতের সকল ব্যাচেলরের বিদ্যাসাধনা ধনের দেবীর সাক্ষাতে সাঙ্গ হউক৷ ওম্ শান্তি!

(কোনো এক সরস্বতী পুজোর আগে লেখা)

ভাবনা: চুরানব্বই।

……………………..

বন্ধুরা পচাবে নাতো কে পচাবে? হ্যাঁ, বন্ধুরা সবসময়ই পচায়। আড়ালে কিংবা সবার সামনে। সবার সামনে যখন পচাবে, তখন এমনভাবে পচাবে, যাতে সবাই-ই তোমাদের বন্ধুত্বের দাবিটা খুব স্পষ্ট করে ধরতে পারে। ওরা পচাবেই। আবার অন্যকেউ তোমাকে আক্রমণ করলে নিজেই বুক পেতে দেবে। ওরা উদার মনে তোমার সব ভালো কাজের প্রশংসাও করে। পুরো পৃথিবী যখন তোমার বিরুদ্ধে চলে যায়, তখনও, তুমি কি ঠিক নাকি ভুল, সে ব্যাখ্যায় না গিয়ে ওরা তোমার পাশে থেকে যাবে। তাই, ওরা একটু পচাবেই। এটা ওদের অধিকার। এতে কোনোভাবেই রাগ করা যাবে না।

তবে………..

কিছু বন্ধু আছে, যারা তোমার ভালকিছু দেখলে একটা ছোট্টো প্রশংসাবাক্যও খরচ করবে না। (ব্য্যপারটা কিছুতেই এমন নয় যে, তোমার সেই ‘ভালকিছু’টা ওদের চোখ এড়িয়ে গেছে।) কিন্তু তোমাকে একটু হেয় করা যায় কিংবা সবার চোখে পচানো যায়, এরকম কিছু দেখলেই তোমাকে পচানোর জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে। (কই? এটা তো ওদের চোখ এড়ায়নি। তাহলে কি ওরা শুধু ভালকিছু দেখার ব্যাপারেই অন্ধ? নাকি, ওরা ওদের যখন খুশি তখন অন্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করে?)

এরাও বন্ধু। এরা তোমার অতোটা ক্ষতি হয়তো করবে না। তবে, এরা তোমাকে ঈর্ষা করে এবং সুযোগ পেলে সম্ভবত আড়ালে তোমার নিন্দাও করে। এরা তোমার শত্রু হবে না, বন্ধুই থাকবে। তবে এরা দুইটা ভয়ংকর কাজ করে ফেলে সম্পূর্ণ অবচেতন মনে নিজেদের অজান্তে কিংবা অজ্ঞাতেই। এক। যারা এখনো তোমার শত্রু হয়ে ওঠেনি, শুধু তোমাকে মনেমনে একটু অপছন্দ করে, তাদেরকে তোমার শত্রু বানিয়ে দিতে সাহায্য করে। দুই। তোমার যে শত্রুরা শত্রুতা ভুলে তোমাকে একটু-একটু বন্ধু ভাববার চেষ্টা করছে কিংবা ওরকম কিছু ভাবছে, তাদেরকে আগের শত্রুভাবাপন্ন অবস্থানেই ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তোমার সম্পর্কে তোমার বন্ধুর নিন্দা প্রশংসার চাইতে অধিক গ্রহণযোগ্য। এমন বন্ধু শত্রুর চাইতেও বেশি ক্ষতি করতে সক্ষম। তাই, এদের থেকে সাবধান। ঈর্ষা আর ঠাট্টা কখনোই এক জিনিস নয়।

ভাবনা: পঁচানব্বই।

……………………..

যা ইচ্ছে তা লেখা যায় না। এটা একটা মহাঝামেলা। যাদের লেখা অনেকেই পড়ে, তাদের জন্য লেখালেখি অনেক ভেবেটেবে লেখার মতো একটা কিছু। সবসময় যে অনেকটুকু ভাবতেই হয়, এমন নয়। যারা লেখে, ওরা লেখার সময়ই অবচেতনভাবে পাঠকদের মনের মত করেই লেখে। ওরা জানে, পাঠক কী পড়লে খুশি হবে। আমাদের বড় আদরের হুমায়ূন আহমেদ লিখতে বসতেন একেবারে কিছুই মাথায় না রেখেই। মাথায় যা আসে, প্রথম লাইনটিতে তা-ই লিখে ফেলতেন। বাকিটা আপনাআপনিই চলে আসত। শব্দরা ছোট্টো নীল প্রজাপতিগুলোর মতো—ছোটাছুটিতে মাতে, পালিয়ে বেড়ায়। ধরতে গেলে কিছুতেই ধরা দেয় না। ওদের ভালোবাসতে হয়, আদর করতে হয়—এমনকি কখনো-কখনো অভিমানী প্রেমিকার চাইতেও বেশি, শুধু তখনই ওরা ধরা দেয়। জয় গোস্বামী, শঙ্খ ঘোষের গদ্য পড়ার সময় বিশ্বাস করে বসতে ইচ্ছে হয় না, শব্দ ধরার কোনো ফাঁদ নেই? ব্যোদলেয়ারের পকেট থেকে আধুনিক কবিতা বেরিয়ে এসেছে। সে পকেটে এমন ভাবনা কি বোঝাই ছিল যে আমরা পাঠকরা অমুক-অমুক ভাবনা ভালোবাসব, আদরে গ্রহণ করবো? ‘এখন মাতাল হবার সময়! সময়ের নিপীড়িত ক্রীতদাস হবার বদলে মাতাল হও, একটুও না থেমে। সুরা, কবিতা অথবা উৎকর্ষ, যেটা তোমার পছন্দ।’—অন্তরের এমন অমোঘ সত্যকে টেনে বাইরে নিয়ে আসতে বড্ডো সাহসী হতে হয়! হ্যাঁ, একজন ব্যোদলেয়ারই পারেন এমন করে আহ্বান জানাতে। কবিতা জীবনানন্দের হাত ধরে চলত, নাকি জীবনানন্দ কবিতার হাত ধরে চলতেন, সে বিশ্লেষণে যাওয়ার চাইতে কোনো এক ক্যাম্পে’র তীব্র ঘোরে রাতের পর রাত দিব্যি কাটিয়ে দেয়া ঢের সুখকর। এরকম আরো আছে। থাক্‌, থামি।

পাঠকদের জন্য লেখা মানেই কিন্তু নিজের জন্যই লেখা। পাঠক ভালো না বাসলে পরের লেখাটা আসতে দেরি হওয়ারই কথা। যারা লেখে ওরা কেন লেখে? আমার নিজের কথা বলি। আমি কেন এত কষ্ট করে লিখি? দুটো কারণে। আপনারা লাইক দেন বলে, আর লেখাকে ভাল বলেন বলে। নাহলে কি লিখতাম? কী লিখতাম? লিখতাম, একটু কমিয়ে। লিখতাম, একটু অন্যরকমের। অবশ্য, আমি যাকিছু প্রসব করি, তাকিছু ফেসবুক পোস্ট মাত্র। ওগুলোকে আপনারা অনুগ্রহ করে ‘লেখা’ বলে সম্মানিত করেন বলে সাহস করে একথা বলে ফেললাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “আমি টয়লেট করব।” চমকে উঠলেন? কেন ভাই? রবীন্দ্রনাথ সারাদিন কি শুধু বাণীই দিতেন নাকি? বড়-বড় মানুষেরও কিন্তু বাথরুম পায় এবং উনাদের এটাও প্রকাশ করতে দিতে হবে। শুধু ওদের বাণী নয়গো, হে বন্ধু, হে প্রিয়, মাঝে-মাঝে ওদেরকেও টয়লেট করতে দিয়ো . . . . . .

তবুও সবকিছু সবাইকে বলি না, বলা যায়ও না। এই যেমন, অনেক জ্বর, কাউকে বলি না। খুব মনখারাপ, শেয়ার করি না। পাটা মচকে গেল, ব্যথায় মরে যাচ্ছি, বলতে ইচ্ছে হয় না। বলি ততটুকুই যতটুকু বলা যায়। আমার কষ্টে কার কী এসে যায়? কষ্ট বলে বেড়ানোর জিনিস নয়, কষ্ট বয়ে বেড়ানোর জিনিস। কষ্ট ভাগাভাগি করলে সবসময়ই যে কষ্ট কমে, তা নয়; কখনো-কখনো এর দাম কমেও যায়। আমার কষ্ট আমার কাছে অনেক দামি। কে পারবে এর দাম দিতে? কার আছে এমন ঐশ্বর্য? জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের একটা গান আমি প্রায়ই গুনগুন করে গাই, আমার স্বপন কিনতে পারে, এমন আমীর কই? আমার জলছবিতে রঙ মিলাবে, এমন আবীর কই? (গানটা কেউ শুনতে চাইলে অবশ্যই শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শুনবেন। বাজি ধরে বলতে পারি, শুনলেই রাধাকে শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে। ওই গানের যাদুমাখা রেশ মাথাটা এলোমেলো করেই ছাড়ে!)

অনেককেই দেখেছি, মনে যা-ই আসে, লিখে ফেলতে পারে। জগদীশ গুপ্তের গল্প পড়েছেন না? কিংবা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়রি? মিলান কুন্দেরার উপন্যাসেও নায়ক যাচ্ছেতাই (ভেঙে পড়ুন, যা ইচ্ছে তা-ই) করে। Life Is Elsewhere উপন্যাসের এক অংশের নাম একজন মিলান কুন্দেরা কী স্বচ্ছন্দেই দিয়ে দেন The Poet Masturbates! কিংবা ভাবুন তো, সার্ত্রের নউসিয়া’য় নায়কের মনোদৈহিক খেলার সাবলীল ন্যারেশনের দুঃসাহসের কথা! কী বলবেন ওটাকে? পুরো শরীর কাঁপিয়ে দেয় না অমন অকপট শিল্প-আয়োজন? ওয়েটিং ফর গডো পড়েছেন তো? এটা পড়লে আপনার জীবনদর্শনই পাল্টে যাবে। জীবনটাকে সহজভাবে নেয়ার জন্য এর চাইতে বড় হ্যান্ডবুক আর হয় না। আমি যে কয়টি বই সাথে নিয়ে দ্বীপনির্বাসনে যেতে রাজি, এটি সেগুলোর একটি। এটির কথা ভাবলে মনে হয়, কী হবে ওরকম করে ‘যাচ্ছেতাই’ লিখেটিখে ফেললে? লিখেই দেখি না একটু! জীবনের সবচাইতে তাৎপর্যপূর্ণ পাঠটি পেয়েছি ম্যাকবেথের কাছ থেকে: Life……..is a tale told by an idiot, full of sound and fury, Signifying nothing. জীবনের একমাত্র তাৎপর্য হল, জীবনের কোন তাৎপর্যই নেই। এতকিছু করেটরে কিছুই হবে না। আমরা সবাইই গডোর অপেক্ষায় আছি, থাকি। গডো কে? দেখতে কেমন? গডোকে পেয়ে গেলে কী হবে? কেউই জানে না। গডোকে কেউ কোনদিন পায়নি, পাবেও না কোনোদিনই। জীবন কী? আমরা যা করি, যা করি না, সেসবকিছুর অকপট আখ্যানই জীবন। আমরা কারা? ইডিয়টস্! আমি ইডিয়ট, আপনি ইডিয়ট, আমাকে আপানাকে যারা ইডিয়ট বলে, ওরাও ইডিয়ট। এসব ভাবলে মনে হয়, লিখেই ফেলি না যা লিখতে ইচ্ছে হয়। ডেকেই ফেলি না ‘শুয়োরের বাচ্চা’ যাকে ডাকতে ইচ্ছে হয়। দেখেই ফেলি না একটুখানি যা দেখতে ইচ্ছে হয়। খেয়েই ফেলি না একটু ছাইপাশ, যদি খেতে ইচ্ছে হয়। বলেই ফেলি না ‘ভালোবাসি’ যাকে বলতে ইচ্ছে হয়, ভালো ও না-ই বা বাসল, তবুও। ভালোবাসা দিতে হলে ভালোবাসা পেতেই হবে কেন? ইচ্ছে করে, এই আরোপিত জেন্টেলম্যান মুখোশটা টেনেছিঁড়ে খুলেছুঁড়ে দিই। সুনীলের মত করে বলি, কাচের চুড়ি ভাঙার মতন মাঝে-মাঝেই ইচ্ছে, দুটো চারটে নিয়মকানুন ভেঙে ফেলি . . . . . . . সবকিছু ভাঙা যায় না, যাওয়া উচিতও নয়। কোন গোষ্ঠী, বিশ্বাস, আদর্শ, কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে আক্রমণ করে মহৎ কিছু কখনোই লেখা হয়নি, কোনদিন হবেও না। সাহিত্য তো জীবনেরই আয়না। আর জীবনের মানেই হল, Live and let live. আপনিই ঠিক, কীভাবে বুঝলেন? আমার ভুলটাকে নিয়েই তো এই এতোগুলি বছর দিব্যি কাটিয়ে দিলাম। বাকিটুকুও কাটিয়ে দেয়া যাবে। ব্যাপার না! জীবন ছোটো তো!

আচ্ছা, আপনারা কি খেয়াল করেছেন, আমি যা মাথায় আসছে তা-ই লিখে ফেলছি? থামব নাকি? না থামলেই বা কী? কী হবে? আমি যা, তা-ই! পোষায় কিনা দেখেন! পোষালে ওয়েলকাম, না পোষালে গুডবাই। আর যা-ই হই, হিপোক্রিট হতে পারব না। Better to be a scoundrel than to be a hypocrite. এটা প্রায়ই বলি, বিশ্বাস করেই বলি! আমার কাছে পৃথিবীর সবচাইতে অশ্রাব্য গালি: হিপোক্রিট। আমি মুহূর্তের দুনিয়ায় বেঁচে-থাকা মানুষ। শুধু গীতার মূলকথাটি মেনেও জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়: যা হয়েছে, ভালর জন্যই হয়েছে। যা হচ্ছে, ভালর জন্যই হচ্ছে। যা হবে, ভালর জন্যই হবে। স্প্যানিশ একটা কথা আমার খুব-খুব প্রিয়। Que sera, sera. মানে, Whatever was, was. Whatever is, is. Whatever will be, will be. যা হবার, তা-ই হবে। এতো ভেবে কী হয়? জীবনটা হুট করেই থমকে গেছে? থাকুক না! এই ফাঁকে একটুখানি বেঁচে দেখি তো কেমন লাগে!

ভাবনা: ছিয়ানব্বই।

……………………..

এইতো সেদিন আমার ওয়ালে ক্রাশালোচনা (ক্রাশ+আলোচনা—আমার আবিষ্কৃত ব্যাঞ্জনসন্ধি) হচ্ছিলো। আজকে আমার ইন্টারমেডিয়েট লাইফের একটা মিষ্টি ক্রাশের কথা বলি। (ইন্টারমেডিয়েট মানে, ভদ্রলোকরা যেটাকে এইচএসসি বলেন, সেটা।)

আমরা যারা ২০০২ কিংবা এর আগে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেছি, তারা বড়ই ভাগ্যবান। আমরা ইংরেজি প্রৌজ্‌-পোয়েট্রি পড়ার সুযোগ পেয়েছি। খুব চমৎকার সব লিটারেরি পিস্‌ পড়ার দারুণ সুযোগ হয়েছে। আমাদের মধ্যে যারা একটু বেশি আগ্রহী ছিলাম, তারা পুরো বইয়ের সবগুলো (সিলেবাসে থাক না থাক) প্রৌজ্‌-পোয়েট্রি পড়তাম। অনেক যত্ন করে সেগুলো বাছাই করা হয়েছিলো। আমি এখনো যখন ওই টেক্সটবুকটা ওলটাই, আমার কাছে ওই অ্যানথোলজিটা অত্যন্ত সুনির্বাচিত মনে হয়। আমার ক্লাসিক্যাল লিটারেচারের হাতেখড়ি ওভাবেই। (ইন্টারে ইংরেজিতে পেয়েছিলাম ১৪০। এখনকার বাচ্চারা! নাক সিটকাবে না কিন্তু! আমাদের সময়ে সিস্টেম অন্যরকম ছিল। সেসময় পরীক্ষা দিলেই আমরা মার্কস পেতে বাধ্য ছিলাম না। আমাদের ওটা অর্জন করে নিতে হতো। আমার সেই ১৪০ মার্কসটা ছিল খুব সম্ভবত বোর্ড হাইয়েস্ট!) আমাদের পাঠ্য অনেক টেক্সটেরই কলেবর ছিল সহজীকৃত, সংক্ষেপিত; তবে আমি সবসময়ই চেষ্টা করতাম, আমার গদ্য-পদ্যের পাঠটা যেন হয় মূলানুগ। এই যেমন, দ্য অ্যানশিয়েন্ট মেরিনার পড়ার সময় কোলরিজের দ্য রাইম অব দ্য অ্যানশিয়েন্ট মেরিনার’য়ের অরিজিনাল টেক্সট ডক্টর এস সেনের (নাকি, রামজি লালের?) লেখা গাইড বই থেকে পড়ে নিয়েছিলাম। এরকম আরো অনেক-অনেককিছু। পাবলিক লাইব্রেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে-বসে নোট করতাম। কতো-কতো কোটেশন পড়েছি সেইসময়! সেইসময় ছিল কোটেশন মুখস্থ করার সময়! এই ছুতোয় ইংরেজি সাহিত্যের অনেক বই পড়া হয়ে গিয়েছিল। বাজার থেকে রামজি লাল আর ডক্টর এস সেনের গাইড বই কিনে অনার্সের টেক্সটগুলো পড়তাম। উনারা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। সেই থেকে আমার ইচ্ছেই ছিল ইন্টার পাস করার পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়বো। হায়! সে আর হলো কই? নিয়তি টেনে নিয়ে যেতে চাইলো বোকাবাক্সের অন্দরমহলে, আর আমি বেচারা ওই দামি জীবিকা-বিদ্যার অলিন্দ ঘুরে খিড়কি দিয়ে কোনোরকমে পালিয়ে বাঁচলাম! কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করলাম, ইঞ্জিনিয়ার হলাম না। ওটা ছিল আমার আমাকে জোর করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর প্রতিবাদ। আমাদের জেনারেশনের অনেকেরই সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টিতে ইন্টারের পুরনো সিলেবাসের অনেক বড় একটা ভূমিকা ছিলো। আজকালকার ছেলেমেয়েরা সেসব রত্নের খোঁজ নিতান্ত আগ্রহ না থাকলে কোনোদিনই পাবে না। পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে-বসে নোট করতে-করতে ইংরেজি ভাষা আর ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি যে প্রচণ্ড ভালোবাসা জন্মেছিলো, সেই ভালোবাসার প্রতি আমি আজও কৃতজ্ঞ। সাহিত্য কোনোকালেই আমার গলাচিপে ধরেনি, পরম মমতায় ঠোঁটযুগল চোখে ছুঁইয়েছে। ওই গভীর বিশ্বস্ত স্পর্শ আজো টের পাই।

যেকথা বলছিলাম, মানে, ক্রাশের কথা। আমাদের একটা কবিতা পাঠ্য ছিল: দ্য সলিটারি রিপার, ওয়ার্ডসওয়ার্থের লেখা। সেটা আবৃত্তি করে পড়তাম আর সেই রিপারকে লুকিয়ে-লুকিয়ে ভালোবাসতাম। সাথে মিলিয়ে পড়তাম, একই শব্দ যাদুকরের আই ওয়ানডারড লৌনলি অ্যাজ অ্যা ক্লাউড। এর সাথে মেশাতাম, হেরিকের টু ড্যাফডিলস্‌। সেইসব আশ্চর্য ফিউশন কখনো ভোলার নয়। সেইসব দিন ছিল পৃথিবীর সব সলিটারি রিপারকে নীরবে ভালোবাসার দিন। তার নাইটিংগেলের কণ্ঠে বিষাদের সুরমাখা কল্পনার সংগীতে ভেসে যাওয়ার দিন। সেই কবিতা পড়তাম, সেই দূরদেশের কিষাণীকন্যাকে হৃদয়ের গভীরে অনুভব করতাম। আহ্‌! সেইসব কৈশোরের ভালোলাগার দিনগুলি! ১৮০৭ সালের সেই কবিতায় ওয়ার্ডসওয়ার্থ আজো অনুভব করান, দ্য মিউজিক ইন মাই হার্ট আই বোর, / লং আফটার ইট ওয়াজ হার্ড নো মোর। ১৮৪৫ এ এসে লংফেলো একটু সুর বদলে গাইলেন, অ্যান্ড দ্য সং, ফ্রম বিগিনিং টু এন্ড, / আই ফাউন্ড অ্যাগেইন ইন দ্য হার্ট অব অ্যা ফ্রেন্ড। …………… না, অনেকদিন পর সেই মানসীর সাথে আমার আবার দেখা হয়েছিলো। রোমান পোলানস্কির মুভি ‘টেস্‌’ যারা দেখেছেন, তাদের কারোই কি মুভির ওই অপরূপা কিষাণীকে দেখে রিপারের কথা একটিবারও মনে হয়নি? আমার তো হয়েছে। বারবারই মনেমনে হেসেছি আর এটা মনে করতে ভালোলেগেছে, আমি দেখিলাম, আমি ইহাকে দেখিলাম। এতোগুলি বছর বুড়োলো, অথচ এই আশ্চর্য মানবী সেই একই চিরন্তন রূপেই রয়ে গেলো!

দ্য সলিটারি রিপার যাদের পড়া আছে, তারা ‘টেস্‌’ দেখে একটু বলবেন, ওরকম ক্রাশানুভূতি (ক্রাশ+অনুভূতি) হয় কিনা?

ভাবনা: সাতানব্বই।

……………………..

পাবলিকের এক্সপেক্টেশন নেচারটা অদ্ভুতরকমের বিশ্রী। কারো আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন কোনো সেবাপ্রদানে কিংবা ব্যবসায় নিয়োজিত থাকলে, সে আশা করে বসে ফ্রিসার্ভিস কিংবা কম টাকায় সার্ভিস। অথচ আশা করা উচিত, দ্রুত এবং সবচে’ ভালো সার্ভিস। এতে করে নিজের আত্মসম্মানটাও বজায় থাকে, আবার যে সেবা দিচ্ছে কিংবা পণ্য বিক্রি করছে, সেও বিরক্ত এবং বিব্রত হয় না।

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ডাক্তারের পয়সা ঠিকমতো না দিলে অসুখ সারে না, মাস্টারের পয়সা ঠিকমতো না দিলে পরবর্তীতে বেঠিক মাত্রায় পয়সা খরচ হওয়ার রাস্তা কীভাবে যেন খুলে যায়। আপনি কারো কাছ থেকে সুবিধা চাইতেই পারেন, তবে তার অসুবিধা করে নয়। যারা অসমর্থ না হয়েও ফ্রি-তে সার্ভিস প্রত্যাশা করে, তাদেরকে আমার ব্যক্তিত্বহীন, মেরুদণ্ডহীন প্রাণী মনে হয়। আরো একটা ব্যাপার আছে। কম পয়সায় ভাল সার্ভিস পাওয়া যায়, এই কথাটা প্রায়ই ভুল। কাছের মানুষের কাছ থেকে ফ্রি-তে বা কম পয়সায় বাজে বা কাজ-চলে টাইপ সার্ভিস নেয়ার চাইতে দূরের প্রফেশনাল কারো কাছ থেকে বেশি পয়সা দিয়ে হলেও ভাল সার্ভিস নেয়াটা ভালো। অবশ্য ঠিকমতো পয়সা না দিলে আন্তরিকতার অভাবে কখনো-কখনো সার্ভিস কাজ-চলে টাইপ হয়ে যেতে পারে। যাওয়ার-ই তো কথা! ফ্রি গুড়ের স্বাদ তেতো হলেও বা কী করার আছে?

যদি আপনি কাউকে সবসময়ই নিঃস্বার্থভাবে আনুকুল্য দেখান, তবে তিনি একটা সময়ে ভাবতে শুরু করবেন, আনুকুল্য পাওয়া উনার অধিকার এবং আনুকুল্য দেখানো আপনার দায়িত্ব। কৃতজ্ঞতা তো প্রকাশ করবেনই না, বরং আপনার প্রতি কিছুটা ঔদাসীন্যও দেখাতে পারেন। কিছু-কিছু স্টুপিড আছে, যারা থ্যাংকস্ দিতে পর্যন্ত জানে না। তাই মাঝে-মাঝে অন্যের পথ সহজ করে না দিয়ে পথের কষ্টটা উনাকে বুঝতে দেয়া ভালো। যে লোক উপায় বাতলে দিলে সেটার কোনো দাম দেয় না, সে না হয় মাঝেমধ্যে নিরুপায়ই থাকুক। সহজ হৃদয় আর দুর্বল হৃদয়কে যারা এক করে দেখে, তাদের জন্য হৃদয়ের সবকটা দ্বার রুদ্ধ করেই রাখুন না।

ভাবনা: আটানব্বই।

……………………..

আমার ২ বছরের ভাগনি। এক সন্ধ্যায় ওকে রবীন্দ্রনাথ চেনাবো বলে বড় আগ্রহ নিয়ে নীল রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর সাদা জলছাপ দেয়া একটা বিমূর্তটাইপের রবীন্দ্রপ্রতিকৃতি, যেটা দেখলে ঠিক বোঝা যায় না, ওটা রবীন্দ্রনাথ, ওটা দেখিয়ে ওর আদুরে চুলগুলোতে বিনি কাটতে-কাটতে ওর নরোম ফর্সা নাকটা আলতোভাবে টেনে দিতে-দিতে বললাম, “মামা, এই যে দেখছ, ইনি রবীন্দ্রনাথ।”

ওর এতটুকুন থুতনিটা আমার হাঁটুর ওপরে রেখে বেড়ালের মতো গুটিসুটি মেরে চোখ বড়-বড় করে জিজ্ঞেস করল, “মামা, এটা কামড়ায়?” ওর চোখেমুখে অসীম বিস্ময়ের ছাপ সুস্পষ্ট।

ভাগনিকে চুমু খেয়ে প্রচণ্ড শব্দ করে হাসতে লাগলাম। আমি হঠাৎ এতটাই মজা পেলাম যে, কিছুতেই হাসি থামাতে পারছিলাম না।

আমাকে দেখে ভাগনি আরো অবাক হয়ে টুকটুকে হাতদুটো দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে ছোট্ট মাথাটা দোলাতে-দোলাতে আমার নাকের ঠিক সামনে এসে অপার কৌতূহলে আধো-আধো বুলিতে জানতে চাইল, “এটা ভূউউউতততত না? মামা, এটা কামড়ায়? আমাকে কামড়াবে নাআআআ……?!”

ভাগ্যিস, অনেক কায়দাকানুন করে এই পিচ্চিকে ভূত চিনিয়ে দিয়ে ছিলাম। আমরা ভূতের ভয় না-পাওয়া বোরিং পিচ্চি চাই না। যে যা-ই বলুক, যাদের শৈশবে ভূতের ভয় ছিল না, ওদের আবার শৈশব ছিল নাকি? আহা! এই ভূত না থাকলে আজকের এই আদরের ভূতেন্দ্রনাথ ঠাকুরাইনকে কোথায় পেতুম?

যারা-যারা এই ভাবনাটা পড়লেন, তাদের সবার বিছানায় আজকে রাতে ভূত ঠাকুরের শুভাগমন হউক। প্রার্থনা করি, আপনাদের সবাইকে এই রাতেই ভূতে ধরুক!