ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (২৭শ অংশ)

ভাবনা: একশো তিরাশি।

……………………………………..

কে জে যেশুদাস। এ পর্যন্ত গেয়েছেন ৫৫০০০ এরও বেশি গান; ২২টি ভাষায়। সংস্কৃত রাশান আরবি সহ আরও অনেক ভাষার গান আছে তাঁর অনার বোর্ডে। ঝুড়িতে আছে পদ্মভূষণ পদ্মশ্রী সহ আরও অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ৭বার। ক্লাসিক্যাল মিউজিকেও তাঁর সমান স্বচ্ছন্দ্য বিচরণ। বলা বাহুল্য, ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গান গাইবার রেকর্ড তাঁর।

He has nobody before him but himself to prove himself. It’s great to feel!

এইসব মানুষের কথা ভাবলে আমার এবং আমার মত অহংকারী আরো অনেকের সমস্ত হাস্যকর অর্থহীন দম্ভ আমাকে ব্যঙ্গ করতে থাকে। এই অকৃতী অধম আমাদের প্রতি ঈশ্বরের প্রশ্রয়কে আমাদেরই অর্জন ভেবে ভুল করার মোহ কাটাতে চাই না; ইচ্ছে করেই। এ মোহই আমাদের একেবারে শেষ করে দেয়।

ওরকম কেউ-কেউ আছেন, যাঁরা শুধুই জন্ম নেন, আর মরেন না।

স্যার, আপনি যতটা গেয়েছেন, ততটা কথাও কেউ একজীবনে বলতে পারে না! এই আমাদের কথা বলা মাত্রই তো বকে যাওয়া! সুরের অবগাহনে এতটা ভেসে যাওয়া! কী স্বর্গীয় আনন্দ! বেঁচে থাকার কী অপার্থিব সুখ! সুরে বাঁচা—সে তো শ্রেষ্ঠ বাঁচা! খুব ভাল থাকুন।

সুনীল বলেছিলেন, আত্মতৃপ্তি মৃত্যুর সমান।

কীসের মোহ এতটা ছোটায় এইসব বড়-বড় মানুষদের? ব্যাপারটা বেশ ভাবায়, প্রায়ই। বাংলা ভাষায় ছাপার অক্ষরে সবচেয়ে বেশি সৃষ্টি সুনীলের। কলম ধরলেই লেখা আসত তাঁর। তৃপ্তির খোঁজেই এই সব মানুষ আমৃত্যু ছোটেন। মৃত্যুও তাঁদের থামাতে পারে কি? পারে না তো! ওরা বাঁচে, যতক্ষণ আমরা বাঁচি।

এই তো গেল ৭ সেপ্টেম্বরে সুনীল বিরাশিতে পড়লেন। লেখকদের জন্মদিনে কে কবে মনে রাখে উনি নেই? রাখে না, মনেই থাকে না ওটা, তাই। প্রিয় লেখক, শুভ জন্মদিন। বেঁচে থেকো।

ওগো, একটা ছবি দাও না, অরিন্দম! এমন কর কেন? পিলিইইসস দিয়ে দাও। অন্তত যেশুদাসের কথা ভেবে ইগোফিগো গোল্লায় চুলায় আর নদীতে ফেলে দিয়ে আমায় একটা ছবি দিয়ে দিন, স্যার! যেশুদাসকে নিয়া অ্যাতো প্যাঁচাল পাড়লাম, এর কি কুনুই দাম নাই?

আচ্ছা, কল্পনায় যতটা টাইট হাগ করা হয়, বাস্তবে ওরকম করলে, কেউ বাঁচবে!? মনে হয় না বাঁচবে! কিন্তু কাউকে ওর চাইতে আস্তে বুকের মধ্যে পিষলে তো ঠিক পোষাবে না। হুহ্‌! অনলি কল্পনা ইজ রাইট অ্যান্ড রিয়েল!

কী ভীষণ চটে আছি মানুষটার উপর! সেদিন, কী যে করে ফেলতে মন চাচ্ছিল! রাগ বা কষ্ট মানেই—নিজেকেই শাস্তি, অর্থাৎ সব কিছু বন্ধ—নিজের সাথে কথাবলা, নিজেকে সময় দেয়া, নিজের দুনিয়ায় অবাধ চলাচল—সব কিছুই! কী কষ্ট কী কষ্ট কী কষ্ট! মানুষটার তো কিছু হয় না এসবে। আমার কথা…….এর কথা…….ওর কথা…….সে’র কথা……তার কথা…….বলে আসলে কিছু নেই। কেন জানি মনে হয়, সবার কথাই সবার জীবনে কোনও না কোনও এক সময়, কোনও না কোনও ভাবে বড় বেশি প্রয়োজন। আমার কথা, মানে এইসব বাজে কথাও কাজে লাগতে পারে—আপনার জীবনে, আপনার কাছের কারও জীবনে। প্রকৃতিতে কোনও কিছুই ফেলনা নয়। আমরা দাম দিই না, পরে সুদেআসলে দাম দিতেই হয়। জানেন, অদ্ভুত সব সমস্যা যখন বড় বেশি যন্ত্রণা করে, তখন কখনও ইচ্ছে করে, নিজেই একটা আস্ত সমস্যায় পরিণত হয়ে সকল সমস্যার গলা টিপে ধরে ওদের উপর প্রতিশোধ নিই!

ধ্যত্‌! হিংসুটে মেয়েগুলান কোথাকার! সব কিছুকে হিংসা করতে-করতে…….এখন দেখি আমার ‘দুধু’ও হিংসা করে! জীবনভর ছেলেদের কাছ থেকে একশো হাত দূরে থেকেছি, এখন মেয়েদের কাছ থেকেও দূরে থাকতে হবে! রঙের মেয়েগুলা সব! ঢঙের মহিলা-বান্দর সব! এত রঙঢঙ দিয়ে কী হবে? রঙধনু তো কেবল আকাশেই সুন্দর! মগজ যার ফাঁকা, ঢঙে তার ঘোরে কীসের চাকা? হুহ্‌!

অরি, আপনার উপর আমার রাগ হয়েছে। কোথাকার কোন তন্ময়, সে কেন আপনাকে এতগুলো কথা শোনাতে পারবে? আজব! আপনাকেও কি তার মত করেই তাকে উত্তর দিতেই হবে? ছোটলোকের সাথে ছোটলোকি করতে হয় না। আপনি ওর সাথে ঝগড়া করলে তো ও জাতে ওঠে, এটা আপনি বোঝেন না? কেন মানুষকে অপমান করার চান্স দেন? ও বিদেশি য়্যুনিভার্সিটিতে পড়ায় তো রেজাল্টের জোরে, মানসিকতার জোরে তো নয়। বড় ডিগ্রির সাথে মেন্টালিটির কী সম্পর্ক? কেন আপনাকে সস্তা লোকের সাথে সস্তা হতেই হবে? আমাদের অরি’টা যেন কখনওই কাউকে এমন ভাষায় আনসার না করে। দেখতে খারাপ লাগে। এত কষ্ট লেগেছিল সেদিন! অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, কিন্তু আমি যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে ইচ্ছে করলেই সব যে বলা যায় না। অগত্যা, কী আর করা!

আচ্ছা, আপনার লাস্ট স্ট্যাটাসটা কি আমার লাস্ট মেসেজের রিপ্লাই? আমি আবার অত শত বুঝি না। আমার মাথা বড়, বুদ্ধি ছোট। অরি আমার কাছে যতটা অনুভবের, সেখানে দাঁড়িয়ে আমার নিজের কাছে নিজের কথাগুলো বলাটা খুব প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে, তাই বলেছি। আপনার অস্তিত্ব যতটা আমার বাইরে, ততধিক আমার ভেতরে। আপনি আমার ভাবনার একটা বিশাল অংশ জুড়ে আছেন। তাই আপনাকে পেতে আমার সত্যিই আপনাকে লাগে না। তবু কিছু কথা প্রায়ই আপনাকে বলেই ফেলি। আপনাকে আমার এভাবে বলাটা যদি আপনার কাছে ঠিক মনে না হয়ে থাকে, তাহলে আমি দুঃখিত। তবে এ দুঃখ আমার বলা থামাবে বলে মনে হচ্ছে না। আপনি হয়তো বিরক্ত হন, আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। আমার একান্ত সত্তার সাথে গল্প না করে আমি বাঁচব কী করে? বাই দ্য ওয়ে, কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নৌ, এই যে এত জ্বালাই, তবু আপনি আমাকে ব্লক করে দেন না কেন?

ভাবনা: একশো চুরাশি।

……………………………………..

শুভ বজ্রপাতে কেঁপে-কেঁপে ওঠা বৃষ্টি দুপুর। এমন এক ভয়ংকর বিদ্যুৎ চমকালো, সবাই ভয় পেয়ে গেলাম, ঝুউম বৃষ্টি আর বজ্রপাতে গ্রামটা কেমন ভূতুড়ে অদ্ভুতুড়ে লাগছে! কালই, অন্য গ্রহে ভাগব! এই তোরা কে কোথায় আছিস, আমার রকেটটা রেডি কর!

চুলে চুইংগাম লাগায় দিব, হুঁউউউউ……, ছবি না দিলে!

আমি ভাবি, ছবিটা না পেলে না জানি কী হয়ে যাবে!

আপনি ভাবেন, ছবিটা দিলে না জানি কী হয়ে যাবে!

কিন্তু, সত্যটা আমরা দুজনই জানি। তবুও, মিথ্যেতেই যে বাঁচি! নিজেকে থামিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আমার একমাত্র সামর্থ্য অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করা পর্যন্তই, সেটাও নাহয় করলাম, কিন্তু ভেতরের অধৈর্য অপেক্ষাকে থামাতে পারবে, সে কোন ডিঅ্যাক্টিভেশন? আচ্ছা, হৃদয়টাকে ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেয়া যায় না?

সঠিক মানুষ আর সঠিক সময়ের সাথে মিথ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে সম্পর্কের রাস্তায় দূরত্বের প্রশস্ততা বাড়াতে নেই। তা না হলে, সে সুযোগে মিথ্যে মানুষ আর মিথ্যে সময় এসে প্রশস্ত ফাঁকা রাস্তায় পাকাপোক্ত ঘর বানিয়ে নেয়। তখন চাইলেও সে ঘর আর ভাঙা যায় না। ঠিক ঘর পালকের আলতো আঘাতেই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, ভুল ঘর শত ঝড়েও ঠিক টিকে থাকে। এমনি করে মুহূর্তের ভুলে ভুল ঘরেই জীবন কেটে যায়। রোজ নতুন সুরের আহ্বান, পুরনো সুরে একঘেয়েমি, নতুনের আগমন আর গমনের মহোৎসব, উৎসবের হাওয়ায় নানান স্বাদের ঘোর আর মাদকতা—বহুদিনের পুরনো নিয়মে নিয়ম ভেঙে নতুনের রেশে মাতাল হয়ে নতুনে নেশাধরানো অভ্যস্ততা। একটা সময় পর…….নতুনের আর আগমন না হওয়া; হায়, ততদিনে পুরনো সুরকে ভালোবাসার অভ্যেসও গড়ে না ওঠা—একসময় দুই সুরেই টান পড়া! অবশেষে সুরের এমন উল্টোরথের টানাপড়েনে জীবন ভয়াবহ বেসুরে বাঁধা পড়া। জীবনের এ নিয়তি ভাগ্যের নয়, মানুষের হাতে গড়া।

জানেন সকাল, প্রায়ই ইচ্ছে হয়, সব ছেড়ে ছুঁড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাই। ইচ্ছেটা অনেক ছোটবেলা থেকেই। ছেলে হলে, হয়তো এতদিনে নিশ্চিত কোনও পালিয়েযাওয়া রাজ্যে থাকতাম। আপনি আমাকে কখনও রহস্যময়ী বললে আমার আপনাকে বলতে ইচ্ছে করে, সবটাই খোলা যার, অতি সহজ, বেশি সাধারণ একটা মানুষ কেমন করে রহস্যময়ী হয়?

আমি প্রায়ই অন্য লোকের জীবনে বেড়িয়ে আসি। একদিন আম্মুর, একদিন আপুর, একদিন ভাইয়ার, একদিন কোনও বন্ধুর। আমার মনে আব্বুর স্মৃতি খুব আবছা, তাই আব্বুর জীবনটাতে বেড়াতে যেতে পারি না। অন্য কেউ হয়ে মাঝেমাঝে বাঁচতে বেশ লাগে! নিজের জীবনের উঠোনে বেঁচে অন্যের জীবনের উঠোনে রোদ পোহাই। ও হ্যাঁ, কখনও-কখনও কিন্তু সকাল’ও হয়ে যাই! আপনি বুঝতে পারেন না এটা?

শাস্তি দিতে হয় ক্ষমা করে দেয়ার পর, যদি অপরাধটা শাস্তিযোগ্য হয়। আপনি আমায় একবার ক্ষমা করবেন? দেখবেন নাকি ক্ষমা করতে কেমন লাগে? আঘাত না করার শক্তি যে কত বেশি, যে আঘাত করে, সে কখনও সেটা টের পায় না। আমাকে আঘাত না করে আপনি খুব সহজেই সে শক্তিটা অনুভব করতে পারেন। তা করবেন কেন? আমাকে আহত দেখতে যে অনেক সুখ! ভোঁদড় একটা! আমি পেত্নী বলে কি আমার জন্য কোনও ভালোবাসা থাকতে নেই?

মানুষের ভালোবাসা থেকে দূরে থাকতে চাই। আমি বলছি না যে আমি কাছে থাকলেই মানুষ একদম আমাকে ভালোবেসেটেসে ফেলবে, তবুও নীরবে থাকতে ভাল লাগে। যারা অনেক ভালোবাসতে পারে, প্রায়শই তাদের জীবন ভালোবাসাহীনতায় কাটে।

আর জেগো না প্রিয়, প্লিজ এবার ঘুমাও। জানো, এসেছিলাম…….

আচ্ছা, সুইসাইড করার উদ্দেশ্যে সিলিং ফ্যানে ঝুলে পড়ার পর কি মানুষ আসলেই নিজেকে আর বাঁচাতে পারে না? নাকি, যেহেতু সুইসাইড করার জন্যই ঝুলেছে, তাই বাঁচতে পারলেও ইচ্ছে করেই বাঁচে না?

আমার তো মনে হয়, গলায় একটু টান পরলেই আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিব! নাকি সত্যি-সত্যিই আর ছাড়ানো যায় না? ট্রাই করে দেখব নাকি? ওমাগো!

এই যে মিস্টার! শুনুন! কখনও কোথাও দেখা হয়ে গেলে কিন্তু ভীষন বিপদ হয়ে যাবে! আমি কিন্তু ডানেবাঁয়ে তাকাব না। সোজা জড়ায়ে ধরে চকাস্‌ করে একটা চুমু আর কুটুস্‌ করে একটা কামড় দিয়ে ফেলব! এরপর, দৌড়াইয়া পালায় যাব! তারপর, আশেপাশের পরিচিত বা অপরিচিতরা কে কী বলবে, না, কী করবে, তা একান্তই তাদের ব্যাপার! এর জন্য আমি কোনও ভাবেই দায়ী নই! আমি ভীতু নাকি? আমাকে কী ভাবেন, হুহ্‌? “লাগুক যুদ্ধ করি না ভয়…….যাব পলাইয়া!”

ভাবনা: একশো পঁচাশি।

……………………………………..

কারও সাথে যতই স্বার্থের লেনদেন থাকুক, তার সর্বাঙ্গে তেল মালিশ করলেও অন্তত পাছায় তেল মালিশের সময় হুঁশ থাকুক, সে হাগছে কি না। স্বার্থের টানে, এতটা বেপরোয়া হতে হয় কি?

দিগন্তছোঁয়া মিথ্যা—তাকে কখনও যায় না ছোঁয়া।

সুখগুলো যে প্রতি রাতে হায়—নিঃশ্বাস চেপে ধরে!

ভাবি, খুব বেশি কিছু কি চেয়েছিলাম?

কখনও ইচ্ছে হয়, ‘তাহাদের’ একটা লিস্ট আপনাকে দিব। এতে করে যাদের আপনি ভুলে গেছেন কাজে চাপে, নতুনের ভিড়ে হারিয়ে ফেলেছেন পুরনো যাদের, তাদের খানিকক্ষণের জন্য হলেও মনে পড়বে। মনে পড়বে আরও কত যে কিছুউউউউ!

I have no emotions for you, please try to understand it. আমার জীবনে শোনা সবচাইতে কষ্টের কথা! আপনি এত নির্দয় এত স্টুপিড এত ফাজিল কেন?

আচ্ছা, তোমাদের সবার যদি ‘তেমনই’ চাই, তবে তোমরা আবার ‘তেমন’ চাও কেন? তোমরা আসলে কী যে চাও, তা তোমরা নিজেরাও জান না। বুঝ কিছু তোমরা, আসলেই কী চাই তোমাদের?

লাভক্ষতির হিসেবের নেশায় মেতেথাকা মানুষগুলিকে দেখে ভাবি, ওরা শুধু জানে না, মৃত্যুতে কী লাভ, লাভের আর সব হিসেবই ওদের কাছে আছে।

কাহার যে কীসে সুখ হায়, কে বলিতে পারে!

মানুষ অদ্ভুত। মানুষের ভালোবাসা অদ্ভুত, ধারণ ক্ষমতাও অদ্ভুত, ধরনও অদ্ভুত, প্রকাশভঙ্গিও অদ্ভুত।

ইসসসস্‌ আমার হাত দুটো নিয়ে-নিয়ে ঢঙ করে ছবি তোলা হচ্ছে! ওগুলো দাও না, ছোঁবো!

আমি যে আসলে কী চাই, তা নিজেই জানি না। দ্বৈতসত্তা, আই অ্যাম সরি। আই অ্যাম রিয়েলি সো সরি! আমি সত্যিই চাইনি কখনও তেমন হয়ে রঙহীন রঙিন বৃষ্টিতে ভিজতে! দোহাই তোমার, আমায় অমন করে ভিজিয়ো না। কখনও হুট্‌ করে বিবেক এসে সামনে দাঁড়িয়ে গেলে, উত্তর কী দেবে?

আচ্ছা, আপনাকে একটা চ্যাপ্টা হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দিলে একদম ছোট’র মত দেখতে লাগবে, তাই না? বলি, একটু কম পাপ করলে হয় না? সৃষ্টিকর্তা যা দেন, মুহূর্তেরও কম সময়ে নিশ্চয়ই তা নিয়েও নিতে পারেন—এটা আমি বিশ্বাস করি। তাঁর নির্দেশগুলো এতটা অবলীলায় অবজ্ঞা করা যায় কি?

কারও প্রতি কারও অনুভূতি ‘তৃতীয়’তম হলেও দ্বিতীয় মানুষটির ক্ষেত্রে প্রথম মানুষটির প্রতি অনুভূতি ‘প্রথম’ বা ‘চতুর্থ’ হতেই পারে!

শরীরটা কেন এত খারাপ লাগে…….সবসময়ই খুব খারাপ থাকে।

প্রশ্রয় দিয়ে, আশ্রয় না-দেয়া। অপরাধ নয়? কেন এমন করেন? আচ্ছা, আপনি নিজেকে পাপ-প্রুফ ভাবেন, না?

কী ভীষণ কষ্ট হয় দ্বৈতসত্তা যখন কাঁদে! নিজের কাছ থেকে নিজের পালানোর কোন উপায় নেই যে! কী করব আমি! এত যে চাই একটু নিষ্ঠুর হতে, ভালোবাসাকে ছুটি দিতে, মায়া ছাড়তে…….পারি আর কই? ভালোবাসাহীনতায় তো আছিই, প্রার্থনা করি ভালোবাসাহীন হয়ে বাঁচার। আবার ভয়ও হয়, প্রার্থনা যদি সত্যিই একদিন এতটুকুও কবুল হয়ে যায়, সেদিন না আবার—আমি আমার নিজেকেই চিনতে না পারি! কিন্তু কী করব? একটু স্বার্থপর যে হতেই হবে—এ যে জীবনেরই দাবি! ঘুম ঘুমোচ্ছে, তাই আমি জেগে……

কেবলই সময়ের দ্রুত ছুটে চলা, অন্যায়ের সাথে অন্যায়ের জেতার দুর্বিনেয় প্রতিযোগিতা, শুধু চোখ দিয়ে দেখি, মন দিয়ে ছুঁই না আর আগের মত। অনেক তেষ্টা পায়, হাতের কাছেই পানির গ্লাস—খেতে একটুও ইচ্ছে হয় না।

অমানুষগুলো দেখতে ঠিক মানুষের মত। কিছু কষ্ট কারও সাথে শেয়ার করা যায় না—এমনকি নিজের সাথেও! এরকম সব কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি! কোনও মানে হয়? নিজেকে উপহাস করতে ইচ্ছে করছে—ওঃ! তুই মানুষ ভালবাসিস! হাহ্‌ হাহ্‌ হাহ্‌!

জীবন শেখাল, জীবন থেকে কষ্ট কখনও নিঃশেষ হয়ে যায় না, সময়ে-সময়ে কষ্টগুলো শুধু রঙ বদলায়। কখনও হয়তো সুখ এসে একটু সঙ্গ দেয়, কিন্তু দিনের শেষে যে কষ্ট সে কষ্টই থেকে যায়।

কষ্ট কষ্ট আর কষ্ট! মরলে বেঁচে যাবে, নয়তো দিনের পর দিন শুধু কেঁদেই যাও—এর নাম জীবন!

ভাবনা: একশো ছিয়াশি।

……………………………………..

এ ঘরেতে আর আস না,

যা ছিল তোমায় ঘিরে খুব একান্তে—আর হাসে না!

ভালোবাসা ভালোবেসে

নেয় না কোলে আর কখনও,

এই বৃষ্টি! একটু কোলে নে না আমায়!

বলছি শোনো, ভালোবাসা না-ই বা দিলে,

নিলেই কোলে একটু নাহয় ঘৃণাবেসেই!

ঘৃণারও যে প্রাণ আছে, তা…….ভেবেছিলে?

বাসলে ভালো, কী-ই বা হবে?

কমে যাবে?

নাকি আমি…….

বোকা মনকে বোঝায়টা কে?

মন রে তুই থাকিস বোকা এমনি করেই—সারাজীবন।

আমিই নাহয় চালাক হব!

‘বিচিত্র’ শব্দটা দিয়ে যতটা বৈচিত্র্য প্রকাশ করা যায় না, জীবন ততটাই বৈচিত্র্যময়। চলার এ দীর্ঘ পথে কত মানুষ যে কতভাবে জীবনের সাথে মিশে থাকে! সময়ে-সময়ে মানুষের বিচ্ছিন্ন কিছু সখ্যতা হাতে হাত রেখে সময়কে আরও সুন্দর করে তোলে। আমি তাদের প্রায় সবাইকে প্রাণভরে মনে রাখি। ঠিক মনে যে রাখি, তা নয়, আমি আসলে ভুলতে পারি না। সেই কত বছর আগে এক ছোট্ট টোকাই ছেলেকে দুই টাকা দিলে সে আমায় থ্যাংকস জানিয়েছিল, তা আজও আমায় মুগ্ধ করে। ক্লাস নাইনে যখন পড়ি, তখন পাশের বাড়িতে অসম্ভব রূপবতী পাঁচ বোন থাকত। ওদের দেখতাম আর অবাক হয়ে ভাবতাম, পাঁচজনকেই কেন অমন সুন্দর হতে হবে? আমি কেন ওদের মত অত সুন্দর নই? মাঝেমধ্যে রাস্তায় বের হলে ওদের একটুআধটু দেখতে পেতাম। প্রায় বছর খানেক পর ওদের সাথে সখ্যতা হলে জানতে পারি, এই সুন্দরীরা নাকি রাতে রুমের লাইট নিভিয়ে জানালা দিয়ে চুপিচুপি আমাদের দেখত! আমরা (আমি ও আপু) নাকি অনেক সুন্দর! আমাদের নাকি ওরা ভীষণ পছন্দ করে! হায়! এমনও হয় নাকি? সব চেয়ে অবাক করা যেটা ছিল, তা হল, এই সুন্দরীদের একমাত্র ভাই, দেখতে যে অবিকল রাজপুত্র, সে নাকি আমায় ভালোবাসে! কী বলে এসব? কী যে খুশি হয়েছিলাম সেদিন! মনে হচ্ছিল, আজকের পর থেকে যদি কেউ কখনও আমায় অসুন্দর বলে, তবে সে যে-ই হোক না কেন, আমি সোজা তার নাকের উপর কয়েক কেজি ঘুষি বসিয়ে দিতে পারি। থাক সে কথা। একেবারে পর হয়েও কিছু মানুষ অনেক সময় আপনের চেয়েও আপন হয়ে যায়। রিয়াজ কাকা ছিলেন তেমনই একজন মানুষ। উনি যে আমাদের কতটা ভালোবাসতেন সেটা বুঝতে পেরেছি আব্বু মারা যাবার পর।

আমার আব্বু আমাদের তিন ভাইবোনকে নিয়ে সারাক্ষণই পড়ায় বসে থাকতেন—সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। আমরা একটুও বিরক্ত হতাম না। খাওয়া-দাওয়া সহ বাকি সবকিছু হত এই পড়ালেখার মাঝেই। আমাদের দেখে অন্যরা আব্বুর উপর বিরক্ত হত। বলত, এত ছোট বাচ্চাদের কেন সারাদিন পড়ায় বসিয়ে রাখা হয়? আমরা কিন্তু ভীষণ মজা পেতাম, আব্বু অনেক গল্প করতে জানতেন। রিয়াজ কাকা প্রায়ই আমাদের বাসায় এসে দেখতেন, আব্বু আমাদের নিয়ে পড়াশোনায় মেতে আছে। এটা উনি খুব পছন্দ করতেন।

সেই ১৯০৩ সালে উইলভার রাইট আর অরভিল রাইট উড়োজাহাজ আবিষ্কার করলেন। তারপর যুগে-যুগে কত আধুনিক প্লেন যে আবিষ্কৃত হল, হচ্ছে, হবে—তার শেষ নেই। আবিষ্কারের এক বিস্ময় এসে, অন্য বিস্ময়কে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অথচ, এই ২০১৭ সালে এসে, শেষ রাতে, জানলার পাশে বসে, আদালেবু চায়ে চুমুক দিয়ে, বোয়িং-৭৮৭’এর নানা বিষয় পড়তে-পড়তে, আঁধার আকাশে সাঁই করে উড়েযাওয়া একটা প্লেনের দিকে তাকিয়ে, রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে আমি ভাবি—কোনও রকম খুঁটি ছাড়াই সত্যিই, প্লেনটা আকাশে উড়ছে তো!!

নতুন বিস্ময় আমাকে বিস্মিত করে ঠিকই, কিন্তু পুরনো বিস্ময়ের রেশও একই রকম থেকে যায়।

একসময়, হাগু পেলে মানুষকে লোডা/ লোটা নিয়ে দৌড়াতে হত কতটা পথ ধরে! এখন কত আধুনিক বাথরুম, প্যান, কমোড। বদনা বদলে গিয়ে হ্যান্ড শাওয়ার এসে গেছে—এখন তো সেটারও প্রয়োজন নেই, টিস্যুফিস্যু কত কী আছে!

মহৎ হাগুকার্য শেষ হলে এক চিলতে পানি কমোডের চিপা থেকে বের হয়ে নিজেই আমার সকল সৃষ্টি ধুয়ে ধ্বংস করে দেয়, আহা আহা! ইয়ে মানে, ভাবছিলাম, কমোডে একটা এক্সট্রা হাতের ব্যবস্থা থাকলে ভাল ছিল না? টিস্যু দিয়ে মোছার কাজটা ওটাই করে দিত! আর চাইলে, অন্য কিছুও…….না থাক!

তারপর এই যে কমোডের ফ্ল্যাশবক্স—তারও যে কী চমৎকার সব ফুলেল ডিজাইন! দেখলেই শুঁকে দেখতে ইচ্ছে করে! ভাবি, আহ্‌! অমন সুন্দর একটা শৈল্পিক জিনিসকে সারাক্ষণই কী না বহন করতে হয়—হাগু ধোয়ার পানি!

বাথরুমে বদনার কোনও কাজ না থাকলেও আমার বাথরুমে পরম মমতায় থাকে—একখানা বদনা! কমোডে হাগু বিপণন করতে-করতে সেই বদনার দিকে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবি, বাহ্! কী চমৎকার এর ডিজাইন! কী বুদ্ধি করে এর সাথে একটু বাঁকা করে নলের মত জুড়ে দেয়া হয়েছে, যেটা শৌচকার্যে কী চমৎকারভাবে ব্যবহার করা যায়! বদনার মতন এমন বিপদের বন্ধু আর কে আছে? চরম বিপদের সময় যার কাছে বদনা নেই, তার আসলে এ দুনিয়ায় কেউ নেই। আচ্ছা, কে এই বদনার আবিষ্কারক? কে করেছে এর ডিজাইন?…….ইত্যাদি ইত্যাদি, এবং আরও কিছু ইত্যাদি বিষয় আসে মাথায়!

খুব তাড়া না থাকলে, বড্ড দেরি হয়ে যায় বাথরুমে। নিভৃতে জনান্তিকে দর্শনচর্চার নীরব বৈঠক বসে—একবক্তার, একশ্রোতার।

ভাবনা: একশো সাতাশি।

……………………………………..

সময় কী যে দ্রুত ছুটে চলে! মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন সন্ধ্যায়…….

হাসতে-হাসতে কেঁদে ফেলেছি…….

কাঁদতে-কাঁদতে হেসেছি…..

জানা কষ্ট অজানা সুখে,

কিংবা

জানা সুখ অজানা কষ্টে…….

সবসময়ই, সব কষ্ট বা সব সুখের মানে থাকে না। মানে থাকতেও নেই।

আচ্ছা, জানা সুখ কি আমাদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়?

অথবা, জানা কষ্ট কি কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়?

(জানা কষ্ট মানে, এমন কোনও কষ্ট, যেটা ভবিষ্যতে কোনও একদিন পেতেই হবে—এটা নিশ্চিত।)

নিজের মৃত্যুর দিন-তারিখ জানা থাকলে, মানুষ মৃত্যুর আগে আরও কতবার যে মরে যেত!

মৃত্যুকে ভুলে থাকে বলেই তো মানুষ এমন ফুর্তিতে বাঁচে!

একটা ‘কষ্ট’ কতটা কষ্টের, তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হল, যে মানুষটা ‘কষ্ট’ পায়, তাকে আসলে সেই ‘কষ্ট’টা কতটা কষ্ট দেয়, মানে, সে মানুষটা কষ্টটা কতটা অনুভব করে, সেটা। ধরে নিলাম, কষ্ট পরিমাপ করা যায়। কেউ কোনও একটা ব্যাপারে ১ কেজি কষ্ট পেল। কিন্তু সে ১ কেজি কষ্ট মোটেও অনুভব করছে না, সে অনুভব করছে মাত্র ১ পোয়া, মানে ২৫০ গ্রাম কষ্ট। বাইরে থেকে দেখে লোকে ভাবছে, ইসস্‌ মানুষটা ১ কেজি কষ্ট পেল! কেউ-কেউ আবার তার এই ১ কেজি কষ্ট দেখে, নিজেও আধা কেজি কষ্ট পেয়ে ফেলল! এমন হয়।

আবার কখনও দেখা যায়, কষ্টটা হয়তো ১ কেজিই, কিন্তু কেউ সেটা অনুভব করছে ৫ কেজি। লোকে বাইরে থেকে দেখে ভাবছে, ১ কেজি কষ্টই তো! ও আর এমন কী! কিন্তু ওদিকে মানুষটার প্রাণান্ত অবস্থা!

কোনও এক গ্রামে দুর্ভিক্ষে খাবার না পেয়ে এক লোকের তিন ছেলে মারা যায়। কিছুদিন পর সেখানের খবরাখবর নিতে আসা এক সাংবাদিক ওই লোককে প্রশ্ন করেন, “আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট কী?” সবাই ভাবে, যেহেতু তার তিন ছেলে মারা গেছে, তিনি হয়তো পুত্রদের মৃত্যুশোকের কথাই বলবেন। কিন্তু তিনি সেটা বলেননি। তিনি বললেন, কয়েকদিন আগে এক সংস্থা থেকে এই এলাকায় খাবার দেয়া হয়েছিল। সেদিন তার পাশে বসা এক বৃদ্ধ লোক, উনাকে যতটা খাবার দেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে আরেকটু বেশি খাবার চেয়েছিলেন। তখন যে খাবার দিচ্ছিল, সে ওই বৃদ্ধ লোকটাকে খাবার বেশি চাওয়ার জন্য ধাক্কা মেরে বিশ্রী ভাষায় একটা গালি দিয়েছিল। এটা দেখে তিনি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন। অনেক ক্ষুধার্ত থাকা সত্ত্বেও সেদিন তিনি খাবার না খেয়েই উঠে চলে এসেছিলেন। ওই ঘটনা তাকে এতটা কষ্ট দিয়েছিল, যা তার তিন ছেলের মৃত্যুতেও তিনি পাননি।

সত্যিই, কে যে কীসে কষ্ট পায়, সে নিজে ছাড়া অন্যরা কমই বুঝতে পারে।

আমি অনার্সে পড়ার সময় পরীক্ষায় সি-গ্রেড পেয়ে খুশিতে যতটা লাফাতাম, অনেকেই এ-গ্রেড পেয়েও এপ্লাস না পাওয়ার কষ্টে ততধিক মন খারাপ করে থাকত। ওদের দেখলেই আমার ওদেরকে কাতুকুতু দিতে ইচ্ছা করত।

আবার কষ্টের বহিঃপ্রকাশ—সেটা অন্য বিষয়। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম। কেউ-কেউ থাকে, চোরা কষ্টগিলা টাইপ মানুষ। তারা কঠিন-কঠিন সব কষ্ট হজম করে ছোট-ছোট কষ্টে চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে, যাতে অন্যরা বুঝতে না পারে, সে আসলে কতটা তীব্র কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে আছে! চারপাশে মানুষদের কত-কত কষ্ট! কারও হয়তো হাত-পা নেই, কেউ হয়তো কঠিন কোন রোগে মৃত্যুর সাথে লড়ছে, কারও হয়তো কোনও আপনজন নেই, কারও হয়তো ঘরে খাবার নেই, ঘরই নেই এমন মানুষ তো অনেক, কারও হয়তো পারিবারিক অনেক সমস্যা, কেউ বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত—আরও-আরও কত যে হাজারো সমস্যা!

এসব দেখে-দেখে যখন প্রচণ্ড কষ্ট পাই আর সে কষ্টে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন নিজেকে সান্ত্বনা দিই এই ভেবে যে, আমি ওদের দেখে যতটা কষ্ট পাচ্ছি, তাদের সেই অবস্থানে থেকে তারা নিজেরা হয়তো সে কষ্ট ততটা উপলব্ধি করছে না, হয়তো পরিস্থিতির সাথে নিজেকে ঠিকই মানিয়ে নিয়েছে, তাই তারা বেঁচে থাকতে পারছে। তাই স্রষ্টার কাছে আমি প্রায়ই প্রার্থনা করি, মানুষের কষ্ট থাকলেও তা অনুভব করার অনুভূতি যেন তিনি কমিয়ে দেন। পৃথিবীর সব মানুষ কষ্ট নিয়েও সুখে থাকুক, খুব ভাল থাকুক।

যে মন খারাপের কারণ জানা নেই, সে মন খারাপ বড় যন্ত্রণার।

যে শরীর খারাপের নাম নেই, সে শরীর খারাপ বড্ড খারাপ।

শরীরটা ভীষণ খারাপ যাচ্ছে ক’দিন ধরে। শুয়ে থাকতেও যে একটা শক্তির প্রয়োজন হয়, তা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। সবাই ভাল থাকুক।

আমেরিকা প্রবাসী এক ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়া অসুস্থ হয়ে খুব কষ্টভোগ করে-করে মারা যান। মৃত্যুর আগে উনার শেষ ফেসবুক পোস্টটা ছিল: যদি আপনার শরীর সুস্থ থাকে, তবে কখনওই এ অভিযোগ করবেন না—আপনি ভাল নেই। (একটু এদিকওদিক হতে পারে, আমার হুবহু মনে নেই, তবে মূল কথা এটাই ছিল।)

ভাবনা: একশো আটাশি।

……………………………………..

জানেন, যেদিন জানতে পেরেছিলাম—মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ সবসময় একই রকম টিশার্ট পরেন স্রেফ সময় বাঁচানোর জন্য, কারণ তিনি চান না, “আজ কী ড্রেস পরব” এটা ভাবতে গিয়ে সময় অপচয় হোক! তিনি এই সময়টা অন্য কোনও গঠনমূলক কাজে লাগাতে চান।—সেদিন আমি এ ভেবে হতাশ হয়েছিলাম যে, হায়! “জুকারবার্গ কেন একই টিশার্ট সবসময় পড়েন?” এটা ভেবে-ভেবে আমি কতই না আমার সময় খরচ করেছি!

আমার এক আঙ্কেল আছেন, যিনি প্রতিদিনই একই শার্ট একই প্যান্ট পরে অফিস করেন। উনার ওই শার্টপ্যান্ট আছে অন্তত ৯টা। ঘুষটুষ খেয়ে ফুলেফেঁপে উনি তো অনেক টাকার মালিক, তাই উনি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চান সাদামাটা পোশাকি জীবনযাপন করে। লোকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, “আমি সাধারণ মানুষ, সহজ জীবন পছন্দ করি। সামান্য চাকরি করি, এর চাইতে বেশি কিছু করার সামর্থ্য আল্লাহ্‌ আমাকে দেননি। আমি অবশ্য এতেই সন্তুষ্ট! শুকরিয়া!” উনাকে দেখলেই রাগ উঠে যায়! হাইট অব হিপোক্রিসি!

আমি দেখলাম, কেউ-কেউ বন্ধু হয়ে সারাজীবনের জন্য পাশে থেকে যায়, এমনকি সেই মানুষটার কাছেও স্মরণে অগ্রগণ্য হয়, যে কিনা স্মরণে রাখতে ভুলে যায় অনেক কিছুই! আর কেউ সময়ের সাথে কেবলই ভেসে যায় প্রয়োজনের কারণে স্রোত যেখানে বয়ে নেয়, সেখানে! ক’দিনের অপরিহার্যতা, তারপর আবার পুরনো আকর ছেড়ে নতুন বসতি, আবার হঠাৎ চ্যুতি। কেউ তাকে রাখে কি যত্নে মনের গভীরে? সত্যিই কেউ রাখে না। স্থায়ী হওয়ার জন্য স্থিতির দরকার পড়ে। কিছু পাওয়া কেবল তখনই সার্থক হয়, যখন অনেকটা দেওয়া যায়। যে যা-ই বলুক, জীবন চলে বিনিময়ে। এটা না থাকলে যেকোনো সম্পর্কই খুব সহজে ভেঙে পড়ে। অযাচিত উপস্থিতি আহ্বানের অনিবার্যতাকেই শেষ করে দেয় সমূলে। হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতির চেয়ে মর্মান্তিক কষ্ট আর কী হতে পারে! একমাত্র সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ বিশ্বাসই দিতে পারে পূর্ণতা, কারণ এক তিনিই দেখেন যা কেউ দেখে না, জানেন অপ্রকাশিত সকল সুখ কিংবা বেদনার খোঁজ, বোঝেন কী হবে কী হওয়া উচিত।

আত্মহত্যা করবেই—মেয়েটা একদম ঠিক করে ফেলে। ফ্যানে ঝুলে পড়বে ভেবেছিল, কিন্তু পরে ভেবে দেখল, সে আত্মহত্যা করলে আপন মানুষগুলো কষ্ট পাবে, ঝামেলায় পড়বে। তাই মেয়েটা ঠিক করে, সে আত্মহত্যা করবে ঠিকই, কিন্তু এমনভাবে করবে, যাতে সেটা স্রেফ দুর্ঘটনা মনে হয়। সে বাসায় এমন সব কাজ অসম্পূর্ণ রেখে যায়, যেন কেউ ভাবতেই না পারে, সে সুইসাইড করতে বের হতে পারে। কথা মতই কাজ। মেয়েটা বাজার পেরিয়ে রেললাইনের এমন একটা জায়গা বেছে নেয়, যেখানে মানুষজন নেই। দূরে গিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছু সময় পরই ট্রেন চলে এলে মেয়েটা মুহূর্তের মধ্যেই সমস্ত মাথা পুরোপুরি ফাঁকা করে দিয়ে ট্রেনের দিকে ছুটতে থাকে…….হঠাৎই রাস্তার অপর প্রান্ত থেকে কিছু মানুষ চিৎকার করতে থাকে। ট্রেনটা এতটাই সামনে চলে আসে, কেউ যে বাঁচাতে আসবে, সে সাহসটা কেউ করতে পারেনি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক লোক আলোর বেগে ছুটে আসছে—জ্ঞান হারানোর আগে মেয়েটা ঝাপসা চোখে অতটুকুই দেখে।

জ্ঞান ফিরল। মাথার পাশে তিন-চারজন মানুষ। নীরব জায়গা, তাই অত মানুষজন নেই। একজন বয়স্ক লোক তীব্র ঘৃণামাখা চোখ নিয়ে মেয়েটার পাশেই বসে আছেন।

“এই মেয়ে, তুমি ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিসো কেন? বাপ-মা তোমারে কষ্ট কইরা পালে নাই?”

“আঙ্কেল, আমি আসলে রেললাইনটা পার হতে চাচ্ছিলাম…….”—বলতেই লোকটা প্রচণ্ড জোরে মেয়েটার বাম গালে চড় দিয়ে বসেন। চড়টা গালে না পড়ে ঘাড়ে পড়ে। মেয়েটা প্রচণ্ড ব্যথা পায়। টপটপ করে মেয়েটার চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকে। না, ব্যথার কষ্টে নয়, মানুষের প্রতি স্রেফ মানুষ হিসেবে মানুষের ভালোবাসা দেখে। একটা মানুষ, যাকে মেয়েটা নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসত, অথচ সেই মানুষটা…….থাক, সে কথায় আজ না-ই বা গেলাম। মেয়েটা আজ মরে গেলে, সে জানোয়ারটা জানতে পর্যন্ত পারত না। অবশ্য তার জানার প্রয়োজনও নেই, আর জানলেও কিছুই এসে যায় না। এমন একজন মানুষকেই কিনা মেয়েটা তার জীবনের সমস্ত সোনালি অনুভূতি আর সময় অকাতরে দিয়ে বসে ছিল! অথচ যে মানুষটার সাথে মেয়েটার কোনও সম্পর্কই নেই, সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মানুষ—উনিই নিজের জীবনের বিনিময়ে মেয়েটাকে বাঁচিয়ে আনেন।

সেদিন লোকটার বাঁচার কথাই ছিল না, যতটা ঝুঁকি নিয়ে তিনি মেয়েটাকে বাঁচিয়েছেন।

মেয়েটা মনে-মনে ভাবে, এমন স্বার্থহীন মানুষগুলোর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্যও তো বেঁচে থাকা যায়। স্রেফ বেঁচে থাকলেও এমন কিছু মানুষকে দেখা যায়। আপনজনেরা আপনজনদের জন্য অনেক কিছুই করতে পারে, কিন্তু পর হয়েও যখন মানুষ আপনের মত কিছু করে, সেটা অনেক অনেক অনেক কিছু! আজ তো জীবনটা বেঁচে গেল, আবার যদি কষ্ট কখনও মরে যেতে বাধ্য করে, আর কিছু নয়, শুধু এই মানুষটার কথা ভেবেও জীবনে ফিরে আসা যাবে।

ভাবনা: একশো ঊননব্বই।

……………………………………..

সবাই শুধু সফলতার কথা বলে। সফল কী করে হওয়া যায়, সাফল্যের শর্টকাট কী, সেসব কথা বলে। সাফল্য-সাফল্য করে-করে মাথাটা খারাপ করে দেয়।

আচ্ছা, কজন মানুষ সফল হতে পারে? কত মানুষই তো সফলতার পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেও অবশেষে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। ওরা যে পরিশ্রম করেনি, তা কিন্তু নয়। ওরা পরিশ্রম করেছে, কাজে কোনও ফাঁকি দেয়নি, অথচ সফল হতে পারল না। সত্যটা হল, ওদের ভাগ্য ওদের পক্ষে ছিল না। ভাগ্য পরিশ্রমীদের পাশে থাকে—বইয়ের এ মনভোলানো কথা সবসময় সত্য নয়। আমি অনেক পরিশ্রমী দুর্ভাগা মানুষ দেখেছি। ভাগ্য যে কখন কেন কার পাশে থাকে, সেটা আজও আমার কাছে রহস্যাবৃত। ভাগ্য পরিশ্রমীদের পাশে থাকে না, অলসদের পাশে থাকে না; ভাগ্য যার পাশে থাকতে ইচ্ছা করে তার পাশেই থাকে। যে পুরুষ মেয়েকে বিয়ে করে, সে বড় অসহায় হয়ে পরে; আর যে পুরুষ ভাগ্যকে বিয়ে করে, তার কাছে তো জীবন মৃত্যু দুইই সমান। ভাগ্য মেয়েদের চাইতেও অবোধ ও রহস্যময়ী। মেয়েদের মন বোঝা শক্ত, আর ভাগ্যের মন বোঝা রীতিমতো অসম্ভব।

পৃথিবীতে সংখ্যায় সবচাইতে বেশি হল অসফল মানুষ। এই বিশাল সংখ্যক ব্যর্থ মানুষগুলো তাদের ব্যর্থতা নিয়েও কী করে ভালো থাকতে পারবে, সে কথা কেউ বলে না। ওরা এমনিতেই কষ্টে আছে, আর অন্যরা কিনা ওদের এড়িয়ে চলে আর কথার শরে আহত করে ওদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়! ওদের কথা দুএকজন হয়তো বলে, তবে ওই দুএকজনের সহানুভূতি দিয়ে এ বিশাল সংখ্যক মানুষের তেমন কোনও লাভ হয় না।

গাছে ১০টা আম আর নিচে ১০০জন মানুষ। গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য দুনিয়ার সমস্ত কৌশল প্রয়োগ করলেও, সত্যটা হচ্ছে এই, ৯০জনই আম পাবে না। ১০জন মানুষ কীভাবে আম নিয়ে খুশি হতে পারবে সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ৯০জন আম না পেয়েও মন খারাপ না করে কীভাবে ভাল থাকতে পারবে সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ; বরং বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। ওরা কি সবসময়ই অন্যদের আম পেতে দেখবে, আর নিজেরা আম না খেয়ে মনখারাপ করে জীবন কাটাবে? এটা তো হয় না। ওদেরও তো আম খেতে ইচ্ছা করে। ওদের আম পেতে শেখাবে কে? ওদের বলতে হবে, আমটা তুমি না পেলেও তেমন কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু তাই বলে তুমি আম পাওয়ার চেষ্টা করাই ছেড়ে দেবে—তাহলে তো আর কিছুই হবে না। থেমে যেয়ো না, হাতপা গুটিয়ে বসে থেকো না; বরং শেখো কীভাবে আম পেতে হয়। কীভাবে শিখবে? ঋত্বিককুমার ঘটকের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’-এর এক চরিত্র উত্তরটা দিয়ে দিচ্ছেন—“ভাবো, ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো।” আমাদের সমস্যা, আমরা ভাবতে চাই না, আমরা সব কিছু রেডিমেড খাওয়ার জন্য হাঁ করে বসে থাকি। আমরা ‘খাইট্টা খা!’ নীতিতে বিশ্বাস করি না।

‘সফল যারা কেমন তারা’ এমন ভাবনা নিয়ে আমরা সবাই ব্যস্ত। ‘অসফল যারা কেমন তারা’ এ কথা কে ভাববে? অসফলরা মানুষ না? সফলদের মাথায় তুলে নাচতে থাকি, আর ওদিকে অসফলরা মরে যাক, তা-ই কি? সফলদের নিয়ে এতো লাফানোর চাইতে অসফলদের টেনে তোলাটা অনেক বেশি জরুরি। সফলরা তো একটা প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে গেছেই। বাকিটা ওরা নিজেরাই করে নিতে পারবে। অসফলরা তো এখনও খুঁড়িয়ে হাঁটছে। ওদের দিকে হাত না বাড়ালে যে ওরা আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবে!

এসব ভাবছি আর মাথায় আসছে, আমি এত অসফল কেন? কেন আমার কথা ভাববার কেউ নেই? একবার, আমার কিছু কাজিনদের উদ্দেশ্যে একটা ‘সেই রকম’ লেকচার দিয়েছিলাম, বিষয়: জীবনে কিছুই না করতে পারলে বা কিছুই না থাকলেও কীভাবে ভাল থাকা যায়। কী বলেছিলাম, কেন বলেছিলাম, কীভাবে বলেছিলাম—কিছুই মনে নেই আমার। শুধু এইটুকু মনে আছে, লেকচার শেষে এক কাজিন পাশের রুমে ডেকে নিয়ে বলেছিল, “তোমার এই লেকচার শুনলে তো মানুষ জীবনেও কিছু করতে চাইবে না!”

উফফফ্‌ এরকম ওলটপালট ভাবলে তো আবার সমস্যা! আমি শিখিয়ে দিলাম এক, ওরা শিখল আরেক! মহা যন্ত্রণা হল তো!

সকাল-সকাল কোনও ভীষণ অপ্রিয় মানুষের বিরক্তিকর মুখের ছবিখানা দেখলে সকালটা কি অশুভ হয়ে যায়? হলে হোক! যে সেলফিটা দিলাম, সেটা নিয়ে ফিডব্যাক আশা করছি। থাকুক না কিছু সকাল—এমনই অশুভ! কী এসে যায়!

তবুও প্রত্যাশা—শুভ সকালের।

ঘুম থেকে উঠেই মানুষের হাগুমুতু পায়, আর আমার হাগকিসু পায়। ‘যে কাউকেই’ হাগকিসু করলেই হবে!—এই টাইপ হাগকিসু নয়। ‘নির্দিষ্ট একজন’ মানুষকেই করতে ইচ্ছে হয়। যেহেতু তাকে করা যায় না, তাই অবশেষে ইচ্ছেরা মন খারাপ করে আকাশে উড়ে চলে যায়। পরদিন ওরা আবার আসে—জড়ানো চুমুর অভাবে কাঁদে!