ভাস্কর্য পাথরেই থাকে

 শুনছ? জেগে আছ?
ওই যে দেখ…
আকাশে চাঁদ হাসছে।
তারাদের উল্লাস, কিছু মেঘের চলে-যাওয়া…দেখছ না?
রাত ক্ষয়ে যাবে, ভোর আসবে উষ্ণ শরীরে…
সে যে ভারি সঙ্গচোর!
ওদিকে মিষ্টি স্বভাবে চুপটি রোদ…
তারই সাথে অবাধ মিলনে ভাঙছে ক্রোধ!
সুখসায়রে নিঃস্ব ফুল,
নিত্যনতুন বাঁধছে কূল।
তোমায় দেখি, অমনিই তখন বদলে যায় বিশ্বস্ত ছাদ,
তুমি যে আমার আকাশপাড়ার চাঁদ! আজ
মেঘ সরায়ে, সন্তর্পণেই তারার আলোর বিছিয়ে পাটি চাঁদটি হয়ে বসো!
 
আমার নিঃসঙ্গ মৃত্যু ঠেলে তোমার জ্যোৎস্না-পসরে নগ্ন দেহে
আজ এত বছর পরে নিজেকে আমি খুব ধুয়েছি মনের মতো!
তোমার আমার দূরত্বটা একটি পলক…এ ছাড়া কী আর?
এ দূরের পথটা…ফুরোবে, দেখো!
পুরনো এ রাত এমনি করেই নিজেকে ক্ষয়ে ভোর করে দেয়।
জানো না কি তুমি…
ব্যস্ত শহরেও নির্জনতা ঠিকই নামে?
হাওয়ার বেগও থামেই থামে একটা সময়?
তুমি কি তবে মানো না এ সব?
অস্বীকারই কর কেমন করে?
আগুনপোকা কি রাত জাগে না? আঁধার ঠেলে ওড়ে না ওরা? খেলতে খেলতে ক্লান্ত হলে
ভোরের আলো উঁকি দেবার আগেই ওরা ঘুমিয়ে পড়ে না?
নক্ষত্রদের রাত হয়ে যায়, ওরা কথার পিঠে পাড়ে কথা,
এমনি করে ক্লান্ত হলে বলেই বসে…এবার নাহয় একটু জিরোই?
 
এই রাতটা ফুরোক…আসুক না ভোর! তখন দেখো,
আমার প্রতীক্ষাটা মিলিয়েই যাবে, এক পলকের দূরত্বও ঘুচে যাবে ঠিক!
ওদের মতো আমিও পাব…তোমাকে ঠিক পাবই পাব!
এই জ্যোৎস্না এতটা চেনা যায়ই-বা কেন?
এত নির্মোহ সে, সীমাহীন এত!
এত উজ্জ্বল, এত মোহময়!
এতটা মায়ায় বাঁধে এতটা তরুণ-বেশে!
সে স্বচ্ছ যত, তপ্ত তত!
জানো না, কেন?
এ যে সব তোমারই পোশাক!
নাহয় এই জ্যোৎস্নারাতে এই এতটা ‘তুমি’ কেন?
 
তোমার পোশাক আছে ঠিক হাজার কত, তার একটা হিসেব দেবে?
তুমি কেন এত বেহিসেবি নানান পোশাক নেওয়ার বেলায়?
শুধু ভালোবাসারই হাজার খানেক…হবে না, বলো?
দেখো, নক্ষত্ররা জিরোতে গেলেই তুমি তো আবার হয়েই যাবে শৈত্য-কঠিন!
ভোরের সূর্য ওঠার আগেই…তোমার ভালোবাসার মাদকতায় কাঁপবে গাঢ় তন্দ্রার ঘোর!
শুষে নেবে তোমার বাহুডোরে জানি হাজারো স্নিগ্ধ হিমেল জ্বালা!
তবুও কি ফুরোবে তখন তোমার পোশাক-বাহার?
পরদিনই ঠিক অন্য বেশে…এতটা তুমি অপার কেন?
 
যেন শব্দ ছুঁয়ে, ক্লান্তি ধুয়ে, ঘুম সরিয়ে
আশা মেশে মগ্ন তোমারই সীমানা-তীরে!
খানিকটা জিরিয়ে তবে কুড়োই তোমায়?
আর কিছু…সে না-ই বা পেলাম, শুধু তোমার ঘ্রাণটুকু চাই…
তোমাকে পাওয়া এত কেন ভার?
এতটাই তুমি গভীর কেন?
একদিন আমি পাবই পাব…মিলিয়ে নিয়ো!
সে-দিন তুমি বলেই বোসো…
কেন তোমার চিঠি এত জলদি ফুরোয়?
আরও কটি লাইন বাড়িয়ে লিখলে কী হয় এমন? হাতটা তোমার খসে পড়ে নাকি?
…আমি ঠিকই তোমাকে পাব…
দেখ, ছেড়ে যাবার তো বাহানা থাকে হাজারটাও,
আর ভালোবাসার শক্তি দেখ…সেখানে কেবলই এক বাহানা!
 
তোমার ওই ঘরটা আমার, তাই না, বলো?
তোমার যা-কিছু আছে খুবই প্রিয়, তার সবটায় আমার ভাগটা নেব বুঝে!
আমি জ্বালাই, না…খুব?
জানো, এই ‘আমি’টা এমন আমি ছিলামই না…বিশ্বাস করো…একটুও না!
এই ‘আমি’টা ছিলাম ভীষণই থিতু!
কথার এমন পাড় বুনেই দিন কাটানো,
সবুজ আলোয় গা ভেজানো,
অনুভবে মিশে গিয়ে রেশ ছড়ানো…
আমার কাছে এসব ছিল অকারণেই সময়যাপন!
কী এক শূন্য চোখে চেয়ে থাকতাম সারাক্ষণই,
সে যে তৃষ্ণা কীসের, কখনও তা বুঝিনি, প্রিয়!
 
তুমি যে তখনও ছিলে আমারই মাঝে অচেনা বেশে…
যেমনি আদতে থাকে ভাস্কর্য এবড়োথেবড়ো পাথরেরই বুকে…
এ যে নিজেকেই খুঁড়ে তোমাকে পাওয়া,
তোমাকে পেতেই নিজের অতটা গভীরে যাওয়া!
একপাহাড় অশ্রু জমে বরফ হলো…
আজও রয়ে গেছ তুমি আমারই মাঝে!
যত দিন গেছে, ততই আরও হয়েছি ব্যাকুল,
এ জীবনের সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে তুমি!
করুণ সুরে ছেঁড়াছন্দের মায়া, নৈশব্দ ঠেলে ভাঙা-ভায়োলিনের ছায়া…
তার সবই তো তুমি!
তোমার ছায়া, তোমার কায়া…পাই এক তোমাতেই, আর কোথাও যে নয়!
ভালোবাসা…সে কি এমনই অবোধ? পোড়ায়, পোড়ে এমনি করে!