ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা (৩৩শ অংশ)

ভাবনা: দুইশো পঁচিশ।

……………………………………..

কোনও মানুষ বা মানুষদের বা কোনও কিছুর উপর বেশিদিন রাগ বা ক্ষোভ পুষে রাখতে নেই। সময়ের রাগ সময়েই ঝেরে ফেলা ভাল। রাগক্ষোভ পুষে রাখলে সেটা একসময় ভয়ংকর রূপ ধারণ করে—ধরনে এবং পরিমাণে। যদি সংখ্যার হিসেবে ধরা হয়, তবে ধরলাম, প্রতিদিন একটা রাগের জন্য, রাগ প্রকাশের পরিমাণ ১। সে হিসেবে ত্রিশ দিনের রাগের জন্য প্রকাশের পরিমাণ ৩০। কিন্তু যদি ৩০ দিনের রাগ পুষে রাখা হয়, তাহলে দেখা যাবে, ৩১তম দিনে তা ১০০ হয়েই বিস্ফোরিত হয়! তাই, রোজকার রাগের হিসেবনিকেশটা রোজ মিটিয়ে ফেলাই ভাল।

ভালোবাসা আছে তাই…..

ভালোবাসা নেই তাই….

নীরবে অভিমানে কত কী যে হয়ে যায়……..

সে খবর বরাবরই অজানায় রয়ে যায়……

জানো, খুব ইচ্ছে হয় দেখতে……

তবে, প্রার্থনা এ নয়—দেখা হউক……

প্রার্থনা শুধু এ-ই

যে চাইলে দেখতে,

লাগবে তোমার ভাল—

তার সাথেই হোক দেখা……..

কিংবা,

দেখতে যাকে,

ইচ্ছে করে—

তার সাথেই……..হোক দেখা।

ভালোবাসারা ভাল থাকুক—তাদের প্রিয় ভালোবাসায়!

কখনও-কখনও ক্ষমা……শাস্তির চেয়েও ভয়ংকর হয়। এমন ক্ষমার চেয়ে শাস্তি ঢের ভাল!

তবু মানুষ, কেবল ক্ষমা পেতে চায়…….

মানুষকে—

কিছু ক্ষমা করা হয় না—

মানুষের কাছে—

কিছু ক্ষমা চাওয়া হয় না—

কেবল শাস্তির চেয়েও বেশি শাস্তি হবে বলে……..

আমায় ক্ষমায় মেরো না,

সাজায় বাঁচিয়ে দিয়ো!

আকাশ কালো—

মেঘ জমেছে।

আসবে বুঝি বৃষ্টি……

বৃষ্টি তোকে

বলবো না আজ

আয় না আমার বাড়ি……

বলছি তোকে,

নিবি আমায়

আজকেই তোর বাড়ি?

কেক খেতে পছন্দ করেন বলে আম্মার জন্য প্রায়ই আমি কেক কিনে আনি। আজও আনলাম। হঠাৎ মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো! কদিন পরেই তো মা দিবস। যদি গত বছরের মতো দিবস ভুলে যাই আর কোনও গিফট দেয়া না হয়, তাহলে তো ‘বদ বেটি’ চিল্লায়ে ফাটায়ে ফেলবে! তার চেয়ে এক কাজ করি, এই কেকই—মা দিবসের গিফট বলে চালিয়ে দিই! পরে কিছু দিলে দিলাম, না দিলে নাই! যে-ই চিন্তা, সে-ই কাজ!

: আম্মা, কদিন পরেই তো মা দিবস, মনে করেন, এই কেকটা মা দিবসের!

: আমারে কি মদন পাইছস? গত বছরের গিফটও কিন্তু বাকি আছে!

আম্মাও মদনরে চিনে! এইটাও কোনও সমস্যা না। ভাবতেসি, আম্মা এমন স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে কেন? কাহিনি কী?

ভাবনা: দুইশো ছাব্বিশ।

……………………………………..

আবার কখনও কি এমন সময় আসবে, যেদিন হারিয়ে-যাওয়া কথাগুলো আবারও আগের মত করে বলতে ইচ্ছে করবে, কিংবা হারিয়ে-যাওয়া অনুভূতিগুলো আগের মতই স্পর্শ করবে? সময় যে আবেগগুলো, ভাললাগাগুলো কেড়ে নেয়, তা কি কখনও ফিরিয়ে দেয় আগের মত? প্রায়ই, সময়ের আবেগ অসময়ে পুরোপুরিই হারিয়ে যায়।

একটা সময়, অনেক আঁকাআঁকি করতাম। এমন কিছুই নেই যেখানে আঁকতাম না। সেকথা কোনও একটা লেখায় আপনাকে বলেছি হয়তো। এমনকি ছোটবেলায় বাথরুমের দেয়ালেও পানি দিয়ে আঁকতাম। বিভিন্ন রঙের রঙগুলিকে পরিবারের সদস্যদের মতোই আপন মনে হতো। ভাইয়া আমাকে এক প্যাকেট রঙ কিনে দিয়েছিল। প্রায় নয় বছর সে রঙ আমি রেখে দিয়েছি। সবকিছু আঁকতেই ভাল লাগতো। যা দেখতাম, তা-ই আঁকতাম। যা ইচ্ছে হতো, তা-ই আঁকতাম। অনেকে প্রশংসা করতো, অনেকে হিংসা করতো, অনেকে ঈর্ষা করতো। এই ঈর্ষাকারীদের মধ্যে একজন—এখন অনেক ভাল আঁকে। দেশের অনেকেই ওকে ভাল আর্টিস্ট হিসেবে চেনে। ওকে দেখি আর মনে আসে, আমি একসময় ওর ঈর্ষার পাত্র ছিলাম, কারণ আমি ওর চাইতে ভাল আঁকতে পারতাম। আমার এটা ভাবতে আনন্দ লাগে। আসলে কোনও কাজে লেগে না থাকলে সে কাজটি করার ক্ষমতা কমে যায়। আমার সবকিছুতেই সবসময়ই ভাইয়ার প্রবল আগ্রহ। ভাইয়া আমাকে একদিন আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। প্রথম ক্লাসে আমাদের একটা অদ্ভুত বোতল আঁকতে দেয়া হল। সে বোতলের মধ্যে এক পরী কাঁদছে, বোতলের মুখ নানান রঙের ফিতেয় জড়ানো। আমি সেটা হুবহু এঁকে ফেললাম। এক স্যার সেটা দেখে ‘ইনক্রেডিবল!’ বলে খুশিতে আমাকে দুই ক্লাস উপরে প্রমোশন দিয়ে দিলেন। সেই ক্লাসে দুইদিন আমি আলোছায়ার ব্যাপারটা বুঝলাম, শিখলাম। তার পরদিন স্যার আমাকে তাঁর নিজের আঁকা একটা কঠিন দৃশ্য আঁকতে দিলেন। আঁকা শেষ হলে, দুইটা ছবি আমি একসাথে স্যারকে দিলাম। স্যার দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কোনটা আমার? জলরঙ হলে হয়তো বোঝা যেত—আমারটা ভেজা থাকত। কিন্তু পেন্সিল স্কেচ হওয়াতে স্যার এবং আমি কেউই বের করতে পারিনি—কোনটা কার ছবি।

সত্যি বলছি, সেদিন আমি সেই স্যারের চোখে প্রচণ্ড কষ্ট দেখেছি। এতদিন ধরে তিনি যা শিখেছেন, হুট করে কোত্থেকে একটা ছোট মেয়ে এসে হুবহু তাঁর মতো এঁকে ফেলেছে–এই ব্যাপারটা তিনি নিজের কাছে সহজভাবে নিতে পারছিলেন না। অথচ এই একই কারণে তিনি খুশিও হতে পারতেন। তিনি আমায় সেদিন কিছু কথা বলেছিলেন। শুনে আমি ভীষণ অসহায় বোধ করেছিলাম। আমার জীবনের সবচাইতে বড় কয়েকটি কষ্টের মধ্যে সেটি একটি। স্যারের মাথায় কী এসেছিল জানি না, উনি আমার আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহ, দুটোকেই গলাটিপে মেরে ফেলতে চাইছিলেন প্রাণপণে!

সেদিনের পর আমি আর কোনওদিনই ওই আর্ট স্কুলে যাইনি। ওখান থেকে ৪/৫ দিনের ক্লাসে আমি কেবল আলোছায়াই শিখেছিলাম—জীবনের, ক্যানভাসের।

আর্ট স্কুল ছেড়েছিলাম কিন্তু আঁকাআঁকিটা ছাড়িনি। অনেকটা সময় পর্যন্ত এঁকেছি।

কিন্তু, একটা সময়ে এসে, সব ছেড়ে দিয়েছি। কী কারণে, নিজেই জানতাম না।

এখন প্রায়ই মনে হয়, সময়ের-অসময়ের ছোট-ছোট নানান অভিমানগুলো একসময় বড় কষ্টে পরিণত হয়েছিল। কী অভিমান, কী কষ্ট—জানি না। শুধু জানি, এটা সত্য। এমন হয়—একজন অসাধারণ মানুষও কোনও কারণ ছাড়াই খুব সাধারণ হয়ে যায়। অনেক অসামান্য আর্টিস্ট কোনও রহস্যময় কারণে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন, এমন নজির কম নয়।

গতকাল টিভিতে একজন পটশিল্পীর আঁকা ছবি দেখে আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। বুঝতে পেরেছি, আঁকাআঁকিটা ছাড়লেও এর প্রতি ভালোবাসাটা ঠিক রয়ে গেছে। এখনও প্রায়ই আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে চারুকলা হয়ে আসি। কেউ একজন আপনমনে ছবি আঁকছে—এ দৃশ্য দেখতে বড় শান্তি লাগে। পরক্ষণেই ভাবি, আঁকলেই তো হয়! আবার শুরু করি না কেন? আমি শুরু করলেই হবে। আমি পারবো।

নাহ্‌! সব ভুলে গেছি……. ইচ্ছেভুল-এ।

এটা হয়তো তেমন কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু আমাদের জীবনে এমন অনেক কষ্ট থাকে, যা আমরা ভাবি—সময়ের সাথেসাথে ফিকে হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে প্রায়শই তা ফিকে হয় না। কেবল ঘাপটি মেরে বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকে। দশ বছর আগের প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া কোনও কষ্টও যেকোনও সময়ই ফুঁসে উঠে—আর অমনিই তা গুছিয়ে-নেয়া জীবনটাকে মুহূর্তেই একেবারে এলোমেলো করে দিতে পারে। এবং, দেয়ও।

উদাস মনে—

উদীয়মান ওই সূর্যে চোখ রাখতেই

অস্ত আসে নেমে……

রাতের শেষে—

ভোরটা ঠিকই আসবে ফিরে……

জীবন তবু ফিরবে নাহি।

ভাবনা: দুইশো সাতাশ।

……………………………………..

তোমাকে নিয়ে আমার একটা স্বপ্নের পৃথিবী আছে। আমার বাস্তব জগতের সব কাজের ফাঁকে সময় বের করে সে পৃথিবীতে কয়েক দণ্ড না কাটালে আমার চলার পথটা যে কতটা কঠিন হয়ে ওঠে আমি তোমাকে তা কখনওই বোঝাতে পারব না। অথচ এই অবস্থাটা হয়তো কেবল তুমিই আন্দাজ করতে সক্ষম, অন্য কেউ নয়। আমি জানি, এক ভয়ংকর জগতের বাসিন্দা হয়ে গেছি আমি। আর সব থেকে ভয়ংকর যেটা সেটা হল, এখান থেকে ফেরা অসম্ভব! এখন পর্যন্ত এমন কেউ আমার সামনে আসেনি যে তোমার স্থানটা নিতে পারে, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে সময়টা, তখন তোমাকে জানলাম; তোমাকে চিনলাম এমন একটা মুহুর্তে, যখন তোমাকে না চেনাটাই ছিল সব থেকে ভাল, অথবা সবচেয়ে খারাপ সমাধান। এ জীবনে কখনও-কখনও এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, যার উত্তর স্রেফ হ্যাঁ অথবা না হয়, অথচ সেই প্রশ্নটা উত্থাপিত না হলেই সবচেয়ে স্বস্তিকর অবস্থা হতে পারত। সেরকম একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে এখন আমি যাচ্ছি।

আমার স্রষ্টাকে ডাকতে-ডাকতে যখন তোমাকে পেলাম; এতটাই পেলাম যে, মন থেকে যতই অন্য কিছু হোক এমন চাই না কেন, আমার চরম সুখে কিংবা পরম দু:খে তাঁর আগে তোমাকেই মনে পড়ে। এ আমার সরল স্বীকারোক্তি। অপরাধ নিয়ো না। আগে বিপদে যখন আমার ঈশ্বরের নাম জপতাম, সে জায়গাটা কবে তোমার নামে হারিয়ে গেছে, ঠিক খেয়াল করা হয়ে ওঠেনি। আমার বিপদে, কূলহারা বিপন্ন সময়ে আমি মনে-মনে তোমাকেই খুঁজি, তোমার মাঝেই পথ খুঁজে নিই। তুমিই আমাকে পথ দেখাও। তুমি কি আমার ঈশ্বর হয়ে উঠলে, প্রহস্ত?

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন সবসময় তোমার সহায় হন, যাতে তুমি সারাজীবনই অন্যের সাহস হয়ে বেঁচে থাক অবিরত।

আমি তোমার খোঁজখবর নিই, সেটা তোমার কাছে এতই বিরক্তিকর?

গত একটা সপ্তাহ ধরে শুধু ভাবছি আর ভাবছি। তুমি আমাকে এভাবেও বলতে পার! তোমার এমন উদ্ভট চিন্তাক্ষমতা নিয়ে এতটা কল্পনা করার শক্তি হয়ে ওঠেনি এখনও—অন্তত তোমার ভাষ্য অনুযায়ী যদি বলি, তোমার এইবারের রিজারেকশনের পর!

তাছাড়া আমার জন্য তোমার কাছ থেকে এমন কিছু পাওয়া অতো নতুনও নয়। আগেও বলেছো, এমন রূঢ় আচরণ আগেও করেছো, নীরবে সয়েছি, কষ্ট পেয়ে সরেও থেকেছি। তবে ফিরেও এসেছি বরাবর। প্রহস্ত, আমাকে তুমি কীভাবে দেখ, আসলেই কতটা মূল্যায়ন কর, আমি ঠিক বুঝতে পারি না। লোকমুখে কত কথাই তো শুনেছি। আত্রী আপুকে অকপটে বলেছিলে আমার বিষয়ে। তার সাথে তোমার ভাল সম্পর্ক ছিল, বন্ধুত্ব ছিল, তাই বলেছিলে, সে তুমি বলতেই পার। তোমার পছন্দ অপছন্দ ওকে জানিয়েছো। আমি আর কে-ই বা এমন! আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছে তা তো যারতার কাছে বলাই যায়, না?

হয়তো তুমি চাও, আমি এমন কেউ হয়েই থাকব, যে তোমার লেখার বাইরে আর কিছু নিয়েই কোনও প্রশ্ন করবে না। আর কিছু নিয়েই কোনও দিনই মাথা ঘামাবে না। সেটাই তো?

জানি, সেটাই।

কিন্তু পৃথিবীতে আমাদের চাওয়ার মতন করে কোনও কিছুই বোধহয় পাওয়া যায় না। অন্তত আমি আমার জীবন থেকে তো তা-ই দেখি।

কষ্ট! বড় কষ্ট, বুঝলে? কষ্টরা ফিকে হয়ে যায়। কোনও কিছুই তো চিরস্থায়ী নয়। যে ঘরটা তছনছ করে দিয়েছো, শুধু সেখানে ফিরতে ভয় হয়। একাএকা সেই ঘরে আর কি ফেরা যায়, বলো? দুজনের গড়া পৃথিবীতে একা থাকতে বড় যন্ত্রণা হয়।

আসলে ব্যাপারটা এই, যাদের সঙ্গ আমি পছন্দ করি না, তাদের বিষয়ে আমি বরাবরই খুব নিঃস্পৃহ। আমি যে তাদের কতটা ইগনোর করি, আর সেটা তারা যে কীভাবে নেয়, তাও ভেবে দেখার প্রয়োজনও বোধ করি না। ওরা কী ভাবছে, সেটা জানা আমার জন্য জরুরি তো না। আমি শুরুতেই জানিয়ে দিই কোনও ভণিতা ছাড়াই, তোমার ভাষায় যদি বলি—ভদ্রতাটুকুও রক্ষামাত্র না করেই! সে-ই তো ভাল, তাই না, বলো? অন্তত কেউ তো ভ্রান্তিতে বাস করতে শুরু করে দেয় না প্রথম থেকেই!

আসলে তোমারই বা কী দোষ, যে ভুল পথ বেছে নিয়ে চলতে শুরু করে, তার সে চলার দোষ ওই পথের হবে কীকরে! যে পথটা বেছে নিয়েছে, দোষ যদি কিছু থেকেই থাকে, তবে তা কেবলই তার, আর কারও নয়। সে দায়ও তাই অন্য কারও হতে পারে না।

জীবনের এই অতি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলি নিয়ে কেবল সুখী মানুষেরাই ভাবে। বড় বেশি সুখে আছি। ইদানিং বেশিই সুখে বেঁচে আছি। তোমার খবরাখবর নেয়ার পাপ আর না-ই করি, কী বলো? আমার সুখ তাতে আরও বাড়ুক।

সত্যি কাউকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেললে তার সাথে আর আগের মত মজা করা যায় না। সবকিছু ভীষণ রকম হালকাভাবে নিয়ে তুলোর মত বাতাসে উড়িয়েও দেয়া যায় না। ভালোবাসার ভার এতই কি বেশি যে কেবলই হয় নিম্নগামী? যত পুরনো হয়, ততই স্থির হয়ে জমা পড়ে রয়। না জলের মত ভাসে, না তা ছলকে পড়ে। অতল তলে চুপ করে গভীরে পড়ে রয়। পুরনো ঠাট্টাগুলো কেন সহজে করা যায় না? ঠাট্টাও নেই, স্বস্তিও নেই—কেমন সে জীবন? সবার সাথে নির্দ্বিধায় যে রসিকতা চলে, তার সামনে সে রস যেন মুহূর্তেই শুকিয়ে যায়।

ইশশ্! যদি এমন হতো, আমি গারো পাহাড়ের কাছাকাছি বিরিশিরিতে কোথাও একটা নিরিবিলি বাসা নিতাম। সেখানে তুমি আসতে মাঝেমধ্যে, কিংবা প্রায়ই; যখন যেমন ইচ্ছে, কিংবা সময় হয়। আমাদের কিছু একান্ত সময় সেখানের সোনালি আলোয় ঝলমল করতো। সেই স্মৃতিটুকুই নাহয় হত আমার চলার পথের সম্বল। যেভাবে আছো আমার হয়ে খুব আপন, সেখানে………! আর সেখানে আমাদের একটা ছেলে………ও হতো তোমার চেয়েও অনেক উজ্জ্বল! এ কালের বাচ্চা বলে কথা। ওকে বড় করতে-করতে আমার সময় কেটে যেতো কী দারুণভাবে! তাই না, বলো? এই পচা ছেলে, রেগে যাচ্ছ কেন, হুঁ?

এমনটা হলে কী এমন ক্ষতি হতো? যদি কেউ এটা নিয়ে না ভাবতো! কেউ কোনও প্রশ্ন না তুলতো কখনও! আমাদের এক টুকরো সংসার হতে কি পারতো না কোনওদিনও? তুমি এলে আমরা, মানে তুমি আমি আমাদের ছোট্ট রাজপুত্র, খুব ঘুরতাম—বনে, পাহাড়ে। নদীতে পা ভেজাতাম সবাই মিলে!

তুমি বাস্তবে বাঁচো, আমি কল্পনায় মরি—কোনটা সুখের? সে বিচার উনিই করবেন!

ভাবনা: দুইশো আটাশ।

……………………………………..

জানেন নাতো, আমার আম্মা একটা বদ! বেটিটা না আস্ত একটা টাকার খনি! বিশি-বিশি টাকা না, কম-কম টাকার খনি একটা!

এই বদ বেটির বালিশের নিচে টাকা, তোষকের নিচে টাকা, প্রতিটা পার্সের প্রতিটা পকেটে-পকেটে টাকা, শোপিসের ভেতর টাকা, বক্সের ভেতর টাকা, কেটলির ভেতর টাকা, আলমিরার কাপড়ের নিচে টাকা………

আমি গুরিব—আমার শুধু বইয়ের চিপায় টাকা। হুহুহুহুউউউউ………

মাঝেমাঝে মন চায়, দিই টাকা মেরে!

কিন্তু টাকা দিয়ে আমি করবোটা কী?

এজন্যই চুরি করবো, করবো ভেবেও শেষমেশ আর চুরি করাটা হয়ে উঠে না।

তোমাকে নক করতে ভয় পাচ্ছিলাম। গতকাল মাথা যে বেশ বিগড়ে দিয়েছিলাম, বুঝতে পেরেছি। তাই এত ঢঙ করলাম। ভাল লেগেছে না, বলো?

খুব এলোমেলো হয়ে আছি, নিজেকে গুছাবো, কিন্তু কেন? বলো তো, কার জন্য? দিনকে দিন এত একা কেন হয়ে যাচ্ছি আমি? তোমরা সবাই তোমাদের নিজেদের মতই থাকবে, আমার তো কেউ নেই। আমি কেন তবে হাসব? খেতেও যে ভাল লাগে না আর। কোনও কাজেই আগ্রহ পাই না কোনওভাবেই। সামনে কিছুই দেখতে পাই না। আমার পথ কি তবে ফুরিয়ে গেছে? কিছুই ভাল লাগে না। কাউকে ভাল লাগে না। আমি কী করব? তুমি বলে দাও না আমায়! তুমি যা বলবে আমি তা-ই করব। আর কারও কথাই যে শুনতে ইচ্ছা হয় না আমার।

জানি না ইদানিং আমার ক্লান্তির মাত্রা এত বেড়েছে কেন! খালি ঘুম পায়। আমি পালিয়ে বাঁচতে চাই। কিন্তু জীবন আমাকে পালাতে দেয় না। আমার বড় কষ্ট হয়, সবাইকে ‘বিদায়’ বলে দিতে মন চায়, কিন্তু কেউ আমাকে ছাড়তে চায় না। যে বাঁচতে পারছে না আর, তাকেও কেন সবাই মিলে আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে? আমার পথের ক্লান্তি কেবলই বেড়ে যায়। আমি কেবলই ঘুমিয়ে পড়ি। আমি জেগে থাকতে পারি না। আমার জেগে থাকতে কষ্ট হয়, ঘুমিয়ে পড়তে আরও বেশি কষ্ট হয়!

আমার সব উৎসাহ, সব আয়োজন কেন এভাবে পথ হারালো? এমন কি হওয়ার কথা ছিল? আমি আজ কোন অপরাধের শাস্তি পাচ্ছি? আর কত কষ্ট পেলে মানুষ মরে বাঁচে? এরকম কথা আরও অনেক অনেক অনেক আছে। বলতে থাকলে শেষ হবে না কখনওই।

এতক্ষণ যা যা বললাম, এ সবই হল না-কষ্ট আর না-রাগ, মানে আমি কষ্ট পেলেও তার দায় তোমার নয়। তোমাকে আমি আমার সব যন্ত্রণার দায় থেকে মুক্তি দিলাম। হাল্কা লাগছে না নিজেকে?

এবার কষ্টগুলো বলি যেগুলোর দায় তোমার?

“বাপরে বাপ! আরও ক্যাঁচাল শুনতে হবে এই ফালতু বুড়ির?”

হাহ্‌ হাহ্‌ হাহ্‌ হাহ্‌………

নাহ্……কষ্টের কথা বলবো না………ওসব জিনিস নীরবেই ভাল থাকে।

তুমি সেদিন মেসেজে বললে না, আমি কেবল দুঃখ খুঁজে মরি? ঠিকই তো বলেছ। তবে, আমাকে কেন ভাল থাকতে বল? দুঃখবাদীরা ভাল থাকে কীকরে?

আমি ভাল নেই……তুমি ভাল থেকো।

কোথায় আগুন থাকে, বলো না?

আমি সারাশহর জ্বালিয়ে দেবো……

বঞ্চিতের দহনে পুড়ে খাক হয়ে যাক—

ওদের প্রেম!

বলো না, আগুন কোথায় থাকে?

ভাবনা: দুইশো উনত্রিশ।

……………………………………..

আসলে আমি আমার কর্মক্ষেত্রে এক নারকীয় প্রতারণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। নিজেকে খুব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছিলাম। পরে বুঝলাম, ‘স্বাভাবিক’ ‘স্বাভাবিক’ করে যে রশিটা ধরে টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করি, ভয় পেয়ে তা অস্বাভাবিকভাবে টানাটানি করতে থাকি। অতঃপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাই।

ওই সময়ে আমার এলোমেলো কথায় আপনি বিরক্ত হয়েছেন ভেবে ভয়ে ফোন দিইনি।

আমার কলিগ রাফিদ শামস্‌ আনোয়ার। গতবছর ১ জুন অন্য ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করেন। উনার চলে যাওয়ার খবর শুনেই স্টুডেন্টরা ক্লাস থেকে বের হয়ে ডিপার্টমেন্টে তালা মেরে দেয়।

নিঃসন্দেহে উনি খুব জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু ছেলেমেয়েদের এত উত্তেজনার কারণ হল—এমনিতেই শিক্ষক-সংকট ছিল, তার উপর……। সে সেমিস্টারে পরপর ৪ জন শিক্ষক চলে যান। ৫ মাস কোনও হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট ছিল না। এখনও নাই।

পরে যা হল, ছেলেমেয়েদের মারমুখী অবস্থানের কারণে ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডার মোহাম্মদ মতিন ইসলাম রাফিদ ভাইকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। রাফিদ ভাই ছেলেমেয়েদের ভালোবাসায় বিমোহিত হয়ে এবং ডিপার্টমেন্টের হেডের দায়িত্ব নিয়ে ফিরে এলেন।

কিন্তু মতিন সাহেব যে প্রতিশোধের অপেক্ষায় ৬ মাস ধরে জাল বুনেছিলেন, তা আমরা বুঝিইনি। উনি তো বলেই বসেছেন, ছেলেমেয়েদের চাপের মুখে রাফিদ ভাইকে বেশি স্যালারি দিয়ে আনতে হয়েছে। এর জবাব উনি দিয়েই ছাড়বেন।

দিয়েছেনও।

একটা ফালতু নাটক সাজিয়ে রাফিদ ভাইকে দোষী সাজানো হল। আর আমাদের শিক্ষকদেরকে বলা হল উনার বিপক্ষে অবস্থান নিতে।

আমরা কলিগরা সব সত্য জানলাম। দেখা গেল, উনি নির্দোষ। তবুও ছেলেমেয়েদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মতিন সাহেব কমপ্লেইন লেটার আদায় করলেন, যা আমাদের কলিগদের কাছ থেকে উনি করতে পারেননি। আমরা কলিগরা সমবয়সী হওয়াতে আমাদের বন্ধুত্ব ছিল ভীষণ চমৎকার। যেটার নাম দেওয়া হয়েছিল—“দল পাকাচ্ছি আমরা।” রাফিদ ভাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। চাকরিটা উনার দরকার ছিল। আমরা কলিগরা স্পষ্টভাবে ফাউন্ডারকে রিকোয়েস্ট করেছিলাম এ নাটক না করতে। এ জন্যই বলেছিলাম যাতে উনি বোঝেন যে আমরা সব বুঝে গেছি। উনি স্পষ্টাস্পষ্টিভাবে বলে দিলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে আমি যা খুশি তা-ই করবো। কারও ইচ্ছে হলে থাকবে, আর না হলে থাকবে না। সে সময়ে মেরুদণ্ডহীন কিছু শিক্ষকের নোংরা চাটুকারিতা আর কিছু সুবিধাবাদী স্টুডেন্টের অসৎ পদক্ষেপ খুবই দুঃখজনক ছিল।

আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলাম। পারিনি। কারণ এ নোংরামির প্রস্তুতি চলছিল ৬ মাস ধরে।

কাহিনিটা আমি অতি সংক্ষেপে জানালাম।

রাফিদ ভাই এখনও বেকার। উনার জন্য খারাপ লাগে বেশি। আমরা প্রশাসন, ইউজিসির প্রতিনিধি কারও কাছেই কোনও ন্যায়বিচার পাইনি। সবাই ইনিয়েবিনিয়ে একটা কথাই বুঝিয়েছেন—চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা!

আমার রুচিতে বেধে গিয়েছিল ওখানে চাকরি করতে। ভাল কথা, আপনার ‘স্বেচ্ছানশন—ধর্মে, কর্মে, মর্মে’ লেখাটা ভাল লেগেছে। লেখাটা আমার বর্তমান সময়ের জন্য উপযোগী ও উপকারী। সত্যিই চমৎকার ছিল। আসলে কষ্ট আমার কাছে কখনওই একা আসে না। সাথে ফুল ব্যাটেলিয়ন নিয়েই আসে। আমি চাকরি করছি না। মন বলেছিল, চলে আসতে। এলামও। যুদ্ধ তো দেড় বছর করলাম। বারবারই তো পরাজিত হচ্ছিলাম। আর কত? শেষ পরাজয়ের পর মনে হয়েছে, আমার আরও অনেক কিছু শেখার প্রয়োজন। স্টাডি লিভ নিয়েছি। তবে এলোমেলোভাবে পড়ছি। যা ভাল লাগছে, তা-ই পড়ছি।

আমি জানি, আমি জীবনের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। জীবন থেকে পালিয়ে জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছি।

ভাবনা: দুইশো ত্রিশ।

……………………………………..

একটা ভুল আমি ইচ্ছে করেই করি, তা হল, দুঃখের দিনগুলিতে কেবল নিজের যন্ত্রণার কথা বলে বেড়ানো। আমি জানি, নিজের পেইনকে মার্কেটিং করার মত ফালতু কাজ আর হয় না। কিন্তু কী করবো! আমার একটু সান্ত্বনা পেতে খুব ইচ্ছে করে। আমি চাই, কেউ আমাকে একটু সাহস দিক। এই ব্যাপারটা বাদ দেওয়া প্রয়োজন।

আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে স্রষ্টাকে বলি—আমায় মৃত্যু দাও। মৃত্যু সহ্য করতে পারবো, কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ না।

আবার স্রষ্টার সাথে রাগারাগি করি। বলি, স্রষ্টা, আমি নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। তুমি দেখতে পাচ্ছ? আনন্দ পাচ্ছ? যদি আমার কষ্টে তুমি সন্তুষ্ট থাকো, তবে আমিও সন্তুষ্ট।

আমি প্রায়ই না খেয়ে চুপ করে থাকি। কখনও অভুক্ত অবস্থায় ২৬/২৭ ঘণ্টাও পার হয়ে গেছে। আমি জানি, জীবনে আমি কী চাই। কিন্তু প্রতিবারই পরিস্থিতি আমার প্রতিকূলে যেয়ে আমায় যন্ত্রণা দেয়।

একটা কথা, যাদুটোনা, তাবিজকবচ নিয়ে আমরা ছোটবেলায় খুব হাসাহাসি করতাম। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে আমার নিজের সাথে নিজের কিছু বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড ফাইট হচ্ছে। এ নিয়ে বেশ পড়লাম কিতাবে, কুরআনে। সকল সংশয় কেটে গেলো।

সুরা বাকারা’র ১০২ নম্বর আয়াতটা পড়ে দেখতে পারেন। সেখানে লেখা আছে—তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।

আমি প্রচণ্ড বিশ্বাস করি আমার বিজয়ের। বিশ্বাসের জোরে আমি এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হইনি। কিন্তু অসীম মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছি, করছি। কিছু দিন আগে আহমদ শরীফের বইয়ে দেখলাম, এসব কালো যাদুটাদু নিয়ে মহা বিরক্ত উনি। এসব নাকি মানুষ বহু বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় লালন করে আসছে। অনেক উন্নত দেশেই এর চর্চা হয়। আমি এসব ব্যাপার জানতে যখন উঠেপড়ে লাগি, তখন এসব নিয়ে নেটে ঘেঁটে দেখি। আমাদের দেশে তো জায়গায়-জায়গায় ব্ল্যাক-ম্যাজিক চলছে। হিস্ট্রি চ্যানেল-এ একটা ডকুমেন্টারি দেখায় ব্ল্যাক-ম্যাজিক নিয়ে। সেদিন কিছু বৈদ্য আর হুজুরের সাথে কথা বলেছিলাম কিছু পারিবারিক কারণে। এর মাঝে কেবল একজনকে ভাল পেলাম। আর বাকি সবাই ব্ল্যাক-ম্যাজিক করেন, যেটাকে আমরা কুফরি বলি। কুরআনে আল্লাহ্‌ এর ভয়াবহ শাস্তির কথা বলেছেন। আমি অহেতুক এসব নিয়ে জানতে চাইনি। আসলে এখনকার অনেকেই প্রত্যাখ্যাত হলে, বিশেষ করে প্রেমের ব্যাপারে, এসবের তুকতাকের আশ্রয় নেন। এতে তো নিজের ক্ষতি করেই, আবার যাকে এটা করছে তারও যন্ত্রণা হয়। আমি এক মেয়েকে চিনি যে পেশায় ডাক্তার এবং প্রায়ই নানান ব্যাপারে ব্ল্যাক-ম্যাজিকের আশ্রয় নেয়। উনার বেতনের একটা বড় অংশই চলে যায় ব্ল্যাক-ম্যাজিশিয়ানদের পকেটে। তবে এসব চেষ্টা কতটুকু সফল হয়, তা জানি না।

মুসলিমরা একটা ভাল কাজ করতে পারে যার নাম এস্তেখারা। কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে এটা করা হয়। ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী গ্রন্থে আল্লামা ইবনে হাজার আল-আসকালানী লিখেছেন, এস্তেখারা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এস্তেখারা শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ—কল্যাণ প্রার্থনা বা কোনও বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া। ইসলামী পরিভাষায়—দুই রাকায়াত নামায ও বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তায়া’লার নিকট পছন্দনীয় বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা, অর্থাৎ, দুইটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দুই রাকায়াত সালাত ও এস্তেখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই এস্তেখারা। এশার নামাজের পর এস্তেখারার দোয়া পড়ে ঘুমালে যা কল্যাণকর আর শান্তির, তার আভাস স্বপ্নে দেখা যায়, কিংবা বাস্তব ঘটনা কী, তা বোঝা যায়। তার জন্য অবশ্য বেশ ধার্মিক হওয়া প্রয়োজন। আমি এমন ২/৩ জনকে চিনি, যারা সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিক্ষিত মানুষ। ওনারা অনেক কিছুই আগাম বলতে পারেন। এ নিয়ে উনারা ব্যবসা করেন না অবশ্য।

আমি বারবার ফাইট করে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, যত বাধাই আসুক না কেন, আমি স্রষ্টার রহমতে তা অতিক্রম করতে পারবো। সমস্যাটা হয়ে গেছে এই, আমি যাকে পছন্দ করেছি, আর বিয়ে করতে চেয়েছি, তার মা এসব যাদুটোনা, তাবিজকবচ করেন। এসব নিয়ে আমার জানার একমাত্র কারণ এটাই ছিল। আমি নানান তুকতাকের পদ্ধতি জানি। তবে আমার কখনওই ইচ্ছে হয়নি এসব করতে।

এখন চুপচাপ ভাবি। ছেলেটাকে এত ভালোবেসে ফেলেছি যে ইচ্ছে হয়েছে ওকে ওই জগত থেকে বের করে আনতে। ও নিজেও ওর মায়ের মত ওসবে পুরোপুরি বিশ্বাস করে। ওর মা ওকে সবসময়ই সম্মোহিত করে রাখেন নানান তুকতাক দিয়ে। ভাল কাউন্সেলিং দরকার তার জন্য। সে যদি সচেতন হয়ে যায়, তবে তাকে সম্মোহিত করা তত সহজ হবে না।

আমি অনেক কিছু বলেছি আপনাকে। রাগ করবেন না, প্লিজ। অনেক কষ্ট জড়িয়ে ধরেছে আমাকে। আর চাই না। আমি মুক্ত নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচতে চাই।

ভাবনা: দুইশো একত্রিশ।

……………………………………..

ক্ষুধার্ত থাকো, বোকা থাকো।—স্টিভ জবস্‌

যদি তুমি তোমার স্বপ্ন নিয়ে না ভাবো, তবে তুমি আসলে কিছুই ভাবছ না।

দ্বিতীয় কথাটি তোমার। আমার জন্য এই দুই লাইন টনিকের মত কাজ করেছে যখন খালি হাল ছেড়ে দিতে মন চাইতো। আমি এ কথাগুলি তোমার ওয়ালে এসে তোমার লেখায় আবিষ্কার করি। তখন ভাবলাম, আমাকেও এভাবে করে ভাবতে হবে। মানুষের কথার উত্তর দিতাম না, ভাবতাম, বোকা হওয়ার মানে এটাই হওয়া উচিত। যখন পড়ায় আর কিছুতেই মন দিতে ভালো লাগতো না, মন অন্যদিকে চলে যেত, তখন নিজেকে মনেমনে বলতাম, যদি তুমি তোমার স্বপ্ন নিয়ে না ভাবো, তবে তুমি আসলে কিছুই ভাবছ না।

আসলেই এই কথা দুটো যে কী ভীষণ কাজে দিয়েছে, এবং দেবে সারাজীবন, তা লিখে বোঝাতে পারবো না। তবে তোমার মাধ্যমে চোখে না পড়লে কখনও এভাবে ভাবাই হতো না। অনুভবই হয়তো করতাম না সেভাবে!

তুমি কেমন আছো?

শুভ সকাল।

মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে ব্যথায়। এত কষ্ট করে শাড়িচুড়ি পরে, ছেলে দেখতে যেয়ে যদি পছন্দ না করতে পারি তাহলে কেমন লাগে, বলো? আমার পছন্দের কথা বাদই দিলাম! ওটা আর হবে না ধরেই রেখেছি। কারণটা তুমি জানো। কিন্তু সব জেনেও এই সাজুগুজু করে ছেলে দেখার কিংবা নিজেকে দেখাতে যাওয়ার ঢঙ করতে-করতে আমি আসলেই বিরক্ত ও ক্লান্ত। তবু তা করতে হয় বাসার সবার মন রক্ষার্থে। আর মাঝেমাঝে ভয় পাই নিজের নিঃসঙ্গ ভবিষ্যৎ কল্পনা করে। পরে অবশ্য ভাবি যে কাল বাঁচি কি না তারই যখন কোন নিশ্চয়তা নাই, তখন কী হবে এত ভেবে! তবে যদি বেঁচে থাকি, তবে অসহায় শিশুদের জন্য কিছু করে যাব ইনশাআল্লাহ্‌! আমার পাশে কেউ থাকুক আর না-ই থাকুক, আমি থাকবো ওদের মাঝে। এভাবেই নাহয় কাটবে আমার বাকি জীবন। সবাইকেই কেন স্বামী সন্তান পরিবার নিয়েই জীবন কাটাতে হবে? একেক জীবন যদি একেক রকমই হবে, তবে কেন প্রত্যেকটা জীবনই কাটানোর প্যাটার্নটা একই হতে হবে?

ভেবেছিলাম, এতএত মানুষের ভিড়ে আমি থাকা আর না থাকাতে কী-ই বা এমন ফারাক পড়বে! কিন্তু দেখলাম, সেই আমিই অনেক বড় ইস্যু—অনেকের মুখের হাসি, আর কারও-কারও খুশিরও। তাই অগত্যা অভিনয়ের মঞ্চে নামতেই হয়। তবে চরিত্র যদি ইন্টারেস্টিং হয় আর কাহিনিতে থাকে চমক, তবে বিষণ্ণ মনেও চরিত্রের রঙ লাগতে বাধ্য। বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়েটির বিয়ে এবং অনেকদিন পর বাড়িতে কোনও বিয়ে। আমরা এমনিতেই বিশাল পরিবার, সব ভাইবোন আর ম্যারিড ভাইবোনদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে বিরাট সম্মিলন। ব্যাপক আয়োজন চলছে, চলবে সপ্তাহব্যাপী। আজ ৬টা-৯টা’র পরীক্ষা শেষ করে তারপর ওই রঙের জলসায় আমিও যোগ দেবো। গতকালও ছিলাম, থাকবো আগামীকালও। রঙের খেলা খেলতে গেলে কিছু রঙ তো গায়েও লাগে। হোক আমার ছোটবোনের বিয়ে, বিয়ে তো! আর বিয়ে মানেই তো আনন্দের বন্যা বয়ে যাওয়া। মন যেমনই থাকুক, সে স্রোতে গা না ভাসালে কি চলে? সক্কালসক্কাল তোমার রিপ্লাই পেয়ে মনটাকে অভিনয়ের জন্য উজ্জীবিত করলাম। যদি উত্তর না পেতাম, বড় কঠিন হয়ে যেত অভিনয়টা, ঠিক গতকালের মতই। তোমায় ধন্যবাদ।

৮ জুন দেখা হবার কথা ছিল। নির্দিষ্ট তারিখটা নিয়ে ভীষণ সংশয়, কত প্রার্থনা—পিরিয়ড যেন না হয়, কারণ, ওতে বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে অস্বস্তি লাগবে, কোনও বিশেষ কাজ যেন সেদিন না পড়ে, কোনও গেস্ট যেন বাসায় না আসে, শরীরটা যেন সুস্থ থাকে, বের হওয়ার অনুমতি যেন মিলে, আম্মা যেন সেদিন সুস্থ থাকেন, ইত্যাদি, ইত্যাদি। অবশেষে সবকটা ইচ্ছেই পূরণ হয়েছিল, কিন্তু হায়, এক কঠিন শর্তে আটকে পড়ে, সেদিন উনার সাথে দেখাটাই আর হয়নি! উনি আগে থেকে কিছুই বলেননি। দেখা হওয়ার দিন সকালে জানালেন, উনার প্র্যাকটিস করার সুবিধার্থে বিয়ের পর বনানীতে উনাকে একটা ফুল ফার্নিশড্‌ চেম্বার করে দিতে হবে, যা করতে খরচ পড়বে অন্তত লাখ চল্লিশেক। ওটা উনার আবদার। দেশের শীর্ষ মেডিক্যাল কলেজ থেকে পড়াশোনা করে ভাবী বধূর পিতার কাছ থেকে এইটুকু প্রত্যাশা তো উনি করতেই পারেন।

হা হা হা……এমনই হয়।

সূর্যের চারদিকে কত গ্রহের আনাগোনা চলে। তবুও সূর্যের বিশেষ কেউ নেই।

বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি—ওদের প্রত্যেকেরই, একটা বিশেষ কেউ আছে, শুধু সূর্যেরই কেউ নেই। এমনই হয়। যাকে সবাই ঘিরে থাকে, সে-ই সবচাইতে একা।