ভাল থেকো, পলাতকা

আবার সেই পুরনো গল্প—ভালোবাসো না আর, ভালোবাসো না আর!
জানি, জানি! পারলে নতুন কিছু বলো! আমি জানি না, এমন কিছু!
ভালোবাসা চেয়েছেটা কে, হুঁ? আমি চাইনি তো!
আমি শুধু আমার ভালোবাসাটা জানাতে চাই।
আর কিছু নয়। মানে, আমি যে ভালোবাসি, তা বলতে চাই। ব্যস্‌!
তুমি ভালোবাসবে না, কিন্তু শুনবে। তোমাকে শুনতেই হবে!

এর চেয়ে বেশি কিছু যে চাইতে পারে,
সে মানুষটা আমি নই। সে অধিকার তুমি আমায় দাওনি। আমি এও জানি।
আমাকে তুমি ভালোবাসো না, আমার কথা একটুও মনে আসে না তোমার,
বুঝি সবই। সব ভুলে গেছ। মানুষ সব ভুলে যায়। বেঁচে থাকতে চাইলে ভুলতে হয়।
সব বুঝেও তোমায় ভালোবাসি, তোমার কথা মনে করি।

আমার এই একতরফা ভালোবাসায় কারও কিছু এসে যাবে না,
দেশের জিডিপি কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ একটুও কমে যাবে না,
তোমার রান্নায় লবণের ভাগটা বেশি হয়ে যাবে না,
তোমার বরের ভুঁড়িটা আরও একটু বেড়ে যাবে না।
আমাদের সেতুটা ভেঙে গেলেও পদ্মা সেতু একদিন ঠিকই তৈরি হয়ে যাবে।
সবই যদি ঠিকঠাক থাকেই, তবে কেন তোমাকে ভালোবাসব না?
অবশ্য, কখনও যদি প্রলয়ও এসে পড়ে, তাও বাসব!
কী ঠিক আছে, কী ঠিক নেই, তা নিয়ে ভাবি না আর!
আমি যে ঠিক নেই, তা নিয়েই-বা কে ভাবছে?

তুমি আমাকে বিয়ে করনি, আমি তোমার যোগ্যও নই।
তো কী হয়েছে? তুমি তো আমার যোগ্য, একমাত্র যোগ্য!
আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি, তাহলে তোমার কথা ভাবব না কেন?
তোমাকে কত করে বললাম, চলে যেয়ো না, থেকে যাও!
ছোট্ট একটা জীবন, দেখবে, ঠিক কেটে যাবে!
………অমন করে কেউ কখনও বলবে না আর! অতোটা বলতে সাহস লাগে।
আমার কোনও কথাই শুনলে না তো? চলে গেলে তো?
গেলে গেছ! আমার কী? আমি তো ভালোবাসিই, ভালোবাসবই!
আমার ভালোবাসা আমাকেই সহ্য করে বাঁচতে হবে, এটাই তোমার শাস্তি!

বরকে নিয়ে বেশ ভাল আছ। ফেসবুকে দেখি, অন্য একটা আইডি থেকে।
আমাকে তো ব্লক করে রেখেছ সেই কবে থেকেই!
আচ্ছা, ব্লক করলে কি ভালোবাসা কমে যায়?
তুমি সত্যি এখনও পাগলই আছ! কী একটা ফেসবুক,
ওটা দিয়েও নাকি দূরে সরিয়ে দেয়া যায়!
আরে বোকা, ফেসবুক চালাতে ডাটা লাগে, ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা নয়!
ব্লক করেছ, শান্তি পেয়েছ তো? খুব ভাল!
আমিও তোমাকে দেখে খুব শান্তিতে আছি।
পারলে আমার হার্টটাকে এখুনিই ব্লক করে দাও তো, দেখি!

বরের সাথে শপিংয়ে যাচ্ছ, কত জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছ,
কত মজার মজার খাচ্ছ আর খাওয়াচ্ছ!
বর বুঝি খুব খেতে ভালোবাসে আমার মতো?
রেঁধে খাওয়াও? আমাকে একদিন খাওয়াবে নিমন্ত্রণ করে? কতদিন তোমার রান্না খাই না………
তোমার বরটা খুব ভাল পেয়েছ, তাই না, বলো?
ভাল মানুষ, ভাল বর, ভাল বাবাও হয়ে যাবে একদিন।
তোমাকে খুব যত্নে রেখেছে, দেখতে বড়ো ভাল লাগে।
তুমি ভাল থাকলে দেখতে ভাল লাগে, ভাবতে আরও ভাল লাগে।
তাইতো তোমাকে অমন লুকিয়ে দেখি চোরের মতন।
ভালোবেসে ফেললে মানুষ কত কী হয়ে যায়!
আমি তো মাত্র চোর হয়েছি!

আচ্ছা, বর তোমাকে ফুল এনে দেয়? খোঁপায় সস্তা বেলি গুঁজে দেয়?
বই কিনে দেয়? পাশে বসে মুভি দেখতে বলে?
ভাল গান শুনলে শুনতে বলে? কবিতা লিখতে বলে?
ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যায়? চটপটিওয়ালা মামাকে বল টকটা একটু বাড়িয়ে দিতে? টঙয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চাও খাও কখনও?
নাকি এখন শুধুই পিৎজা হাটই চলে?
কখনও জিজ্ঞেস করে তোমার একটু কষ্ট লাগবে কি না?
নাকি এখন শুধুই ভাল থাকতে ভাল লাগে………কষ্টকে ডাক না আর?
কবিতা পড় এখনও? মাথার পাশে এখনও ভাস্কর চক্রবর্তীকে থাকতে হয়?
বর কোনটা পড়ে? রবীন্দ্রনাথ? নাকি জীবনানন্দ?
নাকি পড়েই না? বড়লোকদের মনে নাকি কবিতা থাকতে নেই, কবিতা এলে পয়সা পালায়!
ওসব ছাইভস্ম খেয়ে তো ছোটলোকরা বাঁচে! আচ্ছা, তুমিও এখন বড়োলোক হয়ে গেছ, না?
ভাবছ, রাগ করছি? আরে বোকা, না! ওসব রাগফাগ কিছু নয়!
ভালোবাসি তো, তাই রাগ হয় না, কখনও কখনও একটুখানি অভিমান হয় শুধু।

আমাদেরও তো একটা ঘর হতে পারত! পারত না, বলো?
চাকরি একটা তো পেয়েই যেতাম! লোকে তো চাকরি পেতেই জন্মে!
এই যে দেখো, এখন করছি না? বেকার আছি এখনও? সত্যিকারের পয়সা কিছু আমিও তো পাই!
ছোটো চাকরি, তোমার বরের চেয়ে মাইনে একটু কমই………মানে, একটু নয়, অনেকটাই কম!
তবু পারতাম না তোমাকে দুইবেলা খাওয়াতে? তুমি কি রাক্ষস নাকি?
একটা শাড়ি কিনে দিতে পারতাম না? আর একটা ছোটো ঘরে রাখতে?
আমাদের নাহয় গাড়ি থাকত না, তোমার জন্য নাহয় একটা রিকশাই কিনে নিতাম!
রিকশায় চড়তে তো খুব বায়না ধরতে! ধর এখনও? এই মামা, আস্তে চালান………মনে পড়ে?
তোমাকে পেলে সবই পারতাম! পারতাম না, বলো? মানুষ সবই পারে তো……একটু ভালোবাসা পেলে!

ওই ঘরের সবাই ভাল? তোমাকে আদর করে? হাসিমুখে কথা বলে? কী সুন্দর চুল!……এটাও বলে?
মনে আছে, কেউ হাসলে তোমার দেখতে খুব ভাল লাগত? এখনও লাগে?
তোমার বরের আয়ু বাড়ুক, তোমার অনাগত সন্তানের বাবার আয়ু বাড়ুক।
মানুষটা তোমাদের দুজনকে খুব ভাল রাখুক। তোমাদের মুখে সারাক্ষণই হাসি লেপটে থাকুক।
তোমার সন্তান দেখতে সুন্দর হোক, ভগবান ওকে মানুষ করে দিক!
তোমরা সুস্থ থেকো, ভাল থেকো। তোমাদের ঘরে কোনও কষ্ট না থাকুক।

আমার কথা ভেবো না; জানি, এখন আর ভাবও না। ভাববার কত কী-ই তো আছে!
আমি খুব ভাল আছি। চাকরি করছি, খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, বেঁচে আছি! আর………
আরাম করে তোমাকে ভাবছি! পালাতে আর পেরেছ কই? বোকা মেয়ে!
তোমাকে মনে করি না, তুমিই এসে পড়……স্বস্তি না পাই, এক ধরনের শান্তি তো পাই! বুঝেছ?
বোঝোনি তো? থাক, তোমাকে বুঝতে হবেও না। তুমি শুধু সবসময়ই ভাল থাকবে, কেমন?
আর কপালের টিপটা আরও একটু ছোটো পোরো।
সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে রেখো, হাতের শাঁখা যেন সবসময়ই থাকে!
মানুষটাকে ভাল রাখতে হবে যে! তোমার জন্য, তোমার সন্তানের জন্য!
ফুলস্লিভের ব্লাউজ এখন আর পর না বোধহয়, লালপেড়ে শাড়িতেও তো কখনও দেখি না!
একদিন পরবে? ফেসবুকে ছবি দেবে? একটু দেখব………
তোমাকে নিজের মতো করে দেখতে খুব ইচ্ছে করে।

আচ্ছা, তোমার বরও শাড়ি পরতে বলে? পায়ে আলতা দিতে বলে? কাঁচের চুড়ি কিনে দেয়?
তোমার জন্য নূপুর কিনেছিলাম, মনে আছে? টিউশনির টাকা জমিয়ে। রুপোর নূপুর।
তখন তো নাওনি, বিয়ের পর দিতে বলেছিলে। বিয়ে তো হয়েই গেছে, পাঠিয়ে দিই?
পরবে, পাঠালে? নূপুরপায়ে হাঁটবে একটু ঘাসের উপর? নাকি ছুঁড়ে ফেলে দেবে?
দিলেই-বা! আমার কী? আমাকে ছুঁড়ে ফেললে, নাকি রেখে দিলে,
বিশ্বাস করো, ওতে আমার কিছুই এসে যায় না।
আমি শুধু ভালোবাসি, তুমি আর বাস কি না, তার তোয়াক্কা না করেই ভালোবাসি!
আমি জীবনে তেমন কিছু করতে পারিনি, একটা চাকরি কোনওমতে জোটাতে পেরেছি, আর
তোমাকে ভালোবাসতে পেরেছি। বাকিটা জীবন এ-ই করেই কাটিয়ে দিতে পারব!

জানো, মা আমাকে বিয়ে করতে বলে! আমি শুনে হাসি আর ভাবি,
মা-টা বড্ড বোকা! এখনও জানেই না যে আমার মতো কাউকে কক্‌খনো বিয়ে করতে নেই!
আমাকে বিয়ে করলে দুঃখ পেতে হয়, গরীব থাকতে হয়, গাড়িতে চড়া যায় না, আরও কী কী জানি হয়!
বাই দ্য ওয়ে, তোমাকে পাইনি, তাই মরে যাবটাব, ভাবছ নাকি?
অতো সহজ নয়! মরে যাওয়া সহজ হলে পৃথিবীর কত মানুষই তো মরে যেত!
বেঁচে থাকতে মানুষের কষ্ট হয় না, ভেবেছ? সারাক্ষণই অভিনয় করে, মেনে নিয়ে আর কত পারা যায়?
তাছাড়া, মরে গেলে তোমাকে ভেবে কষ্টটা আর পাব কীকরে, বলোতো?
এ পৃথিবীতে কষ্ট পেতে হলেও তো বেঁচে থাকতে হয়!